সিলেটে চারটি মোটরসাইকেলে এসে যুবলীগ কর্মীর ওপর হামলা, কুপিয়ে জখম
Published: 21st, May 2025 GMT
সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলায় মেহেদী হোসাইন ওরফে আরিফ (৩৯) নামের এক যুবককে কুপিয়ে আহত করেছে দুর্বৃত্তরা। গতকাল মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে হেতিমগঞ্জ বাজার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
মেহেদী হোসাইন উপজেলার মোশাহিদহাটি গ্রামের বাসিন্দা। তিনি যুবলীগের একজন কর্মী হিসেবে পরিচিত বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তাঁরা আরও জানান, গত জুলাই ও আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হামলা-নাশকতার অভিযোগে হওয়া এক মামলায় গত ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে গ্রেপ্তার হন মেহেদী। প্রায় দেড় মাস আগে তিনি জামিনে মুক্তি পান।
মেহেদীর পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, গতকাল রাতে হেতিমগঞ্জ বাজারে একটি দোকানের সামনে গিয়ে চারটি মোটরসাইকেল করে অন্তত সাতজন দুর্বৃত্ত মেহেদীর ওপর হামলা চালায়। এ সময় তাঁকে ধারালো দা দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর জখম করা হয়। হামলাকারীদের সহযোগিতায় পাশেই অন্তত দুটি সিএনজিচালিত অটোরিকশায় আরও কয়েকজন দুর্বৃত্ত ছিল। তাঁরা একপর্যায়ে মেহেদীকে মৃত ভেবে ফেলে চলে যায়।
মেহেদী একসময় যুবলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন বলে জানান তাঁর এক আত্মীয়। তিনি বলেন, মেহেদীকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তিনি এখনো শঙ্কামুক্ত নন। তাঁর হাত ও শরীরে প্রচুর ধারালো আঘাতের চিহ্ন আছে। কয়েক দিন আগে মেহেদীর কাছে কিছু ব্যক্তি মোটা অঙ্কের চাঁদা দাবি করেছিলেন। ওই চাঁদা দাবিকারীরাসহ গ্রামের পূর্ববিরোধে সম্পৃক্ত কিছু ব্যক্তি এই হামলা ঘটিয়েছে। হামলায় জড়িত ব্যক্তিদের মধ্যে বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কর্মীরা আছেন। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।
রাজনৈতিক কারণে এ হামলা ঘটেছে—এমন কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি বলে জানান গোলাপগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান মোল্লা। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, মূলত ব্যবসায়িক দ্বন্দ্ব থেকে এ হামলার ঘটনা ঘটেছে। তবে পুলিশ পুরো বিষয়টি তদন্ত করছে। অভিযোগ পেলে ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আহত ওই যুবকের রাজনৈতিক পরিচয় সম্পর্কে পুলিশ অবহিত নয়।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র জন ত
এছাড়াও পড়ুন:
জেনারেল আসিম মুনির এখন ‘প্রিয় শক্তিশালী মানুষ’
পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল আসিম মুনির দেশের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তি। তবে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারতের সাথে কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ সংঘাতের পর তার জনসমর্থনও বাড়তে শুরু করেছে। এর বদৌলতে রাজনীতিতে পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপ এবং বিরোধীদের উপর কঠোর দমন-পীড়নের অভিযোগ দূরে সরে যাচ্ছে।
জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করার এবং শত্রুকে দৃঢ়ভাবে পরাজিত করার কৌশলগত মেধা ও সাহসী নেতৃত্বের স্বীকৃতিস্বরূপ চলতি সপ্তাহে জেনারেল মুনরিকে ফিল্ড মার্শাল পদে বিরল পদোন্নতি দিয়েছে।
১৯৪৭ সালে স্বাধীনতার পর থেকে সামরিক বাহিনী কমপক্ষে তিন দশক পাকিস্তান শাসন করেছে। এমনকি বেসামরিক সরকার ক্ষমতায় থাকা সত্ত্বেও অসাধারণ প্রভাব বিস্তার করেছে সেনাবাহিনী। কিন্তু বিশ্লেষকরা বলছেন, সম্প্রতি ভারতের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর লড়াই পারমাণবিক অস্ত্রধারী দেশটিতে সেনাবাহিনীর আধিপত্যকে আরো শক্তিশালী করেছে।
সাম্প্রতিক দিনগুলিতে পাকিস্তানের বিভিন্ন শহরে আয়োজিত সমাবেশে থাকা প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল, ‘জেনারেল আসিম মুনির দীর্ঘজীবী হোন!’ ল্যাম্পপোস্ট ও সেতুতে জেনারেলের ছবি টাঙানো হয়েছিল। কিছু ব্যানারে লেখা ছিল: ‘আপনি আমাদের ত্রাণকর্তা!’
স্থানীয় জরিপকারী গ্যালাপ পাকিস্তানের পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে, ৯৩ শতাংশ উত্তরদাতা মনে করেন যে সেনাবাহিনী সম্পর্কে তাদের মতামত উন্নত হয়েছে।
মুনিরের সবচেয়ে তিক্ত অভ্যন্তরীণ শত্রু কারাবন্দি সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানও ভারতের সাথে চলতি মাসে সংঘর্ষের পরে সেনাবাহিনীকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।
ইমরান খান এক পোস্টে বলেছেন, “এটি আমার দেশ, এটি আমার সেনাবাহিনী। আমি পাকিস্তান বিমান বাহিনী এবং আমাদের সব সামরিক কর্মীকে তাদের পেশাদারিত্ব ও অসাধারণ কর্মকাণ্ডের জন্য শ্রদ্ধা জানাই।”
রাজনৈতিক ভাষ্যকার ওসুফ নজর সেনাপ্রধান মুনির সম্পর্কে বলেছেন, “তিনি পাকিস্তানের শক্তিশালী ব্যক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন এবং তার সেনাবাহিনীর সুনাম একটি শক্তিশালীভাবে পুনরুদ্ধার করা হয়েছে।”
২০২২ সালের নভেম্বরে দায়িত্ব নেওয়ার ছয় মাস পর মুনির সামরিক বাহিনীর আধিপত্যের জন্য সবচেয়ে গুরুতর চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হন। ওই সময় ইমরান খানের সমর্থকরা সামরিক স্থাপনাগুলিতে আক্রমণ এবং লুটপাট চালায়। পরে মুনির ইমরান খানকে কারাদণ্ড এবং তার পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ দলের সমর্থকদের উপর দমন-পীড়নের জন্য তীব্র অভ্যন্তরীণ সমালোচনার মুখোমুখি হন। একইসঙ্গে অভিযোগ করা হয়, সাধারণ নির্বাচনে ইমরানের প্রতিদ্বন্দ্বী দলকে কারচুপির মাধ্যমে জিতিয়েছে সেনাবাহিনী।
তবে ভারতের সাথে সংঘাত পরিস্থিতিকে উল্টে দিয়েছে।
পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর উপর লেখা বই ‘মিলিটারি ইনকর্পোরেটেড’ এর লেখক আয়েশা সিদ্দিকা বলেন, “এটি জেনারেলকে পূর্ববর্তী যেকোনো জেনারেলের চেয়ে শক্তিশালী করে তুলেছে। তিনি এখন একজন নায়ক।”
আয়েশা সিদ্দিকা জানান, প্রতিবেশীদের মধ্যে প্রতিযোগিতার নেতৃত্ব দেবেন দুই কট্টরপন্থী- ভারতের হিন্দু জাতীয়তাবাদী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং পাকিস্তানের মুনির যিনি একজন ধর্মপ্রাণ মুসলিম।
পবিত্র কুরআনের হাফেজ জেনারেল মুনির প্রকাশ্যে ইসলামী পাকিস্তান এবং হিন্দু প্রধান ভারতের মধ্যে মৌলিক পার্থক্য তুলে ধরেছেন।
ভারতীয় কাশ্মীরে হামলার এক সপ্তাহ আগে ইসলামাবাদে এক ভাষণে তিনি বলেছিলেন, “আমাদের ধর্ম ভিন্ন। আমাদের রীতিনীতি ভিন্ন। আমাদের ঐতিহ্য ভিন্ন। ভারতীয় সেনাবাহিনী তাদের সব শক্তি দিয়ে পাকিস্তানকে ভয় দেখাতে পারে না। পাকিস্তানকে একটি কঠোর রাষ্ট্র হতে হবে।”
জেনারেল মুনিরই ভারতের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের পাল্টা হামলার নামকরণ করেছিলেন ‘বুনিয়ানুম মারসুস।’ কোরানের আয়াত অনুযায়ী, এর অর্থ সীসা ঢালা প্রাচীর। এটি ১০ মে ফজরের নামাজের সাথে মিল রেখে চালু করা হয়েছিল, যা মুসলমানদের জন্য একটি শুভ সময় হিসেবে বিবেচিত হয়।
স্কুল শিক্ষকের ছেলে মুনির পদাতিক কর্মকর্তা এবং পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা ইন্টার সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্স ও মিলিটারি ইন্টেলিজেন্সের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি ২০২৭ সালের নভেম্বর পর্যন্ত সেনাপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। সরকার চাইলে পরবর্তী পাঁচ বছরের জন্যও তার মেয়াদ বৃদ্ধি করতে পারবে।
যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত সাবেক পাকিস্তানি রাষ্ট্রদূত হুসেন হাক্কানি বলেছেন, সাম্প্রতিক সংঘাতের আগেও মুনির তার পূর্বসূরি সেনাপ্রধানের তুলনায় ভারতের প্রতি বেশি কঠোর ছিলেন।
হাক্কানি বলেন, “ভারতের সাথে সংঘাত পাকিস্তানিদেরকে তাদের দেশের ভঙ্গুরতার কথা মনে করিয়ে দেয় এবং তারা তাদের সেনাবাহিনীকে এমন একটি সত্তা হিসেবে দেখে যেটি দেশকে রক্ষা করবে। ভারতের বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক শক্তি প্রদর্শন এবং দাঁড়ানোর ফলে জেনারেল মুনিরকে দেশের অভ্যন্তরে তার অবস্থান দৃঢ় করতে সাহায্য করেছে।”
ঢাকা/শাহেদ