ঢাকায় রাতভর বৃষ্টিতে বিভিন্ন স্থালে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। সকালেও অব্যাহত বৃষ্টির মধ্যে ঘর থেকে বের হয়ে নগরবাসী দেখতে পান শহরের অনেক এলাকায় হাঁটু কিংবা কোথাও কোথাও কোমর সমান পানি।
মঙ্গলবার (৯ জুলাই) সন্ধ্যা থেকে শুরু হওয়া বৃষ্টিপাত বুধবার সকাল পর্যন্ত অব্যাহত রয়েছে। ফলে মিরপুর, বনানী, ধানমন্ডি, পুরান ঢাকা, মহাখালীসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় পানি জমে গেছে।
জলাবদ্ধতার কারণে অফিসগামী মানুষ ও শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি চরমে পড়েন। পানির কারণে কোথাও কোথাও গণপরিবহন বন্ধ হয়ে পড়ে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, মৌসুমী বায়ু বাংলাদেশের উপর সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে প্রবল অবস্থায় রয়েছে।
আজ রংপুর, রাজশাহী ও চট্টগ্রাম বিভাগের অনেক জায়গায় এবং ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারী ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারী ধরনের ভারী থেকে ভারী বৃষ্টি হতে পারে। দেশের সমুদ্র বন্দরসমূহকে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। এ বৃষ্টি আরো কয়েকদিন থাকতে পারে।
গত ২৪ ঘণ্টায় ফেনীতে সর্বোচ্চ ৪৪০ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে।
ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন জানায়, তারা জলাবদ্ধতা নিরসনে ও পানি নিষ্কাশনের কাজ করছে। তবে বাস্তব চিত্রে অনেক জায়গায় তাদের কার্যক্রম দৃশ্যমান ছিল না। নাগরিকরা অভিযোগ করেছেন, এই সমস্যার সমাধানে প্রশাসনের উদ্যোগ পর্যাপ্ত নয়, বরং বর্ষা মৌসুম শুরুর আগেই ড্রেন ও খাল পরিষ্কারের যে কাজ হওয়া উচিত, তা বারবার অবহেলার শিকার হয়।
নগর পরিকল্পনাবিদ ও পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, শহরের জলাবদ্ধতা শুধু তাৎক্ষণিক দুর্ভোগের নয় এটা ঢাকার টেকসই ভবিষ্যতের পথে বড় বাধা। তারা বলছেন, অবিলম্বে খাল উদ্ধার, ড্রেনেজ ব্যবস্থার আধুনিকীকরণ এবং বৃষ্টির পানি ধরে রাখার পরিকল্পিত ব্যবস্থা না নিলে ঢাকায় স্বাভাবিক নগরজীবন আগামীতে আরো কঠিন হয়ে উঠবে।
ঢাকার মিরপুর থেকে চাকরিজীবী পথচারী শাহীনূর রহমান বলেন, “এক রাতের বৃষ্টিতে সৃষ্টি হওয়া এই জলাবদ্ধতা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে—ঢাকার নগরপরিকল্পনা কতটা দুর্বল, কতটা অপ্রস্তুত। প্রতি বছরই বর্ষা আসে, বৃষ্টি হয়, কিন্তু জলাবদ্ধতার এই দুঃখগাথা বদলায় না। আমরা শুধু দেখি, আকাশে মেঘ জমে, আর শহরের রাস্তায় জমে দুর্ভোগ।”
ঢাকা/কেএন/ইভা
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
স্তম্ভিত হারমানপ্রীত, আবেগ-রোমাঞ্চ-গর্ব-ভালোবাসায় মিলেমিশে একাকার
২০০৫ ও ২০১৭, ভারতের নারী ক্রিকেট দল ওয়ানডে বিশ্বকাপের খুব কাছে গিয়েও শিরোপা জিততে পারেননি। হারমানপ্রীত কৌররা লম্বা সেই অপেক্ষা দূর করলেন দুই হাজার পঁচিশে।
মুম্বাইয়ের নাভিতে প্রায় ষাট হাজার দর্শকের সামনে উচিুঁয়ে ধরলেন ওয়ানডে বিশ্বকাপের শিরোপা। ২০১৭ সালের ফাইনালেও খেলেছিলেন হারমানপ্রীত। রানার্সআপ হয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয় তাকে। এবার আর ভুল করলেন না। অধিনায়ক হয়ে জিতলেন শিরোপা। গড়লেন ইতিহাস। যে ইতিহাস কখনো মুছবে না। কখনো জং ধরবে না।
