নির্বাচনের পথনকশা না পেলে সহযোগিতা করা কঠিন
Published: 23rd, May 2025 GMT
আগামী ডিসেম্বর সামনে রেখে অবিলম্বে নির্বাচনী পথনকশা (রোডম্যাপ) ঘোষণার দাবি জানিয়েছে বিএনপি। তা না হলে সরকারের প্রতি সহযোগিতা অব্যাহত রাখা তাদের জন্য কঠিন হয়ে দাঁড়াবে বলে জানিয়েছে দলটি।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে জরুরি সংবাদ সম্মেলন ডাকে বিএনপি। তাতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড.
স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, জনআকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী সরকারের যা করণীয় তা যথাসময়ে না করে চাপের মুখে করার সংস্কৃতি ইতোমধ্যেই সরকারের সক্ষমতা ও মর্যাদা ক্ষুণ্ন করেছে। অন্যদেরও একই প্রক্রিয়ায় দাবি আদায়ের ন্যায্যতা প্রদান করেছে। এই অনভিপ্রেত ও বিব্রতকর পরিস্থিতির দায় পুরোটাই সরকারের বলে মনে করে বিএনপি।
ঐক্যের স্বার্থে সর্বোচ্চ নিরপেক্ষতা বজায় রাখতেও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন খন্দকার মোশাররফ হোসেন। তিনি বলেন, জনপ্রত্যাশা বা গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা কতটুকু বিগত সাড়ে ৯ মাসে পূরণ হয়েছে, তা এখন প্রশ্নের সম্মুখীন। ফ্যাসিবাদবিরোধী জাতীয় ঐক্যে ফাটল ধরতে শুরু করেছে।
এখন ঐক্যের স্বার্থে অন্তর্বর্তী সরকারের সর্বোচ্চ নিরপেক্ষতা বজায় রাখার কথা ছিল। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকারের সাম্প্রতিক কিছু কর্মকাণ্ডে তাদের নিরপেক্ষতা নিয়ে জনমনে সংশয় সৃষ্টি হয়েছে। কোনো কোনো মহলের রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করাই যেন সরকারের কর্মপরিকল্পনার অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করে মানুষের হারানো গণতান্ত্রিক অধিকার, সাংবিধানিক অধিকার, মানবাধিকারসহ ভোটাধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে যত দ্রুত সম্ভব জনআকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী একটি নির্বাচিত রাজনৈতিক সরকার প্রতিষ্ঠা করাই এখন সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। তাই সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় সংসদ গঠনের জন্য অবিলম্বে সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি জানান তিনি। এর অন্যথা হলে জনগণের দল হিসেবে বিএনপির পক্ষে এই সরকারের প্রতি সহযোগিতা অব্যাহত রাখা কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। অনিবার্যভাবেই বিএনপি অন্তর্বর্তী সরকারকে সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে কিনা, তা পুনর্বিবেচনা করতে বাধ্য হবে।
বিতর্কিত উপদেষ্টাদের সরানোর আহ্বান
খন্দকার মোশাররফ বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের নিরপেক্ষতা বজায় রাখার স্বার্থে বিতর্কিত কয়েকজন উপদেষ্টা যাদের বক্তব্যে এবং কর্মকাণ্ডে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে, তাদের সরিয়ে দিতে হবে। এর মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের যেসব উপদেষ্টা একটি নতুন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে জড়িত, তারাও রয়েছেন। উপদেষ্টা পরিষদে তাদের উপস্থিতি সরকারের নির্দলীয় নিরপেক্ষ পরিচিতিকে ক্রমাগত প্রশ্নবিদ্ধ করে চলেছে। তাই সরকারের ভাবমূর্তি রক্ষার্থে তাদের অব্যাহতি প্রদান করা প্রয়োজন।
মানবিক করিডোর নিয়ে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা আবারও নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন দাবি করে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, সরকারের ভাবমূর্তি রক্ষার্থে তাঁকে অব্যাহতি প্রদান করতে হবে। ফ্যাসিবাদের দোসর কয়েকজন উপদেষ্টাকেও সরিয়ে দিতে হবে।
