আদালতে সাবেক খাদ্য উপমন্ত্রী ধীরেন্দ্র দেবনাথকে লক্ষ্য করে ডিম নিক্ষেপ
Published: 22nd, May 2025 GMT
বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি, সাবেক সংসদ সদস্য ও খাদ্য উপমন্ত্রী ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুকে বরগুনার অতিরিক্ত মুখ্য হাকিম আদালতে হাজির করা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার দুপুর সোয়া ২টার দিকে তাকে আদালতে তোলা হয়। এ সময় শম্ভুর আইনজীবীরা জামিন আবেদন করলে বিচারক মো. মনিরুজ্জামান শুনানি শেষে তা নামঞ্জুর করে কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দেন।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, আজ দুপুর ১২টার দিকে ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে শম্ভুকে বরগুনা কারাগারে আনা হয়। সেখান থেকে আদালতে তোলার সময় বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। এ সময় আদালত চত্বরের সামনে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা শম্ভুকে উদ্দেশ্য করে ‘ভোট চোর, ভোট চোর, ভুয়া, ভুয়া’ প্রভৃতি শ্লোগান দিতে থাকে। একপর্যায়ে আদালত থেকে নিয়ে যাওয়ার সময় গাড়িতে ডিম নিক্ষেপ করে বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা। পরিস্থিতি বিবেচনায় আদালত চত্বরে নৌ-বাহিনীর সদস্যসহ ব্যাপক আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়।
প্রসঙ্গত, বরগুনায় ২০২৩ সালের ১৭ মার্চ জেলা বিএনপির কার্যালয় ভাঙচুর, সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে অগ্নিসংযোগ এবং হাতবোমা ফাটিয়ে নৈরাজ্য সৃষ্টি করার অভিযোগে গত ৩০ এপ্রিল বরগুনা সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন বরগুনা জেলা বিএনপির প্রয়াত সাধারণ সম্পাদক এসএম নজরুল ইসলামের ছেলে এসএম নঈমুল ইসলাম। ওই মামলায় শম্ভুকে এক নম্বর আসামি করে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের ১৫৮ জনকে আসামি করা হয়।
এর আগে শেখ হাসিনার পতনের পর দীর্ঘদিন গা ঢাকা দিয়ে ছিলেন পাঁচবারের সংসদ সদস্য শম্ভু। পরে ২০২৪ সালের ১২ নভেম্বর রাজধানীর উত্তরা থেকে মহানগর গোয়েন্দা শাখার একটি টিম তাকে গ্রেপ্তার করে। এরপর তাকে নিউমার্কেট থানায় আন্দোলন চলাকালে নিহত ব্যবসায়ী ওয়াদুদ হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। এ ছাড়াও আশুলিয়া থানার অন্য একটি মামলায়ও তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
বরগুনার পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) মো.
তিনি আরও বলেন, শম্ভুর বিরুদ্ধে আরও কোনো অপরাধে অভিযোগ আছে কিনা সেটাও আমরা রাষ্ট্রকে জানানোর চেষ্টা করবো।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: আওয় ম ল গ ন ত জ র কর সদস য ব এনপ বরগ ন
এছাড়াও পড়ুন:
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন বিষয়ে আদেশ ১০ জুলাই
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন বিষয়ে আদেশের জন্য ১০ জুলাই তারিখ ধার্য করা হয়েছে।
বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ আজ সোমবার এই তারিখ ধার্য করেন। ট্রাইব্যুনালে অপর দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
মামলায় শেখ হাসিনার পাশাপাশি সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন আসামি। আসামিদের মধ্যে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান পলাতক। তাঁদের পক্ষে আমির হোসেন রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী।
অভিযোগ গঠন বিষয়ে ট্রাইব্যুনালের আজকের শুনানিতে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খানের অব্যাহতির আবেদন করেন তাঁদের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন।
শুনানিতে আমির হোসেন বলেন, শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খানের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত অপরাধের সঙ্গে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খানের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। তাঁরা সম্পূর্ণ নির্দোষ ও নিরপরাধ।
আমির হোসেন বলেন, ২০০৯ সাল থেকে শেখ হাসিনা পদ্মাসেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড করেছেন। শেখ হাসিনা আন্দোলনকারীদের নির্মূল করার নির্দেশ দেননি। তাঁর জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে তাঁর বিরুদ্ধে মামলায় সুপিরিয়র রেসপনসেবলিটির (সর্বোচ্চ দায়) অভিযোগ আনা হয়েছে। আসাদুজ্জামান খানও সুনামের সঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। এই দুই আসামির বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ উদ্দেশ্যমূলক ও কাল্পনিক।
শুনানিতে আমির হোসেন বলেন, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় ৩০ লাখ বাংলাদেশিকে হত্যা ও ২ লাখ মা-বোনেরা ইজ্জত নষ্ট করা হয়েছিল। সে সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য এই আইন (আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন) করা হয়েছে। ২০২৪ সালে দেশে কোনো যুদ্ধ হয়নি। এমন আন্দোলন আরও হয়েছে। তাই এই আইনে জুলাইয়ের মতো ঘটনার বিচার করা যায় না।
শুনানিতে আমির হোসেন বলেন, শেখ হাসিনা আন্দোলনকারীদের রাজাকারের নাতিপুতি বলেননি। তাঁর বক্তব্যের অপব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে জুলাই আন্দোলনকারীদের লাশ কবর দিতে বাধা, লাশে আগুন দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে। এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন ও মনগড়া, যার কোনো দালিলিক প্রমাণ নেই।
শুনানিতে আমির হোসেন বলেন, রংপুরে আবু সাঈদকে হত্যার যে অভিযোগ শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আনা হয়েছে, তাও সত্য নয়। আবু সাঈদ হত্যায় তিনি মর্মাহত হয়েছিলেন। এমনকি তাঁর পরিবারকে ঢাকায় এনে শেখ হাসিনা সাহায্য করেছেন।
শুনানিতে আমির হোসেন বলেন, রাজধানীর চানখাঁরপুলে ছয়জনকে হত্যা এবং আশুলিয়ায় ছয়জনের লাশে আগুন দেওয়ার ঘটনা শেখ হাসিনা দেশ ছাড়ার পর ঘটেছে। এসব অভিযোগও ভিত্তিহীন।
এসব যুক্তির ভিত্তিতে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলা থেকে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খানের অব্যাহতি চান রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন।
মামলার অপর আসামি পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন গ্রেপ্তার আছেন। তাঁকে আজ ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। তাঁর আইনজীবী জানান, অভিযোগ গঠন বিষয়ে শুনানিতে তিনি অংশ নেবেন না।
আজ শুনানির পর ট্রাইব্যুনাল এই মামলায় আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন বিষয়ে আদেশের জন্য তারিখ ধার্য করেন।