ঝলমলে হাসিতে হারমানপ্রীত ট্রফি হাতে নিয়ে প্রেস কনফারেন্স রুমে প্রবেশ করেন। এবার তার আবেগের ধরণ ছিল ভিন্ন, যেন স্বপ্ন পূরণের মাখামাখি। লম্বা সংবাদ সম্মেলন জুড়ে বারবার তার কণ্ঠ ধরে আসে। আবেগ, রোমাঞ্চ, গর্ব, ভালোবাসা, শ্রদ্ধা মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়। তবে একটি শব্দের ওপর বারবার ফিরে আসছিলেন তিনি, তা হলো আত্মবিশ্বাস,
‘‘আমি কেবল আমার অনুভূতি প্রকাশ করার চেষ্টা করছি। আমি স্তম্ভিত, আমি বুঝতে পারছি না। আসলে, এতে উত্থান-পতন ছিল, কিন্তু দলের মধ্যে আত্মবিশ্বাস ছিল। আমি প্রথম দিন থেকেই এটা বলে আসছি। আমরা বাম বা ডানে তাকাচ্ছিলাম না। আমরা কেবল আমাদের মূল লক্ষ্যের দিকে তাকিয়েছিলাম।’’ - বলেছেন হারমানপ্রীত।
স্বপ্ন পূরণের রাতে হারমানপ্রীত কাছে পেয়েছিলেন সাবেক তিন ক্রিকেটার মিতালি রাজ, ঝুলন গোস্বামী এবং অঞ্জুম চোপড়াকে। প্রত্যেকেই স্বপ্ন দেখেছিলেন ভারতকে বিশ্বকাপ জেতানোর। তাদের অধরা সেই স্বপ্ন পূরণ করেছেন জেমিমা, দীপ্তি, শেফালি, স্মৃতিরা।
শিরোপা উৎসবে যোগ দেন মিতালি, ঝুলন, আঞ্জুমরা। তাদের হাতেও ট্রফি তুলে দেওয়া হয়। প্রাক্তন খেলোয়াড়দের সাথে সেই মুহূর্তটি ভাগ করে নেওয়ার অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে হারমানপ্রীত বলেন, ‘‘ঝুলন দি আমার সবচেয়ে বড় আইডল ছিলেন। যখন আমি দলে যোগ দিই, তখন তিনি নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন। আমি যখন খুব কাঁচা ছিলাম এবং ক্রিকেট সম্পর্কে তেমন কিছু জানতাম না, তখনও তিনি সবসময় আমাকে সমর্থন করতেন। অঞ্জুম দি-ও তাই। এই দুজন আমার জন্য দারুণ সমর্থন ছিলেন। আমি কৃতজ্ঞ যে আমি তাদের সাথে এই বিশেষ মুহূর্তটি ভাগ করে নিতে পেরেছি। এটি খুব আবেগপূর্ণ মুহূর্ত ছিল। আমার মনে হয় আমরা সবাই এটার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। অবশেষে, আমরা এই ট্রফি স্পর্শ করতে পেরেছি।’’
তার জন্য বিশ্বকাপের পুরো অভিযানটিই ছিল গভীরভাবে আবেগপূর্ণ। রাউন্ড রবিন লিগে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ হার। চোট, অফ ফর্ম, জড়তা। সব সামলে সেরা হয়েছেন। তাইতো নিজেদের নিয়ে গর্বটাও বেশি হারমানপ্রীতদের, ‘‘আমরা প্রথম বল থেকেই অনুভব করেছিলাম যে আমরা জিততে পারি, কারণ শেষ তিন ম্যাচে আমাদের দল যেভাবে খেলছিল, তাতে আমাদের জন্য অনেক কিছুর পরিবর্তন এসেছিল, বিশেষ করে আমাদের আত্মবিশ্বাস। আমরা অনেকদিন ধরেই ভালো ক্রিকেট খেলছি। আমরা জানতাম দল হিসেবে আমরা কী করতে পারি।”
"গত এক মাস খুব আকর্ষণীয় ছিল। সেই দিনটির (ইংল্যান্ডের কাছে হারের) পর আমাদের মধ্যে অনেক পরিবর্তন আসে। সেই রাত আমাদের জন্য অনেক কিছু বদলে দিয়েছিল। এটি প্রত্যেকের উপর প্রভাব ফেলেছিল। আমরা বিশ্বকাপের জন্য আরও প্রস্তুত হলাম। আমরা ভিজ্যুয়ালাইজেশন এবং মেডিটেশন শুরু করেছিলাম। আমরা বারবার বলছিলাম, যে জন্য আমরা এখানে এসেছি এবং এবার আমাদের এটা করতেই হবে।" - যোগ করেন হারমানপ্রীত।
প্রথম যে কোনো কিছুই আনন্দের। রোমাঞ্চের। এই অভিজ্ঞতা শব্দে বয়ান করা যায় না। বয়ান করা সম্ভব হয় না। হারমানপ্রীতও পারেন না নিজের সবটা উজার করে বলতে। তবে এই শিরোপায় তাদের নাম লিখা হবে সেই আত্মবিশ্বাস তারও ছিল, ‘‘আমরা বহু বছর ধরে এটি নিয়ে কথা বলছি—আমরা ভালো ক্রিকেট খেলছি, কিন্তু আমাদের একটি বড় শিরোপা জিততেই হতো।"
ঢাকা/ইয়াসিন