ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে তিন মাসের মধ্যেই দ্বিতীয়বারের মতো নৈশবাসে দস্যুতা ও শ্লীলতাহানির অঘটন অত্যন্ত উদ্বেগজনক। ব্যস্ত মহাসড়কে যাত্রীবেশে বাসে আরোহণ করিয়া পাঁচ ঘণ্টা তাণ্ডব চালাইয়া দস্যুদলের নির্বিঘ্নে অকুস্থল ত্যাগ করিবার ঘটনাও বিক্ষোভ জাগানিয়া।

মঙ্গলবার দিবাগত রাত্রিতে দীর্ঘ সময় ধরিয়া লুটপাট ও শ্লীলতাহানিকালে মহাসড়কে নিরাপত্তায় নিয়োজিত ‘হাইওয়ে পুলিশ’ কোথায় অবস্থান করিতেছিল? সমকালসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমসূত্রে জানা যাইতেছে, দস্যুরা বাসটির নিয়ন্ত্রণ লইয়া ঐ মহাসড়কেই যমুনা সেতুর নিকটবর্তী এলাকায় কয়েক দফা যাতায়াত করিয়াছে। আমাদের প্রশ্ন, একই বাসের উদ্ভ্রান্ত চলাফেরাও সংশ্লিষ্টদের মধ্যে সন্দেহের উদ্রেক করিল না?

মহাসড়কটিতে যেইভাবে ‘বাম্পার টু বাম্পার’ যানবাহন চলাচল করে, উহাতেও দস্যুকবলিত বাসটির উদ্দেশ্যবিহীন চলাচল ভিন্নভাবে চিহ্নিত হইল না! ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের নিরাপত্তা-বিষয়ক নাজুকতা কেবল আলোচ্য অঘটনেই প্রমাণ হইল না; তিন মাসের মাথায় যদ্রূপ দস্যুতার পুনরাবৃত্তি ঘটিল, তদ্রূপ প্রায় নিয়মিত বিরতিতেও এইরূপ অঘটন ঘটিয়া চলিয়াছে। ২০২২ সালের ৫ আগস্টেও অনুরূপ ঘটনায় উদ্বেগ জানাইয়া আমরা সম্পাদকীয় প্রকাশ করিয়াছিলাম। এই সকল অঘটন যদ্রূপ জননিরাপত্তায় হুমকি তৈয়ার করিয়াছে, তদ্রূপ নারীর পথচলাও রুদ্ধ করিতে পারে।

আমরা আশঙ্কা করি, দস্যুতার অঘটন সংবাদমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সাময়িক তরঙ্গ তুলিয়া হারাইয়া যাইবার কারণেই পুনরাবৃত্তি রোধ করা যাইতেছে না। যদি তিন মাস পূর্বের ঘটনাটির জন্য দায়ীরা উপযুক্ত শাস্তি লাভ করিত, তাহা হইলে সম্ভবত সর্বশেষ অঘটনটি জাতিকে প্রত্যক্ষ করিতে হইত না। স্মরণে রহিয়াছে, রাত্রিকালীন বাসগুলিতে দস্যুতা রোধে একসময় বিশেষ প্রযুক্তি ‘প্যানিক বাটন’ প্রবর্তন করিবার বিষয়টি আলোচিত হইয়াছিল। উহা কেন চালু হয় নাই– সংশ্লিষ্টদের জবাব দিতে হইবে। অনতিবিলম্বে এই প্রকার সেবা প্রবর্তন করিতে হইবে, যাহাতে বাস ডাকাতির শিকার হইলে উক্ত বাটনে চাপ দিবার মাধ্যমে জরুরি সেবা ৯৯৯, স্থানীয় থানা কিংবা পরিবহন মালিকের নিকট বার্তা পৌঁছাইয়া যায়। যাত্রীর নিরাপত্তায় এখনই যদি এইরূপ প্রাযুক্তিক উদ্যোগ গ্রহণ করা না যায়, তবে কখন করিবে?

