গোল্ডম্যান স্যাকসে জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা হিসেবে যোগ দিলেন সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক
Published: 9th, July 2025 GMT
যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাককে জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের বহুজাতিক বিনিয়োগ ব্যাংক ও আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান গোল্ডম্যান স্যাকস। গতকাল মঙ্গলবার এক ঘোষণায় ব্যাংকটি এ তথ্য জানিয়েছে।
বিশ্বব্যাপী বাড়তে থাকা ভূরাজনৈতিক অস্থিরতা ও নীতিমালা সংক্রান্ত অনিশ্চয়তার মধ্যে ব্যাংকিং খাতে অভিজ্ঞ নীতিনির্ধারকদের যুক্ত করার প্রবণতার অংশ হিসেবে গোল্ডম্যান স্যাকস এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
ঋষি সুনাক এখনো উত্তর ইংল্যান্ডের একটি আসনে কনজারভেটিভ পার্টির আইনপ্রণেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি ২০০০-এর দশকের শুরুর দিকে বিশ্লেষক হিসেবে গোল্ডম্যান স্যাকসেই কর্মজীবন শুরু করেছিলেন। এরপর বিভিন্ন হেজ ফান্ডে কাজ করেন। প্রায় দুই দশক পর আবারও তিনি এই ব্যাংকেই ফিরলেন।
অতীতে আর্থিক খাতে চাকরি এবং তাঁর স্ত্রীর পারিবারিক সম্পদের কারণে সুনাক ছিলেন ব্রিটেনের ইতিহাসে সবচেয়ে ধনী প্রধানমন্ত্রী। গত বছরের জুলাইয়ে যুক্তরাজ্যের সাধারণ নির্বাচনে সুনাকের কনজারভেটিভ পার্টি হেরে যায়। দলটির এক শ বছরের ইতিহাসে এটি ছিল সবচেয়ে বাজেভাবে পরাজয়ের নজির। এর পর ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় প্রধানের পদ থেকে সরে দাঁড়ান ঋষি সুনাক। তখন থেকেই মূলত তিনি লোকচক্ষুর অন্তরালে চলে গেছেন। সম্প্রতি অক্সফোর্ড ও স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে কিছু শিক্ষা ও গবেষণামূলক কাজেও যুক্ত হন সুনাক।
গোল্ডম্যান স্যাকসের প্রধান নির্বাহী ডেভিড সলোমন বলেন, ‘ঋষিকে আবার আমাদের সঙ্গে পেয়ে আমি আনন্দিত। তিনি আমাদের বৈশ্বিক গ্রাহকদের পরামর্শ দেবেন এবং নিজের অভিজ্ঞতা ও দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে ভূরাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক নানা ইস্যুতে সহায়তা করবেন।’
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
আন্ডার-ওভার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে ট্যাক্স ফাঁকি ঠেকাতে কড়া নির্দেশ
আমদানি-রপ্তানিতে আন্ডার ইনভয়েসিং এবং ওভার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে যারা ট্যাক্স ফাঁকি দিয়ে দেশ থেকে অর্থপাচার করছে তাদের বিরুদ্ধে কড়া নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
