বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেছেন, ‘গত ১৫ বছরে দেশের প্রতিষ্ঠানগুলো এমনভাবে ধ্বংস করা হয়েছিল যে সরকারে বদলের পর বায়তুল মোকাররমের খতিবকেও পালাতে হয়েছিল। তিনি (খতিব) আমাদের জীবনে তেমন কোনো প্রভাব ফেলেননি যে তাঁকে পালিয়ে যেতে হবে। এই পরিস্থিতি বলে দেয় যে আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি মানুষের কতটা অবিশ্বাস ছিল।’

আজ মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে আয়োজিত এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন শেখ বশিরউদ্দীন। ‘বাংলাদেশে প্রতিযোগিতা নীতি: সম্ভাবনা, প্রতিবন্ধকতা ও এগিয়ে যাওয়ার পথ’ শীর্ষক সেমিনারটি যৌথভাবে আয়োজন করে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন ও ইউএনডিপি বাংলাদেশ।

প্রতিযোগিতা কমিশনের চেয়ারম্যান এ এইচ এম আহসানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের সদস্য আখতারুজ্জামান তালুকদার। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্টের (র‌্যাপিড) চেয়ারম্যান এম এ রাজ্জাক। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাণিজ্যসচিব মাহবুবুর রহমান।

অনুষ্ঠানে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, ‘গত ১৫ বছরে আমরা সবাই দেখেছি আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলো কীভাবে ধ্বংস করা হয়েছে। প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা ধ্বংসের কারণে বেশ কিছু সুবিধাভোগী গোষ্ঠী তৈরি হয়েছিল। ফলে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়, কিছু ব্যক্তির কাছে পুরো বাজারব্যবস্থা কুক্ষিগত হয়ে পড়ে। বিগত সময়ে যে দুর্বৃত্তায়ন হয়েছে ও প্রতিষ্ঠানকে ভেঙে ফেলা হয়েছে—আমাদের সেই পরিস্থিতি থেকে ঘুরে দাঁড়াতে হবে। এ জন্য প্রতিযোগিতা কমিশন, ব্যবসায়ীসহ সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।’

অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে বেশ কিছু ভালো পদক্ষেপ নেওয়ায় বর্তমানে দেশের প্রবাসী আয় ও রপ্তানি আয়ে সুদিন এসেছে বলে দাবি করেন বাণিজ্য উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ‘আমরা দায়িত্বে আসার পরে প্রচুর চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছিলাম। এখন ধীরে ধীরে সব ক্ষেত্রে সফলতা আসছে। অন্য সব প্রতিষ্ঠানের মতো প্রতিযোগিতা কমিশনের সক্ষমতাও গত সরকারের সময়ে ধ্বংস করা হয়েছিল। যে কারণে সাধারণ মানুষ প্রতিষ্ঠানটি থেকে খুব বেশি সুফল পায়নি। দেশের মানুষ তাদের প্রাত্যহিক জীবনে প্রতিযোগিতার সুফল দেখতে চায়। এ কারণে প্রতিযোগিতা কমিশনকে সে জায়গায় নিয়ে যেতে হবে। প্রতিযোগিতা কমিশনের কাজ শুধু বেশি দামে বাজারে পণ্য বিক্রির বিষয়টি তদারকি করা না; বরং কেউ কম মূল্যে পণ্য বিক্রি করলে তাদেরও তদারকি করা; শাস্তির আওতায় আনা প্রয়োজন।’

বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, ‘অ্যাডাম স্মিথের বর্ণনায় অর্থনীতিতে যে “অদৃশ্য হাতের” কথা বলা হয়, তা আমি কখনো দেখিনি। এটি ভ্রান্ত ধারণা, নাকি বাস্তবতা, আমি তা জানি না।’

সেমিনারে প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন মেট্রোপলিটন চেম্বারের সভাপতি কামরান টি রহমান, বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) মহাপরিচালক এ কে এনামুল হক, বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের সদস্য আফরোজা বিলকিস, যুক্তরাজ্যের ফরেন, কমনওয়েলথ ও উন্নয়ন কার্যালয়ের অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ইসাম মোসাদ্দেক ও ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান মইনুল খান। সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের চেয়ারপারসন এ এইচ এম আহসান।

