মোদির সমালোচক জম্মু–কাশ্মীরের সেই সাবেক রাজ্যপালের বিরুদ্ধে সিবিআইয়ের অভিযোগপত্র
Published: 23rd, May 2025 GMT
ভারতনিয়ন্ত্রিত অবিভক্ত জম্মু–কাশ্মীরের শেষ রাজ্যপাল সত্যপাল মালিকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলায় অভিযোগপত্র দখল করেছে সিবিআই। মজার বিষয়, রাজ্যপাল থাকাকালে যে প্রকল্পে সই করলে ৩০০ কোটি রুপি ঘুষ দেওয়া হবে বলে তিনি নিজেই অভিযোগ করেছিলেন, সেই মামলাতেই গতকাল বৃহস্পতিবার সিবিআই তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দিল।
সত্যপাল মালিক ছাড়া আরও ছয়জনের বিরুদ্ধে সিবিআই অভিযোগপত্র দাখিল করেছে। তাঁদের মধ্যে দুজন সাবেক রাজ্যপালের দুই ব্যক্তিগত সচিব। অভিযোগ, তাঁরা কিরু জলবিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণের বরাতের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
সত্যপাল মালিকের বয়স ৭৯ বছর। অসুস্থতার কারণে তিনি দিল্লির রামমনোহর লোহিয়া হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। অভিযোগপত্র দাখিলের খবর পেয়ে তিনি নিজেই এক্স হ্যান্ডলে অসুস্থতার খবর জানিয়ে লেখেন, অনেক শুভাকাঙ্ক্ষীর ফোন পাচ্ছেন। কিন্তু উত্তর দেওয়ার মতো অবস্থায় নেই।
সত্যপাল মালিক বিজেপিতে যোগ দিয়ে দলের সহসভাপতি হয়েছিলেন ২০১২ সালে। ২০১৭ সালে নরেন্দ্র মোদি সরকার তাঁকে প্রথমে বিহারের রাজ্যপাল করে। তারপর একে একে তিনি রাজ্যপালের দায়িত্ব পালন করেন ওডিশা, জম্মু–কাশ্মীর, গোয়া ও মেঘালয় রাজ্যের। তিনি জম্মু–কাশ্মীরের রাজ্যপাল ছিলেন ২০১৮ সালের ২৩ আগস্ট থেকে ২০১৯ সালের ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত। সে সময়টা ছিল খুবই ঘটনাবহুল।
২০১৯ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি পুলওয়ামায় আত্মঘাতী হামলায় নিহত হয়েছিলেন সিআরপিএফের ৪০ জন জওয়ান। সেই বছরের ৫ আগস্ট দ্বিখণ্ডিত হয়ে জম্মু–কাশ্মীর ও লাদাখকে দুটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল করা হয়। খারিজ করা হয় সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ, যা জম্মু–কাশ্মীরকে বিশেষ মর্যাদা দিয়েছিল। সেই বছরের নভেম্বরে সত্যপালকে করা হয়েছিল গোয়ার রাজ্যপাল। পরে ২০২০ থেকে ২০২২ পর্যন্ত তিনি দায়িত্ব পালন করেন মেঘালয়ের রাজ্যপাল হিসেবে।
সত্যপালের অভিযোগ, জম্মু–কাশ্মীরের রাজ্যপাল থাকাকালে ২ হাজার ২০০ কোটি রুপির কিরু জলবিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণের ফাইল তাঁর কাছে পাঠানো হয়। সরকারি কর্মী, পেনশনভোগী ও সাংবাদিকদের স্বাস্থ্যবিমার জন্য এক বেসরকারি বিমা সংস্থার প্রস্তাবও গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচিত হচ্ছিল। ওই দুই ফাইল সইয়ের জন্য তাঁর কাছে এসেছিল বলে দাবি করেছিলেন সত্যপাল।
তখন প্রকাশ্যেই সত্যপাল বলেছিলেন, ফাইলে সই করার জন্য তাঁকে ৩০০ কোটি রুপি ঘুষের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তিনি রাজি হননি।
মেঘালয়ের রাজ্যপাল থাকাকালেই ২০২১ সালে রাজস্থানের এক জনসভায় সরাসরি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও তাঁর সচিবালয়ের কর্তাদের বিরুদ্ধে প্রথম দুর্নীতির অভিযোগ আনেন সত্যপাল। ৩০০ কোটি রুপি ঘুষের উল্লেখ করে তিনি বলেছিলেন, ‘যাঁরা দরবার করতে এসেছিলেন তাঁদের বলেছিলাম, আমি চাষির ছেলে। পাঁচটা কুর্তা নিয়ে এসেছি, পাঁচটা নিয়েই ফিরে যাব। কিন্তু দুর্নীতি করতে পারব না।’
