ফিলিস্তিনের গাজা ও অধিকৃত পশ্চিম তীরে ইসরায়েলের কর্মকাণ্ডের নিন্দা জানিয়ে সম্প্রতি ইউরোপের দুটি দেশের সঙ্গে যৌথ বিবৃতি দিয়েছে কানাডা। দেশটির এই বিবৃতি ইসরায়েল প্রশ্নে নতুন সরকারের অবস্থান পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে।

এই সপ্তাহের শুরুতে যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সের সঙ্গে যৌথ এক বিবৃতিতে কানাডা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে অপ্রত্যাশিতভাবে কঠোর ভাষা ব্যবহার করেছে। গাজাবাসীর দুর্ভোগকে তারা ‘অসহনীয়’ ও ইসরায়েলের দেওয়া সীমিত সহায়তাকে ‘সম্পূর্ণ অপর্যাপ্ত’ বলে উল্লেখ করেছে।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরে হামাসের নেতৃত্বে দক্ষিণ ইসরায়েলে হামলার জবাবে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর প্রতিক্রিয়াকে ‘অতিমাত্রায় অসম’ ও ‘জঘন্য’ বলে যৌথ বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

ইসরায়েল এখন পর্যন্ত গাজায় প্রায় ৫৪ হাজার ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে। চিকিৎসাবিষয়ক সাময়িকী দ্য ল্যানসেটের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, এই সংখ্যার বাইরে আরও অনেক ফিলিস্তিনি রয়ে গেছেন। সুতরাং গাজায় নিহত মানুষের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।

এই তিন দেশের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, তারা গাজা পরিস্থিতি নিয়ে ‘চুপ করে থাকবে না’ এবং পশ্চিম তীরে বসতি স্থাপনকারী ইসরায়েলি দখলদারদের হামলা ও ফিলিস্তিনি বাড়িঘর ধ্বংসের প্রতিক্রিয়ায় ‘সুনির্দিষ্ট নিষেধাজ্ঞাসহ আরও পদক্ষেপ নিতে পিছপা হবে না’।

তিন দেশের এই বিবৃতি নিয়ে হামাস প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। তারা এটিকে ‘আন্তর্জাতিক আইনের নীতিমালা পুনরুদ্ধারের পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ’ বলে উল্লেখ করেছে। হামাস বলেছে, এই নীতিমালা নেতানিয়াহুর ‘সন্ত্রাসী সরকার’ অগ্রাহ্য করে যাচ্ছে।

তিন দেশের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, তারা গাজা পরিস্থিতি নিয়ে ‘চুপ করে থাকবে না’ এবং পশ্চিম তীরে বসতি স্থাপনকারী ইসরায়েলি দখলদারদের হামলা ও ফিলিস্তিনি বাড়িঘর ধ্বংসের প্রতিক্রিয়ায় ‘সুনির্দিষ্ট নিষেধাজ্ঞাসহ আরও পদক্ষেপ নিতে পিছপা হবে না’।

গত বুধবার ইউরোপীয় প্রতিনিধিদলের সঙ্গে চার কানাডীয় কূটনীতিক অধিকৃত পশ্চিম তীর সফরে গেলে ইসরায়েলি সৈন্যরা তাঁদের ওপর গুলি চালান। এর প্রতিক্রিয়ায় কানাডা ‘পূর্ণাঙ্গ তদন্ত’ ও ‘তাৎক্ষণিক ব্যাখ্যা’ দাবি করেছে। তারা ওই ঘটনাটিকে ‘সম্পূর্ণরূপে অগ্রহণযোগ্য’ বলে উল্লেখ করেছে। ইসরায়েল শুধু এটুকুই বলেছে, ‘এই ঝামেলা তৈরি হওয়ায় তারা অনুতপ্ত।’

ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ অনেক দিন ধরেই ইসরায়েলের সমালোচক। যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার এই সপ্তাহে ইসরায়েলের সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনা স্থগিত করেছেন এবং ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন।

অন্যদিকে কানাডা আগে ইসরায়েলের সমালোচনা করলেও তা সাধারণত খুব সংযত এবং যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানের সঙ্গে মিল রেখে চলেছে। তবে এখন পরিস্থিতি ভিন্ন।

কানাডার আইনের অধ্যাপক ও জাতিসংঘের সাবেক বিশেষ প্রতিনিধি মাইকেল লিঙ্ক বলেন, স্বীকার করতে হয়, মধ্যপ্রাচ্যে ‘মধ্য শক্তি’ হিসেবে কাজ করে থাকে কানাডা। মধ্যপ্রাচ্য ও ইসরায়েলের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই তাঁর দেশ কাজ করে।

