যুদ্ধবিরতির মধ্যেও পাল্টাপাল্টি হুমকি ও আক্রমণাত্মাক কথা বলে উত্তেজনা জিইয়ে রাখছে ভারত ও পাকিস্তান। বাদ পড়ছেন না দুই দেশের শীর্ষ নেতারাও। বৃহস্পতিবারই ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, ‘সন্ত্রাসবাদের’ জন্য পাকিস্তানকে চড়া মূল্য দিতে হবে। মোদির এই বক্তব্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে পাকিস্তান।

গত ২২ এপ্রিল ভারত–নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে বন্দুকধারীদের হামলায় ২৬ জন নিহত হন। ওই হামলায় পাকিস্তানের মদদ ছিল বলে অভিযোগ নয়াদিল্লির। তবে তা প্রত্যাখ্যান করে আসছে ইসলামাবাদ। এমন উত্তেজনার মধ্যে ৭ মে থেকে টানা চার দিন পাল্টাপাল্টি সংঘাতে জড়ায় দুই দেশ। পরে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় ১০ মে বিকেল থেকে শুরু হয় যুদ্ধবিরতি।

শুধু ২২ এপ্রিলের হামলার জন্যই নয়, এরও আগে থেকে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদের অভিযোগ করে আসছে ভারত। বৃহস্পতিবার ভারতের উত্তর-পশ্চিমের রাজ্য রাজস্থানের একটি জনসভায় নরেন্দ্র মোদি বলেন, প্রতিটি সন্ত্রাসী হামলার জন্য পাকিস্তানকে চড়া মূল্য দিতে হবে.

..পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে মূল্য দিতে হবে, পাকিস্তানের অর্থনীতিকেও মূল্য দিতে হবে।

পেহেলগাম হামলার পর সংঘাত ছাড়াও পাল্টাপাল্টি কিছু পদক্ষেপ নিয়েছিল ভারত–পাকিস্তান। এর মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত ছিল ভারতের পক্ষ থেকে সিন্ধু পানিচুক্তি স্থগিত করা। এই চুক্তির আওতায় থাকা নদীগুলো দিয়ে পাকিস্তানের ৮০ শতাংশ কৃষিজমিতে পানি সরবরাহ হয়। বৃহস্পতিবার মোদি বলেন, তাঁর দেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত নদীগুলো থেকে পাকিস্তান আর কোনো পানি পাবে না।

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সিন্ধু পানিচুক্তি হয় ১৯৬০ সালে। ভারত এই চুক্তি স্থগিত করার পর থেকেই তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে আসছে পাকিস্তান। পাকিস্তানের অ্যাটর্নি জেনারেল মনসুর উসমান আওয়ান রয়টার্সকে বলেন, সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে ভারত পাকিস্তানকে চিঠি দিয়েছে। সেখানে জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও পরিচ্ছন্ন জ্বালানির প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরে পানিচুক্তি সংশোধনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুনসিন্ধুসহ অভিন্ন নদীগুলোর পানি পাবে না পাকিস্তান: মোদি৯ ঘণ্টা আগে

‘মোদির বক্তব্য ভিত্তিহীন’

নরেন্দ্র মোদির বৃহস্পতিবারের বক্তব্যের পর ক্ষোভ জানিয়েছে পাকিস্তান। ভারতের প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য খারিজ করে দিয়ে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, ইসলামাবাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদ নিয়ে তিনি যে অভিযোগ তুলেছেন, তা ভিত্তিহীন, উসকানিমূলক ও দায়িত্বজ্ঞানহীন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, মোদি যে বক্তব্য দিয়েছেন, তাতে সত্যকে বিকৃত করা হয়েছে, ভুলভাবে তুলে ধরা হয়েছে, উসকানি দেওয়া হয়েছে। এ ধরনের বক্তব্য শুধু মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য সচেতন অপচেষ্টাই নয়, বরং দায়িত্বশীলভাবে রাষ্ট্র পরিচালনার নীতিমালাও লঙ্ঘন করে।

আরও পড়ুনভারতের সঙ্গে সংলাপে সৌদি আরবকে নিরপেক্ষ ভেন্যু মনে করেন পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রী২২ মে ২০২৫