সত্যপাল ওই জনসভায় বলেছিলেন, ঘুষের অভিযোগের কথা তিনি প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়েছিলেন। ফাইলে সই না করে ফেরত পাঠানোর কথাও জানিয়েছিলেন।
সে সময় বিতর্কিত কৃষি আইন প্রত্যাহারের দাবিতে উত্তর ভারতের কৃষক সমাজ আন্দোলন ক্ষুরধার করে তুলেছিলেন। কৃষক পরিবারের সন্তান ও কৃষক নেতা সেই আইন প্রত্যাহারের জোরাল দাবি জানিয়েছিলেন। কৃষকদের ভালোমন্দ না বুঝে আইন পাস করানোর জন্য প্রধানমন্ত্রীর সমালোচনা করে তিনি বলেছিলেন, এসব করা হচ্ছে বেসরকারি সংস্থাকে সুবিধে পাইয়ে দিতে। সেই বেসরকারি সংস্থাগুলোর অন্যতম ছিল আদানি গোষ্ঠী।
সেই থেকে সত্যপাল মালিকের সঙ্গে বিজেপির দূরত্বের সৃষ্টি। ২০২২ সালের অক্টোবরে তাঁকে মেঘালয়ের রাজ্যপালের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। তার পর থেকে তিনি সরাসরি আক্রমণ করতে থাকেন প্রধানমন্ত্রীকে। মোদির বিরুদ্ধে সবচেয়ে চাঞ্চল্যকর অভিযোগটি সত্যপাল করেছিলেন পুলওয়ামাকাণ্ড নিয়ে।
সত্যপালের অভিযোগ, পুলওয়ামায় সন্ত্রাসী আত্মঘাতী হামলার খবর জানা মাত্র তিনি তা ফোন করে জানিয়েছিলেন মোদিকে। সেদিন মোদি এক দুর্গম স্থানে বিদেশি এক সংবাদমাধ্যমকে সাক্ষাৎকার দিতে ব্যস্ত ছিলেন।
সত্যপালের অভিযোগ ছিল, নিরাপত্তাজনিত গাফিলতির জন্যই পুলওয়ামাকাণ্ড ঘটেছিল। সেনা পরিবহনের জন্য তিনি উড়োজাহাজের আয়োজন করতে বলেছিলেন। তা মানা হয়নি। সেনাদের সড়কপথে যেতে হয়েছিল, যার সুবিধা নিয়েছিল সন্ত্রাসীরা।
সত্যপাল আরও অভিযোগ করেছিলেন, প্রধানমন্ত্রী নাকি তাঁকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গাফিলতি নিয়ে মুখ খুলতে বারণ করেছিলেন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: বল ছ ল ন কর ছ ল ন প লওয় ম হয় ছ ল র জন য সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
বিনামূল্যের ওষুধ পান না রোগী
কালাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক ও কর্মচারী সংকটে রোগীরা কাঙ্ক্ষিত সেবা পাচ্ছেন না। ২৫০ শয্যার এ হাসপাতালে এক্স-রেসহ পরীক্ষা-নিরীক্ষার সুযোগ না থাকায় রোগীদের ছুটতে হয় বেসরকারি হাসপাতালে। হাসপাতালে ওষুধ সরবরাহ করা হলেও তা রোগীর হাতে পৌঁছায় না। জ্বালানি তেলের জন্য পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ না দেওয়ায় চালু হয় না জেনারেটর।
দুই লাখের বেশি মানুষের একমাত্র ভরসার জায়গা এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সেবার মান দিন দিন নাজুক রূপ নিচ্ছে। জনবল সংকট, অব্যবস্থাপনা ও অনিয়মে বিপর্যস্ত হাসপাতালটি। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অভাবে প্রতিদিন রোগীরা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েই বাড়ি ফিরতে বাধ্য হচ্ছেন। যাদের সামর্থ্য আছে, তারা ক্লিনিকের দ্বারস্থ হচ্ছেন।
