সাম্য হত্যার বিচার না হলে রাজপথ ছাড়ব না: ছাত্রদল সভাপতি
Published: 22nd, May 2025 GMT
দ্রুত সময়ের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) শিক্ষার্থী শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যার ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তার ও বিচার নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব। বিচার না হলে রাজপথে থেকে বৃহত্তর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার (২২ মে) বেলা পৌনে ১১টায় সাম্য হত্যার বিচার দাবিতে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা শাহবাগ মোড় অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন। এসময় ‘বিচার বিচার বিচার চাই, সাম্য হত্যার বিচার চাই’, ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিজ জাস্টিস’, ‘আমার ভাই কবরে, খুনি কেন বাহিরে’ ,‘রক্তের বন্যায়, ভেসে যাবে অন্যায়’, ‘আমার ভাইয়ের রক্ত বৃথা যেতে দেবো না’, ‘আমার বাড়ি কবরে, প্রশাসন কী করে’ এমন নানা স্লোগান দেন।
রাকিবুল ইসলাম রাকিব বলেন, “সাম্য হত্যার সঠিক বিচার এবং মূল ঘাতকরা গ্রেপ্তার না হওয়া পর্যন্ত ছাত্রদল রাজপথ ছেড়ে যাবে না। সাম্য হত্যার ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তদন্ত করছে। তবে তাদের সঙ্গে কথা বলে মনে হয়েছে, তারা নিজেরাও দ্বিধান্বিত। সত্যিকার অর্থে সাম্য হত্যার ঘটনায় কত জন জড়িত ছিল, আজকের দিন পর্যন্ত তারা শনাক্ত করতে পেরেছে বলে মনে হয়নি৷”
তিনি বলেন, “মামলাটি ডিবিতে হস্তান্তর করা হয়েছে৷ ডিবি চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই, এখানে অবশ্যই সরকারের দায় রয়েছে৷ তারা আজকের দিন পর্যন্ত এ বিষয়ে স্পষ্ট কোনো বক্তব্য দেয়নি। তারা সাম্য হত্যার ঘটনায় সহমর্মিতা দেখায়নি। এমনকি জানাজায় অংশগ্রহণ করার প্রয়োজন মনে করেনি। আমরা তাদের এ ধরনের সদিচ্ছা বা সহমর্হিতা জ্ঞাপন না করার কারণে ঘৃণা প্রকাশ করছি, ধিক্কার জানাচ্ছি।”
ছাত্রদলের সভাপতি বলেন, “আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই, সাম্য হত্যার সঠিক বিচার না পেলে এবং মূল ঘাতকদের গ্রেপ্তার করা না হলে রাজপথ ছেড়ে যাবো না। আমরা আরো বৃহত্তর কর্মসূচিতে যাবো। আমরা আজকে তাদের আবার আহ্বান জানাচ্ছি, দ্রুত সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে এই বিষয়ের সুরাহা করতে হবে।”
তিনি আরো বলেন, “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হত্যার বিচার সুনিশ্চিত হচ্ছে না, তাহলে রাষ্ট্রের নাগরিক যারা রয়েছে তাদের পরিণতি কী হতে পারে? সামনে আরো অনেক সংকট রয়েছে৷ অন্তর্বর্তী সরকার নয় মাস সময় পেয়েছে। এই নয় মাসে তারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দৃশ্যমান উন্নতি এবং অন্যান্য সেক্টরে দৃশ্যমান সংস্কার আমাদের উপহার দিতে পারেনি। আমরা সেদিকে এখনি যাচ্ছি না। আমরা আমাদের ভাই হত্যার বিচার চাচ্ছি।”
গত ১৩ মে রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় শাহরিয়ার আলম সাম্যকে ছুরিকাঘাত করে একদল দুর্বৃত্ত। রক্তাক্ত অবস্থায় রাত ১২টার দিকে সহপাঠীরা তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক সাম্যকে মৃত ঘোষণা করেন।
