Prothomalo:
2025-05-24@10:33:35 GMT

এল অন্য রকম লতাকরবী

Published: 24th, May 2025 GMT

করবী ফুলকে আমরা প্রায় সবাই চিনি। লাল রঙের ফুলকে বলি রক্তকরবী, সাদা রঙের ফুলকে বলি শ্বেতকরবী। গোলাপিটাকেও ফেলা হয় রক্তকরবীর দলে। আবার হলদে রঙের কলকে ফুলকেও অনেকে বলেন হলুদ করবী। এসব গাছ গুল্ম প্রকৃতির। লতানো আরেক ধরনের করবী এ দেশে দেখা যাচ্ছে, যাকে বলছি লতাকরবী বা রূপেলিয়া। কিন্তু এগুলোর বাইরেও মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার সুলতানপুর থেকে তরুপ্রেমিক তানভীর আহমেদ যখন জানালেন, তাঁর সংগ্রহে লেজওয়ালা এক রকম লতাকরবী আছে, বসন্ত থেকে সে গাছে ফুল ফুটছে। তখন সেই নতুন করবীকে দেখতে তিন প্রকৃতিবন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে ছুটলাম তানভীরের বাগানে। সত্যিই তো! ফুলের আবার এ রকম লেজ হয় নাকি? প্রতিটি ফোটা ফুলের মুখ থেকে ফুটখানেক লম্বা লম্বা খয়েরি রঙের সুতার মতো লেজ ঝুলছে। তানভীর তার নাম বললেন টিসেল ভাইন, গণ স্ট্রোফ্যানথাস। ফিরে এসে সেই নতুন সুন্দরীর জাত-বংশ খুঁজতে বসলাম। 

তত্ত্ব তালাশ করে দেখলাম, অ্যাপোসাইনেসি গোত্রের স্ট্রোফ্যানথাস গণে সারা বিশ্বে ৩৯টি প্রজাতির গাছ রয়েছে। এ গণে এ দেশে স্ট্রোফ্যানথাস ওয়ালিচি নামের এক প্রজাতির গাছ আছে। তার কোনো বাংলা নাম জানা নেই। সে গাছ বৃহৎ, লতানো গুল্ম প্রকৃতির, জন্মে বনেজঙ্গলে। ফুলের চেহারা অনাকর্ষণীয়। সে গাছে ফুল ও ফল ধরে মার্চ থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে। এর বীজ বিষাক্ত, বীজ স্ট্রোফ্যানথিন ওষুধ তৈরিতে কাজে লাগে। কেউ বাগানে বা বাড়িতে এ গাছ কখনো লাগায় না। বুনো গাছ। এ প্রজাতির গাছ এ দেশে বর্তমানে সংকটাপন্ন অবস্থায় রয়েছে। এ গণের আরেকটি প্রজাতির উদ্ভিদ এ দেশে কয়েক বছর হলো এসেছে। রূপেলিয়া বা ক্রিমফ্রুট নামের সেই প্রজাতির কোনো বর্ণনা বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি কর্তৃক ২০১০ সালে প্রকাশিত বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ বইয়ে নেই। তাই ধরে নেওয়া যেতে পারে রূপেলিয়া এ দেশে এর পরে এসেছে। এর ইংরেজি নাম ক্লাইম্বিং ওলিয়েন্ডার হওয়ায় কেউ কেউ সে গাছকে বাংলায় লতাকরবী নামে ডাকছেন। এর ফুলগুলোর ঘ্রাণ গোলাপ ফুলের মতো, রংটাও হালকা গোলাপি।

সম্প্রতি এ দেশে স্ট্রোফ্যানথাস গণের আরেকটি উদ্ভিদ এসেছে। এটি নতুন বলে বাগানিরা দাবি করছেন। বইপত্র ঘেঁটে এ দেশে এ গণের পূর্বোক্ত দুটি প্রজাতি ছাড়া আর কোনো প্রজাতির হদিস পেলাম না। নতুন আসা গাছটির প্রজাতি স্ট্রোফ্যানথাস প্রিউসি (Strophanthus preussii)। এ প্রজাতির গাছও লতানো স্বভাবের গুল্ম, গাছের কখনো সম্পূর্ণ পাতা ঝরে যায় না। গাছকে ভূমিতে বাইতে দিলে লতা ১২ মিটার পর্যন্ত লম্বা হতে পারে, অন্য কোনো অবলম্বন দিলে বা খুঁটিকে পেঁচিয়ে ৫ মিটার পর্যন্ত উঁচুতে উঠতে পারে। ছেঁটে ছেঁটে গাছকে ছোট করে রাখা যায় অনেক বছর। কাণ্ডের ব্যাস প্রায় আড়াই সেন্টিমিটার। পাতা সবুজ ও আগা তীক্ষ্ণ, বোঁটা খাটো।

