Prothomalo:
2025-11-02@01:09:08 GMT

এল অন্য রকম লতাকরবী

Published: 24th, May 2025 GMT

করবী ফুলকে আমরা প্রায় সবাই চিনি। লাল রঙের ফুলকে বলি রক্তকরবী, সাদা রঙের ফুলকে বলি শ্বেতকরবী। গোলাপিটাকেও ফেলা হয় রক্তকরবীর দলে। আবার হলদে রঙের কলকে ফুলকেও অনেকে বলেন হলুদ করবী। এসব গাছ গুল্ম প্রকৃতির। লতানো আরেক ধরনের করবী এ দেশে দেখা যাচ্ছে, যাকে বলছি লতাকরবী বা রূপেলিয়া। কিন্তু এগুলোর বাইরেও মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার সুলতানপুর থেকে তরুপ্রেমিক তানভীর আহমেদ যখন জানালেন, তাঁর সংগ্রহে লেজওয়ালা এক রকম লতাকরবী আছে, বসন্ত থেকে সে গাছে ফুল ফুটছে। তখন সেই নতুন করবীকে দেখতে তিন প্রকৃতিবন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে ছুটলাম তানভীরের বাগানে। সত্যিই তো! ফুলের আবার এ রকম লেজ হয় নাকি? প্রতিটি ফোটা ফুলের মুখ থেকে ফুটখানেক লম্বা লম্বা খয়েরি রঙের সুতার মতো লেজ ঝুলছে। তানভীর তার নাম বললেন টিসেল ভাইন, গণ স্ট্রোফ্যানথাস। ফিরে এসে সেই নতুন সুন্দরীর জাত-বংশ খুঁজতে বসলাম। 

তত্ত্ব তালাশ করে দেখলাম, অ্যাপোসাইনেসি গোত্রের স্ট্রোফ্যানথাস গণে সারা বিশ্বে ৩৯টি প্রজাতির গাছ রয়েছে। এ গণে এ দেশে স্ট্রোফ্যানথাস ওয়ালিচি নামের এক প্রজাতির গাছ আছে। তার কোনো বাংলা নাম জানা নেই। সে গাছ বৃহৎ, লতানো গুল্ম প্রকৃতির, জন্মে বনেজঙ্গলে। ফুলের চেহারা অনাকর্ষণীয়। সে গাছে ফুল ও ফল ধরে মার্চ থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে। এর বীজ বিষাক্ত, বীজ স্ট্রোফ্যানথিন ওষুধ তৈরিতে কাজে লাগে। কেউ বাগানে বা বাড়িতে এ গাছ কখনো লাগায় না। বুনো গাছ। এ প্রজাতির গাছ এ দেশে বর্তমানে সংকটাপন্ন অবস্থায় রয়েছে। এ গণের আরেকটি প্রজাতির উদ্ভিদ এ দেশে কয়েক বছর হলো এসেছে। রূপেলিয়া বা ক্রিমফ্রুট নামের সেই প্রজাতির কোনো বর্ণনা বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি কর্তৃক ২০১০ সালে প্রকাশিত বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ বইয়ে নেই। তাই ধরে নেওয়া যেতে পারে রূপেলিয়া এ দেশে এর পরে এসেছে। এর ইংরেজি নাম ক্লাইম্বিং ওলিয়েন্ডার হওয়ায় কেউ কেউ সে গাছকে বাংলায় লতাকরবী নামে ডাকছেন। এর ফুলগুলোর ঘ্রাণ গোলাপ ফুলের মতো, রংটাও হালকা গোলাপি।

সম্প্রতি এ দেশে স্ট্রোফ্যানথাস গণের আরেকটি উদ্ভিদ এসেছে। এটি নতুন বলে বাগানিরা দাবি করছেন। বইপত্র ঘেঁটে এ দেশে এ গণের পূর্বোক্ত দুটি প্রজাতি ছাড়া আর কোনো প্রজাতির হদিস পেলাম না। নতুন আসা গাছটির প্রজাতি স্ট্রোফ্যানথাস প্রিউসি (Strophanthus preussii)। এ প্রজাতির গাছও লতানো স্বভাবের গুল্ম, গাছের কখনো সম্পূর্ণ পাতা ঝরে যায় না। গাছকে ভূমিতে বাইতে দিলে লতা ১২ মিটার পর্যন্ত লম্বা হতে পারে, অন্য কোনো অবলম্বন দিলে বা খুঁটিকে পেঁচিয়ে ৫ মিটার পর্যন্ত উঁচুতে উঠতে পারে। ছেঁটে ছেঁটে গাছকে ছোট করে রাখা যায় অনেক বছর। কাণ্ডের ব্যাস প্রায় আড়াই সেন্টিমিটার। পাতা সবুজ ও আগা তীক্ষ্ণ, বোঁটা খাটো।

