নিম্নমানের ওষুধ লিখতে ‘চাপে’ চিকিৎসকরা
Published: 21st, May 2025 GMT
ফরিদপুরের মধুখালী সদরের বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে নিয়মিত চাঁদা আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন, এতে জড়িত ছাত্রদলের একাধিক নেতাকর্মী। তারা নিম্নমানের ওষুধ লিখতেও চিকিৎসকদের বাধ্য করছেন।
ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী রেজিস্ট্রার ডা. ইমতিয়াজ হোসেন অর্কের ওপর হামলা ও মামলার পর বিষয়টি জানাজানি হয়েছে। ১১ মে সন্ধ্যায় মধুখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে অবস্থিত একতা ডায়াগনস্টিক সেন্টারের চেম্বারে তাঁর ওপর হামলা হয়। এ ঘটনায় ১৭ মে তিনি ফরিদপুর আদালতে এজাহার দেন। পাঁচ ছাত্রদল নেতাকর্মীর নাম উল্লেখসহ ১৫ থেকে ২০ জনকে অজ্ঞাতপরিচয় আসামি করেন তিনি। এতে হত্যাচেষ্টা ও চাঁদাবাজির অভিযোগ আনা হয়।
আদালতের নির্দেশে সেদিনই মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করে মধুখালী থানা পুলিশ। আসামিরা হলেন– মধ্য মধুখালী পৌর ছাত্রদলের আহ্বায়ক রজব ইসলাম রনি, উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মিকাইল বিশ্বাস, যুগ্ম আহ্বায়ক রিয়ান রহমান নয়ন, উপজেলা ছাত্রদলের সদস্য টুটুল বিশ্বাস, ছাত্রদলকর্মী নাহিদুর রহমান অপু।
স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে, ছাত্রদলের এই নেতাকর্মীরাই মধুখালীর বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে চাঁদা আদায় করছেন। তারা পছন্দের বেসরকারি এসব প্রতিষ্ঠানে চেম্বার করতে ও নিম্নমানের কোম্পানির ওষুধ লিখতে চিকিৎসকদের চাপ দেন। চাঁদার টাকা মাসিক ভিত্তিতে আদায় করেন নাহিদুর রহমান অপু। যদিও তাঁর দাবি, রাজনৈতিক বড় ভাইদের কথায় টাকা তোলেন।
চিকিৎসক ইমতিয়াজ হোসেন অর্ক উপজেলার রামদিয়া গ্রামের বাসিন্দা। রোগীদের কাছে জনপ্রিয়তাও রয়েছে তাঁর। তিনি তানভীর রহমান শুভর মালিকানাধীন একতা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে চেম্বার করেন। ইমতিয়াজ হোসেনের অভিযোগ, ছাত্রদল নেতা রজব ইসলাম রনির নেতৃত্বে অপু, নয়নসহ অন্যরা ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিকসহ নানা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে চাঁদা আদায় করছেন। তাদের পেছনে আছেন একই দলের এক মনোনয়নপ্রত্যাশী নেতা। একতা ডায়াগনস্টিক ও তাঁর চেম্বারেও ওই ব্যক্তিরা চাঁদা দাবি করে আসছিলেন। এমনকি তাঁকে অন্য একটি ক্লিনিকে চেম্বার করতে দীর্ঘদিন ধরে চাপ দিচ্ছিলেন।
এতে রাজি না হওয়ায় ওই চক্রটি চিকিৎসক ইমতিয়াজের ওপর ক্ষিপ্ত হয়। তাঁর ভাষ্য, ১১ মে সন্ধ্যায় নিজ চেম্বারে রোগী দেখছিলেন। এ সময় অপুর নেতৃত্বে কয়েকজন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা চালায়। একতা ডায়াগনস্টিকের মালিক শুভ তাঁকে রক্ষায় এগিয়ে এলে তাঁকেও মারধর করা হয়। ইমতিয়াজ বলেন, ‘স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় আমি বেঁচে যাই। পরে ফরিদপুর মেডিকেলে চিকিৎসা নিই।’