মাইকেল লিঙ্ক আরও বলেন, ‘মধ্যপ্রাচ্য ও ইসরায়েলের বিষয়ে আমি অনেক দিন ধরে কানাডার কাছ থেকে এ রকম ভাষা শুনিনি। সম্ভবত কখনো না।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কানাডার সাবেক এক উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা মিডল ইস্ট আইকে বলেন, এটি এক নতুন সুর, যা আগে দেখা যায়নি।

এখন কেন এই অবস্থান

কানাডার সাবেক ওই কর্মকর্তা বলেন, কানাডা মধ্যপ্রাচ্য নিয়ে প্রতিক্রিয়া ঠিক করার আগে সাধারণত ওয়াশিংটনের দিকে তাকিয়ে থাকে। ইসরায়েল-ফিলিস্তিন ইস্যুটি কানাডায় তীব্র জনমত তৈরি করে, যার জন্য তাদের খুব সতর্ক থাকতে হয়।

কিন্তু গাজায় দুই মাসের বেশি সময় ধরে অবরোধ, অবকাঠামো ধ্বংস এবং কানাডায় নতুন নেতৃত্ব—সব মিলিয়ে পরিস্থিতি বদলে গেছে।

নতুন প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি একজন ঝানু অর্থনীতিবিদ এবং তিনি রাজনীতির বাইরের মানুষ ছিলেন। এখন এই সংকটময় মুহূর্তে তিনি অনেক বেশি সরাসরি বক্তব্য দিচ্ছেন।

যুক্তরাষ্ট্রই একমাত্র দেশ, যুদ্ধবিরতি কার্যকর করার জন্য যাদের ইসরায়েলের ওপর যথেষ্ট প্রভাব আছে। তবে ট্রাম্প প্রশাসন একধরনের ‘আমেরিকা প্রথম’ নীতিতে চলছে এবং ইসরায়েল থেকে কিছুটা দূরত্ব বজায় রাখছে। এককভাবে তারা হামাস, ইয়েমেনের হুতি ও ইরানের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে।

মাইকেল লিঙ্ক বলেন, ‘মানবিক বিপর্যয় এখন এতটাই গভীর ও সংকটপূর্ণ যে সম্ভবত মার্ক কার্নি এই পরিস্থিতিতে নেতৃত্বের জায়গা থেকে এগিয়ে এসেছেন এবং সময়ের দাবি মেনে যথাযথভাবে সাড়া দিয়েছেন।’

মাইকেল লিঙ্ক বলেন, কার্নি এর আগে কখনো নির্বাচনে অংশ নেননি। তিনি ব্যাংক অব ইংল্যান্ড এবং ব্যাংক অব কানাডার গভর্নর ছিলেন। তিনি পরিষ্কার করে বলেছেন, তিনি কানাডাকে যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় ইউরোপীয় মিত্রদের কাছাকাছি দেখতে চান।

এই অধ্যাপক বলেন, জাস্টিন ট্রুডোর মতো কার্নির কাঁধে ততটা রাজনৈতিক বোঝা নেই, বিশেষ করে প্রধান প্রধান ইসরায়েলপন্থী গোষ্ঠীর সঙ্গে সম্পর্কের বিষয় নিয়ে।

লিঙ্ক ব্যাখ্যা করে বলেন, কানাডা কখনো অর্ধেক পদক্ষেপও নেয়নি, তারা তার চেয়েও কম এক–চতুর্থাংশ পদক্ষেপ নিয়েই সন্তুষ্ট থেকেছে। ইসরায়েলকে আন্তর্জাতিক আইন ও জাতিসংঘের প্রস্তাব মেনে চলতে বাধ্য করার ক্ষেত্রে কানাডা বরাবরই পিছিয়ে ছিল…আসল পরীক্ষা হবে কতটা শক্তিশালী পদক্ষেপ তারা নেয়, সেটাই।

সরকারের এক কর্মকর্তা মিডল ইস্ট আইকে বলেন, কানাডা যখনই অবস্থান নেয়, সেটা প্রায় সব সময়ই আন্তর্জাতিক মিত্রদের সঙ্গে মিলিয়ে নেয়, এটিই তাদের পররাষ্ট্রনীতির সাধারণ নিয়ম। তিনি আরও যোগ করেন, কানাডা যখন কথা বলে, তখন একা দাঁড়ায় না।