মঙ্গলবার (৮ জুলাই) বাংলাদেশ ব্যাংকে অনুষ্ঠিত ব্যাংকার্স সভায় এসব নির্দেশনা দেওয়া হয়। ব্যাংকার্স সভায় আন্ডার ও ওভার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে অর্থপাচার রোধের বিষয় ছাড়াও জুলাই যোদ্ধাদের জন্য ফান্ড গঠন, হাউজ লোন ও ক্রেডিট কার্ডের লোনের সীমা বাড়ানো, ডিজিটাল বা অনলাইনে গ্রাহক সেবার মান বাড়ানোর উপর গুরুত্বারোপ করা হয়।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের নিয়ে এই প্রথম ব্যাংকার্স সভা অনুষ্ঠিত হয়। গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুরের সভাপতিত্বে সভায় উপস্থিত ছিলেন ডেপুটি গভর্নর, বিভিন্ন বিভাগের নির্বাহী পরিচালক ও দেশের সব বাণিজ্যিক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। সভায় ব্যাংক খাতকে স্থিতিশীল ও আগের চেয়ে শক্তিশালী করতে একাধিক নির্দেশনা দেন গভর্নর।
সভা শেষে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান সাংবাদিকদের জানান, এলসি দায় পরিশোধের পরও যেসব ব্যাংক গ্রাহকের নামে ফোর্স লোন তৈরি করছে না, তাদের সতর্ক করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, দায় পরিশোধের সঙ্গে সঙ্গে গ্রাহকের নামে ফোর্স লোন তৈরি করতে হবে। একই সঙ্গে আন্ডার ইনভয়েসিং ও অর্থপাচার ঠেকাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।
সভায় জুলাই অভ্যুত্থানে নিহতদের পরিবার এবং আহতদের সহায়তায় একটি ফান্ড গঠনের কথাও জানানো হয়। এ বিষয়ে সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘‘এই ফান্ডে বাংলাদেশ ব্যাংক নিজস্ব অর্থ থেকে অবদান রাখবে এবং আরও কয়েকটি ব্যাংক অংশ নেবে।’’
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান জানান, এই ফান্ডের আকার হবে প্রায় ২৫ কোটি টাকা। তিনি জানান, সরকার এখন সঞ্চয়পত্রের চেয়ে ট্রেজারি বিল ও বন্ডে সাধারণ মানুষকে বিনিয়োগে উৎসাহ দিচ্ছে। এজন্য ব্যাংকগুলোকে পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে। কারণ এসব বিলে সুদের হার এখন বেশি, কর দিতে হয় না, চাইলে বিক্রি করা যায়, এমনকি বিনিয়োগের কোনো সীমাও নেই।
বর্তমানে এক বছর মেয়াদি ট্রেজারি বিলে সুদহার ১১ দশমিক ৬০ শতাংশ এবং দীর্ঘমেয়াদি বন্ডে সর্বোচ্চ ১২ দশমিক ১৭ শতাংশ পর্যন্ত। অন্যদিকে, অনেক ব্যাংক সুদহার বাড়ালেও তারা প্রত্যাশিত হারে আমানত পাচ্ছে না বলে জানান ব্যাংক কর্মকর্তারা।
এ ছাড়া সভায় ডিজিটাল ব্যাংকিং ব্যবস্থাকে আরও বিস্তৃত করার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়। ব্যাংকগুলোকে বলা হয়েছে, যেন গ্রাহকরা অনলাইন বা অ্যাপের মাধ্যমে সেবা পান, যাতে ব্যাংকে না গিয়েও কাজ করা যায়। এতে সময় ও খরচ দুটোই কমবে।
ব্যাংকার্স সভায় জানানো হয়, বর্তমানে ব্যাংকগুলো তাদের মোট ঋণের মাত্র ২ থেকে ৩ শতাংশ হাউজিং লোন হিসেবে বিতরণ করে। এছাড়া একজন গ্রাহক সর্বোচ্চ ২ কোটি টাকা পর্যন্ত হাউজ লোন নিতে পারেন। ব্যাংকের এমডিরা মনে করেন, এই সীমা সময়োপযোগী নয়, তাই তা বাড়ানো দরকার।
গভর্নর জানান, হাউজ লোনের ঊর্ধ্বসীমা বৃদ্ধি করা হবে এবং এমন কাঠামো তৈরি করা হবে, যাতে একজন গ্রাহক তার প্রয়োজন ও সক্ষমতা অনুযায়ী সহজে গৃহঋণ নিতে পারেন।
এছাড়া বর্তমানে গ্রাহকরা ক্রেডিট কার্ডে সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ নিতে পারেন। এই সীমাও সময়ের চাহিদা অনুযায়ী পুনর্বিবেচনা করে বাড়ানোর পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন গভর্নর।
ঢাকা/নাজমুল//