সরকারি নথিতে রাজধানীর বাউনিয়ায় বড়সড় একটি পুকুর আছে। জমির দাগ নম্বর ধরে খুঁজতে গেলাম পুকুরটিকে। গিয়ে দেখা গেল, সেখানে গড়ে উঠেছে কয়েকটি টিনের ছাউনির ঘর ও একটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান। এমনকি সরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের কার্যালয়ও করা হয়েছে সরকারি পুকুরের জমিতে।

যেখানে পুকুর ছিল, তার কাছেই একটি বাড়িতে থাকেন এক প্রবীণ ব্যক্তি। তিনি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বললেন, তিনি ওই এলাকায় বাস করেন চার দশকের বেশি সময় ধরে। পুকুরটি তিনি দেখেছেন। সেখানে স্থানীয় বাসিন্দারা গোসল করতেন। মাছ ধরতেন। বছর ১০-১২ আগে পুকুরটি ভরাট করা শুরু হয়। কয়েক বছরের মধ্যে পুরো ভরাট করে স্থাপনা গড়ে উঠেছে।

বাউনিয়ার পুকুরটি নিয়ে ঢাকা জেলা প্রশাসনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পুকুরের জমির অবৈধ দখলদারের সংখ্যা ১৯।

ঢাকা জেলা প্রশাসন ২০২৩ সালের নভেম্বরে ঢাকার পুকুরগুলো নিয়ে সরেজমিন তদন্ত প্রতিবেদন রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) কাছে পাঠায়। এতে রাজধানীতে থাকা খাস ও ভিপি (অর্পিত সম্পত্তি) জমিতে ৫৮টি পুকুরের বর্তমান অবস্থা তুলে ধরা হয়।

জেলা প্রশাসন রাজউককে চিঠিটি দিয়েছিল পুকুরগুলো প্রয়োজন অনুযায়ী সংস্কার, পুনঃখনন, পাড় বাঁধাই ও হাঁটার রাস্তা নির্মাণ করার জন্য, যাতে তা দখলমুক্ত থাকে এবং অগ্নিদুর্ঘটনার সময় পানির উৎস হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে।

এই প্রতিবেদক গত জানুয়ারি থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত বিভিন্ন সময় দাগ নম্বর ধরে রাজধানীর পুকুরগুলোর খোঁজ করেছেন। জানুয়ারি মাসে বাউনিয়ায় গিয়ে খোঁজ করা হয় সেখানে থাকা পুকুরটির। দেখা যায়, ৭৭ শতক আয়তনের পুকুরটির কোনো অস্তিত্ব নেই।

জেলা প্রশাসনের প্রতিবেদন, রাজউকের জরিপ ও প্রথম আলোর নিজস্ব অনুসন্ধান অনুযায়ী, ৫৮টির মধ্যে ৩১টি পুকুর ভরাট হয়ে গেছে। এ যেন পুকুরচুরি! পুকুরচুরি বাগ্‌ধারাটির অর্থ বড় ধরনের চুরি। ঢাকার সেই পুরোনো পুকুরগুলো বড় ধরনের চুরিরই শিকার হয়েছে।

৩১টির মধ্যে ২০টি পুকুরের জমির পুরো ও আংশিক অবৈধ দখলদার বিভিন্ন ব্যক্তি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। দুটি পুকুরের আংশিক জায়গায় গড়ে উঠেছে ধর্মীয় স্থাপনা। তিনটি পুকুরের জায়গায় বানানো হয়েছে সরকারি প্রতিষ্ঠানের কার্যালয়। খেলার মাঠ ও উদ্যান হয়ে গেছে দুটি পুকুরের জায়গা। পরিত্যক্ত অবস্থায় আছে দুটি পুকুর। সরকারিভাবে তিনটি পুকুরের জায়গা সরকারি প্রতিষ্ঠান ও সংস্থা অধিগ্রহণ করেছে।

