আসিফ ও মাহফুজ আছেন সরকারের বৈধতা হিসেবে
Published: 23rd, May 2025 GMT
আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া ও মাহফুজ আলম অন্তর্বর্তী সরকারে আছেন সরকারের বৈধতা হিসেবে। তাঁরা দুজন নামলে এই সরকারই আর থাকবে না। ফলে এই দুজনের পদত্যাগ দাবির মধ্য দিয়ে পুরো ইউনূস সরকারকে ফেলে দেওয়ার ষড়যন্ত্র
নিয়ে বিএনপি যমুনার সামনে গেছে। যখনই আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হলো, সেই জায়গা থেকে পাঁয়তারাগুলো চলমান রয়েছে। বিএনপি আওয়ামী লীগকে বাংলাদেশে পুনর্বাসন করতে চায়, আওয়ামী লীগের বিচারপ্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করতে চায়।
আমরাও যমুনার সামনে আন্দোলন করতে গিয়েছিলাম। কিন্তু আমরা সেখানে গিয়েছিলাম বৃহত্তর স্বার্থে, কোনো পারিবারিক দাবি বা সরকার পতনের আন্দোলন নিয়ে নয়। ইশরাক হোসেনের সমর্থকেরা তথা বিএনপি যমুনার সামনে গেছে সরকার ফেলার দাবিতে। ইশরাক হোসেন ঢাকা শহরে একটা উন্মত্ততা ও জোর-জোচ্চুরির মাধ্যমে সরকার ফেলার আন্দোলন করছেন। সরকারে থাকা দুই ছাত্র প্রতিনিধি (আসিফ মাহমুদ ও মাহফুজ আলম) এনসিপির কেউ নন। ছাত্ররা রক্ত দিয়ে তাঁদের ম্যান্ডেট দিয়েছে। সব ছাত্র যদি দাবি নিয়ে আসে যে তাঁরা ছাত্র উপদেষ্টাদের চান না, তখন তাঁরা সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।
আরও পড়ুনসরকারের নিরপেক্ষতার স্বার্থে বিতর্কিতদের অপসারণ করা উচিত ১ ঘণ্টা আগেআমি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের লিয়াজোঁ কমিটিতে ছিলাম। সব দলের সঙ্গে আলোচনা করেই উপদেষ্টা পরিষদ গঠন করা হয়েছিল। সরকার গঠনের আগে আমরা বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বাসায় গিয়েছিলাম। আমরা বিএনপি থেকে প্রতিনিধি দিতে বলেছিলাম। সেখানে সালেহউদ্দিন আহমেদ, ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ ও আসিফ নজরুলের কথা বলা হয়।
আসিফ নজরুল ছাত্রদের পক্ষের লোক পরিচয় দিলেও তিনি আদৌ ছাত্রদের পক্ষে ছিলেন না। বরং তিনি বিপ্লবকে নষ্ট করার জন্য বিএনপির সঙ্গে ষড়যন্ত্রের অংশ হয়েছেন এবং অন্যান্য উপদেষ্টার মধ্যেও প্রভাব বিস্তার করে নানাভাবে সংঘাত সৃষ্টি করেছেন। সেই সংঘাতের মাধ্যমে তিনি সেনাবাহিনী, এক-এগারো ও ভারতীয় এজেন্ডা বাস্তবায়ন করার জন্য প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন।
আর্থিক খাত দখল করতে ভদ্রতার মুখোশ পরে বিএনপিকে সহযোগিতা করেছেন সালেহউদ্দিন আহমেদ। এ জন্য আমরা তাঁরও পদত্যাগ চাইছি। ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ শিক্ষা উপদেষ্টা থাকা অবস্থায় ক্যাম্পাসগুলো অস্থিতিশীল হয়েছে। বিএনপির সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হয়ে তিনি ছাত্র সংসদ নির্বাচনগুলো বাধা দিয়ে রেখেছিলেন। সে জন্য তাঁর পদত্যাগ চাই।
যে আইনে বর্তমান নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে, বিএনপিসহ অন্তত ২০টি দল ২০২২ সালে সেই আইনের বিরোধিতা করেছিল। বর্তমান নির্বাচন কমিশন গঠনের পরই আমরা এটি প্রত্যাখ্যান করেছিলাম। প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে কোনো কথা বলার আগেই এই কমিশন কথা বলছে। এই কমিশনে বিভিন্ন সংগঠন দিয়ে কূটকৌশল করে বিএনপি নিজেদের নামগুলো বসিয়েছে। আমাদেরও সেই প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের আহ্বান জানানো হয়েছিল। কিন্তু আমরা যেহেতু ওই আইনে অংশগ্রহণ করব না, তাই সে সময় আমরা যাইনি। সেই ধারাবাহিক প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবেই আমরা নির্বাচন কমিশনের সামনে কর্মসূচি রেখেছিলাম।