মহাসড়কে নিরাপত্তায় গঠিত বিশেষায়িত বাহিনী হাইওয়ে পুলিশের তৎপরতাও যে বৃদ্ধি করিতে হইবে, উহা বলিবার অপেক্ষা রাখে না। হাইওয়ে পুলিশ তাহাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করিলে হয়তো এইরূপ অঘটন পরিহার করা যাইত। তজ্জন্য কাহাদের ব্যর্থতায় এই ধরনের গুরুতর নিরাপত্তাজনিত সংকট তৈয়ার হইল; উহাদের বাহির করিয়া জবাবদিহি করিতে হইবে। মহাসড়কে কেবল টহল দেওয়া নয়, বিশেষত রাত্রিকালে নিশ্চিন্তে চলাচল করিতে হাইওয়ে পুলিশের তরফ হইতে পরিবহনকর্মী ও মালিকদের প্রতি বিশেষ নির্দেশনাও থাকা প্রয়োজন। ইহার সহিত টাঙ্গাইল মহাসড়কের মতো অধিক ঝুঁকিপূর্ণ স্পটগুলিতে তাহাদের তৎপরতা বৃদ্ধি করিতেই হবে। আমরা দেখিতে চাহিব, মঙ্গলবার রাত্রির অপরাধকর্মে যুক্ত ব্যক্তিদের আইনের হস্তে সোপর্দ করা হইয়াছে। তৎসহিত ডাকাতির সংঘবদ্ধ চক্রকে ধরিতে নিয়মিত বিরতিতে অভিযানও প্রয়োজন। 

স্মরণে রাখিতে হইবে, নারীর শ্লীলতাহানি গুরুতর অঘটন। ডাকাতি স্বভাবতই অপরাধ। উহার সহিত শ্লীলতাহানি কিংবা ধর্ষণচেষ্টা নারীকে ভয়ানক অসহায় পরিস্থিতিতে ফেলিয়া দেয়। মহাসড়কের মতো উন্মুক্ত পরিবেশে যথায় দিবস ও রাত্রিতে নিয়মিত পরিবহন চলিয়া থাকে, তথায় এহেন পরিস্থিতি সার্বিক আইনশৃঙ্খলার অবনতির নির্দেশক।

আমরা প্রত্যাশা করিব, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী টাঙ্গাইল মহাসড়কই নহে শুধু, দেশের সকল মহাসড়কের নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিত করিবে। এই ক্ষেত্রে স্থানীয় থানাসমূহকেও তৎপর হইতে হইবে। এমনিতেই আমাদের সড়ক দুর্ঘটনা থামিয়া নাই। তদুপরি ডাকাতি ও শ্লীলতাহানি নিরাপত্তাহীনতার বার্তাই বহন করে। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: হ ইওয়

এছাড়াও পড়ুন:

প্রতিকারহীনতা পুনরাবৃত্তি ঘটায়

ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে তিন মাসের মধ্যেই দ্বিতীয়বারের মতো নৈশবাসে দস্যুতা ও শ্লীলতাহানির অঘটন অত্যন্ত উদ্বেগজনক। ব্যস্ত মহাসড়কে যাত্রীবেশে বাসে আরোহণ করিয়া পাঁচ ঘণ্টা তাণ্ডব চালাইয়া দস্যুদলের নির্বিঘ্নে অকুস্থল ত্যাগ করিবার ঘটনাও বিক্ষোভ জাগানিয়া।

মঙ্গলবার দিবাগত রাত্রিতে দীর্ঘ সময় ধরিয়া লুটপাট ও শ্লীলতাহানিকালে মহাসড়কে নিরাপত্তায় নিয়োজিত ‘হাইওয়ে পুলিশ’ কোথায় অবস্থান করিতেছিল? সমকালসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমসূত্রে জানা যাইতেছে, দস্যুরা বাসটির নিয়ন্ত্রণ লইয়া ঐ মহাসড়কেই যমুনা সেতুর নিকটবর্তী এলাকায় কয়েক দফা যাতায়াত করিয়াছে। আমাদের প্রশ্ন, একই বাসের উদ্ভ্রান্ত চলাফেরাও সংশ্লিষ্টদের মধ্যে সন্দেহের উদ্রেক করিল না?

মহাসড়কটিতে যেইভাবে ‘বাম্পার টু বাম্পার’ যানবাহন চলাচল করে, উহাতেও দস্যুকবলিত বাসটির উদ্দেশ্যবিহীন চলাচল ভিন্নভাবে চিহ্নিত হইল না! ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের নিরাপত্তা-বিষয়ক নাজুকতা কেবল আলোচ্য অঘটনেই প্রমাণ হইল না; তিন মাসের মাথায় যদ্রূপ দস্যুতার পুনরাবৃত্তি ঘটিল, তদ্রূপ প্রায় নিয়মিত বিরতিতেও এইরূপ অঘটন ঘটিয়া চলিয়াছে। ২০২২ সালের ৫ আগস্টেও অনুরূপ ঘটনায় উদ্বেগ জানাইয়া আমরা সম্পাদকীয় প্রকাশ করিয়াছিলাম। এই সকল অঘটন যদ্রূপ জননিরাপত্তায় হুমকি তৈয়ার করিয়াছে, তদ্রূপ নারীর পথচলাও রুদ্ধ করিতে পারে।

