মামলার ভয় দেখিয়ে টাকা আত্মসাৎ, তিনজন বরখাস্ত
Published: 9th, July 2025 GMT
অভিযানের নামে টাকা আত্মসাতের অভিযোগে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের (ডিএনসি) টাঙ্গাইল কার্যালয়ের তিন কর্মকর্তাকে গত সোমবার সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তারা হলেন– পরিদর্শক সিরাজুল ইসলাম, এসআই মোস্তাফিজুর রহমান ও এএসআই জিয়াউর রহমান। তবে কর্মকর্তা-সিপাই মিলে আটজন ওই অভিযানে থাকলেও বাকিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
বরখাস্ত হওয়া এএসআই জিয়াউর রহমান ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের সাবেক প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদের আপন ছোট ভাই। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ঢাকা থেকে তাঁকে টাঙ্গাইলে বদলি করা হয়েছিল। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ডিএনসির প্রভাবশালী এএসআই ছিলেন জিয়াউর। তাঁর প্রভাবে অনেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা তটস্থ থাকতেন।
ডিএনসি সূত্র জানিয়েছে, গত ১৮ জুন সকালে সাবেক কাউন্সিলর ছালেহা বেগমের টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরের বাহাদিপুরের বাড়িতে অভিযানে যায় ডিএনসির আট সদস্যের দল। বরখাস্ত হওয়া তিন কর্মকর্তা ছাড়াও ওই দলে ছিলেন এএসআই শামীম আল আজাদ, সিপাহি প্রবাল চন্দ্র সরকার, আব্দুল্লাহ আল মামুন, ফরহাদ আলী ও সুমাইয়া আক্তার। দু’জন সিপাহি বাদে বাকি ছয়জন সাধারণ পোশাকে ছিলেন। ছালেহার ছেলে আরিফুজ্জমান রনি মাদক কারবার করেন– এ অভিযোগের ভিত্তিতে তারা বাসা তল্লাশি শুরু করেন।
পরে বাড়ি থেকে ১০ বোতল ফেনসিডিল জব্দ করা হয়েছে উল্লেখ করে পরিদর্শক সিরাজুল ইসলাম ভূঞাপুর থানায় মামলা করেন। তবে ছালেহার দাবি, তাঁর বাড়িতে ফেনসিডিল ছিল না। পরিবারের কেউ মাদকের সঙ্গে যুক্ত নয়। ছালেহা বেগম লিখিত অভিযোগে বলেন, অভিযানে অংশ নেওয়া ব্যক্তিরা বাসায় থাকা ৮ লাখ ৪৬ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেছেন।
অভিযোগের ভিত্তিতে ডিএনসি টাঙ্গাইল কার্যালয়ের উপপরিচালক আবুল হোসেন ঘটনা তদন্তে নামেন। এরই মধ্যে গত সোমবার ডিএনসির মহাপরিচালক হাসান মারুফের সই করা অফিস আদেশে তিনজনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। অফিস আদেশে বলা হয়, টাকা আত্মসাতের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তিনজনকে প্রধান কার্যালয়ে সংযুক্তপূর্বক সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা ২০১৮-এর ধারা ১২-এর উপধারা ১ অনুযায়ী সরকারি চাকরি থেকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হলো। মঙ্গলবার দুপুরের মধ্যে তাদের প্রধান কার্যালয়ে যোগদানের নির্দেশ দেওয়া হয়।
ডিএনসির জনসংযোগ কর্মকর্তা মোস্তাক আহমেদ সমকালকে বলেন, অভিযোগের বিষয়ে তিনজনের বিরুদ্ধে প্রাথমিকভাবে সত্যতা পাওয়ায় তাদের সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তদন্ত চলছে। এ ঘটনায় অন্য কেউ দোষী সাব্যস্ত হলে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
টাঙ্গাইল জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক আবুল হোসেন বলেন, অভিযোগ পাওয়ার পর একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। পরে প্রধান কার্যালয়ের নির্দেশে আমি নিজেই তদন্ত করছি।