মাইকেল লিঙ্ক বলেন, ‘আমি নিশ্চিত, গত সোমবার দেওয়া বিবৃতিটি আংশিকভাবে এসেছে এই কারণে যে ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্যের পাশে থেকে তারা রাজনৈতিকভাবে নিজেদের সুরক্ষিত রাখতে চেয়েছে।’

গাজায় ইসরায়েলের নৃশংস হামলায় প্রায় ৫৪ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। সেই সঙ্গে ধুলায় মিশে যাচ্ছে একের পর এক অবকাঠামো.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইসর য় ল র পর স থ ত পদক ষ প অবস থ ন সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

সূর্য ধ্বংসের সময় পৃথিবীর কী হবে

সূর্যের শেষটা কেমন হবে, তা নিয়ে বিজ্ঞানীদের মধ্যে অনেক তত্ত্ব চালু আছে। সৌরজগতে উষ্ণতা থেকে শুরু করে ভর আর সব গ্রহের কক্ষপথের স্থিতিশীলতা দিচ্ছে সূর্য। আমাদের পৃথিবীতে জীবনের অস্তিত্বের জন্য প্রয়োজনীয় অবস্থা তৈরির জন্য সূর্যের অবস্থান গুরুত্বপূর্ণ। বিজ্ঞানীদের ধারণা, সূর্য প্রায় ৫০০ কোটি বছর পর ধ্বংস হতে শুরু করবে। হাইড্রোজেন কমতে থাকায় শেষ পর্যন্ত সূর্য একটি লোহিত দৈত্যাকার অবস্থানে প্রসারিত হবে। তখন সম্ভাব্যভাবে পৃথিবীসহ অভ্যন্তরীণ বেশ কিছু গ্রহকে সূর্য গ্রাস করে ফেলবে। সূর্যের লোহিত দৈত্যাকার অবস্থানের সময় চরম তাপের পরিস্থিতি দেখা যাবে। এই পর্যায় কোটি কোটি বছর পর্যন্ত স্থায়ী হবে।

বিজ্ঞানীদের ধারণা, সূর্যের হাইড্রোজেন কমার সময় পৃথিবীর পৃষ্ঠের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাবে। মহাসাগর ও অন্যান্য জলাশয় বাষ্পীভূত হয়ে শূন্য হয়ে যাবে। ধীরে ধীরে আমাদের গ্রহ প্রাণের বসবাসের অযোগ্য হয়ে উঠবে। বর্ধিত তাপের ফলে বায়ুমণ্ডলীয় গ্যাস মহাকাশে হারিয়ে যাবে। সূর্যের লোহিত দৈত্যাকার পর্যায়টি প্রায় ১০০ কোটি বছর স্থায়ী হবে। এরপর একক নীহারিকা তৈরি করবে সূর্য। একটি সাদা বামন বস্তু হিসেবে সূর্য অবস্থান করবে। এ ধরনের পরিবর্তনের সময় পৃথিবীতে বেঁচে থাকা কঠিন হবে। বর্ধিত তাপ ও বিকিরণের কারণে বেশির ভাগ জীব বিলুপ্ত হয়ে যাবে।

যুক্তরাজ্যের ওয়ারউইক বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যোতির্বিজ্ঞানী ক্রিস্টোফার মানসার বলেন, সূর্যের মতো নক্ষত্র যখন মারা যায়, তখন তাদের কেন্দ্রস্থলে হাইড্রোজেন জ্বলতে থাকে। শেষ পর্যন্ত তারা লাল দৈত্যে পরিণত হয়। যদি তাদের গ্রহ থাকে, তবে সেগুলো গ্রাস করতে পারে। জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা জেটিএফ এসএলআরএন-২০২০ নামের একটি নক্ষত্রকে পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে এটি কেমন হতে পারে, তার একটি আভাস পেয়েছেন। নক্ষত্রটি তার একটি গ্রহকে গ্রাস করেছে।

প্রায় ৫০০ কোটি বছর পরে সূর্য লোহিত দৈত্যাকার অবস্থানে পৌঁছাবে। এর আগেই বুধ ও শুক্র গ্রহকে গ্রাস করে ফেলবে সূর্য। পৃথিবীরও একইভাবে ধ্বংস হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। যখন সূর্য একটি শ্বেত বামন নক্ষত্রে পরিণত হয়ে যাবে, তখন কেবল মঙ্গল আর গ্রহাণু বেল্টের পরে যা কিছু আছে, তা টিকে থাকবে।

সূত্র: এনডিটিভি, স্কাইঅ্যাটনাইটম্যাগাজিন

সম্পর্কিত নিবন্ধ