বাকি ২৭টি পুকুরের মধ্যে ৯টি কোনোমতে টিকে আছে। আশপাশের জলাশয়ের সঙ্গে ডুবে আছে ১৪টি। সেগুলোকে আলাদা করা কঠিন। চারটি পুকুরের সর্বশেষ অবস্থা জানা যায়নি। এসব পুকুরের অবস্থান সম্পর্কে প্রতিবেদনে সুস্পষ্ট করে কিছু বলা নেই।

এই প্রতিবেদক গত জানুয়ারি থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত বিভিন্ন সময় দাগ নম্বর ধরে রাজধানীর পুকুরগুলোর খোঁজ করেছেন। জানুয়ারি মাসে বাউনিয়ায় গিয়ে খোঁজ করা হয় সেখানে থাকা পুকুরটির। দেখা যায়, ৭৭ শতক আয়তনের পুকুরটির কোনো অস্তিত্ব নেই। জমির এক পাশে বাউনিয়া ভূমি অফিসের (মিরপুর রাজস্ব সার্কেল) একতলা ভবন। কার্যালয়টির সামনে কিছু জমি খালি। সেখানে যে সাম্প্রতিককালে বালু দিয়ে ভরাট করা হয়েছে, তা বোঝা যায়। কারণ, কোনো ঘাস এখনো জন্মায়নি। পুকুরটির বাকি জমিতে ঘরবাড়ি ও অন্যান্য স্থাপনা।

ভূমি অফিসে গিয়ে পাওয়া গেল ভূমি উপসহকারী কর্মকর্তা হামিদুর রহমানকে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, তাঁদের কার্যালয় নির্মাণের আগেই পুকুর ভরাট হয়ে গিয়েছিল। অবৈধ দখলদার ছিল। পরে জায়গা উদ্ধার করে ২০২১ সালে ভূমি অফিস নির্মাণ করা হয়।

জেলা প্রশাসনের প্রতিবেদন, রাজউকের জরিপ ও প্রথম আলোর নিজস্ব অনুসন্ধান অনুযায়ী, ৫৮টির মধ্যে ৩১টি পুকুর ভরাট হয়ে গেছে। এ যেন পুকুরচুরি! পুকুরচুরি বাগ্‌ধারাটির অর্থ বড় ধরনের চুরি। ঢাকার সেই পুরোনো পুকুরগুলো বড় ধরনের চুরিরই শিকার হয়েছে।

পুকুরের খোঁজে

ঢাকা জেলা প্রশাসনের নথি বলছে, রাজারবাগ মৌজার ৭৩৪০ নম্বর দাগের প্রায় পৌনে ১১ শতক আয়তনের একটি পুকুর রয়েছে। পূর্ব রাজারবাগে গিয়ে পুকুর খোঁজ পেতে বেগ পেতে হয়। পরে রাজউকের প্রতিবেদনে দেওয়া জিপিএস (গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম) লোকেশন মুঠোফোনে দেখে পুকুরের জায়গাটি চিহ্নিত করা সম্ভব হয়। মিলিয়ে দেখা যায়, রাজউক পুকুরের জায়গায় যে স্থাপনার কথা বলেছে এবং ছবি দিয়েছে, সেগুলো ঠিক আছে।

পুকুরটির জায়গার কিছু অংশে স্থানীয় লোকজন বেশ কয়েকটি ২-৩ তলা বাড়ি করেছেন। কিছু অংশে টিনের ছাউনির কিছু ঘর আছে। মাঝখানে কিছুটা খালি জায়গা। সেটি মূলত আস্তাকুঁড়ে পরিণত হয়েছে। পুরোটা ময়লা-আবর্জনায় ভরা।

