গাজায় আগ্রাসন নিয়ে কানাডা কেন এখন সরাসরি ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কথা বলছে
Published: 23rd, May 2025 GMT
ফিলিস্তিনের গাজা ও অধিকৃত পশ্চিম তীরে ইসরায়েলের কর্মকাণ্ডের নিন্দা জানিয়ে সম্প্রতি ইউরোপের দুটি দেশের সঙ্গে যৌথ বিবৃতি দিয়েছে কানাডা। দেশটির এই বিবৃতি ইসরায়েল প্রশ্নে নতুন সরকারের অবস্থান পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে।
এই সপ্তাহের শুরুতে যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সের সঙ্গে যৌথ এক বিবৃতিতে কানাডা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে অপ্রত্যাশিতভাবে কঠোর ভাষা ব্যবহার করেছে। গাজাবাসীর দুর্ভোগকে তারা ‘অসহনীয়’ ও ইসরায়েলের দেওয়া সীমিত সহায়তাকে ‘সম্পূর্ণ অপর্যাপ্ত’ বলে উল্লেখ করেছে।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরে হামাসের নেতৃত্বে দক্ষিণ ইসরায়েলে হামলার জবাবে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর প্রতিক্রিয়াকে ‘অতিমাত্রায় অসম’ ও ‘জঘন্য’ বলে যৌথ বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
ইসরায়েল এখন পর্যন্ত গাজায় প্রায় ৫৪ হাজার ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে। চিকিৎসাবিষয়ক সাময়িকী দ্য ল্যানসেটের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, এই সংখ্যার বাইরে আরও অনেক ফিলিস্তিনি রয়ে গেছেন। সুতরাং গাজায় নিহত মানুষের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
এই তিন দেশের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, তারা গাজা পরিস্থিতি নিয়ে ‘চুপ করে থাকবে না’ এবং পশ্চিম তীরে বসতি স্থাপনকারী ইসরায়েলি দখলদারদের হামলা ও ফিলিস্তিনি বাড়িঘর ধ্বংসের প্রতিক্রিয়ায় ‘সুনির্দিষ্ট নিষেধাজ্ঞাসহ আরও পদক্ষেপ নিতে পিছপা হবে না’।
তিন দেশের এই বিবৃতি নিয়ে হামাস প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। তারা এটিকে ‘আন্তর্জাতিক আইনের নীতিমালা পুনরুদ্ধারের পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ’ বলে উল্লেখ করেছে। হামাস বলেছে, এই নীতিমালা নেতানিয়াহুর ‘সন্ত্রাসী সরকার’ অগ্রাহ্য করে যাচ্ছে।
তিন দেশের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, তারা গাজা পরিস্থিতি নিয়ে ‘চুপ করে থাকবে না’ এবং পশ্চিম তীরে বসতি স্থাপনকারী ইসরায়েলি দখলদারদের হামলা ও ফিলিস্তিনি বাড়িঘর ধ্বংসের প্রতিক্রিয়ায় ‘সুনির্দিষ্ট নিষেধাজ্ঞাসহ আরও পদক্ষেপ নিতে পিছপা হবে না’।গত বুধবার ইউরোপীয় প্রতিনিধিদলের সঙ্গে চার কানাডীয় কূটনীতিক অধিকৃত পশ্চিম তীর সফরে গেলে ইসরায়েলি সৈন্যরা তাঁদের ওপর গুলি চালান। এর প্রতিক্রিয়ায় কানাডা ‘পূর্ণাঙ্গ তদন্ত’ ও ‘তাৎক্ষণিক ব্যাখ্যা’ দাবি করেছে। তারা ওই ঘটনাটিকে ‘সম্পূর্ণরূপে অগ্রহণযোগ্য’ বলে উল্লেখ করেছে। ইসরায়েল শুধু এটুকুই বলেছে, ‘এই ঝামেলা তৈরি হওয়ায় তারা অনুতপ্ত।’
ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ অনেক দিন ধরেই ইসরায়েলের সমালোচক। যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার এই সপ্তাহে ইসরায়েলের সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনা স্থগিত করেছেন এবং ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন।
