সিন্ধুসহ অভিন্ন নদীগুলোর পানি পাবে না পাকিস্তান: মোদি
Published: 23rd, May 2025 GMT
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, তাঁর দেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত নদীগুলো (অভিন্ন নদ-নদী) থেকে পাকিস্তান আর কোনো পানি পাবে না।
ভারত–নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে গত ২২ এপ্রিল বন্দুকধারীদের হামলার জেরে অভিন্ন নদীর পানিবণ্টন নিয়ে এ দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা চলার মধ্যে গতকাল বৃহস্পতিবার মোদি এ কথা বলেন।
পাকিস্তানের সীমান্তবর্তী ভারতের উত্তর-পশ্চিমের রাজ্য রাজস্থানের একটি জনসভায় মোদি বলেন, ‘প্রতিটি সন্ত্রাসী হামলার জন্য পাকিস্তানকে চড়া মূল্য দিতে হবে.
পাকিস্তানের প্রধান আইন কর্মকর্তা রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জানান, ইসলামাবাদ প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে পানিবণ্টন নিয়ে আলোচনায় আগ্রহী। তবে ভারতকে অবশ্যই কয়েক দশকের পুরোনো পানিবণ্টন চুক্তি মেনে চলতে হবে।
ভারত পাকিস্তানের সঙ্গে স্বাক্ষরিত সিন্ধু পানিচুক্তি গত মাসে স্থগিত করার ঘোষণা দেয়। পেহেলগামে হামলার জেরে দেশটি এ পদক্ষেপ নিয়েছে। এ হামলার জন্য নয়াদিল্লি ইসলামাবাদকে দায়ী করেছে। যদিও পাকিস্তান এ অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে।
পাকিস্তানে অভিন্ন নদ-নদীর পানিপ্রবাহ বন্ধ করে দেওয়ার যেকোনো পদক্ষেপ ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনতে পারে। ১৯৬০ সালে বিশ্বব্যাংকের মধ্যস্থতায় স্বাক্ষরিত সিন্ধু পানিচুক্তি পাকিস্তানের কৃষি খাতে প্রয়োজনীয় ৮০ শতাংশ পানির নিশ্চয়তা দেয়। আর এসব পানি আসে ভারত থেকে প্রবাহিত তিনটি নদী থেকে।
পেহেলগাম হামলার জেরে পারমাণবিক অস্ত্রধারী প্রতিবেশী দুটি গত তিন দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ সামরিক সংঘাতে জড়িয়েছিল। ১০ মে তারা একটি যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়।
পাকিস্তানের অ্যাটর্নি জেনারেল মনসুর উসমান আওয়ান রয়টার্সকে বলেন, ‘পাকিস্তান আলোচনায় বসতে প্রস্তুত। ভারত যেকোনো উদ্বেগের বিষয় নিয়ে কথা বলতে চাইলে আমরা আলোচনা করতে পারি।’
মনসুর উসমান জানান, সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে ভারত পাকিস্তানকে চিঠি দিয়েছে। সেখানে জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও পরিচ্ছন্ন জ্বালানির প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরে সিন্ধু পানিচুক্তি সংশোধনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। তবে তিনি বলেন, আলোচনা চুক্তির শর্তের আওতার মধ্যেই হতে হবে।
আরও পড়ুনভারত কি পাকিস্তানে পানির প্রবাহ আটকে দিতে পারবে২৫ এপ্রিল ২০২৫মনসুর উসমান আরও বলেন, ইসলামাবাদ মনে করে, চুক্তিটি আইনগতভাবে বাধ্যতামূলক। কোনো পক্ষ একতরফাভাবে এটি স্থগিত করতে পারে না। তিনি বলেন, ‘পাকিস্তানের দৃষ্টিতে এ চুক্তি এখনো কার্যকর ও সক্রিয় আছে। জলবিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণের ক্ষেত্রে ভারত যা-ই করুক, সেটা তাদের নিজেদের ঝুঁকিতে ও খরচে করতে হবে।’
দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধবিরতি মোটামুটি কার্যকর রয়েছে। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বলেছেন, বর্তমানে গোলাগুলির কোনো ঘটনা ঘটছে না। সে অনুযায়ী কিছু সেনা পুনর্বিন্যাসও করা হয়েছে।
আরও পড়ুনভারত–পাকিস্তান যুদ্ধবিরতি হলেও সিন্ধু পানিচুক্তি স্থগিত থাকছে১০ মে ২০২৫আরও পড়ুনপাকিস্তানে পানিপ্রবাহ বন্ধ করতে এবার কী প্রকল্পের পরিকল্পনা করছে ভারত১৭ মে ২০২৫উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প রব হ
এছাড়াও পড়ুন:
মুসলমান বলেই রোহিঙ্গারা ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার
রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের দুরবস্থা বর্তমান সময়ে অন্যতম করুণ মানবিক সংকট বলে উল্লেখ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, শুধু মুসলমান হওয়ার কারণেই রোহিঙ্গারা এই ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার।
গতকাল সোমবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় তুরস্কের একটি সংসদীয় প্রতিনিধিদলের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় এ কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টা। পাঁচ সদস্যের ওই প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিয়েছেন তুরস্ক-বাংলাদেশ সংসদীয় মৈত্রী গ্রুপের সভাপতি ও তুর্কি পার্লামেন্ট সদস্য মেহমেত আকিফ ইয়িলমাজ।
সাক্ষাতে দুই পক্ষ বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও মানবিক সহায়তার ক্ষেত্রগুলোতে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা আরও জোরদার করার উপায় নিয়ে আলোচনা করে। এ সময় মেহমেত আকিফ ইয়িলমাজ বলেন, তুরস্ক ও বাংলাদেশের মধ্যে গভীর সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে। দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান দৃঢ় বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ওপর আলোকপাত করেন তিনি।
ইয়িলমাজ বলেন, তাঁদের প্রতিনিধিদল রোববার কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করেছে এবং তুর্কি বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা, বিশেষ করে তুর্কি ফিল্ড হাসপাতালের মানবিক কার্যক্রম সম্পর্কে অবহিত হয়েছে। এ সময় রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের প্রতি তুরস্কের অবিচল সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন প্রধান উপদেষ্টা। তুর্কি উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানান তিনি।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের দুরবস্থা আমাদের সময়ের অন্যতম করুণ মানবিক সংকট। তারা শুধু মুসলমান বলেই এই ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার এবং তাদের নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আট বছর ধরে আশ্রয়শিবিরে থাকায় রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষা ও ভবিষ্যৎ সুযোগ একেবারেই সীমিত হয়ে পড়েছে। এই অবস্থা হতাশা ও অস্থিতিশীলতার জন্ম দিতে পারে।’