পুকুরের জায়গায় তোলা ঘরে বসবাসকারী কয়েকজনের কাছে জানতে চাইলে তাঁরা পুকুর থাকার বিষয়টি অস্বীকার করেন। পাশাপাশি জায়গাটি দেখে ফেরার পথে স্থানীয় এক ব্যক্তি এ প্রতিবেদককে থামিয়ে সেখানে যাওয়া এবং ছবি তোলার কারণ জানতে চান। ওই ব্যক্তির দাবি, জায়গাটি তাঁরা কিনেছেন, সেখানে কখনো কোনো পুকুর ছিল না।

পুকুরটির জায়গার কিছু অংশে স্থানীয় লোকজন বেশ কয়েকটি ২-৩ তলা বাড়ি করেছেন। কিছু অংশে টিনের ছাউনির কিছু ঘর আছে। মাঝখানে কিছুটা খালি জায়গা। সেটি মূলত আস্তাকুঁড়ে পরিণত হয়েছে। পুরোটা ময়লা-আবর্জনায় ভরা।

অবশ্য স্থানীয় একাধিক বাসিন্দা প্রথম আলোকে বলেন, ওই ব্যক্তি পুকুরের জায়গার অবৈধভাবে দখলদারের একজন। তাঁর নাম রুবেল।

এটি একসময় পুকুর ছিল। বর্তমানে ভূমি কার্যালয়ের রাজস্ব সার্কেলের একটি ভবন হয়েছে। সম্প্রতি রাজধানীর খিলক্ষেতের বটতলা এলাকায়.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: বড় ধরন র চ র প রথম আল প ক রগ ল দখলদ র কর ছ ন ব উন য় র জউক অবস থ সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

বিএনপি ক্ষমতার একচ্ছত্র দখলদারি বহাল রাখতে চায়: ডাকসু

সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে স্বচ্ছ ও দলীয় প্রভাবমুক্ত নিরপেক্ষ নিয়োগের সংস্কার প্রস্তাবের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে বিএনপি ক্ষমতার একচ্ছত্র দখলদারি বহাল রাখতে চায় বলে দাবি করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু)।

রবিবার (২ নভেম্বর) ডাকসুর ভিপি মো. আবু সাদিক, জিএস এসএম ফরহাদ ও এজিএস মুহা: মহিউদ্দিন খান স্বাক্ষরিত ‘রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কাৃরের বিরোধিতা এবং ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রকাঠামো অক্ষুণ্ন রাখার অপচেষ্টার বিরুদ্ধে ডাকসুর প্রতিবাদ' শীর্ষক এক প্রতিবাদলিপিতে এ কথা বলা হয়েছে।

আরো পড়ুন:

ঢাবি শিক্ষার্থীদের মানবিক মূল্যবোধে উদ্বুদ্ধ করতে ২ কমিটি

ঢাবিতে সপ্তাহব্যাপী শিল্পকর্ম প্রদর্শনী শুরু

প্রতিবাদলিপিতে বলা হয়েছে, জুলাই বিপ্লব ছিল বৈষম্য, অবিচার ও ফ্যাসিবাদী শাসনকাঠামোর বিরুদ্ধে এ দেশের সর্বস্তরের ছাত্র-জনতার এক সম্মিলিত বিপ্লব। কেবল সরকার পরিবর্তন নয় বরং রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কার, ক্ষমতার অপব্যবহার রোধ, স্বাধীন ও শক্তিশালী সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান গঠন, প্রশাসনিক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা এবং একটি বৈষম্যহীন-ন্যায়ভিত্তিক নতুন বাংলাদেশ গড়ার আকাঙ্ক্ষা ছিল এই বিপ্লবের মূল ভিত্তি। নতুন প্রজন্ম চেয়েছিল এমন একটি বাংলাদেশ, যেখানে কোন প্রকার বৈষম্য ও রাজনৈতিক একচেটিয়া কর্তৃত্বের জায়গা থাকবে না।