ছাত্রদল নেতা মিকাইল বিশ্বাস বলেন, ‘আমি ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলাম। মধুখালীতে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে বিভেদ রয়েছে। আমি সেই প্রতিহিংসার শিকার।’
রজব ইসলাম রনির দাবি, ‘ঘটনার সন্ধ্যায় একতার সামনে ঝামেলা হচ্ছে– এমন খবরে সেখানে যাই। দেখতে পাই, স্থানীয় বাসিন্দা অপুর সঙ্গে একতা ডায়াগনস্টিকের মালিক তানভীর রহমান শুভ কথাকাটি করছেন। অনেক লোক জড়ো হয়ে আছে। আমরা যাওয়ার আগেই মারামারি ঘটে যায়। আমি দুই পক্ষকে শান্ত করে নিরাপদ অবস্থানে পাঠিয়ে দিই। আমি মিলমিশ করিয়ে হলাম মামলার আসামি।’ চাঁদাবাজির অভিযোগ অস্বীকার করেন তিনি।
উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক ওমর ফারুক ও সদস্য সচিব মো.
জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক তানজিমুল হাসান কায়েসের ভাষ্য, ছাত্রদলের কোনো নেতাকর্মী চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি বা কোনো অন্যায়ে জড়িত নন। মধুখালীর মামলাটি অন্তর্কোন্দলের ব্যাপার। মারামারির সংবাদ পেয়ে অভিভাবক হিসেবে রজব ইসলাম রনি ঝামেলা মিটিয়ে দিয়ে আসে। রাজনৈতিক হিংসা ব্যবহার করে হেয় করতেই রনিকে আসামি করা হয়েছে বলেও দাবি করেন।
মধুখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম নুরুজ্জামান বলেন, ঘটনাটির গুরুত্ব বিবেচনায় নিয়ে মামলাটির তদন্ত চলছে। আসামি গ্রেপ্তারে তাদের অভিযানও চলছে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ছ ত রদল ড য় গনস ট ক স ন ট র ছ ত রদল র ন ত কর ম ইমত য় জ র রহম ন উপজ ল র ওপর করছ ন
এছাড়াও পড়ুন:
গাজায় ইসরায়েলি হামলায় আরো ৮১ ফিলিস্তিনি নিহত
গাজায় যুদ্ধবিরতির আলোচনা চললেও জোরদার হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েল। চিকিৎসা সূত্র ও স্থানীয় প্রতিবেদন অনুসারে, রবিবার (৬ জুলাই) গাজা উপত্যকায় ধারাবাহিক ইসরায়েলি বিমান হামলায় শিশুসহ কমপক্ষে ৮১ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। খবর আনাদোলু এজেন্সির।
একটি চিকিৎসা সূত্র জানিয়েছে, গাজা সিটিতে, শেখ রাদওয়ান এবং আল-নাসর পাড়ায় বাস্তুচ্যুত পরিবারগুলোকে আশ্রয় দেওয়া দুটি বাড়িতে ইসরায়েলি যুদ্ধবিমানের বোমা হামলায় ২৫ জন নিহত হয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, গভীর রাতে পরিবারগুলো যখন ঘুমে ছিল, তখন বিমান হামলা চালায় ইসরায়েল। নিহতদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়ে রয়েছে বেশ কয়েকজন।
আরো পড়ুন:
গাজায় মানবিক সহায়তা পাঠালেন জবি শিক্ষার্থীরা
গাজায় যুদ্ধ বিরতির আলোচনায় প্রতিনিধি পাঠাবে ইসরায়েল
আল-আওদা হাসপাতালের এক বিবৃতি অনুসারে, মধ্য গাজায় একটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রের কাছে বেসামরিক নাগরিকদের ওপর ইসরায়েলি সেনাবাহিনী গুলি চালিয়ে চার ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে। এ ঘটনায় আরো ২৫ জন আহত হয়েছেন।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, গাজা সিটি এবং মধ্য গাজার নুসাইরাত শরণার্থী শিবিরে দুটি বেসামরিক সমাবেশে ইসরায়েলি যুদ্ধবিমানের হামলায় ছয়জন নিহত এবং আরো বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন।