আমরা আশঙ্কা করি, দস্যুতার অঘটন সংবাদমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সাময়িক তরঙ্গ তুলিয়া হারাইয়া যাইবার কারণেই পুনরাবৃত্তি রোধ করা যাইতেছে না। যদি তিন মাস পূর্বের ঘটনাটির জন্য দায়ীরা উপযুক্ত শাস্তি লাভ করিত, তাহা হইলে সম্ভবত সর্বশেষ অঘটনটি জাতিকে প্রত্যক্ষ করিতে হইত না। স্মরণে রহিয়াছে, রাত্রিকালীন বাসগুলিতে দস্যুতা রোধে একসময় বিশেষ প্রযুক্তি ‘প্যানিক বাটন’ প্রবর্তন করিবার বিষয়টি আলোচিত হইয়াছিল। উহা কেন চালু হয় নাই– সংশ্লিষ্টদের জবাব দিতে হইবে। অনতিবিলম্বে এই প্রকার সেবা প্রবর্তন করিতে হইবে, যাহাতে বাস ডাকাতির শিকার হইলে উক্ত বাটনে চাপ দিবার মাধ্যমে জরুরি সেবা ৯৯৯, স্থানীয় থানা কিংবা পরিবহন মালিকের নিকট বার্তা পৌঁছাইয়া যায়। যাত্রীর নিরাপত্তায় এখনই যদি এইরূপ প্রাযুক্তিক উদ্যোগ গ্রহণ করা না যায়, তবে কখন করিবে?

মহাসড়কে নিরাপত্তায় গঠিত বিশেষায়িত বাহিনী হাইওয়ে পুলিশের তৎপরতাও যে বৃদ্ধি করিতে হইবে, উহা বলিবার অপেক্ষা রাখে না। হাইওয়ে পুলিশ তাহাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করিলে হয়তো এইরূপ অঘটন পরিহার করা যাইত। তজ্জন্য কাহাদের ব্যর্থতায় এই ধরনের গুরুতর নিরাপত্তাজনিত সংকট তৈয়ার হইল; উহাদের বাহির করিয়া জবাবদিহি করিতে হইবে। মহাসড়কে কেবল টহল দেওয়া নয়, বিশেষত রাত্রিকালে নিশ্চিন্তে চলাচল করিতে হাইওয়ে পুলিশের তরফ হইতে পরিবহনকর্মী ও মালিকদের প্রতি বিশেষ নির্দেশনাও থাকা প্রয়োজন। ইহার সহিত টাঙ্গাইল মহাসড়কের মতো অধিক ঝুঁকিপূর্ণ স্পটগুলিতে তাহাদের তৎপরতা বৃদ্ধি করিতেই হবে। আমরা দেখিতে চাহিব, মঙ্গলবার রাত্রির অপরাধকর্মে যুক্ত ব্যক্তিদের আইনের হস্তে সোপর্দ করা হইয়াছে। তৎসহিত ডাকাতির সংঘবদ্ধ চক্রকে ধরিতে নিয়মিত বিরতিতে অভিযানও প্রয়োজন। 

স্মরণে রাখিতে হইবে, নারীর শ্লীলতাহানি গুরুতর অঘটন। ডাকাতি স্বভাবতই অপরাধ। উহার সহিত শ্লীলতাহানি কিংবা ধর্ষণচেষ্টা নারীকে ভয়ানক অসহায় পরিস্থিতিতে ফেলিয়া দেয়। মহাসড়কের মতো উন্মুক্ত পরিবেশে যথায় দিবস ও রাত্রিতে নিয়মিত পরিবহন চলিয়া থাকে, তথায় এহেন পরিস্থিতি সার্বিক আইনশৃঙ্খলার অবনতির নির্দেশক।

আমরা প্রত্যাশা করিব, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী টাঙ্গাইল মহাসড়কই নহে শুধু, দেশের সকল মহাসড়কের নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিত করিবে। এই ক্ষেত্রে স্থানীয় থানাসমূহকেও তৎপর হইতে হইবে। এমনিতেই আমাদের সড়ক দুর্ঘটনা থামিয়া নাই। তদুপরি ডাকাতি ও শ্লীলতাহানি নিরাপত্তাহীনতার বার্তাই বহন করে। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