অন্তর্বর্তী সরকারের কিছু উদ্যোগ মৌলিক স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন করার ঝুঁকি তৈরি করেছে: এইচআরডব্লিউ
Published: 22nd, May 2025 GMT
অন্তর্বর্তী সরকারের কিছু উদ্যোগ মৌলিক স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন করার ঝুঁকি তৈরি করেছে: এইচআরডব্লিউ
সেকশন: বাংলাদেশ
ট্যাগ: আওয়ামী লীগ, মানবাধিকার, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, এইচআরডব্লিউ, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার
মেটা: যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) বুধবার এক প্রতিবেদনে এ কথা বলেছে।
একসার্প্ট: মানবাধিকার সংগঠনটি বলেছে, নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতাচ্যুত নেতা শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের সমর্থকদের অধিকারগুলো দমনের চেষ্টা করছে।
ছবি: ২২ মের অনলাইন ন্যাশনালে Human Rights Watch নামে রাখা আছে।
ক্যাপশন: হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)। ছবি: এএফপি
অন্তর্বর্তী সরকারের কিছু উদ্যোগ মৌলিক স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন করার ঝুঁকি তৈরি করেছে: এইচআরডব্লিউ
প্রথম আলো ডেস্ক
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের সাম্প্রতিক আইনবিষয়ক কিছু উদ্যোগ মৌলিক স্বাধীনতাগুলো ক্ষুণ্ন করার ঝুঁকি তৈরি করেছে বলে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) জানিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনটি গতকাল বুধবার এক প্রতিবেদনে এ কথা বলেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ফৌজদারি বিচারব্যবস্থার সংস্কার এবং গুরুতর নিপীড়নের জবাবদিহি নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি পূরণের পরিবর্তে নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতাচ্যুত নেতা শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের সমর্থকদের অধিকারগুলো দমনের চেষ্টা করছে।
এইচআরডব্লিউ বলছে, অন্তর্বর্তী সরকার ১২ মে আওয়ামী লীগের ওপর ‘সাময়িক’ নিষেধাজ্ঞা (মূলত আওয়ামী লীগের কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা) দিয়েছে। এটা করা হয়েছে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে কঠোর সংশোধনীর আওতায় নতুন প্রবর্তিত ক্ষমতা ব্যবহার করে। নিষেধাজ্ঞার আওতায় সভা, প্রকাশনা এবং দলটির সমর্থনে অনলাইনে কথা বলাসহ অন্যান্য কার্যক্রম রয়েছে।
এদিকে গুমের ঘটনা, যা বিগত সরকারের আমলে ব্যাপকভাবে ছিল, সেটা মোকাবিলায় আইনের যে খসড়া করা হয়েছে, তা আন্তর্জাতিক মানদণ্ড পূরণ করে না এবং তা অতীতের অপরাধের জবাবদিহি নিশ্চিত করার জন্যও যথেষ্ট নয় বলে উল্লেখ করেছে এইচআরডব্লিউ।
এইচআরডব্লিউর এশিয়া অঞ্চলের উপপরিচালক মীনাক্ষী গাঙ্গুলি বলেন, ‘শেখ হাসিনার সরকার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের কণ্ঠরোধ করতে আইনি ক্ষমতার অপব্যবহার করেছে। কিন্তু এখন তাঁর দল আওয়ামী লীগের সমর্থকদের ওপর একই ধরনের পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করাটাও সেই একই মৌলিক স্বাধীনতাগুলো লঙ্ঘন করবে।’ তিনি আরও বলেন, অন্যদিকে গুমসংক্রান্ত আইনের খসড়া হাসিনার আমলে গুমের শত শত ভুক্তভোগী এবং তাঁদের পরিবারের জন্য ন্যায়বিচার এগিয়ে নিতে কিংবা প্রশ্নের জবাব দেওয়ার ক্ষেত্রে খুব কমই কাজ করবে।
এইচআরডব্লিউর প্রতিবেদনে বলা হয়, তিন সপ্তাহের বিক্ষোভের পর, যাতে প্রায় ১ হাজার ৪০০ মানুষ নিহত হন, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতন ঘটে। ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার একটি অবাধ ও সুষ্ঠু সাধারণ নির্বাচন আয়োজনের আগে দেশে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধগুলো ফিরিয়ে আনা এবং মানবাধিকারের প্রতি সম্মান পুনঃপ্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। নতুন সরকার বেশ কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ নিয়েছে, কিন্তু সাম্প্রতিক এসব পদক্ষেপ হতাশাজনক।
আরও পড়ুনবাংলাদেশে নির্বাচনের আগে সহিংস দমন–পীড়ন চলছে: হিউম্যান রাইটস ওয়াচ২৭ নভেম্বর ২০২৩এইচআরডব্লিউ বলেছে, আওয়ামী লীগের ওপর নিষেধাজ্ঞা তত দিন পর্যন্ত থাকবে, যত দিন দলটির নেতাদের তাঁদের ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত নিপীড়নের বিচার শেষ না হয়। এই প্রক্রিয়ায় কয়েক বছর লেগে যেতে পারে এবং তা কার্যত দলটিকে রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে দিতে পারে। অন্তর্বর্তী সরকার আওয়ামী লীগের প্রকাশনা, মিডিয়া, অনলাইন ও সোশ্যাল মিডিয়া, যেকোনো ধরনের প্রচারণা, মিছিল, সভা, জমায়েত, সম্মেলনসহ সব ধরনের কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, যাতে দলটির সমর্থকদের বাক্স্বাধীনতা ও সমবেত হওয়ার অধিকার ক্ষুণ্ন করা হয়েছে। স্বাধীনতার পর থেকে রাজনীতিতে সক্রিয় আওয়ামী লীগের বিপুল সমর্থক গোষ্ঠী রয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, আওয়ামী লীগের কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার পর নির্বাচন কমিশন দলটির নিবন্ধন স্থগিত করে উল্লেখ করে এইচআরডব্লিউর প্রতিবেদনে বলা হয়, এসব পদক্ষেপ এসেছে অন্তর্বর্তী সরকার আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন, ১৯৭৩ সংশোধন করে অধ্যাদেশ জারি করার পরপর।
আরও পড়ুনবাংলাদেশে স্বাধীনভাবে মতপ্রকাশের অধিকারকে হুমকিতে ফেলতে পারে প্রস্তাবিত দুই অধ্যাদেশ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫এইচআরডব্লিউ বলেছে, হাসিনার সরকার আমলে অপরাধ করার জন্য অভিযুক্তদের যথাযথ বিচার হওয়া উচিত। কিন্তু একটি রাজনৈতিক দলের সমর্থনে কোনো বক্তব্য বা কার্যক্রমের ওপর নিষেধাজ্ঞা মৌলিক স্বাধীনতাগুলোর ওপর অতিরিক্ত বিধিনিষেধ, যা বিগত সরকারের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের ওপর দমন–পীড়নকে প্রতিফলিত করে। ইতিমধ্যে অভিনেতা, আইনজীবী, গায়ক, রাজনৈতিক কর্মীসহ বিভিন্ন পেশার বহু মানুষকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে, সরকারি কৌঁসুলিরা এসব গ্রেপ্তারের পক্ষে যুক্তি হিসেবে তাঁদের বিরুদ্ধে ‘হাসিনার ফ্যাসিস্ট শাসনকে’ সমর্থন দেওয়ার অভিযোগ তুলছেন। এদিকে আওয়ামী লীগ সরকার আমলে সংঘটিত গুরুতর নিপীড়নের ঘটনার বিচারে বিলম্ব নিয়ে বড় ধরনের উদ্বেগ রয়েছে।
এইচআরডব্লিউ আরও বলেছে, বাংলাদেশে মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধার ভিত্তি তৈরির জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের আওয়ামী লীগের সদস্য ও সমর্থকদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষায় তাদের নেওয়া পদক্ষেপ পরিবর্তন করা উচিত। সেই সঙ্গে বিগত সরকারের সদস্যদের মধ্যে যাঁদের বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগ রয়েছে তাঁদের বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণের ভিত্তিতে বিচারের দিকে মনোনিবেশ করা উচিত। রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে কাউকে বিচারের আগে আটক রাখা থেকেও বিরত থাকা উচিত।
আরও পড়ুনবিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ১০ মে ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ক ষ ণ ন কর র ঝ এইচআরডব ল উ র সমর থকদ র র জন ত ক র র জন য পদক ষ প সরক র র ন সরক র ধরন র দলট র আওয় ম র আমল র ওপর ক ষমত অপর ধ
এছাড়াও পড়ুন:
সরকারের কিছু পদক্ষেপ মৌলিক স্বাধীনতাকে ক্ষুণ্ণ করছে: এইচআরডব্লিউ
অন্তর্বর্তী সরকারের সাম্প্রতিক কিছু পদক্ষেপ জনসাধারণের মৌলিক স্বাধীনতাকে ক্ষুণ্ণ করার ঝুঁকিতে ফেলেছে বলে দাবি করেছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)। গতকাল বুধবার সংস্থাটির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি মাসের ১২ তারিখ সন্ত্রাসবিরোধী আইন ব্যবহার করে আওয়ামী লীগের সভা, সমাবেশ, প্রকাশনা এবং অনলাইন প্রচারণায় নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। আগের সরকারের আমলেও ক্ষমতার অপব্যবহার করে দমননীতি চালানো হয়েছে। নতুন সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের মতো মানুষের মৌলিক স্বাধীনতা লঙ্ঘন করবে অন্তর্বর্তী সরকার।
গুম বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, আগের সরকারের আমলে গুমের মতো অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের জবাবদিহিতা নিশ্চিতে পর্যাপ্ত পদক্ষেপ দেখা যায়নি। এছাড়া, গুম ঠেকাতে খসড়া আইন আন্তর্জাতিক মানদণ্ড পূরণ করে না।
এইচআরডব্লিউর এশিয়া বিষয়ক উপ-পরিচালক মীনাক্ষী গাঙ্গুলি বলেন, আগের সরকারে আমলে গুমের শিকার হওয়া ব্যক্তি ও তাদের পরিবারের জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিতের পর্যাপ্ত কাঠামো খসড়া আইনে নেই।
আওয়ামী লীগ নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের সাম্প্রতিক পদক্ষেপ হতাশাজনক উল্লেখ করে এইচআরডব্লিউ বলেছে, সাবেক ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নেতাদের বিচার সম্পন্ন হওয়ার আগ পর্যন্ত তাদের ওপর কার্যক্রম নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকবে বলে সরকার থেকে জানানো হয়। কিন্তু বিচারপ্রক্রিয়া কয়েক বছর ধরে চলতে পারে। এভাবে আসলে দলটিকে কার্যত নিষিদ্ধ করে দেওয়া হলো।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, দলটি বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার আগে থেকেই সক্রিয় ছিল। তাদের একটি বিশাল সমর্থকগোষ্ঠী রয়েছে। এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে দলটির কোটি কোটি সমর্থকের বাকস্বাধীনতা ক্ষুণ্ণ করা হলো। স্থগিতাদেশ দেওয়ার পর আওয়ামী লীগের নিবন্ধনও বাতিল করেছে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন।
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ক্ষমতার অপব্যবহারসহ বিভিন্ন অপরাধে যুক্ত ব্যক্তিদের বিচারের পক্ষে মত দিলেও দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধে সমর্থন দেয় না এইচআরডব্লিউ। তারা বলেছে, রাজনৈতিক দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা মানুষের মৌলিক স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপের শামিল। এর মাধ্যমে বিগত সরকারের ধাঁচে বিরোধীদের দমন নীতির চর্চা বহাল রাখা হচ্ছে।