উত্তর গাজা সিটির আল-সাফতাউই পাড়ায় একটি বেসামরিক গাড়িতেও একটি ইসরায়েলি ড্রোন হামলা চালিয়ে তিন ভাইকে হত্যা করেছে।
স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের মতে, শেখ রাদওয়ানে বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের আশ্রয়কেন্দ্রে আরেকটি ইসরায়েলি ড্রোন হামলায় তিনজন নিহত এবং আরো বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন।
পশ্চিম গাজা সিটিতে, শাতি শরণার্থী শিবিরের একটি স্কুলে ইসরায়েলি বিমান হামলায় শিশুসহ সাতজন নিহত হয়েছেন বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।
গাজা সিটির অন্যত্র, আল-তুফাহ পাড়ার একটি আবাসিক বাড়িতে ইসরায়েলি হামলায় কমপক্ষে দুজন নিহত এবং আরো অনেকে আহত হয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, বিপজ্জনক নিরাপত্তা পরিস্থিতির কারণে চিকিৎসা দল তাদের কাছে পৌঁছাতে পারেনি।
উত্তর গাজা সিটিতে একটি গাড়িতে ইসরায়েলি ড্রোন হামলায় তিনজন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
আল-আহলি ব্যাপটিস্ট হাসপাতালের একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে যে, রাতে গাজা সিটির আল-দারাজ পাড়ায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় একই পরিবারের তিনজন নিহত এবং আরো কয়েকজন আহত হয়েছেন।
দক্ষিণ গাজায়, খান ইউনিসের আল-মাওয়াসি এলাকায় বাস্তুচ্যুত বেসামরিক নাগরিকদের জন্য তৈরি অস্থায়ী তাঁবুতে ইসরায়েলি বিমান হামলায় শিশু ও একজন গর্ভবতী নারীসহ কমপক্ষে ১০ জন নিহত হয়েছেন, নাসের ও কুয়েত ফিল্ড হাসপাতালের মেডিকেল টিম এ তথ্য জানিয়েছে।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, খান ইউনিসের আল-আলবানি মসজিদের কাছে তাঁবুতে আরেকটি ড্রোন হামলার পর ধ্বংসস্তূপ থেকে তিন শিশুসহ আরো চার জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
ইসরায়েলি বাহিনী রাতভর পূর্ব গাজা শহর এবং ছিটমহলের উত্তর অংশে আবাসিক ও বেসামরিক স্থাপনাগুলোতে বোমাবর্ষণ করেছে, বাসিন্দারা সারা রাত ধরে ক্রমাগত বিস্ফোরণের খবর দিয়েছে।
মধ্য গাজায়, দেইর আল-বালাহ উপকূলে কাজ করার সময় ইসরায়েলি গোলাবর্ষণে একজন ফিলিস্তিনি জেলে আহত হয়েছেন।
মধ্য গাজার নুসেইরাত শরণার্থী শিবিরে একটি তাঁবুতে ইসরায়েলি ড্রোন হামলায় একই পরিবারের আটজন নিহত হয়েছেন।
আরেকটি হামলায়, একই শরণার্থী শিবিরে তিনজন নিহত হয়েছেন। ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে পড়াদের উদ্ধারের অভিযান এখনও চলছে।
আন্তর্জাতিকভাবে যুদ্ধবিরতির আহ্বান সত্ত্বেও ইসরায়েল গাজায় নির্বিচার হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে চলমান সামরিক অভিযানে ৫৭ হাজার ৪০০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।
ঢাকা/ফিরোজ