ঘুমন্ত ভাইকে হত্যা, লাশ নিয়ে পালাতে গিয়ে আটক স্বামী-স্ত্রী
Published: 22nd, May 2025 GMT
চট্টগ্রামে মো. সাহেদ (৩৫) নামে এক ব্যক্তিকে ঘুমন্ত অবস্থায় ছুরিকাঘাতে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। বুধবার গভীর রাতে নগরের চান্দগাঁও আবাসিক এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। লাশ নিয়ে পালানোর সময় সাহেদের ছোট ভাই মো. জাহেদ ও তার স্ত্রী তাসমিন বিনতে আসলাম ওহিকে আটক করেছে পুলিশ। নিহত সাহেদ রাউজান থানার নোয়াপাড়া হাজি মীর হোসেন সওদাগর বাড়ির মৃত জালাল আহম্মদের ছেলে।
পুলিশ জানায়, এক সময় দুবাই থাকতেন সাহেদ ও জাহেদ। বছরখানেকের ব্যবধানে দু’জনেই দেশে ফেরেন। তাদের বাবা মারা গেছেন। আরেক ভাই মা ও তাঁর পরিবার নিয়ে দুবাই থাকেন। চান্দগাঁও আবাসিক এলাকায় বি-ব্লকের ২ নম্বর সড়কের একটি ভবনের চতুর্থ তলায় সাহেদ, জাহেদ ও তাঁর স্ত্রী তাসমিন থাকতেন। কয়েক মাস আগে সাহেদের সঙ্গে তাঁর স্ত্রীর বিচ্ছেদ হয়েছে। জাহেদ ও তাসমিন রাতভর ইয়াবা সেবন করেন আর সারাদিন ঘুমান। ইয়াবায় আসক্তি ও পারিবারিক বিভিন্ন বিষয়ে সাহেদের সঙ্গে তাদের বিরোধ হয়।
পুলিশ আরও জানায়, বুধবার সন্ধ্যার পর বাসায় তিনজন ঝগড়া করেন। জাহেদ ও তার স্ত্রী মিলে বাসার আসবাবও ভাঙচুর করেন। ঝগড়ার পর নিজের কক্ষে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়েন সাহেদ। গভীর রাতে জাহেদ ও তাঁর স্ত্রী ওই কক্ষে ঢুকে ঘুমন্ত সাহেদকে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাতে হত্যা করেন। পরে জাহেদ একটি অটোরিকশা ডেকে লাশ তুলে প্রথমে আবাসিক এলাকা থেকে বের হন। রাস্তায় অ্যাম্বুলেন্স পেয়ে সেখানে সাহেদের লাশ তুলে নেন। এরপর রাউজানের নোয়াপাড়ার দিকে রওনা দেন।
হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি আঁচ করতে পেরে অ্যাম্বুলেন্সচালক কৌশলে বিষয়টি চান্দগাঁও থানাকে জানান। চান্দগাঁও থানা পুলিশ গিয়ে অ্যাম্বুলেন্স থামিয়ে লাশ উদ্ধার করে জাহেদ ও তাঁর স্ত্রী তাসমিনকে গ্রেপ্তার করে।
চান্দগাঁও থানার ওসি আফতাব উদ্দিন বলেন, বুধবার রাত দেড়টার দিকে এক অ্যাম্বুলেন্স চালকের কাছ থেকে খবর পেয়ে পুলিশের একটি দল অভিযানে নামে। নগরের কাপ্তাই রাস্তার মাথার কাছাকাছি এলাকায় অ্যাম্বুলেন্সটি থামাতে সক্ষম হয় পুলিশ। অ্যাম্বুলেন্স থেকে সাহেদের রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার এবং জাহেদ ও তাসমিনকে আটক করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে দু’জনই হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করেন। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। আটক দু’জনকে মামলার পর আদালতে পাঠানো হবে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ছ র ক ঘ ত হত য হত য
এছাড়াও পড়ুন:
আরপিওর বিধানের বৈধতার রায় রিভিউর জন্য হলফনামার অনুমতি
জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থীর ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকার ১ শতাংশ ভোটারের সমর্থনসংবলিত স্বাক্ষরযুক্ত তালিকা মনোনয়নের সঙ্গে যুক্ত করাসংক্রান্ত গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের বিধানের বৈধতা দিয়ে ১৪ বছর আগে রায় দিয়েছিলেন আপিল বিভাগ। এই রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে আবেদনের জন্য হলফনামার অনুমতি চেয়ে আবেদন করেছেন দুজন আইনজীবীসহ সাত ব্যক্তি। শুনানি নিয়ে আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি ফারাহ মাহবুব আজ সোমবার হলফনামা করার অনুমতি দিয়েছেন।
আবেদনকারী সাত ব্যক্তি হলেন ব্যারিস্টার এম সারোয়ার হোসেন, মেজর (অব.) এস এম হারুনুর রশীদ, কাজী জাহেদুল ইসলাম, আইনজীবী এস এম আজমল হোসেন, মেজর (অব.) নিয়াজ আহমেদ জাবের, মেজর (অব.) মো. জিয়াউল আহসান ও সালাহ উদ্দিন।
আদালতে আবেদনকারীদের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ওমর ফারুক। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, এ মামলায় আবেদনকারীরা পক্ষ ছিলেন না। যে কারণে তৃতীয় পক্ষ হিসেবে আপিল বিভাগের রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে আবেদন দায়েরের জন্য হলফনামা করার অনুমতি চেয়ে আবেদন করেন তাঁরা। চেম্বার আদালত হলফনামা দায়ের করার অনুমতি দিয়েছেন। আনুষঙ্গিক প্রক্রিয়া শেষে শিগগিরই রিভিউ আবেদন করা হবে।
গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) ১২(৩ক)(ক) বিধান অনুযায়ী নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থীর ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকার ১ শতাংশ ভোটারের সমর্থনসংবলিত স্বাক্ষরযুক্ত তালিকা মনোনয়নপত্রের সঙ্গে যুক্ত করে দিতে হবে। তবে শর্ত থাকে যে কোনো স্বতন্ত্র প্রার্থী ইতিপূর্বে জাতীয় সংসদের কোনো নির্বাচনে সদস্য নির্বাচিত হয়ে থাকলে ওই তালিকা প্রদানের প্রয়োজন হবে না।
আইনজীবীর তথ্য অনুসারে, ঢাকার একটি আসন থেকে ২০০৭ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মাহবুব আহমেদ চৌধুরী নামে এক ব্যক্তি মনোনয়নপত্র নেন। পরে নির্বাচনের ওই তারিখ পিছিয়ে যায়। অন্যদিকে ২০০৮ সালে আরপিও দফা ১২(৩ক)–তে সংশোধনী আনা হয়। এই বিধান সংবিধানের কয়েকটি অনুচ্ছেদ ও আরপিওর ১২(১) ধারার পরিপন্থী উল্লেখ করে মাহবুব আহমেদ চৌধুরী ২০১০ সালে হাইকোর্ট রিট করেন। রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট রুল দেন। চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০১০ সালের ১৬ আগস্ট হাইকোর্ট রুল ডিসচার্জ (খারিজ) করে রায় দেন। দফা (৩ক) সংবিধান পরিপন্থী নয় বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়।
হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে ২০১০ সালে লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করেন রিট আবেদনকারী। শুনানি শেষে আপিল বিভাগ ২০১১ সালের ২৩ জানুয়ারি লিভ টু আপিল খারিজ করে রায় দেন। স্বতন্ত্র প্রার্থীর ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকার ১ শতাংশ ভোটারের সমর্থনসংবলিত স্বাক্ষরযুক্ত তালিকা মনোনয়নের সঙ্গে যুক্ত করাসংক্রান্ত আরপিওর ১২(৩ক)–তে বেআইনি কিছু পাননি বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়।
ওই রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে দুই আইনজীবীসহ সাত ব্যক্তি আবেদন করতে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন তাঁদের আইনজীবী ওমর ফারুক। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিতে ভোটারের গোপনীয়তা রক্ষা করতে হবে। ভোটার কোন প্রার্থীকে ভোট দেবেন বা দেবেন না, এটি একান্তই তাঁর চিন্তা ও মতপ্রকাশের অধিকার। সিক্রেট ব্যালটে হামলা হলে ভোট বাতিলও হয়। সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদে প্রার্থীর যোগ্যতা নির্ধারণ করা আছে। রাজনৈতিক দল হলে ১ শতাংশ ভোটারের সমর্থন লাগবে না, অথচ স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে গেলে লাগবে অর্থাৎ একই মনোনয়নপত্র ঘিরে দ্বৈত বিধান। ১ শতাংশ ভোটারের সমর্থন থাকার ওই বিধানের মাধ্যমে স্বতন্ত্র প্রার্থীকে নির্বাচন থেকে বিরত রাখার সুযোগ তৈরি হয়েছে, যা সংবিধান সমর্থন করে না এবং ভোটারের গোপনীয়তারও লঙ্ঘন—এসব যুক্তি তুলে ধরে আবেদনটি করা হয়।