মোশাররফ হোসেন বলেন, একটি জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান করাই এই সরকারের প্রধান কাজ। তাই মাথা ভারী উপদেষ্টা পরিষদ না রেখে শুধু রুটিন ওয়ার্ক (দৈনন্দিন কার্যক্রম) পরিচালনার জন্য ছোট আকারের উপদেষ্টা পরিষদ রাখাই বাঞ্ছনীয়। মানবিক করিডোর এবং চট্টগ্রাম বন্দর নিয়ে সরকারের বিভিন্ন বক্তব্য ও কর্মকাণ্ডে জাতীয় স্বার্থ রক্ষিত হচ্ছে কিনা, সেটা বিবেচনায় নেওয়ার দাবি জানিয়েছে দলটি। এমন জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ও দীর্ঘমেয়াদি নীতিনির্ধারণী কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার অন্তর্বর্তী সরকারের আছে কিনা, সেই প্রশ্ন তুলেছে দলটি। দেশের নিরাপত্তাসংশ্লিষ্ট স্পর্শকাতর ও জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারে রাখার আহ্বান জানিয়েছে বিএনপি।
সংস্কার-নির্বাচন-বিচার চলমান প্রক্রিয়া
খন্দকার মোশাররফ বলেন, সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া, তাই সংস্কার ও নির্বাচন প্রক্রিয়া দুটিই একসঙ্গে চলতে পারে। পতিত ফ্যাসিবাদী শক্তি ও ব্যক্তির এবং মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিচার প্রক্রিয়াও চলমান থাকবে।
নির্বাচন কমিশন ঘেরাও কর্মসূচি বিব্রতকর
খন্দকার মোশাররফ বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্যের ভিত্তিতে একটি সংস্কার সনদ তৈরির প্রক্রিয়ার মধ্যে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের দাবিতে একটি দলের নির্বাচন কমিশন ঘেরাও কর্মসূচি আমাদের এবং সরকারকে বিব্রত করেছে। এটা উদ্দেশ্যমূলক ও রহস্যজনক।’ তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করব, নির্বাচনী ট্রাইব্যুনাল এবং উচ্চ আদালতের রায়ের প্রতি সম্মান দেখি অতি শিগগিরই ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে ইশরাক হোসেনকে শপথ গ্রহণ করানোর ব্যবস্থা নেবে সরকার।’
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী এবং সালাহউদ্দিন আহমেদ।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব এনপ ম শ ররফ হ স ন ই সরক র র সরক র র প প রক র য় র জন ত ক সহয গ ত উপদ ষ ট ব এনপ
এছাড়াও পড়ুন:
নির্বাচনের পথনকশা না পেলে সহযোগিতা করা কঠিন
আগামী ডিসেম্বর সামনে রেখে অবিলম্বে নির্বাচনী পথনকশা (রোডম্যাপ) ঘোষণার দাবি জানিয়েছে বিএনপি। তা না হলে সরকারের প্রতি সহযোগিতা অব্যাহত রাখা তাদের জন্য কঠিন হয়ে দাঁড়াবে বলে জানিয়েছে দলটি।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে জরুরি সংবাদ সম্মেলন ডাকে বিএনপি। তাতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। এতে বলা হয়, ২০২৫ সালের মধ্যেই একটি নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করার দাবি জানাচ্ছে বিএনপি। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের এটিই প্রধান দায়িত্ব।
স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, জনআকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী সরকারের যা করণীয় তা যথাসময়ে না করে চাপের মুখে করার সংস্কৃতি ইতোমধ্যেই সরকারের সক্ষমতা ও মর্যাদা ক্ষুণ্ন করেছে। অন্যদেরও একই প্রক্রিয়ায় দাবি আদায়ের ন্যায্যতা প্রদান করেছে। এই অনভিপ্রেত ও বিব্রতকর পরিস্থিতির দায় পুরোটাই সরকারের বলে মনে করে বিএনপি।
ঐক্যের স্বার্থে সর্বোচ্চ নিরপেক্ষতা বজায় রাখতেও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন খন্দকার মোশাররফ হোসেন। তিনি বলেন, জনপ্রত্যাশা বা গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা কতটুকু বিগত সাড়ে ৯ মাসে পূরণ হয়েছে, তা এখন প্রশ্নের সম্মুখীন। ফ্যাসিবাদবিরোধী জাতীয় ঐক্যে ফাটল ধরতে শুরু করেছে।