নলাকার ঘণ্টার মতো থোকায় কয়েকটা ফুল ফোটে বসন্ত-গ্রীষ্মে। পাপড়ির গোড়া যুক্ত হয়ে নলাকার গড়ন তৈরি করে, অগ্রভাগ বিযুক্ত বা পাঁচটি খণ্ডে বিভক্ত। পাপড়ির রং কমলাভ-ঘিয়া, নলাকার অংশের ভেতরের দিকে মেরুন রঙের সরু আঁচড়ের মতো রেখা থাকে। এ ফুলের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো, পাপড়ির অগ্রভাগ থেকে সুতা বা লেজের মতো অঙ্গ থাকে, যা প্রায় ৩০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। এরূপ সুতাগুলো নিচের দিকে ঝুলতে থাকে, সুতাগুলো মেরুন রঙের। গাছ ও ফুলের খুব সুন্দর রূপ না থাকলেও সুগন্ধ আর লেজ তাকে বাগানিদের কাছে প্রিয় করেছে। মাকড়সার ঠ্যাংয়ের মতো এসব লেজের কারণে এর ইংরেজি নাম দেওয়া হয়েছে স্পাইডার ট্রেসেস, অন্য নাম মেডুসা ফ্লাওয়ার ও পয়জন অ্যারো ভাইন। বাংলায় কোনো নাম নেই। লেজের কারণে একে লেজি লতাকরবী বলা যেতে পারে। তাহলে লতাকরবী ফুল থেকে একে সহজে আলাদাভাবে চেনা যাবে।

এ প্রজাতির গাছের আদি নিবাস ট্রপিক্যাল আফ্রিকা, গায়ানা, তানজানিয়া, অ্যাঙ্গোলা। সেসব দেশে এ গাছ অরণ্যে জন্মে, এ দেশে ধীরে ধীরে আদরণীয় হয়ে উঠেছে ফুলবাগানিদের কাছে, বাগানে লাগানো হচ্ছে বাহারি গাছ হিসেবে। বীজ ও শিকড়ের কাটিং থেকে চারা তৈরি করা যায়। এ গাছ লালনপালনের জন্য তেমন যত্ন লাগে না। তবে গাছ ছেঁটে রাখলে প্রচুর ডালপালা হয়ে ঝোপালো হয় এবং ফুলও ফোটে বেশি। এ গাছের ভেষজ গুণ আছে বলে জানা গেছে। বিশেষ করে ক্ষত সারানো ও গণোরিয়া রোগের চিকিৎসায় এ গাছ ব্যবহৃত হতে পারে। আফ্রিকার আদিবাসীরা এ গাছকে তিরের ফলার বিষ হিসেবে ব্যবহার করে বন্য প্রাণী শিকার করে, মারামারির সময়ও তারা সেসব বিষাক্ত তির ব্যবহার করে।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

এল অন্য রকম লতাকরবী

করবী ফুলকে আমরা প্রায় সবাই চিনি। লাল রঙের ফুলকে বলি রক্তকরবী, সাদা রঙের ফুলকে বলি শ্বেতকরবী। গোলাপিটাকেও ফেলা হয় রক্তকরবীর দলে। আবার হলদে রঙের কলকে ফুলকেও অনেকে বলেন হলুদ করবী। এসব গাছ গুল্ম প্রকৃতির। লতানো আরেক ধরনের করবী এ দেশে দেখা যাচ্ছে, যাকে বলছি লতাকরবী বা রূপেলিয়া। কিন্তু এগুলোর বাইরেও মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার সুলতানপুর থেকে তরুপ্রেমিক তানভীর আহমেদ যখন জানালেন, তাঁর সংগ্রহে লেজওয়ালা এক রকম লতাকরবী আছে, বসন্ত থেকে সে গাছে ফুল ফুটছে। তখন সেই নতুন করবীকে দেখতে তিন প্রকৃতিবন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে ছুটলাম তানভীরের বাগানে। সত্যিই তো! ফুলের আবার এ রকম লেজ হয় নাকি? প্রতিটি ফোটা ফুলের মুখ থেকে ফুটখানেক লম্বা লম্বা খয়েরি রঙের সুতার মতো লেজ ঝুলছে। তানভীর তার নাম বললেন টিসেল ভাইন, গণ স্ট্রোফ্যানথাস। ফিরে এসে সেই নতুন সুন্দরীর জাত-বংশ খুঁজতে বসলাম। 

তত্ত্ব তালাশ করে দেখলাম, অ্যাপোসাইনেসি গোত্রের স্ট্রোফ্যানথাস গণে সারা বিশ্বে ৩৯টি প্রজাতির গাছ রয়েছে। এ গণে এ দেশে স্ট্রোফ্যানথাস ওয়ালিচি নামের এক প্রজাতির গাছ আছে। তার কোনো বাংলা নাম জানা নেই। সে গাছ বৃহৎ, লতানো গুল্ম প্রকৃতির, জন্মে বনেজঙ্গলে। ফুলের চেহারা অনাকর্ষণীয়। সে গাছে ফুল ও ফল ধরে মার্চ থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে। এর বীজ বিষাক্ত, বীজ স্ট্রোফ্যানথিন ওষুধ তৈরিতে কাজে লাগে। কেউ বাগানে বা বাড়িতে এ গাছ কখনো লাগায় না। বুনো গাছ। এ প্রজাতির গাছ এ দেশে বর্তমানে সংকটাপন্ন অবস্থায় রয়েছে। এ গণের আরেকটি প্রজাতির উদ্ভিদ এ দেশে কয়েক বছর হলো এসেছে। রূপেলিয়া বা ক্রিমফ্রুট নামের সেই প্রজাতির কোনো বর্ণনা বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি কর্তৃক ২০১০ সালে প্রকাশিত বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ বইয়ে নেই। তাই ধরে নেওয়া যেতে পারে রূপেলিয়া এ দেশে এর পরে এসেছে। এর ইংরেজি নাম ক্লাইম্বিং ওলিয়েন্ডার হওয়ায় কেউ কেউ সে গাছকে বাংলায় লতাকরবী নামে ডাকছেন। এর ফুলগুলোর ঘ্রাণ গোলাপ ফুলের মতো, রংটাও হালকা গোলাপি।

সম্প্রতি এ দেশে স্ট্রোফ্যানথাস গণের আরেকটি উদ্ভিদ এসেছে। এটি নতুন বলে বাগানিরা দাবি করছেন। বইপত্র ঘেঁটে এ দেশে এ গণের পূর্বোক্ত দুটি প্রজাতি ছাড়া আর কোনো প্রজাতির হদিস পেলাম না। নতুন আসা গাছটির প্রজাতি স্ট্রোফ্যানথাস প্রিউসি (Strophanthus preussii)। এ প্রজাতির গাছও লতানো স্বভাবের গুল্ম, গাছের কখনো সম্পূর্ণ পাতা ঝরে যায় না। গাছকে ভূমিতে বাইতে দিলে লতা ১২ মিটার পর্যন্ত লম্বা হতে পারে, অন্য কোনো অবলম্বন দিলে বা খুঁটিকে পেঁচিয়ে ৫ মিটার পর্যন্ত উঁচুতে উঠতে পারে। ছেঁটে ছেঁটে গাছকে ছোট করে রাখা যায় অনেক বছর। কাণ্ডের ব্যাস প্রায় আড়াই সেন্টিমিটার। পাতা সবুজ ও আগা তীক্ষ্ণ, বোঁটা খাটো।

নলাকার ঘণ্টার মতো থোকায় কয়েকটা ফুল ফোটে বসন্ত-গ্রীষ্মে। পাপড়ির গোড়া যুক্ত হয়ে নলাকার গড়ন তৈরি করে, অগ্রভাগ বিযুক্ত বা পাঁচটি খণ্ডে বিভক্ত। পাপড়ির রং কমলাভ-ঘিয়া, নলাকার অংশের ভেতরের দিকে মেরুন রঙের সরু আঁচড়ের মতো রেখা থাকে। এ ফুলের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো, পাপড়ির অগ্রভাগ থেকে সুতা বা লেজের মতো অঙ্গ থাকে, যা প্রায় ৩০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। এরূপ সুতাগুলো নিচের দিকে ঝুলতে থাকে, সুতাগুলো মেরুন রঙের। গাছ ও ফুলের খুব সুন্দর রূপ না থাকলেও সুগন্ধ আর লেজ তাকে বাগানিদের কাছে প্রিয় করেছে। মাকড়সার ঠ্যাংয়ের মতো এসব লেজের কারণে এর ইংরেজি নাম দেওয়া হয়েছে স্পাইডার ট্রেসেস, অন্য নাম মেডুসা ফ্লাওয়ার ও পয়জন অ্যারো ভাইন। বাংলায় কোনো নাম নেই। লেজের কারণে একে লেজি লতাকরবী বলা যেতে পারে। তাহলে লতাকরবী ফুল থেকে একে সহজে আলাদাভাবে চেনা যাবে।

এ প্রজাতির গাছের আদি নিবাস ট্রপিক্যাল আফ্রিকা, গায়ানা, তানজানিয়া, অ্যাঙ্গোলা। সেসব দেশে এ গাছ অরণ্যে জন্মে, এ দেশে ধীরে ধীরে আদরণীয় হয়ে উঠেছে ফুলবাগানিদের কাছে, বাগানে লাগানো হচ্ছে বাহারি গাছ হিসেবে। বীজ ও শিকড়ের কাটিং থেকে চারা তৈরি করা যায়। এ গাছ লালনপালনের জন্য তেমন যত্ন লাগে না। তবে গাছ ছেঁটে রাখলে প্রচুর ডালপালা হয়ে ঝোপালো হয় এবং ফুলও ফোটে বেশি। এ গাছের ভেষজ গুণ আছে বলে জানা গেছে। বিশেষ করে ক্ষত সারানো ও গণোরিয়া রোগের চিকিৎসায় এ গাছ ব্যবহৃত হতে পারে। আফ্রিকার আদিবাসীরা এ গাছকে তিরের ফলার বিষ হিসেবে ব্যবহার করে বন্য প্রাণী শিকার করে, মারামারির সময়ও তারা সেসব বিষাক্ত তির ব্যবহার করে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