কিন্তু দুঃখজনকভাবে জুলাই সনদে স্বাক্ষর করলেও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ধারাবাহিকভাবে সংস্কার কার্যকর করার বিরোধিতা করে তরুণ প্রজন্মের আকাঙ্ক্ষাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েছে। বিশেষত বিএনপি এমন সব মৌলিক সংস্কারের বিরোধিতা করেছে যা সরাসরি ছাত্র–জনতার স্বপ্নের সঙ্গে জড়িত। পিএসসি, দুদক, ন্যায়পাল ও মহা-হিসাব নিরীক্ষকের মতো সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে স্বচ্ছ ও দলীয় প্রভাবমুক্ত নিরপেক্ষ নিয়োগ নিশ্চিত করার সংস্কার প্রস্তাবের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে তারা ক্ষমতার একচ্ছত্র দখলদারি বহাল রাখতে চায়।

যে বৈষম্যমূলক চাকরি ব্যবস্থাকে কেন্দ্র করেই জুলাই বিপ্লবের সূচনা হয়েছিল সেই কাঠামো পরিবর্তনের বিরুদ্ধাচরণ করে বিএনপি নতুন প্রজন্মের ন্যায্য দাবি অস্বীকার করছে। পাশাপাশি জুডিশিয়াল অ্যাপয়েন্টমেন্ট কমিশনের বিরোধিতা, অনুচ্ছেদ–৭০ সংস্কারে আপত্তি, প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় প্রধান আলাদা দুজন ব্যক্তির মতো আধুনিক গণতান্ত্রিক প্রস্তাবে বিরোধিতা, আইন পেশায় রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত নির্বাচনের প্রতিবন্ধকতা, স্বতন্ত্র ফৌজদারি তদন্ত সার্ভিস গঠনে তাদের আপত্তি রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কার এবং তরুণ প্রজন্মের ভবিষ্যৎ নির্মাণের পথে বড় বাঁধার সৃষ্টি করছে। এভাবে বিএনপি মূলত জুলাই বিপ্লবের চেতনাকে অস্বীকার করে নতুন বাংলাদেশ নির্মাণের অগ্রযাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করছে।

প্রতিবাদলিপিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, এই সংস্কারগুলো ব্যক্তি বা দলীয় স্বার্থ নয় বরং রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কার এবং আধুনিক, গণতান্ত্রিক ও শক্তিশালী রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান তৈরির লক্ষ্যেই প্রস্তাবিত হয়েছে। জুলাই বিপ্লব পরবর্তী নতুন বাংলাদেশ গঠনের নৈতিক দায়িত্ব ছাত্র ও সর্বস্তরের জনগণের। তাই সংস্কারের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জনগণ থেকে নিতে হবে। আর গণভোটই জনগণের ম্যান্ডেট নিশ্চিতের উপযুক্ত মাধ্যম। গণভোটের মাধ্যমেই জনগণ ঠিক করবে দেশের স্বার্থে কোন কোন সংস্কার প্রস্তাবনাগুলোকে তারা সমর্থন দিবে।

কোনো রাজনৈতিক দলের বিরোধিতা বা প্রাতিষ্ঠানিক প্রভাব যদি রাষ্ট্রগঠনমূলক সংস্কারের পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে তবে ছাত্র-জনতা  সেই বাধা অতিক্রমে দৃঢ়ভাবে অবস্থান নেবে জানিয়ে প্রতিবাদলিপিতে আরো বলা হয়, জুলাই বিপ্লব শুধু শাসক বা সরকার পরিবর্তনের আন্দোলন নয় বরং জুলাই বিপ্লব হলো ফ্যাসিবাদী কাঠামো বিলোপ করে ন্যায্যতা ও স্বচ্ছতার ভিত্তিতে নতুন রাষ্ট্র বিনির্মাণ।

ঢাকা/সৌরভ/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বিএনপি ক্ষমতার একচ্ছত্র দখলদারি বহাল রাখতে চায়: ডাকসু
  • ট্রাম্প কি সত্যি ইসরায়েলি দখলদারি বন্ধ করতে চান
  • ভূমি দখলদার চক্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন