ফরিদপুরের মধুখালী সদরের বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে নিয়মিত চাঁদা আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন, এতে জড়িত ছাত্রদলের একাধিক নেতাকর্মী। তারা নিম্নমানের ওষুধ লিখতেও চিকিৎসকদের বাধ্য করছেন। 

ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী রেজিস্ট্রার ডা. ইমতিয়াজ হোসেন অর্কের ওপর হামলা ও মামলার পর বিষয়টি জানাজানি হয়েছে। ১১ মে সন্ধ্যায় মধুখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে অবস্থিত একতা ডায়াগনস্টিক সেন্টারের চেম্বারে তাঁর ওপর হামলা হয়। এ ঘটনায় ১৭ মে তিনি ফরিদপুর আদালতে এজাহার দেন। পাঁচ ছাত্রদল নেতাকর্মীর নাম উল্লেখসহ ১৫ থেকে ২০ জনকে অজ্ঞাতপরিচয় আসামি করেন তিনি। এতে হত্যাচেষ্টা ও চাঁদাবাজির অভিযোগ আনা হয়। 

আদালতের নির্দেশে সেদিনই মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করে মধুখালী থানা পুলিশ। আসামিরা হলেন– মধ্য মধুখালী পৌর ছাত্রদলের আহ্বায়ক রজব ইসলাম রনি, উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মিকাইল বিশ্বাস, যুগ্ম আহ্বায়ক রিয়ান রহমান নয়ন, উপজেলা ছাত্রদলের সদস্য টুটুল বিশ্বাস, ছাত্রদলকর্মী নাহিদুর রহমান অপু।

স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে, ছাত্রদলের এই নেতাকর্মীরাই মধুখালীর বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে চাঁদা আদায় করছেন। তারা পছন্দের বেসরকারি এসব প্রতিষ্ঠানে চেম্বার করতে ও নিম্নমানের কোম্পানির ওষুধ লিখতে চিকিৎসকদের চাপ দেন। চাঁদার টাকা মাসিক ভিত্তিতে আদায় করেন নাহিদুর রহমান অপু। যদিও তাঁর দাবি, রাজনৈতিক বড় ভাইদের কথায় টাকা তোলেন।

চিকিৎসক ইমতিয়াজ হোসেন অর্ক উপজেলার রামদিয়া গ্রামের বাসিন্দা। রোগীদের কাছে জনপ্রিয়তাও রয়েছে তাঁর। তিনি তানভীর রহমান শুভর মালিকানাধীন একতা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে চেম্বার করেন। ইমতিয়াজ হোসেনের অভিযোগ, ছাত্রদল নেতা রজব ইসলাম রনির নেতৃত্বে অপু, নয়নসহ অন্যরা ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিকসহ নানা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে চাঁদা আদায় করছেন। তাদের পেছনে আছেন একই দলের এক মনোনয়নপ্রত্যাশী নেতা। একতা ডায়াগনস্টিক ও তাঁর চেম্বারেও ওই ব্যক্তিরা চাঁদা দাবি করে আসছিলেন। এমনকি তাঁকে অন্য একটি ক্লিনিকে চেম্বার করতে দীর্ঘদিন ধরে চাপ দিচ্ছিলেন। 

এতে রাজি না হওয়ায় ওই চক্রটি চিকিৎসক ইমতিয়াজের ওপর ক্ষিপ্ত হয়। তাঁর ভাষ্য, ১১ মে সন্ধ্যায় নিজ চেম্বারে রোগী দেখছিলেন। এ সময় অপুর নেতৃত্বে কয়েকজন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা চালায়। একতা ডায়াগনস্টিকের মালিক শুভ তাঁকে রক্ষায় এগিয়ে এলে তাঁকেও মারধর করা হয়। ইমতিয়াজ বলেন, ‘স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় আমি বেঁচে যাই। পরে ফরিদপুর মেডিকেলে চিকিৎসা নিই।’
ছাত্রদল নেতা মিকাইল বিশ্বাস বলেন, ‘আমি ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলাম। মধুখালীতে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে বিভেদ রয়েছে। আমি সেই প্রতিহিংসার শিকার।’

রজব ইসলাম রনির দাবি, ‘ঘটনার সন্ধ্যায় একতার সামনে ঝামেলা হচ্ছে– এমন খবরে সেখানে যাই। দেখতে পাই, স্থানীয় বাসিন্দা অপুর সঙ্গে একতা ডায়াগনস্টিকের মালিক তানভীর রহমান শুভ কথাকাটি করছেন। অনেক লোক জড়ো হয়ে আছে। আমরা যাওয়ার আগেই মারামারি ঘটে যায়। আমি দুই পক্ষকে শান্ত করে নিরাপদ অবস্থানে পাঠিয়ে দিই। আমি মিলমিশ করিয়ে হলাম মামলার আসামি।’ চাঁদাবাজির অভিযোগ অস্বীকার করেন তিনি।

উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক ওমর ফারুক ও সদস্য সচিব মো.

সাদ্দাম বিশ্বাসের কাছে ছাত্রদলের কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ এসেছে। তারা চিকিৎসকের ওপর হামলার ঘটনায় মামলার কথা জেনে কেন্দ্রে জানিয়েছেন। সত্যতা নিয়ে সিনিয়র নেতারা কাজ করছেন।
জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক তানজিমুল হাসান কায়েসের ভাষ্য, ছাত্রদলের কোনো নেতাকর্মী চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি বা কোনো অন্যায়ে জড়িত নন। মধুখালীর মামলাটি অন্তর্কোন্দলের ব্যাপার। মারামারির সংবাদ পেয়ে অভিভাবক হিসেবে রজব ইসলাম রনি ঝামেলা মিটিয়ে দিয়ে আসে। রাজনৈতিক হিংসা ব্যবহার করে হেয় করতেই রনিকে আসামি করা হয়েছে বলেও দাবি করেন।

মধুখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম নুরুজ্জামান বলেন, ঘটনাটির গুরুত্ব বিবেচনায় নিয়ে মামলাটির তদন্ত চলছে। আসামি গ্রেপ্তারে তাদের অভিযানও চলছে। 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ছ ত রদল ড য় গনস ট ক স ন ট র ছ ত রদল র ন ত কর ম ইমত য় জ র রহম ন উপজ ল র ওপর করছ ন

এছাড়াও পড়ুন:

ম্যাচ রেফারি পাইক্রফ্ট ক্ষমা চাওয়ার পরই খেলতে রাজি হয়েছিল পাকিস্তান

সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে বাঁচা-মরার ম্যাচে টসের আগ পর্যন্ত দারুণ নাটকীয়তায় ঘেরা ছিল পাকিস্তানের ড্রেসিং রুম। ম্যাচ রেফারি অ্যান্ডি পাইক্রফ্টকে দায়িত্ব থেকে সরানোর দাবি তোলে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি)। তবে আইসিসি সে দাবি আমলে নেয়নি। শেষ পর্যন্ত নিজের ভুল স্বীকার করে পাকিস্তান অধিনায়ক সালমান আলী আগা ও দলের ম্যানেজারের কাছে ক্ষমা চান পাইক্রফ্ট। এরপরই মাঠে নামতে রাজি হয় পাকিস্তান দল।

ঘটনার সূত্রপাত ১৪ সেপ্টেম্বরের ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ থেকে। টসের সময় দুই অধিনায়কের করমর্দন হয়নি। আরও বড় বিতর্ক তৈরি হয় ম্যাচ শেষে। জয়ী ভারতের ক্রিকেটাররা করমর্দন এড়িয়ে দ্রুত ড্রেসিং রুমে ফিরে যান। সালমান আলী আগার নেতৃত্বে পাকিস্তানের খেলোয়াড়রা দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করলেও সূর্যকুমার যাদব, শিভাম দুবেসহ পুরো ভারতীয় দল সেই শিষ্টাচার মানেনি।

আরো পড়ুন:

আজ মুখোমুখি শ্রীলঙ্কা-আফগানিস্তান, যে ম্যাচে ঝুলছে বাংলাদেশের ভাগ্য

আমিরাতকে হারিয়ে সুপার ফোরে পাকিস্তান

এমন ঘটনার প্রতিবাদে পাকিস্তান অধিনায়ক পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান বর্জন করেন। পরে আইসিসির কাছে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ জানায় পিসিবি। তাদের দাবি ছিল, ম্যাচ রেফারি পাইক্রফ্ট ইচ্ছাকৃতভাবেই দুই অধিনায়কের হাত মেলানো আটকান, যা আইসিসির আচরণবিধি ও ক্রিকেটের স্পিরিটের পরিপন্থী।

যদিও আইসিসির ব্যাখ্যা ছিল ভিন্ন। তারা জানায়, এসিসির কর্মকর্তাদের নির্দেশেই কাজ করেছেন পাইক্রফ্ট। কিন্তু পাকিস্তান নড়েচড়ে বসে। এমনকি জানিয়ে দেয়, পাইক্রফ্ট দায়িত্বে থাকলে সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে মাঠে নামবে না তারা। এই হুমকির কারণে ম্যাচের শুরুর সময় এক ঘণ্টা পিছিয়ে দিতে বাধ্য হয় আয়োজকরা।

লাহোরে রমিজ রাজা, নাজাম শেঠিসহ শীর্ষ কর্মকর্তাদের নিয়ে জরুরি বৈঠক করেন পিসিবি চেয়ারম্যান মহসিন নাকভি। পরে সমঝোতার পথ খোঁজা হয়। অবশেষে পাইক্রফ্ট স্বীকার করেন, ভুল বোঝাবুঝির কারণেই পরিস্থিতি এতদূর গড়ায়, এবং তিনি পাকিস্তান অধিনায়ক ও ম্যানেজারের কাছে ক্ষমা চান। তাতেই সন্তুষ্ট হয়ে মাঠে নামার সিদ্ধান্ত নেয় পাকিস্তান দল।

বুধবার রাতে ‘এ’ গ্রুপে নিজেদের সেই শেষ ম্যাচে আরব আমিরাতকে ৪১ রানের ব্যবধানে হারিয়ে সুপার ফোরে ভারতের সঙ্গী হয় সালমান-শাহীনরা। দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে পাকিস্তান সংগ্রহ করে ৯ উইকেটে ১৪৯ রান। লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ১৭.৪ ওভারে ১০৫ রানেই গুটিয়ে যায় আরব আমিরাত।

ঢাকা/আমিনুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