পিরোজপুরের নেছারাবাদ উপজেলার ঐতিহ্যবাহী শতবর্ষী আটঘর-কুড়িয়ানা নৌকা ও সবজির হাটে সরকার নির্ধারিত হারের চেয়ে দ্বিগুণের বেশি হারে খাজনা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, সরকারি নিয়ম অনুযায়ী নৌকা বেচাকেনায় খাজনা নির্ধারিত আছে মূল দামের ৫ শতাংশ। কিন্তু বাস্তবে ক্রেতা-বিক্রেতাদের কাছ থেকে আদায় করা হচ্ছে প্রায় ১২ শতাংশ। নির্ধারিত টোলের তালিকা প্রদর্শনের কথা থাকলেও তা কখনো টাঙানো হয়নি।

শরিফ হোসেন নামের এক ব্যবসায়ীর অভিযোগ, ‘সরকারি হার সম্পর্কে জানতে চাইলে ইজারাদারদের লোকজন আমাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেন। তাই বাধ্য হয়ে তাঁরা যা ধার্য করেন, তা–ই দিই।’ নাম প্রকাশ না করার শর্তে আরেক ব্যবসায়ী বলেন, ‘বেশির ভাগ সরকারি হাটবাজার এখন রাজনৈতিক  দলের নেতা-কর্মীরা নিয়ন্ত্রণ করেন। আমরা সরকারি রেট চাইলে হুমকি দেন বা অপমানিত হই।’

স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, হাটটির মূল ইজারাদার আবদুর রহিম নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি। কিন্তু চলতি বছর তিনি নতুন করে হাটের ইজারা নেওয়ার পর আটঘর-কুড়িয়ানা ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক হুমায়ুন মোল্লা ও তাঁর সহযোগীরা হাটটি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে খাজনা তুলছেন।

ইজারাদার আবদুর রহিম মিয়ার অভিযোগ, ‘আমি ৩৮ লাখ টাকায় হাটটি ইজারা নিয়েছিলাম। কিন্তু আমাকে হুমায়ুন মোল্লাসহ অন্যরা এক দিনের জন্যও খাজনা তুলতে দেননি। জোরজবরদস্তির পরে তাঁদের খাজনা আদায় করতে দিয়েছি। সরকার নির্ধারিত খাজনা ৫ শতাংশ হলেও বর্তমানে আমার ছাপানো রসিদ বাদ দিয়ে তাঁরা নিজেদের ছাপানো রসিদে দ্বিগুণ হারে খাজনা নিচ্ছেন। আমি ৩৮ লাখ টাকায় বাজার ইজারা নিয়েছি, তাঁরা আমাকে দিয়েছেন মাত্র ১৫ লাখ টাকা। শিগগিরই আমি এ বিষয়ে প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ দেব।’

ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক হুমায়ুন মোল্লা এসব অভিযোগ অস্বীকার করে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা অতিরিক্ত খাজনা আদায় করছি না। আগের ইজারাদার যে হারে আদায় করেছেন, আমরাও সেই হারেই আদায় করছি।’ কত হারে খাজনা আদায় করছেন—এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘নৌকার হাট থেকে ৮ শতাংশ এবং সবজির বাজার থেকে নির্ধারিত ৫ শতাংশের কম আদায় করছি। আমরা জোরজবরদস্তি করে হাটের দখল নিইনি। তাঁকে আমরা ইজারার টাকা দিয়ে দিয়েছি এবং সেটা থানায় বসে ফয়সালা হয়েছে, এর লিখিতও রয়েছে।’

আমরা জোরজবরদস্তি করে হাটের দখল নিইনি। তাঁকে (ইজারাদার) আমরা ইজারার টাকা দিয়ে দিয়েছি এবং সেটা থানায় বসে ফয়সালা হয়েছে, এর লিখিতও রয়েছে।হুমায়ুন মোল্লা, আটঘর-কুড়িয়ানা ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক

এ প্রসঙ্গে নেছারাবাদ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম বলেন, ইজারা নিয়ে কিছু সমস্যা ছিল, যা আপাতত সমাধান হয়েছে। তবে সরকার নির্ধারিত হারের বাইরে খাজনা আদায় আইনগতভাবে অপরাধ। কেউ অতিরিক্ত টাকা আদায় করলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

প্রসঙ্গত, আটঘর-কুড়িয়ানা বাজারটি দক্ষিণাঞ্চলের সবচেয়ে বড় সবজি ও নৌকার বাজার। এ এলাকায় প্রচুর আমড়া, লেবু, পেয়ারা ও অন্যান্য সবজি উৎপাদন হয়। পাইকারেরা এ হাটে এসব পণ্য কেনেন এবং দেশের বিভিন্ন মোকামে পাঠান।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আটঘর ক ড় য় ন ইজ র দ র সরক র ব যবস ব এনপ

এছাড়াও পড়ুন:

জোরজবরদস্তি করে বিএনপি নেতা ‘ইজারাদার’, দ্বিগুণ খাজনা আদায়

পিরোজপুরের নেছারাবাদ উপজেলার ঐতিহ্যবাহী শতবর্ষী আটঘর-কুড়িয়ানা নৌকা ও সবজির হাটে সরকার নির্ধারিত হারের চেয়ে দ্বিগুণের বেশি হারে খাজনা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, সরকারি নিয়ম অনুযায়ী নৌকা বেচাকেনায় খাজনা নির্ধারিত আছে মূল দামের ৫ শতাংশ। কিন্তু বাস্তবে ক্রেতা-বিক্রেতাদের কাছ থেকে আদায় করা হচ্ছে প্রায় ১২ শতাংশ। নির্ধারিত টোলের তালিকা প্রদর্শনের কথা থাকলেও তা কখনো টাঙানো হয়নি।

শরিফ হোসেন নামের এক ব্যবসায়ীর অভিযোগ, ‘সরকারি হার সম্পর্কে জানতে চাইলে ইজারাদারদের লোকজন আমাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেন। তাই বাধ্য হয়ে তাঁরা যা ধার্য করেন, তা–ই দিই।’ নাম প্রকাশ না করার শর্তে আরেক ব্যবসায়ী বলেন, ‘বেশির ভাগ সরকারি হাটবাজার এখন রাজনৈতিক  দলের নেতা-কর্মীরা নিয়ন্ত্রণ করেন। আমরা সরকারি রেট চাইলে হুমকি দেন বা অপমানিত হই।’

স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, হাটটির মূল ইজারাদার আবদুর রহিম নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি। কিন্তু চলতি বছর তিনি নতুন করে হাটের ইজারা নেওয়ার পর আটঘর-কুড়িয়ানা ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক হুমায়ুন মোল্লা ও তাঁর সহযোগীরা হাটটি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে খাজনা তুলছেন।

ইজারাদার আবদুর রহিম মিয়ার অভিযোগ, ‘আমি ৩৮ লাখ টাকায় হাটটি ইজারা নিয়েছিলাম। কিন্তু আমাকে হুমায়ুন মোল্লাসহ অন্যরা এক দিনের জন্যও খাজনা তুলতে দেননি। জোরজবরদস্তির পরে তাঁদের খাজনা আদায় করতে দিয়েছি। সরকার নির্ধারিত খাজনা ৫ শতাংশ হলেও বর্তমানে আমার ছাপানো রসিদ বাদ দিয়ে তাঁরা নিজেদের ছাপানো রসিদে দ্বিগুণ হারে খাজনা নিচ্ছেন। আমি ৩৮ লাখ টাকায় বাজার ইজারা নিয়েছি, তাঁরা আমাকে দিয়েছেন মাত্র ১৫ লাখ টাকা। শিগগিরই আমি এ বিষয়ে প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ দেব।’

ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক হুমায়ুন মোল্লা এসব অভিযোগ অস্বীকার করে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা অতিরিক্ত খাজনা আদায় করছি না। আগের ইজারাদার যে হারে আদায় করেছেন, আমরাও সেই হারেই আদায় করছি।’ কত হারে খাজনা আদায় করছেন—এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘নৌকার হাট থেকে ৮ শতাংশ এবং সবজির বাজার থেকে নির্ধারিত ৫ শতাংশের কম আদায় করছি। আমরা জোরজবরদস্তি করে হাটের দখল নিইনি। তাঁকে আমরা ইজারার টাকা দিয়ে দিয়েছি এবং সেটা থানায় বসে ফয়সালা হয়েছে, এর লিখিতও রয়েছে।’

আমরা জোরজবরদস্তি করে হাটের দখল নিইনি। তাঁকে (ইজারাদার) আমরা ইজারার টাকা দিয়ে দিয়েছি এবং সেটা থানায় বসে ফয়সালা হয়েছে, এর লিখিতও রয়েছে।হুমায়ুন মোল্লা, আটঘর-কুড়িয়ানা ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক

এ প্রসঙ্গে নেছারাবাদ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম বলেন, ইজারা নিয়ে কিছু সমস্যা ছিল, যা আপাতত সমাধান হয়েছে। তবে সরকার নির্ধারিত হারের বাইরে খাজনা আদায় আইনগতভাবে অপরাধ। কেউ অতিরিক্ত টাকা আদায় করলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

প্রসঙ্গত, আটঘর-কুড়িয়ানা বাজারটি দক্ষিণাঞ্চলের সবচেয়ে বড় সবজি ও নৌকার বাজার। এ এলাকায় প্রচুর আমড়া, লেবু, পেয়ারা ও অন্যান্য সবজি উৎপাদন হয়। পাইকারেরা এ হাটে এসব পণ্য কেনেন এবং দেশের বিভিন্ন মোকামে পাঠান।

সম্পর্কিত নিবন্ধ