কাগজ-কলমে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২৪ জন চিকিৎসকের পদ রয়েছে। কিন্তু কাজ করছেন ছয়জন। প্রতিদিন ২৫০ থেকে ৩০০ রোগী হাসপাতালে আসেন। এত রোগীর সেবা দিতে গিয়ে চিকিৎসক ও স্টাফদের হিমশিম অবস্থা। ফলে দরিদ্র ও নিম্নমধ্যবিত্ত রোগীরা বারবার ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা না দিয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে জেলা সদর হাসপাতাল বা নিকটবর্তী বেসরকারি হাসপাতালে।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, সার্জারি, শিশুস্বাস্থ্য, চক্ষু, নাক-কান-গলা, কার্ডিওলজি, অর্থোপেডিকস, গাইনি, ডেন্টালসহ গুরুত্বপূর্ণ বিভাগে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পদ শূন্য। ফলে অন্তঃসত্ত্বা, হৃদরোগসহ নানাবিধ রোগে আক্রান্ত মানুষ প্রয়োজনীয় চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত। বাধ্য হয়ে তারা আশ্রয় নিচ্ছেন ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে, যার খরচ জোগানো অনেকেরই সাধ্যের বাইরে।
সরেজমিন দেখা গেছে, সন্ধ্যার পর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জরুরি বিভাগ কার্যত চিকিৎসকশূন্য। ওই সময় উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার (স্যাকমো), কিছু চুক্তিভিত্তিক কর্মচারী চিকিৎসকের ভূমিকা পালন করেন। আইন অনুযায়ী, এমবিবিএস বা বিডিএস ডিগ্রিধারী ছাড়া কারও চিকিৎসা দেওয়ার অনুমতি নেই। ফলে প্রতিনিয়ত ভুল চিকিৎসার ঝুঁকিতে পড়ছেন সাধারণ রোগীরা।
শান্তিনগর এলাকার আহসান হাবিব গত সপ্তাহে জরুরি বিভাগে এসে এমবিবিএস চিকিৎসক পাননি। বাধ্য হয়ে স্যাকমোর শরণাপন্ন হন।
শুধু চিকিৎসক সংকট নয়; অন্যান্য জনবলের ক্ষেত্রেও একই দশা। ১৯৪ কর্মচারীর মধ্যে ৯৩টি পদ দীর্ঘদিন ধরে শূন্য। নার্সিং সেবাসহ প্রতিটি বিভাগে চলছে তীব্র সংকট। নার্সের অভাবে ওয়ার্ডে রোগীর সঠিক দেখভাল হয় না। স্যানিটেশন ব্যবস্থা এতটাই করুণ, দুর্গন্ধে রোগী ও স্বজনের থাকা দায়।
আলট্রাসনোগ্রাম, এক্স-রে, ইসিজি মেশিন ব্যবহারের জন্য প্রশিক্ষিত টেকনোলজিস্ট নেই। পড়ে থেকে এসব যন্ত্রপাতি নষ্ট হচ্ছে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক না থাকায় অস্ত্রোপচার প্রায় ছয় বছর ধরে বন্ধ। বিদ্যুৎ বিভ্রাট হলেই পুরো হাসপাতালে নেমে আসে অন্ধকার। আইপিএস অকেজো।
বোড়াই গ্রামের আনজুমান গত মঙ্গলবার তাঁর স্ত্রী রহিমাকে হাসপাতালে ভর্তি করান। তিনি বলেন, ‘রাতে লোডশেডিং হয়েছিল। স্ত্রীকে হাতপাখা দিয়ে বাতাস করতে হয়েছে সারারাত।
অভিযোগ রয়েছে, সরকারি ওষুধ স্টোর থেকে উত্তোলন করা হলেও রোগীদের হাতে পৌঁছায় না। বাইরে থেকে ওষুধ কিনতে হয়। কিছু অসাধু কর্মচারীর সহযোগিতায় সক্রিয় হয়ে উঠেছে ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের দালাল চক্র। তারা কমিশনের আশায় রোগী ভাগিয়ে নেন।
ধুনট গ্রামের আসমা বেগম বলেন, এ হাসপাতালে গাইনি চিকিৎসক না থাকায় তিনি ক্লিনিকে চিকিৎসা নিতে বাধ্য হয়েছেন। তাঁর অনেক টাকা খরচ হয়েছে। বানদিঘী গ্রামের তাজরুল ইসলাম জানান, তাঁর সন্তানের চিকিৎসার জন্য সব পরীক্ষা বাইরে থেকে করাতে হয়েছে। ওষুধও মেলে না।
স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মাহবুব উল আলম জানান, মাত্র কয়েকজন চিকিৎসক
আর সীমিত সরঞ্জাম নিয়ে প্রতিদিন শত শত রোগীকে সেবা দিতে গিয়ে হিমশিম অবস্থা
তাদের। মানসম্পন্ন চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে
না। বিষয়টি একাধিকবার কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে; কাজ হয়নি। রাতে জরুরী বিভাগে চিকৎসক থাকেনা কেন?–জানতে চাইলে এ কর্মকর্তা
বলেন, অবশ্যই একজন চিকিৎসক থাকেন। সঙ্গে উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসারও থাকেন। বাইরে ওষুধ বিক্রির অভিযোগও অস্বীকার করেন এ কর্মকর্তা।