২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা থেকে শুরু করে তারেক রহমানের লুটপাটের বিচারপ্রক্রিয়া বন্ধ করে আদালতের কাঁধে আঙুল রেখে তাঁরা অব্যাহতি নিয়েছেন। শুধু তা-ই নয়, এখন তাঁরা নগর ভবন বন্ধ করে খোকা পরিবারের সদস্যদের প্রতিষ্ঠিত করার জন্য কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। আওয়ামী লীগের পরিবারতান্ত্রিক (রাজপরিবারতান্ত্রিক) রাজনীতি যাত্রাতেই আমরা তাঁদের দেখতে পাচ্ছি। জাতীয় জরুরি প্রয়োজনের জায়গায়, দেশকে পরিগঠন বা শুদ্ধকরণের জায়গায় আমরা তাঁদের দেখতে পাচ্ছি না। বিএনপি যে ৩১ দফা দিয়েছিল, সেটা জনগণকে বোকা বানানোর কিছু দলিল বা কাগজপত্র।
বিএনপি বিচারালয়ে বিচারপতি বসিয়ে বিচারকে বাধাগ্রস্ত করছে। ইশরাক হোসেনের পক্ষে রায়ের মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হয়েছে যে বিচারালয় বিএনপির একটি দলীয় কার্যালয়ে পরিণত হয়েছে। গত আট মাসে দেশের সব সেক্টর দখল করে এখন তারা ইউনূস সরকারের পতন ঘটাতে যমুনায় এসেছে। এটি ভারতীয় এজেন্ডা। বিএনপি ভারতের কাছে নাকে খত দিয়েছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ ভারতে ছিলেন। আমরা মনে করেছিলাম তিনি নিপীড়িত। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে তিনি ‘ডাবল এজেন্ট’। বাংলাদেশের মানুষের বিপক্ষে কাজ করার জন্য ভারত থেকে যে স্ক্রিপ্টেড বক্তব্য আসে, সেই বক্তব্য বিএনপি দিচ্ছে, সেনাবাহিনীরও একই সুর দেখা যাচ্ছে। এক-এগারোর কালো ছায়ার পথ তৈরি করার জন্য বিএনপিকে সব পথ অবমুক্ত করতে দেখা যাচ্ছে। এই জায়গাতে আমরা দেশবাসীকে সজাগ থাকার আহ্বান জানাই। আমরা আর কোনো এক-এগারো চাই না। আর কোনো পারিবারিক রাজনীতি চাই না। আমরা দেশের একটি সুন্দর সংস্কার চাই।
ঘোষিত সময়ের মধ্যে জুলাই ঘোষণাপত্র, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন ও বিএনপিপন্থী উপদেষ্টাদের পদত্যাগের দাবিতে আমরা মাঠে নামব। আমরা সেনাশাসন মেনে নেব না, এক-এগারোও মেনে নেব না। ছাত্র-জনতা ঐক্যবদ্ধ থাকবে। রাষ্ট্রপতি মো.
নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী
মুখ্য সমন্বয়ক, এনসিপি
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ন র স মন উপদ ষ ট পদত য গ ব এনপ র সরক র র প রক র
এছাড়াও পড়ুন:
দোকান লুটে বাধা পেয়ে সেনাসদস্যকে কোপাল দুর্বৃত্তরা
গাজীপুরের কাপাসিয়ার দোকান লুটে বাধা দেওয়ায় সেনাবাহিনীর এক সদস্যকে কুপিয়েছে দুর্বৃত্তরা। বৃহস্পতিবার রাতে টোক ইউনিয়নের বীরউজুলী বাজারে এ হামলা হয়। আহত সেনাবাহিনীর সার্জেন্ট মোহাম্মদ সাখাওয়াত হোসেনের মামলায় পুলিশ ইতোমধ্যে দু’জনকে গ্রেপ্তার করেছে।
সাখাওয়াত হোসেন টোক ইউনিয়নের কেন্দুয়াব গ্রামের মো. নবর আলীর ছেলে। তিনি ঢাকা সেনানিবাসে কর্মরত। মামলার এজাহারে তিনি উল্লেখ করেন, ২০২২ সালে বীরউজুলী বাজারে ১ দশমিক ৭০ শতাংশ জমি কিনে পাকা ভবনে দুটি দোকান তৈরি করেন। সেগুলো ভাড়া দেওয়া। কিছুদিন ধরে স্থানীয় সন্ত্রাসী জাহিদুল ইসলাম সোহান, মো. আনাস, মো. সোহাগ ও মো. শহীদ ওই ভবনটি দখলের পাঁয়তারা করে। তারা ভাড়াটিয়াদের দোকানঘর খালি করার নির্দেশ দেয়। ভয়ে এক ভাড়াটিয়া চলে গেছেন। সেখানে কর্মচারী নিয়োগ দিয়ে ইলেকট্রনিকসের ব্যবসা পরিচালনা করছেন।
বৃহস্পতিবার সন্ত্রাসীরা সাখাওয়াত হোসেনের দোকানের তালা ভেঙে পণ্য লুট শুরু করে। ছুটিতে তিনি বাড়িতেই ছিলেন। সংবাদ পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে তাদের বাধা দেন। এ সময় তর্কের জেরে দুর্বৃত্তরা চাপাতি দিয়ে তাঁর হাত ও পিঠে কোপায়। এ সময় চিৎকারে আশপাশের লোকজন তাঁকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। চিকিৎসক অবস্থা গুরুতর দেখে তাঁকে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করেন।
হামলায় অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বক্তব্য নেওয়া যায়নি। কাপাসিয়া থানার ওসি মোহাম্মদ জয়নাল আবেদীন মণ্ডল বলেন, সেনাসদস্যের ওপর হামলা ও তাঁর দোকানের পণ্য লুটের ঘটনায় মামলা নথিভুক্ত হয়েছে। ছয়জনের নামে এ মামলা করা হয়। জাহিদুল ইসলাম সোহান ও মো. আনাস নামে দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।