এখন ঐক্যের স্বার্থে অন্তর্বর্তী সরকারের সর্বোচ্চ নিরপেক্ষতা বজায় রাখার কথা ছিল। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকারের সাম্প্রতিক কিছু কর্মকাণ্ডে তাদের নিরপেক্ষতা নিয়ে জনমনে সংশয় সৃষ্টি হয়েছে। কোনো কোনো মহলের রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করাই যেন সরকারের কর্মপরিকল্পনার অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করে মানুষের হারানো গণতান্ত্রিক অধিকার, সাংবিধানিক অধিকার, মানবাধিকারসহ ভোটাধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে যত দ্রুত সম্ভব জনআকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী একটি নির্বাচিত রাজনৈতিক সরকার প্রতিষ্ঠা করাই এখন সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। তাই সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় সংসদ গঠনের জন্য অবিলম্বে সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি জানান তিনি। এর অন্যথা হলে জনগণের দল হিসেবে বিএনপির পক্ষে এই সরকারের প্রতি সহযোগিতা অব্যাহত রাখা কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। অনিবার্যভাবেই বিএনপি অন্তর্বর্তী সরকারকে সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে কিনা, তা পুনর্বিবেচনা করতে বাধ্য হবে।
বিতর্কিত উপদেষ্টাদের সরানোর আহ্বান
খন্দকার মোশাররফ বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের নিরপেক্ষতা বজায় রাখার স্বার্থে বিতর্কিত কয়েকজন উপদেষ্টা যাদের বক্তব্যে এবং কর্মকাণ্ডে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে, তাদের সরিয়ে দিতে হবে। এর মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের যেসব উপদেষ্টা একটি নতুন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে জড়িত, তারাও রয়েছেন। উপদেষ্টা পরিষদে তাদের উপস্থিতি সরকারের নির্দলীয় নিরপেক্ষ পরিচিতিকে ক্রমাগত প্রশ্নবিদ্ধ করে চলেছে। তাই সরকারের ভাবমূর্তি রক্ষার্থে তাদের অব্যাহতি প্রদান করা প্রয়োজন।
মানবিক করিডোর নিয়ে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা আবারও নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন দাবি করে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, সরকারের ভাবমূর্তি রক্ষার্থে তাঁকে অব্যাহতি প্রদান করতে হবে। ফ্যাসিবাদের দোসর কয়েকজন উপদেষ্টাকেও সরিয়ে দিতে হবে।
মোশাররফ হোসেন বলেন, একটি জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান করাই এই সরকারের প্রধান কাজ। তাই মাথা ভারী উপদেষ্টা পরিষদ না রেখে শুধু রুটিন ওয়ার্ক (দৈনন্দিন কার্যক্রম) পরিচালনার জন্য ছোট আকারের উপদেষ্টা পরিষদ রাখাই বাঞ্ছনীয়। মানবিক করিডোর এবং চট্টগ্রাম বন্দর নিয়ে সরকারের বিভিন্ন বক্তব্য ও কর্মকাণ্ডে জাতীয় স্বার্থ রক্ষিত হচ্ছে কিনা, সেটা বিবেচনায় নেওয়ার দাবি জানিয়েছে দলটি। এমন জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ও দীর্ঘমেয়াদি নীতিনির্ধারণী কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার অন্তর্বর্তী সরকারের আছে কিনা, সেই প্রশ্ন তুলেছে দলটি। দেশের নিরাপত্তাসংশ্লিষ্ট স্পর্শকাতর ও জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারে রাখার আহ্বান জানিয়েছে বিএনপি।
সংস্কার-নির্বাচন-বিচার চলমান প্রক্রিয়া
খন্দকার মোশাররফ বলেন, সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া, তাই সংস্কার ও নির্বাচন প্রক্রিয়া দুটিই একসঙ্গে চলতে পারে। পতিত ফ্যাসিবাদী শক্তি ও ব্যক্তির এবং মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিচার প্রক্রিয়াও চলমান থাকবে।
নির্বাচন কমিশন ঘেরাও কর্মসূচি বিব্রতকর
খন্দকার মোশাররফ বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্যের ভিত্তিতে একটি সংস্কার সনদ তৈরির প্রক্রিয়ার মধ্যে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের দাবিতে একটি দলের নির্বাচন কমিশন ঘেরাও কর্মসূচি আমাদের এবং সরকারকে বিব্রত করেছে। এটা উদ্দেশ্যমূলক ও রহস্যজনক।’ তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করব, নির্বাচনী ট্রাইব্যুনাল এবং উচ্চ আদালতের রায়ের প্রতি সম্মান দেখি অতি শিগগিরই ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে ইশরাক হোসেনকে শপথ গ্রহণ করানোর ব্যবস্থা নেবে সরকার।’
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী এবং সালাহউদ্দিন আহমেদ।