অনুষ্ঠানে বাণিজ্যসচিব মাহবুবুর রহমান বলেন, বাংলাদেশে পাঁচ থেকে ছয়টি প্রতিষ্ঠান একই উৎস থেকে পণ্য ক্রয় ও বাজারজাত করে। তাদের খরচ ও মোটামুটি একই রকম হওয়ায় বাজারে খুব বেশি প্রতিযোগিতা দেখা যায় না। তাই অন্তর্বর্তী সরকার বাজারকে প্রতিযোগিতামূলক করতে পদক্ষেপ নিচ্ছে।

প্রতিযোগিতা কমিশনের চেয়ারম্যান এ এইচ এম আহসান বলেন, ‘প্রতিযোগিতা কমিশন শুধু প্রতিষ্ঠানগুলোকে জরিমানা করে না, সুরক্ষাও দেয়। ছোট ছোট প্রতিষ্ঠান যারা বাজারে অসম প্রতিযোগিতায় পড়ছে, তাদের সুরক্ষা দেওয়ার জন্য আমরা কাজ করছি। বাজারে সিন্ডিকেট ভেঙে সব প্রতিষ্ঠানকে সুষ্ঠু প্রতিযোগিতার সুযোগ করে দেওয়াই আমাদের লক্ষ্য।’

এ ছাড়া সেমিনারে আরও উপস্থিত ছিল ইউএনডিপি বাংলাদেশের উপ–আবাসিক প্রতিনিধি সোনালী দয়ারত্নে, বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের কর্মকর্তা, বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনের প্রতিনিধি ও ইউএনডিপি বাংলাদেশের কর্মকর্তারা।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব ণ জ য উপদ ষ ট ধ ব স কর হয় ছ ল আম দ র সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

নিউইয়র্ক ছাড়িয়ে জাতীয় মুখ মামদানি

ডেমোক্র্যাট ভোটার লিয়া অ্যাশ বহু বছর ধরে কোনো রাজনীতিককে নিয়ে আশাবাদী অনুভব করেননি। তবে সম্প্রতি সেই অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। তিনি বলেন, ‘এ বছর আমার জন্য তিনিই একমাত্র আলোর দিশা। তিনি সত্যিই মানুষের কথা শুনতে চান—যাঁদের তিনি মেয়র হতে যাচ্ছেন।’

২৬ বছর বয়সী অ্যাশ যে ব্যক্তির কথা বলছেন, তিনি হলেন জোহরান মামদানি, যিনি নিউইয়র্ক সিটির মেয়র পদে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী।

মামদানি তাঁর নির্বাচনী প্রচারে জীবনযাত্রার ব্যয় কমানোর বিষয়টি প্রাধান্য দিচ্ছেন। এ কারণেই অ্যাশ নিঃসংকোচে মামদানিকে ভোট দিতে চান। তবে তিনি মামদানিকে ভোট দিতে পারছেন না। কারণ, তিনি থাকেন নিউইয়র্ক থেকে প্রায় ১ হাজার ২০০ মাইল দূরে, মিসিসিপির গালফপোর্ট শহরে।

অ্যাশ বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করতে চাই, কোনো একদিন গালফপোর্ট, মিসিসিপিতেও এক জোহরান মামদানি আসবেন।’

জাতীয় পর্যায়ে আলোচিত মুখ

মাত্র কয়েক মাসের মধ্যেই ৩৪ বছর বয়সী ডেমোক্র্যাটিক সোশ্যালিস্ট মামদানি এক প্রান্তিক প্রার্থী থেকে জাতীয় পর্যায়ের আলোচিত মুখে পরিণত হয়েছেন। গত জুন মাসের দলীয় নির্বাচনে তিনি অপ্রত্যাশিতভাবে বিজয়ী হন। ওই নির্বাচনে ১৮ থেকে ২৯ বছর বয়সীদের ভোটার উপস্থিতি ছিল সবচেয়ে বেশি।