সাম্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র ও এফ রহমান হল ছাত্রদলের সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের এফ রহমান হলের ২২২ নম্বর কক্ষে থাকতেন তিনি।
গত ১৪ মে সকালে সাম্যের বড় ভাই শরীফুল ইসলাম শাহবাগ থানায় ১০ থেকে ১২ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলা দায়েরের পর তিন জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ১৫ মে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়। আদালত ছয় দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
ঢাকা/রায়হান/ইভা
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর হত য র ব চ র ছ ত রদল র র জপথ
এছাড়াও পড়ুন:
টাঙ্গাইলে সহকারী শিক্ষকের অনুপস্থিতিতে প্রাথমিকের পরীক্ষার হলে দায়িত্বে অভিভাবকেরা
পরীক্ষার হলে নেই চেনা শিক্ষকেরা, প্রশ্নপত্র হাতে নিয়ে কক্ষ পরিদর্শকের ভূমিকায় দাঁড়িয়েছেন অভিভাবকেরা। কোথাও বাবা দায়িত্বে, কোথাও মা হাঁটাহাঁটি করছেন বেঞ্চের ফাঁকে। তিন দফা দাবিতে সহকারী শিক্ষকদের অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতির মধ্যে টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে আজ সোমবার এই দৃশ্য দেখা গেছে।
অভিভাবকেরা জানান, প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষকদের কর্মবিরতি শুরু হলে উপজেলাজুড়ে বার্ষিক পরীক্ষা গ্রহণ নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দেয়। এমন অবস্থায় বাধ্য হয়ে প্রধান শিক্ষকেরা অভিভাবকদের ডাকছেন। আর সেই ডাকে সাড়া দিতে গিয়ে তাঁরা এই দায়িত্ব পালন করছেন।
আরও পড়ুন‘স্কুলে আসার পর স্যাররা বলল আজ পরীক্ষা হবে না’৪৮ মিনিট আগেশিক্ষকদের সূত্রে জানা যায়, বেতন গ্রেড উন্নীতকরণসহ তিন দফা বাস্তবায়নের দাবিতে সারা দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকেরা গত বৃহস্পতিবার থেকে কর্মবিরতি পালন করছেন। কর্মসূচিতে বার্ষিক পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দেন তাঁরা। আজ সখীপুর উপজেলার ১৪৭টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বার্ষিক পরীক্ষা শুরু হয়েছে। কেন্দ্রীয় নেতাদের নতুন সিদ্ধান্ত না আসায় আন্দোলনকারী সহকারী শিক্ষকেরা বার্ষিক পরীক্ষায় দায়িত্ব পালন করছেন না। তাই বাধ্য হয়ে প্রধান শিক্ষকেরা অভিভাবকদের সঙ্গে নিয়ে পরীক্ষা চালিয়ে যাচ্ছেন।
আজ সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সখীপুর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, সহকারী শিক্ষকেরা অফিস কক্ষে বসে আছেন। পরীক্ষার হলগুলোতে দায়িত্ব পালন করছেন অভিভাবকেরা। তবে দু-একটি কক্ষে অভিভাবক বা দায়িত্বপ্রাপ্ত কেউ ছিলেন না। পরে প্রধান শিক্ষক আগ্রহী অভিভাবকদের খুঁজে এনে কক্ষের দায়িত্ব দিচ্ছিলেন।
শিক্ষকদের পরিবর্তে অভিভাবক দিয়ে পরীক্ষা চালানো মোটেই ঠিক হচ্ছে না। কারণ, তাঁরা এ বিষয়ে অভিজ্ঞ নন।ফারজানা আক্তার, অভিভাবকউপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার নির্দেশে পরীক্ষা চালিয়ে নেওয়া হচ্ছে বলে জানান বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক শাহীনা আখতার। তিনি বলেন, ‘সহকারী শিক্ষকেরা আমাকে কোনো সহযোগিতা করছেন না। এমনকি অভিভাবকদেরও পরীক্ষার হলে দায়িত্ব পালনে বাধা দিচ্ছেন।’ তবে অভিযোগটি অস্বীকার করে ওই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আফরোজা আক্তার বলেন, ‘আমরা পরীক্ষার চালাতে কোনো বাধা দিচ্ছি না, তবে সহযোগিতাও করছি না। প্রধান শিক্ষকই আমাদের সঙ্গে ভালো আচরণ করছেন না।’
এদিকে পরীক্ষা গ্রহণে এমন বিশৃঙ্খল পরিবেশ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন কয়েকজন অভিভাবক। তাঁরা বিদ্যালয়টির মূল ফটকের সামনে হইচই করে প্রতিবাদও জানিয়েছেন। ফারজানা আক্তার নামের এক অভিভাবক বলেন, শিক্ষকদের পরিবর্তে অভিভাবক দিয়ে পরীক্ষা চালানো মোটেই ঠিক হচ্ছে না। কারণ, তাঁরা এ বিষয়ে অভিজ্ঞ নন।
আরও পড়ুন‘শিক্ষার্থীদের জিম্মি করা, বাজে নজির হয়ে থাকবে’৩ ঘণ্টা আগেআরেকজন অভিভাবক নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, সহকারী শিক্ষকেরা কর্মবিরতি পালন করছেন, এটা ভালো কথা। কিন্তু খুদে শিক্ষার্থীদের দিকে তাকিয়ে নিজেদের দায়িত্ব পালন করা উচিত ছিল।
এ ছাড়া পরীক্ষার হলে অভিভাবকদের দায়িত্ব পালনের সময় নিরপেক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অভিভাবকদের কেউ কেউ। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক অভিভাবক বলেন, ‘যেসব অভিভাবক পরীক্ষার দায়িত্ব পালন করেছেন, তাঁরা নিজেদের ও পরিচিত শিক্ষার্থীদের প্রশ্নের উত্তর বলে দিয়েছেন।
পরীক্ষা গ্রহণে কোনো ধরনের স্বজনপ্রীতি হচ্ছে বলে দাবি করেছেন সখীপুর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দায়িত্বরত এক অভিভাবক। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এই ব্যক্তি বলেন, ‘আমার বাচ্চা যে কক্ষে বসে পরীক্ষা দিচ্ছিল, সে কক্ষে দায়িত্ব পালন করিনি। আমি চেষ্টা করেছি, সহকারী শিক্ষকদের মতোই দায়িত্ব পালন করতে। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের অনুরোধেই মূলত এটি করেছি।’
আমার বাচ্চা যে কক্ষে বসে পরীক্ষা দিচ্ছিল, সে কক্ষে দায়িত্ব পালন করিনি। আমি চেষ্টা করেছি, সহকারী শিক্ষকদের মতোই দায়িত্ব পালন করতে। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের অনুরোধেই মূলত এটি করেছি।পরীক্ষার হলে দায়িত্বরত এক অভিভাবকআরও পড়ুন‘স্কুলে এসে দেখছি পরীক্ষা স্থগিত’৫ ঘণ্টা আগেউপজেলার দু–একটি বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষকদের চাপ প্রয়োগ করে পরীক্ষা গ্রহণের দায়িত্ব পালনে বাধ্য করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন কালিদাস সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ও কেন্দ্রীয় দাবি বাস্তবায়ন কমিটির সক্রিয় কর্মী মুক্তি মালেক। তিনি বলেন, তবে অধিকাংশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকেরা বার্ষিক পরীক্ষার দায়িত্ব থেকে বিরত ছিলেন।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মাসুদুর রহমান বলেন, ‘প্রাথমিক অধিদপ্তর থেকে বার্ষিক পরীক্ষা চালানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সে অনুযায়ী উপজেলার প্রতিটি বিদ্যালয়ে বার্ষিক পরীক্ষা চলছে। তবে কিছু বিদ্যালয়ে অভিভাবকেরা পরীক্ষার দায়িত্ব পালন করেছেন বলে শুনেছি ও দেখেছি। তবে আমি মনে করি, সহকারী শিক্ষকদের অন্তত পরীক্ষার দায়িত্ব পালন করা উচিত।’