ছেলে বাক ও বুদ্ধি প্রতিবন্ধী। মায়েরও বয়স হয়েছে। তবুও ছেলের সেবাযত্নে কোনো কমতি নেই বৃদ্ধ মায়ের। প্রতিবন্ধী ছেলে সিরাজুল ইসলামকে (৫৮) ভালো রাখতে ক্লান্তিহীন লড়াই একাই করে চলেছেন শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলার গোসাইপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ মাটিয়াকুড়া গ্রামের ৭৫ বছর বয়সী জায়েদা খাতুন। 

জায়েদা খাতুনের স্বামী তফিল উদ্দিন মারা গেছেন বছর ৪০ আগে। অভাব অনটনে ভাগ্যের চাকা ঘোরাতে তিন ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে তিনি চলে যান ঢাকায়। সেখানে কাজ নেন গার্মেন্টসে। বেতনের টাকা দিয়ে সন্তানদের বড় করেন। মেয়ে ও ছোট দুই ছেলেকে বিয়ে করান জায়েদা খাতুন। তবে, তার বড় ছেলে সিরাজুল বাক ও বুদ্ধি প্রতিবন্ধী হওয়ায় করতে পারেনি সংসার। 

বয়স হয়ে যাওয়ায় কাজ করতে না পারায় জায়েদা খাতুনকে ফিরতে হয় দক্ষিণ মাটিয়াকুড়া গ্রামে। জীবনে সঞ্চয় করা টাকা দিয়ে এক টুকরো জমি কিনে তোলেন ঘর। এখন সেই ঘরে বসবাস তাদের। 

আরো পড়ুন:

শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে উদ্যোক্তা সাজ্জাদের সফলতা

ভিক্ষা নয়, সম্মানের সঙ্গে বাঁচতে চান প্রতিবন্ধী যুবক শহিদ

ছেলের দাড়ি আঁচড়ে দিচ্ছেন মা জায়েদা খাতুন  

এলাকাবাসী জানান, জায়েদা খাতুনের দুই ছেলে ঢাকায় লেবারের কাজ করেন। যা আয় করেন তা দিয়ে নিজেদের সংসার চালাতেই হিমশিম খান তারা। মেয়ে শ্বশুর বাড়িতে থাকে। জায়েদা খাতুনের ছেলে সিরাজুল বয়সে বুড়িয়ে গেলেও বুদ্ধিতে শিশুর মতো। ছেলের সেবাযত্ন ও ভরণপোষণের জন্য একসময় ভিক্ষাবৃত্তি শুরু করেন তিনি। অনেক বছর ভিক্ষা করে নিজের ও সন্তানের দায়িত্ব পালন করেছেন এই মা। বর্তমানে বয়সের ভারে নুয়ে পড়ায় বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভিক্ষা করা হয় না তার। বর্তমানে প্রতিবেশীদের দান ও দয়ায় চলে মা-ছেলের জীবন।

জায়েদা খাতুন বলেন, “আমার জীবনে সুখ বলতে কিছু নাই। পেটের পুলা (ছেলে) কই ফেলায়ে দিমু। পুলাডাও বুড়া হয়ে যাইতাছে, কিন্তু আমি আর কতদিন তারে দেখমু। আমি নিজেই চলতে পারি না। আমি মরে যাই সমস্যা নাই, পুলাডার যেন এডা গতি হয়। তাইলে আমি মরেও শান্তি পামু।”

শ্রীবরদী উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা মো.

কামরুজ্জামান বলেন, “মাকে বিধবা ও ছেলেকে প্রতিবন্ধী কার্ডের আওতায় আনা হয়েছে। তবে, এটা তাদের জীবনধারণের জন্য যথেষ্ট নয়। আরো সহযোগিতার সুযোগ আসলে তাদের দেওয়া হবে।”

শ্রীবরদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ জাবের আহমেদ বলেন, “আমি আপনাদের মাধ্যমে বিষয়টি জানতে পারলাম। নিজে গিয়ে তাদের দেখে আসব। তাদের জন্য প্রয়োজনীয় সহযোগিতার ব্যবস্থা করা হবে।”

ঢাকা/মাসুদ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর

এছাড়াও পড়ুন:

অসুস্থ ছেলেকে দেখতে বাসা থেকে বের হয়েছিলেন বাবা, দুই বাসের প্রতিযোগিতায় গেল প্রাণ

রাজধানীর বকশীবাজারে দুটি বাসের পাল্লাপাল্লির সময় মাঝে চাপা পড়ে জহুরুল হক সেলিম (৫২) নামের এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। মঙ্গলবার রাতে এ ঘটনা ঘটে। 

সেলিম তার ক্যানসারে আক্রান্ত ছেলেকে দেখতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যাওয়ার পথে দুর্ঘটনার শিকার হয়ে নিহত হন বলে জানা গেছে।

জানা গেছে, নিহত সেলিম পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার বাসিন্দা। তার দুই ছেলের মধ্যে জুবায়ের ব্ল্যাড ক্যানসারে আক্রান্ত।

জানা গেছে, আট থেকে নয় মাস আগে জুবায়েরের ক্যানসার ধরা পড়ে। সে এখন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি। ছেলের চিকিৎসার জন্য সেলিম ঢাকা মেডিকেলের পাশে বকশীবাজার এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে থাকছিলেন।

এ সব তথ্য নিশ্চিত করেছেন সেলিমের স্ত্রীর বোন সিনথিয়া বেগম। তিনি বলেন, সেলিম মঙ্গলবার রাতে ছেলেকে দেখতে হাসপাতালে যাচ্ছিলেন। রাত ১০টার দিকে তিনি বকশীবাজার মোড় ও বুয়েটের মাঝামাঝি সড়ক পার হচ্ছিলেন। সে সময় দুটি বাসের পাল্লাপাল্লির মাঝে চাপা পড়ে গুরুতর আহত হন তিনি। তাঁর ডান হাত ভেঙে যায়। তাঁকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়া হয়। সেখানে তাঁকে চিকিৎসা দেওয়া হয়। তাঁর ডান হাতে প্লাস্টার করে দেন চিকিৎসকেরা। চিকিৎসকের পরামর্শে তিনি বাসায় ফিরছিলেন। পথিমধ্যে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে আবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। জরুরি বিভাগের চিকিৎসক পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

চকবাজার থানার ওসি সৈয়দ আখতারুজ্জামান সমকালকে বলেন, মৌমিতা পরিবহনের দুই বাসের পাল্লাপাল্লির সময় মাঝে চাপা পড়ে এক পথচারী মৃত্যু হয়েছে। ওই ঘটনায় দুই বাসের চালককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাদের আদালতে তোলা হয়েছে।

তিনি আর বলেন, মরদেহ ময়নাতদন্ত শেষ পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে। ওই ঘটনায় নিহতের ছেলে একটি মামলা দায়ের করেছেন। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করা হচ্ছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