ছালেহা বেগম সমকালকে জানান, বাসায় মাদক না পেয়ে আভিযানিক দলের সদস্যরা গাড়ির তেল খরচের জন্য ২০ হাজার টাকা দাবি করেন। প্রথমে তিনি দিতে রাজি ছিলেন না। পরে তাদের হুমকিতে ১০ হাজার টাকা দেন। টাকা পেয়ে আভিযানিক দলটি বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। ৫ থেকে ৭ মিনিট পর ফের তারা বাড়িতে ঢোকেন। প্রায় ১৫ মিনিট পর ঘর থেকে বেরিয়ে ১০ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার দেখানো হয়। বক্স খাটের নিচ থেকে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা তারা নিয়ে নেন। এর পর ঘরের আলমারির তালা খুলতে হুমকি দেন ছালেহাকে। ভয়ে তিনি তালা খুলে দিলে সেখানে থাকা ৬ লাখ ৬৬ হাজার টাকা নেন।
ছালেহা বলেন, টাকা ফেরত চাইলে আমাকে ১০-১২টি মামলায় আসামি করা হবে বলে হুমকি দেয় তারা। বাড়িতে ফেনসিডিল পাওয়া গেছে এবং টাকাপয়সা কিছু তারা নেইনি–এমন স্বীকারোক্তি দিতে বলে। আমি রাজি ছিলাম না। তখন মারধর করবে বলে হুমকি দেয়। প্রায় তিন ঘণ্টা আমাকে ভয়ভীতি দেখানোর পর আমি তাদের কথায় রাজি হতে বাধ্য হই। পরে মোবাইল ফোনে স্বীকারোক্তি ভিডিও ধারণ করে নিয়ে যায়।
ডিএনসির ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ের অতিরিক্ত পরিচালক একেএম শওকত ইসলাম সমকালকে বলেন, আইনবিরোধী কাজ করলে তদন্তসাপেক্ষে অভিযুক্ত সবার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: কর মকর ত ড এনস র র চ লক তদন ত সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
শেরপুরে মাদক মামলার আসামিকে ধরতে গিয়ে হামলায় এএসআইসহ আহত ৩
শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলায় মাদক মামলার গ্রেপ্তারি পরোয়ানাভুক্ত আসামিকে ধরতে গিয়ে পুলিশের দুই সদস্যসহ তিনজন হামলার শিকার হয়েছেন। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে পোড়াগাঁও ইউনিয়নের বুরুঙ্গা পোড়াবাড়ি এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
আহত ব্যক্তিরা হলেন পুলিশের সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) ওমর ফারুক, কনস্টেবল নাজমুল আহসান ও স্থানীয় বাসিন্দা শাহীন মিয়া।
এদিকে হামলার ঘটনায় করা মামলায় গতকাল মঙ্গলবার রাতে দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাঁরা হলেন বুরুঙ্গা পোড়াবাড়ি এলাকার হাবিবুর রহমান (৫৫) ও জোহরা বেগম (৪৫)।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার বুরুঙ্গা পোড়াবাড়ি গ্রামের মাজম আলীর (৪০) বিরুদ্ধে একাধিক মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা আছে। গতকাল বিকেল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তাঁকে গ্রেপ্তার করতে যায় নালিতাবাড়ী থানা-পুলিশের একটি দল। এ সময় মাজম আলীসহ কয়েকজন পোড়াবাড়ি এলাকায় একটি পরিত্যক্ত বাড়ির রান্নাঘরে বসে ইয়াবা কেনাবেচা করছিলেন। তখন দলটি অভিযানে গেলে আসামির স্বজনেরা লাঠিসোঁটা নিয়ে পুলিশের ওপর হামলা চালান। এতে ওই এএসআই ও কনস্টেবল আহত হন। আসামির স্বজনদের ঠেকাতে গিয়ে হামলার শিকার হন স্থানীয় বাসিন্দা শাহীন মিয়া। পরে তাঁদের উদ্ধার করে নালিতাবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। সেখানে তাঁদের চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। আজ বুধবার সকাল পর্যন্ত সেখানে চিকিৎসা নিচ্ছেন ওমর ফারুক ও শাহীন মিয়া।
পুলিশ জানায়, হামলার ঘটনার পর গত রাতেই অভিযান চালিয়ে জড়িত সন্দেহে হাবিবুর ও জোহরাকে আটক করা হয়। পরে রাতে মামলার পর তাঁদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে নালিতাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সোহেল রানা বলেন, এ ঘটনায় ইতিমধ্যেই দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্যদের ধরতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে।