নির্ধারিত স্টলে গিয়ে করা যাবে ই-নামজারির আবেদন। কোনো ধরনের হয়রানি ছাড়াই দিনে দিনে সরবরাহ করা হবে জমির খতিয়ান। পাওয়া যাবে মৌজার ম্যাপ এবং অনলাইনে খতিয়ানের সার্টিফায়েড কপি। এ সব সুযোগ-সুবিধা নিয়ে সারা দেশের মতো চট্টগ্রামেও আয়োজিত হচ্ছে তিন দিনব্যাপী ‘ভূমি মেলা-২০২৫’। ভূমি মন্ত্রণালয়, ভূমি সংস্কার বোর্ড ও ভূমি ব্যবস্থাপনা অটোমেশন প্রকল্পের সার্বিক সহযোগিতায় আগামী রোববার শুরু হচ্ছে মেলা।

চট্টগ্রাম বিভাগের ১১ জেলায় আয়োজিত হবে এ মেলা। এ বিষয়ে আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে চট্টগ্রাম বিভাগীয় ও জেলা প্রশাসন। এতে বক্তব্য দেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মো.

জিয়াউদ্দীন এবং চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম। এবারের মেলার প্রতিপাদ্য ‘নিয়মিত ভূমি উন্নয়ন কর প্রদান করি, নিজের জমি সুরক্ষিত রাখি’।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনসহ ১১টি জেলা ও ১০৩টি উপজেলা-সার্কেল ভূমি অফিস এবং ইউনিয়ন ভূমি অফিসগুলোতেও এ মেলা আয়োজন করা হবে। রোববার সকাল ১০টায় চট্টগ্রাম সার্কিট হাউস প্রাঙ্গণে বিভাগীয় পর্যায়ে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে মেলা শুরু হবে।

চট্টগ্রাম সার্কিট হাউস প্রাঙ্গণে ১২টি স্টলের মধ্যে ৬টি স্টলে মহানগরের ৬টি সার্কেলের যাবতীয় ভূমিসেবা দেওয়া হবে। দুটি স্টলে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের এল এ শাখা ও রেকর্ডরুমের সেবা, দুটি স্টলে চট্টগ্রাম জেলার জরিপ ও ভূমির রেজিস্ট্রেশন–সংক্রান্ত সেবা এবং দুটি স্টলের মাধ্যমে বাংলাদেশের যেকোনো প্রান্তের অনলাইন ভূমি উন্নয়ন কর প্রদান, ই-নামজারির আবেদনসহ অন্যান্য সেবা দেওয়া হবে।

সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (রাজস্ব) মোহাম্মদ নুর উল্লাহ নূরী, অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) মুহাম্মদ আনোয়ার পাশা, চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) সাদি-উর রহিম জাদিদ, বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ের সিনিয়র সহকারী কমিশনার (রাজস্ব) এস এম অনীক চৌধুরীসহ বিভাগীয় ও জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা এবং মহানগর ভূমি সার্কেলের সহকারী কমিশনাররা উপস্থিত ছিলেন।

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

ইউএনওর সঙ্গে তর্কের জেরে অফিসে আসেন না পিআইও

সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) কে এম মাহবুবুর রহমানের বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। এসব বিষয় নিয়ে গত শুক্রবার ইউএনওর সঙ্গে মাহবুবুর রহমানের বাগ্‌বিতণ্ডা হয়। এরপর থেকে কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছেন পিআইও। 

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, মাহবুবুর রহমান উপজেলায় টিআর, কাবিখা, কাবিটা ও এডিপির বিভিন্ন প্রকল্পের সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে ঘুষ নিয়েছেন। এ বিষয়ে ইউএনওর কার্যালয়ে একাধিক অভিযোগ জমা দেওয়া হয়। গত এক সপ্তাহ ধরে তিনি অফিস করছেন না। প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা অনুপস্থিত থাকায় প্রকল্প কমিটির সদস্যরা পিআইও কার্যালয়ে কাজ করে বিলের টাকা পাচ্ছেন না। 

জানা গেছে, ২০১৯ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ছাতকে পিআইও হিসেবে যোগ দেন কে এম মাহবুবুর রহমান। তিনি যোগ দেওয়ার পর থেকে উপজেলায় বিভিন্ন প্রকল্পে লাখ লাখ টাকার ঘুষ-দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। শুধু ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের টিআর, কাবিখা, কাবিটা ও এডিপির ২২৭টি প্রকল্পে পিআইওর বিরুদ্ধে ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ ওঠে। এ নিয়ে ইউএনওর কাছে অনেকে অভিযোগ জানাতে থাকেন। বিষয়টি নিয়ে গত ১৬ মে এ বিষয়ে ইউএনওর সঙ্গে দেখা করেন পিআইও। এক পর্যায়ে ইউএনওর সঙ্গে তাঁর বাগ্‌বিতণ্ডা হয়। প্রকল্পে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ পেলে ছাড় দেওয়া হবে না বলে পিআইওকে জানিয়ে দেন ইউএনও। এ সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন পিআইও কার্যালয়ের কার্যসহকারী নাজমুল ইসলাম। পরদিন রাতে ইউএনও বরাবর তিন দিনের ছুটি চেয়ে একটি আবেদন লিখে নিজ কার্যালয়ের টেবিলে রেখে যান পিআইও। এরপর থেকে অফিসে আসছেন না তিনি। 

পিআইও কার্যালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, ইউএনওর বিরুদ্ধে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ এনেছেন পিআইও। এ বিষয়ে তিনি জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। ওই সূত্রটি আরও জানায়, অনিয়ম-দুর্নীতি প্রকাশ হওয়ার ভয়ে গত মঙ্গলবার অফিসের কার্যসহকারী নাজমুল ইসলামকে ছাতক থেকে বদলি করিয়েছেন পিআইও। নাজমুলকে রাঙামাটির বিলাইছড়ি উপজেলায় পাঠানো হয়েছে। 

পিআইও কে এম মাহবুবুর রহমান তাঁর বিরুদ্ধে ঘুষ-দুর্নীতির অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘এ সবকিছুই ইউএনওর ষড়যন্ত্র। তিনি আমাকে ডেকে নিয়ে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে প্রাণনাশের হুমকি দিয়েছেন।’ এ বিষয়ে গত রোববার জেলা প্রশাসকসহ নিজ দপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর তিনি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। 

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) সহকারী কমিশনার হাসিবুল হাসান বলেন, গত ১৯ থেকে ২১ মে পর্যন্ত ছাতকের পিআইও ছুটিতে ছিলেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, ইউএনওর বিরুদ্ধে পিআইওর অভিযোগের বিষয়টি তিনি জেনেছেন। এ বিষয়টি জেলা প্রশাসক দেখবেন। 

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তরিকুল ইসলাম বলেন, পিআইও কার্যালয়ের কার্যসহকারীর সঙ্গে প্রকল্প কর্মকর্তা কে এম মাহবুবুর রহমানের কিছু ঝামেলা হয়েছিল। এজন্য তাঁকে ডেকে বকাঝকা করে সতর্ক করা হয়েছিল, লাঞ্ছিত করা হয়নি। পিআইওর বিরুদ্ধে তাঁর দপ্তরে একাধিক অভিযোগ জমা পড়েছে। এসব বিষয়ে জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্টদের জানানো হয়েছে। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