অন্যদিকে কানাডা আগে ইসরায়েলের সমালোচনা করলেও তা সাধারণত খুব সংযত এবং যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানের সঙ্গে মিল রেখে চলেছে। তবে এখন পরিস্থিতি ভিন্ন।
কানাডার আইনের অধ্যাপক ও জাতিসংঘের সাবেক বিশেষ প্রতিনিধি মাইকেল লিঙ্ক বলেন, স্বীকার করতে হয়, মধ্যপ্রাচ্যে ‘মধ্য শক্তি’ হিসেবে কাজ করে থাকে কানাডা। মধ্যপ্রাচ্য ও ইসরায়েলের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই তাঁর দেশ কাজ করে।
মাইকেল লিঙ্ক আরও বলেন, ‘মধ্যপ্রাচ্য ও ইসরায়েলের বিষয়ে আমি অনেক দিন ধরে কানাডার কাছ থেকে এ রকম ভাষা শুনিনি। সম্ভবত কখনো না।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কানাডার সাবেক এক উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা মিডল ইস্ট আইকে বলেন, এটি এক নতুন সুর, যা আগে দেখা যায়নি।
এখন কেন এই অবস্থান
কানাডার সাবেক ওই কর্মকর্তা বলেন, কানাডা মধ্যপ্রাচ্য নিয়ে প্রতিক্রিয়া ঠিক করার আগে সাধারণত ওয়াশিংটনের দিকে তাকিয়ে থাকে। ইসরায়েল-ফিলিস্তিন ইস্যুটি কানাডায় তীব্র জনমত তৈরি করে, যার জন্য তাদের খুব সতর্ক থাকতে হয়।
কিন্তু গাজায় দুই মাসের বেশি সময় ধরে অবরোধ, অবকাঠামো ধ্বংস এবং কানাডায় নতুন নেতৃত্ব—সব মিলিয়ে পরিস্থিতি বদলে গেছে।
নতুন প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি একজন ঝানু অর্থনীতিবিদ এবং তিনি রাজনীতির বাইরের মানুষ ছিলেন। এখন এই সংকটময় মুহূর্তে তিনি অনেক বেশি সরাসরি বক্তব্য দিচ্ছেন।
যুক্তরাষ্ট্রই একমাত্র দেশ, যুদ্ধবিরতি কার্যকর করার জন্য যাদের ইসরায়েলের ওপর যথেষ্ট প্রভাব আছে। তবে ট্রাম্প প্রশাসন একধরনের ‘আমেরিকা প্রথম’ নীতিতে চলছে এবং ইসরায়েল থেকে কিছুটা দূরত্ব বজায় রাখছে। এককভাবে তারা হামাস, ইয়েমেনের হুতি ও ইরানের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে।মাইকেল লিঙ্ক বলেন, ‘মানবিক বিপর্যয় এখন এতটাই গভীর ও সংকটপূর্ণ যে সম্ভবত মার্ক কার্নি এই পরিস্থিতিতে নেতৃত্বের জায়গা থেকে এগিয়ে এসেছেন এবং সময়ের দাবি মেনে যথাযথভাবে সাড়া দিয়েছেন।’
মাইকেল লিঙ্ক বলেন, কার্নি এর আগে কখনো নির্বাচনে অংশ নেননি। তিনি ব্যাংক অব ইংল্যান্ড এবং ব্যাংক অব কানাডার গভর্নর ছিলেন। তিনি পরিষ্কার করে বলেছেন, তিনি কানাডাকে যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় ইউরোপীয় মিত্রদের কাছাকাছি দেখতে চান।
এই অধ্যাপক বলেন, জাস্টিন ট্রুডোর মতো কার্নির কাঁধে ততটা রাজনৈতিক বোঝা নেই, বিশেষ করে প্রধান প্রধান ইসরায়েলপন্থী গোষ্ঠীর সঙ্গে সম্পর্কের বিষয় নিয়ে।
লিঙ্ক ব্যাখ্যা করে বলেন, কানাডা কখনো অর্ধেক পদক্ষেপও নেয়নি, তারা তার চেয়েও কম এক–চতুর্থাংশ পদক্ষেপ নিয়েই সন্তুষ্ট থেকেছে। ইসরায়েলকে আন্তর্জাতিক আইন ও জাতিসংঘের প্রস্তাব মেনে চলতে বাধ্য করার ক্ষেত্রে কানাডা বরাবরই পিছিয়ে ছিল…আসল পরীক্ষা হবে কতটা শক্তিশালী পদক্ষেপ তারা নেয়, সেটাই।
সরকারের এক কর্মকর্তা মিডল ইস্ট আইকে বলেন, কানাডা যখনই অবস্থান নেয়, সেটা প্রায় সব সময়ই আন্তর্জাতিক মিত্রদের সঙ্গে মিলিয়ে নেয়, এটিই তাদের পররাষ্ট্রনীতির সাধারণ নিয়ম। তিনি আরও যোগ করেন, কানাডা যখন কথা বলে, তখন একা দাঁড়ায় না।
মাইকেল লিঙ্ক বলেন, ‘আমি নিশ্চিত, গত সোমবার দেওয়া বিবৃতিটি আংশিকভাবে এসেছে এই কারণে যে ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্যের পাশে থেকে তারা রাজনৈতিকভাবে নিজেদের সুরক্ষিত রাখতে চেয়েছে।’
