কুমিল্লার লালমাই উপজেলার পরিবেশ ও প্রাণ-প্রকৃতির সবচেয়ে বড় ঐতিহ্য ছিল ডাকাতিয়া নদী। বাগমারা বাজারের পাশে বয়ে চলা এই নদী হয়ে গেছে এখন ময়লা-আবর্জনার বিশাল ভাগাড়। সেখানে প্রতিনিয়ত ফেলা হচ্ছে বাজারের ময়লা, বাসাবাড়ির আবর্জনা, এমনকি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বর্জ্যও। এর ফলে নদীটি শুধু হুমকির মুখেই পড়েনি, বরং বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে আশপাশের পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যও।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন থেকে জানা যাচ্ছে, বাগমারা বাজারের উত্তরে কুমিল্লা-নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়কের সেতুর কাছে ময়লা-আবর্জনা বিশাল স্তূপ হয়ে আছে। দুর্গন্ধে সেখানে দাঁড়ানোও কষ্টকর। বাজারের কয়েক শ দোকান, শতাধিক বসতবাড়ি ও একাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ময়লা-আবর্জনা নিয়মিতভাবে নদীতে ফেলা হয়। ১০ বছর ধরে নিয়মিতভাবে নদীর আধা কিলোমিটার এলাকায় এসব ময়লা ও বর্জ্য ফেলা হচ্ছে। ফলে শিক্ষার্থী ও স্থানীয় বাসিন্দারা প্রতিদিন দুর্গন্ধ ও স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। এটি শুধু পরিবেশগত সংকট নয়, সামাজিক অবহেলার একটি নির্মম চিত্রও।

উদ্বেগজনক বিষয় হলো, এ সমস্যার দায় কেউ স্বীকার করতে রাজি নয়। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) বলছে, এটা উপজেলা প্রশাসনের দায়িত্ব; ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) বলছে জায়গার অভাব আর পরিবেশ অধিদপ্তর বলছে দায় পাউবো ও স্থানীয় প্রশাসনের। এই দোষারোপের রাজনীতির মধ্যে যেটি অনুপস্থিত, তা হলো একটি সমন্বিত ও কার্যকর উদ্যোগ।

স্থানীয় বাসিন্দাদের বক্তব্য, ‘আমরা বাধ্য হয়ে নদী ও রেললাইনের পাশে ময়লা ফেলছি। কারণ, আমাদের ময়লা ফেলার জন্য কোনো জায়গার ব্যবস্থা করে দিতে পারেনি বাজার কমিটি, স্থানীয় ইউপি ও উপজেলা প্রশাসন।’

বাজার কমিটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, চার বছরের জন্য ময়লা ফেলতে একটি জায়গা ভাড়ার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে—কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায়, এই উদ্যোগ নিতেই–বা এত দেরি হলো কেন? এরপর আরও একটি প্রশ্ন চলে আসে, চার বছরের জন্য একটি অস্থায়ী ব্যবস্থা দিয়ে কীভাবে একটি দীর্ঘমেয়াদি পরিবেশগত সমস্যার সমাধান হবে?

এ ক্ষেত্রে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরসমূহ, বিশেষ করে উপজেলা প্রশাসন, পাউবো, পরিবেশ অধিদপ্তর ও ইউপিকে দ্রুত ও সমন্বিত পদক্ষেপ নিতে হবে। এই এলাকায় বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য নির্ধারিত জায়গা, ডাস্টবিন ও বর্জ্য অপসারণের কার্যকর ব্যবস্থা চালু করতে হবে। স্থানীয় জনগণকে সচেতন করতে হবে এবং নিয়ম ভাঙলে জরিমানা বা শাস্তির বিধান কার্যকর করতে হবে। দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার আওতায় নদী পুনঃখনন, নদীপাড়ে সবুজ বেষ্টনী গঠন ও পরিবেশবান্ধব বাজার অবকাঠামো গড়ে তুলতে হবে।

আমরা আশা করব, ডাকাতিয়া নদীর পরিবেশ-ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষই মনোযোগী হবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র পর ব শ ব যবস থ র জন য বর জ য উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

আমি থাকাকালে তাইওয়ানে হামলার ‘পরিণতি কী হবে’ চীন জানে: ট্রাম্প

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, চীনের কর্মকর্তারা তাকে আশ্বস্ত করেছেন যে তিনি প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন তাইওয়ানে বিরুদ্ধে বেইজিং কোনো পদক্ষেপ নেবে না, কারণ ‘তারা এর পরিণতি কী হতে পারে তা জানে’। খবর আনাদোলুর।

রবিবার সিবিএস ৬০ মিনিটসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেন, “তিনি (চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং) এবং তার কর্মকর্তারা খোলাখুলিভাবে বলেছেন, ‘ট্রাম্প মার্কিন প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন আমরা কখনোই কিছু করব না’, কারণ তারা জানে এর পরিণতি কী হবে।” 

আরো পড়ুন:

ভেনেজুয়েলার সঙ্গে যুদ্ধে জড়াবে না যুক্তরাষ্ট্র: ট্রাম্প

ক্যারিবীয় জাহাজে আবারো যুক্তরাষ্ট্রের হামলা, নিহত ৩

চীন আক্রমণ করলে তিনি মার্কিন বাহিনীকে তাইওয়ানকে রক্ষা করার নির্দেশ দেবেন কিনা জানতে চাইলে ট্রাম্প সরাসরি কিছু বলেননি। তবে তিনি বলেন, “এটি ঘটলে আপনি জানতে পারবেন এবং তিনি (শি জিনপিং) এর উত্তর বোঝেন।”

ট্রাম্প জানান, এশিয়া সফরকালে গত বৃহস্পতিবার দক্ষিণ কোরিয়ায় জিনপিংয়ের সঙ্গে তার বৈঠকে তাইওয়ান প্রসঙ্গটি আসেনি। তাইওয়ান প্রসঙ্গটি বাদ পড়ার ঘটনায় অনেকেই অবাক হয়েছেন।

ট্রাম্প বলেন, “বৈঠকে তিনি (শি জিনপিং) এটি উত্থাপন করেননি, কারণ তিনি এটি বোঝেন ও খুব ভালোভাবে বোঝেন।”

তবে, জিনপিং কী বোঝেন তা ব্যাখ্যা করার জন্য চাপ দেওয়া হলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিস্তারিত বলতে অস্বীকৃতি জানান। তিনি বলেন, “এটি অন্য পক্ষ জানে, কিন্তু আমি এমন কেউ নই যে আপনাকে সবকিছু প্রকাশ্যে বলবো।”

তাইওয়ান ইস্যু দীর্ঘদিন ধরেই যুক্তরাষ্ট্র-চীন সম্পর্কের অন্যতম প্রধান উত্তেজনাপূর্ণ বিষয়। বেইজিং তাইওয়ানকে নিজেদের বিচ্ছিন্ন একটি প্রদেশ বলে মনে করে, অন্যদিকে তাইপে ১৯৪৯ সাল থেকে স্বাধীনতার উপর জোর দিয়ে আসছে।

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