মোদির বক্তব্যে আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন হয়েছে বলে মনে করে ইসলামাবাদ। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, একটি সার্বভৌম দেশের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযানের হুমকি দেওয়া এবং তা নিয়ে অহংকার করা জাতিসংঘ সনদ ও আন্তর্জাতিক আইনের প্রতিষ্ঠিত নীতির গুরুতর লঙ্ঘন। বিপজ্জনক এই কৌশল আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য ক্ষতিকর।

তবে মোদির হুমকি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করলেও পাল্টা হুমকি দিতে পিছপা হয়নি পাকিস্তান। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, শান্তির জন্য আমাদের যে আকাঙ্ক্ষা, তাকে দুর্বলতা বলে মনে করা যাবে না। পাকিস্তানের মানুষ ও সশস্ত্র বাহিনী দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত আছে। যেকোনো আগ্রাসনের যথাযথ জবাব দেওয়া হবে।

এদিকে সাম্প্রতিক সংঘাতে ভারতকে পাকিস্তান পরাজিত করেছে বলে শুক্রবার দাবি করেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ। তিনি বলেন, ‘কয়েকজন মনে করে পাকিস্তান প্রচলিত যুদ্ধের ক্ষেত্রে পিছিয়ে রয়েছে। এই যুদ্ধ তাদের ভুল প্রমাণিত করেছে। আমাদের একতা, সাহস ও বিশ্বাস অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে এবং চূড়ান্ত বিজয় এনে দেবে। ভারত কখনো এই পরাজয় ভুলবে না।’

আরও পড়ুনপাকিস্তানের সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে ফিল্ড মার্শাল করার তাৎপর্য কী২২ মে ২০২৫

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: দ শট র প র জন য ট র পর

এছাড়াও পড়ুন:

সরকারের ভেতরে একটা অংশ নির্বাচন বানচালের পাঁয়তারা করছে: এনসিপি

সরকারের ভেতরের একটি পক্ষ ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশের বাইরে গিয়ে নিজেরাই ঐকমত্য কমিশন হওয়ার চেষ্টা করছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্যসচিব আখতার হোসেন। তিনি বলেন, এই চেষ্টার কারণে নির্বাচন ঝুঁকিতে পড়বে।

আজ সোমবার সন্ধ্যায় রাজধানীর বাংলামোটরে এনসিপির অস্থায়ী কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে আখতার হোসেন এ কথা বলেন।

আখতার হোসেন বলেন, তাঁদের কাছে স্পষ্টতই প্রতীয়মান যে সরকারের ভেতরের কোনো একটা অংশ সংস্কারকে ভন্ডুল করে নির্বাচন বানচালের পাঁয়তারা করছে।

রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ–আলোচনার ভিত্তিতেই কমিশন সুপারিশ উপস্থাপন করেছে উল্লেখ করে সংবাদ সম্মেলনে এনসিপির সদস্যসচিব বলেন, সেই সুপারিশের ভিত্তিতেই সরকার আদেশ জারি করবে, সেটাই হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু যখন সরকারের তরফ থেকে সংবাদ সম্মেলন করে আরও এক সপ্তাহ রাজনৈতিক দলগুলোকে আলাপ–আলোচনার কথা বলা হয়, তখন মনে হয় যে সরকার আসলে এই সংস্কারের বিষয়গুলো নিয়ে সাপ-লুডো খেলছে। তিনি বলেন, ‘আমরা ৯৬-তে পৌঁছে গিয়েছিলাম, সেটাকে আবার তিনে নিয়ে আসা হয়েছে সাপ কেটে। এ অবস্থায় বাংলাদেশের বর্তমান যে রাজনৈতিক পরিস্থিতি, তাতে সংকট আরও ঘনীভূত হচ্ছে।’

অতি দ্রুত সরকারকে দায়িত্বশীল আচরণ করার আহ্বান জানিয়ে এনসিপির সদস্যসচিব বলেন, সরকারকে নিজেকেই দায়িত্ব নিয়ে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জারি করতে হবে। সামনের সংসদকে গাঠনিক ক্ষমতা প্রদান করার মধ্য দিয়ে সংবিধান সংস্কার পরিষদ হিসেবে ঘোষণা করতে হবে। গণভোটের মাধ্যমে অর্জিত জনগণের অভিপ্রায় স্বয়ংক্রিয়ভাবে যেন বাস্তবায়িত হয়, সেই সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