আগামীকাল মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরে মেয়র নির্বাচনের ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এর আগের সব জরিপেই দেখা গেছে, নিউইয়র্ক শহরের সাবেক মেয়র অ্যান্ড্রু কুমোর চেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় মামদানি এগিয়ে রয়েছেন। মামদানি আশা করছেন, আগেরবারের মতো এবারও তরুণ ভোটাররা তাঁর পাশে থাকবেন। তবে শুধু নিউইয়র্কের মধ্যেই নয়, জীবনযাত্রার ক্রমবর্ধমান ব্যয় মোকাবিলার তাঁর অঙ্গীকার পুরো দেশের তরুণ প্রজন্মের মধ্যেও সাড়া ফেলেছে। অনেক জেন–জি ও মিলেনিয়ালস প্রজন্মের মানুষ বলছেন, তাঁদের সবচেয়ে বড় উদ্বেগের জায়গায় হাত রেখেছেন মামদানি। তরুণ প্রজন্ম যখন রাজনীতিকদের প্রতি আশা হারিয়ে ফেলেছেন এবং প্রচলিত নিয়ম ভেঙে নতুন কণ্ঠস্বরের অপেক্ষায় আছেন, তখনই মামদানির উত্থান।
যুক্তরাষ্ট্রের গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সার্কেলে তরুণ ভোটারদের নিয়ে গবেষণা করেন রুবি বেল বুথ। তিনি বলেন, ‘যখন কোনো প্রার্থী জনগণের উদ্বেগ নিয়ে কথা বলেন এবং সেই উদ্বেগকে স্বীকৃতি দেন, তখন সেটি বিশাল প্রভাব ফেলে, বিশেষ করে তরুণ ভোটারদের ক্ষেত্রে।’

রুবি বেল বুথ আরও বলেন, ‘তরুণেরা যখন সত্যিই অনুভব করেন যে তাঁদের কথা শোনা হচ্ছে, তাঁদের প্রতি সম্মান দেখানো হচ্ছে, তখন যেকোনো প্রার্থী সফল হতে পারেন। তবে এখন সেটি করছেন মামদানি। আর এর আগে হয়তো সেটা করেছিলেন ট্রাম্প।’

রক্ষণশীলদের মধ্যেও জনপ্রিয়

রক্ষণশীল রাজ্য মিসিসিপিতে বসবাস করলেও লিয়া অ্যাশ সব সময়ই ডেমোক্র্যাট প্রার্থীদের ভোট দিয়ে আসছেন। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তিনি রাজনৈতিক নেতাদের ওপর হতাশ ও উপেক্ষিত বোধ করছেন। এই অনুভূতি আরও তীব্র হয়েছে তাঁর অর্থনৈতিক বাস্তবতা থেকে। অন্যদিকে অ্যান্ড্রু টেইট ভার্জিনিয়ার এক গ্রামীণ এলাকায় একটি ছোট খামারে তাঁর সঙ্গী ও সন্তানদের নিয়ে থাকেন এবং স্থানীয় একটি কারখানায় কাজ করেন। তিনিও মূল্যস্ফীতি ও পরিবারের আর্থিক ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন।
অ্যাশ বলেন, ‘দেশের অন্যতম দরিদ্র রাজ্য হয়েও মিসিসিপিতে বাড়ির দাম বেড়েই চলেছে। এটা সত্যিই মন খারাপ করে দেয়।’ তবু অ্যাশ আশা করছেন, যদি মামদানি নির্বাচনে জয়ী হন, তাহলে সেটি দেশের অন্যান্য শহরের ডেমোক্র্যাট নেতাদের জন্য একটি বার্তা হয়ে যাবে।

জোহরান মামদানি তাঁর নির্বাচনী প্রচারণায় একাধিক অঙ্গীকার করেছেন, বিশেষ করে বাসস্থান নিয়ে। তাঁর লক্ষ্য শহরের খরচ কমানো। তবে সমালোচকেরা বলছেন, এসব পরিকল্পনা বাস্তবসম্মত নয়। আর রক্ষণশীলদের, বিশেষ করে ট্রাম্পের সমর্থকদের কাছে মামদানির দৃষ্টিভঙ্গি বিপজ্জনক। তবু এসব সতর্কতা তরুণ মার্কিন ভোটারদের খুব একটা বিচলিত করছে না। তাঁরা রাজনৈতিক দলের লেবেলের পরিবর্তে মামদানির বাস্তব জীবনের সমস্যা ও সমাধানমুখী বার্তাতেই বেশি আকৃষ্ট হচ্ছেন।