গাজায় ইসরায়েলের নৃশংস হামলায় প্রায় ৫৪ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। সেই সঙ্গে ধুলায় মিশে যাচ্ছে একের পর এক অবকাঠামো.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইসর য় ল র পর স থ ত পদক ষ প অবস থ ন সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
অমর একুশে বইমেলা ফেব্রুয়ারিকে স্পর্শ করুক
অমর একুশে বইমেলা বাংলাদেশের মানুষের প্রাণের মেলা। মূলত প্রকাশকদের উদ্যোগে মুক্তিযুদ্ধ উত্তর বাংলাদেশে এই বইমেলার সূত্রপাত। সম্প্রতি এই বইমেলা নানা কারণে-অকারণে ডিসেম্বরে করার কথা শোনা যাচ্ছে। এ প্রেক্ষিতে সুস্পষ্টভাবে বলতেই হচ্ছে -ডিসেম্বরে কিছুতেই মেলা করা যাবে না। কারণ সেসময় সারাদেশে শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষা চলবে।
বইমেলার প্রধান পাঠক আমাদের শিক্ষার্থী। তারা ডিসেম্বরে কিছুতেই মেলায় আসতে পারবে না। প্রধান পাঠকই যদি মেলায় আসতে না পারে তাহলে মেলা প্রাণহীন হয়ে পড়বে। বইমেলায় অংশগ্রহণকারি প্রকাশকরাও ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়বে। তাছাড়া একুশের চেতনাকে ধারণ করে যে অমর একুশে বইমেলা, সেটা ফেব্রুয়ারিকে স্পর্শ করুক। ভাষা শহীদদরর প্রতি বইমেলার মাধ্যমে আমাদের যে শ্রদ্ধাঞ্জলি, তা অক্ষুন্ন থাকুক।
আরো পড়ুন:
রাজশাহীতে বইপড়ায় কৃতিত্বের পুরস্কার পেল ২৩০৩ শিক্ষার্থী
‘গল্পকারের পছন্দের ৫০ গল্প’ গ্রন্থ প্রকাশিত
সর্বোপরি ৫ জানুয়ারি থেকে ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, এই সময়ে বইমেলা হতে কোন সমস্যা হওয়ার কথা নয়। অথবা তারিখ দুই একদিন এদিক-সেদিক করে নেয়া যেতে পারে। এ সময়ে রোজা নেই, নির্বাচনও নেই। নির্বাচনী ক্যাম্পেইন চলবে। এই মাঠে বইমেলা চলাকালীন সর্বদলীয় সিদ্ধান্তে কেউ সভা-সমাবেশ না করার সিদ্ধান্ত নিলে অনায়াসে এই সময়টাতে বইমেলা করা যেতে পারে। আমার বিশ্বাস- সব দলই অমর একুশে বইমেলার জন্য এই ছাড়টুকু দেবেন।
প্রায় পঞ্চাশ বছরের অধিক সময়ের প্রচেষ্টায় অমর একুশে বইমেলা মহিরুহ হয়ে আমাদের কাছে আবির্ভূত, হঠকারি কোন সিদ্ধান্তে তা যেনো ধ্বংস হওয়ার উপক্রম না হয়। জেনে শুনে বাঙালির এতো বড় একটি সাংস্কৃতিক উৎসবকে ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্থ না করে বরং তা যে কোন মূল্যে আমাদের রক্ষা করা উচিত।
জানুয়ারিতে বাণিজ্যমেলায়ও হয়ে থাকে। এতে অমর একুশে বইমেলার ওপর কোনো বিরূপ প্রভাব পড়বে বলে আমি তা মনে করি না। বইমেলার প্রধান পাঠক শিক্ষার্থী। তারা বইমেলায় আসার জন্য মুখিয়ে থাকে। বাণিজ্য মেলায় যাওয়ার লোকজন বেশির ভাগই আলাদা। তবে অনেকেই বইমেলা এবং বাণিজ্যমেলা দুটোতেই যান। এটা তারা ম্যানেজ করে নিতে পারবেন বলে আমার বিশ্বাস।
আমি বলেছি শুধুমাত্র মেলার মাঠ প্রাঙ্গনে সভা-সমাবেশ না করার মাধ্যমে যদি সর্বদলীয় একটা সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় তাহলে জানুয়ারি- ফেব্রুয়ারি মিলিয়ে বইমেলা করা সম্ভব।আমার মনে হয়, বইমেলা চলাকালীন এই মাঠ কোন দলকে সভা-সমাবেশের জন্য সরকার বরাদ্দ না দিলে, অথবা বইমেলা চলাকালীন দলগুলো নিজের থেকেই এই মাঠের বরাদ্দ না চাইলে সমস্যা আর থাকে না।
লেখক: প্রকাশক পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লিমিটেড
ঢাকা/লিপি