গবেষক বেলি বুথ বলেন, ‘মামদানিই এমন একজন প্রার্থী, যিনি প্রচলিত ব্যবস্থাকে নানা দিক থেকে চ্যালেঞ্জ করছেন।’

২৬ বছর বয়সী ডেমোক্র্যাট এমিলি উইলসনের মতে, জীবনযাত্রার ব্যয়ের সংকট দলীয় বিভাজনের ঊর্ধ্বে থাকা উচিত। ফ্লোরিডার সেন্ট পিটার্সবার্গে বসবাসরত এমিলি দূর থেকেই মামদানিকে সমর্থন করছেন। মিশিগানের অ্যান আরবারের কাছে এক ছোট শহরে বসবাসরত ২৫ বছর বয়সী ডেইজি লুপাও একইভাবে ভাবেন। তাঁর মতে, মামদানির প্রচারাভিযানটা নতুন এক দৃষ্টিভঙ্গি এনে দিয়েছে। তাঁর অনেক প্রস্তাব গ্রামীণ আমেরিকাসহ নিজ সম্প্রদায়ের জন্যও কার্যকর হতে পারে। লুপা বলেন, ‘নিউইয়র্কে তিনি যেসব পরিবর্তন আনতে চাচ্ছেন, সেগুলোর অনেকটাই আমরা গ্রামীণ এলাকায় আরও বেশি করে চাই। কারণ, এখানে তো সেগুলোর অস্তিত্বই নেই।’
সতর্ক আশাবাদ

আরও পড়ুননিউইয়র্কের এত ইহুদি কেন জোহরান মামদানির পক্ষে প্রচার চালাচ্ছেন০১ নভেম্বর ২০২৫

তবে যাঁরা নিউইয়র্কের মেয়র নির্বাচনে ভোট দিতে পারবেন, তাঁদের কাছে মূল প্রশ্ন—মামদানি কি সত্যিই জীবনযাত্রার ব্যয়ের এই সংকট কাটাতে পারবেন? ৩২ বছর বয়সী ডিলন রবার্টসনের জন্য অর্থনৈতিক উদ্বেগ যেন জীবনের স্থায়ী সঙ্গী।  স্নাতক শেষে তাঁর শিক্ষাঋণ দাঁড়াবে প্রায় আড়াই লাখ ডলার। মামদানিকে সমর্থন করছেন রবার্টসন।

কারণ, তাঁর প্রস্তাবিত ব্যয় সাশ্রয়ী পরিকল্পনাগুলো জীবনকে কিছুটা সহজ করতে পারে। তবে একই সঙ্গে তিনি সংশয়ও প্রকাশ করেন। ডিলন বলেন, ‘মামদানি যা বলছেন, সবই শুনতে ভালো লাগে। কিন্তু আমি ভাবি, তিনি কি সত্যিই পারবেন? বাস্তবে কি তা সম্ভব? নাকি এটা যেন ফুটো জাহাজে শুধু ব্যান্ডেজ লাগানোর মতো?’
তবু ডিলন স্বীকার করেন. যদি বিকল্প হয়, আগের মতোই টেনে নেওয়া অথবা কিছু নতুন চেষ্টা করা, তাহলে তিনি নতুনটাকেই সুযোগ দিতে প্রস্তুত।

আরও পড়ুননিউইয়র্কের মেয়র নির্বাচনে রেকর্ডসংখ্যক আগাম ভোট, তরুণেরা কেন আগাম ভোট দিচ্ছেন১১ ঘণ্টা আগেআরও পড়ুননিউইয়র্কে মেয়র নির্বাচন: সর্বশেষ চার জরিপেও এগিয়ে জোহরান মামদানি৯ ঘণ্টা আগে

সম্পর্কিত নিবন্ধ