নলাকার ঘণ্টার মতো থোকায় কয়েকটা ফুল ফোটে বসন্ত-গ্রীষ্মে। পাপড়ির গোড়া যুক্ত হয়ে নলাকার গড়ন তৈরি করে, অগ্রভাগ বিযুক্ত বা পাঁচটি খণ্ডে বিভক্ত। পাপড়ির রং কমলাভ-ঘিয়া, নলাকার অংশের ভেতরের দিকে মেরুন রঙের সরু আঁচড়ের মতো রেখা থাকে। এ ফুলের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো, পাপড়ির অগ্রভাগ থেকে সুতা বা লেজের মতো অঙ্গ থাকে, যা প্রায় ৩০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। এরূপ সুতাগুলো নিচের দিকে ঝুলতে থাকে, সুতাগুলো মেরুন রঙের। গাছ ও ফুলের খুব সুন্দর রূপ না থাকলেও সুগন্ধ আর লেজ তাকে বাগানিদের কাছে প্রিয় করেছে। মাকড়সার ঠ্যাংয়ের মতো এসব লেজের কারণে এর ইংরেজি নাম দেওয়া হয়েছে স্পাইডার ট্রেসেস, অন্য নাম মেডুসা ফ্লাওয়ার ও পয়জন অ্যারো ভাইন। বাংলায় কোনো নাম নেই। লেজের কারণে একে লেজি লতাকরবী বলা যেতে পারে। তাহলে লতাকরবী ফুল থেকে একে সহজে আলাদাভাবে চেনা যাবে।

এ প্রজাতির গাছের আদি নিবাস ট্রপিক্যাল আফ্রিকা, গায়ানা, তানজানিয়া, অ্যাঙ্গোলা। সেসব দেশে এ গাছ অরণ্যে জন্মে, এ দেশে ধীরে ধীরে আদরণীয় হয়ে উঠেছে ফুলবাগানিদের কাছে, বাগানে লাগানো হচ্ছে বাহারি গাছ হিসেবে। বীজ ও শিকড়ের কাটিং থেকে চারা তৈরি করা যায়। এ গাছ লালনপালনের জন্য তেমন যত্ন লাগে না। তবে গাছ ছেঁটে রাখলে প্রচুর ডালপালা হয়ে ঝোপালো হয় এবং ফুলও ফোটে বেশি। এ গাছের ভেষজ গুণ আছে বলে জানা গেছে। বিশেষ করে ক্ষত সারানো ও গণোরিয়া রোগের চিকিৎসায় এ গাছ ব্যবহৃত হতে পারে। আফ্রিকার আদিবাসীরা এ গাছকে তিরের ফলার বিষ হিসেবে ব্যবহার করে বন্য প্রাণী শিকার করে, মারামারির সময়ও তারা সেসব বিষাক্ত তির ব্যবহার করে।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

সম্পর্কের মতো জীবনঘনিষ্ঠ সিদ্ধান্ত নিতেও এআইয়ে ঝুঁকছে মানুষ, পরিণতি কী

চলতি বছরের এপ্রিলে কেটি মোরান প্রেমিকের সঙ্গে তাঁর ছয় মাসের সম্পর্কের ইতি টানার সিদ্ধান্ত নেন। এ সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে তিনি এমন এক সাহায্যকারীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান, সচরাচর এমনটা দেখা যায় না। তাঁর কৃতজ্ঞতা পেয়েছে চ্যাটজিপিটি বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) চ্যাটবট।

যুক্তরাষ্ট্রের নিউ জার্সির ৩৩ বছর বয়সী এই নারী চ্যাটবটটিকে স্নেহের সঙ্গে ‘চ্যাট’ নামে ডাকেন। তিনি বলেন, ‘এটি আমাকে কিছু বিষয়ে গভীরভাবে ভাবতে এবং নিজের সঙ্গে আলাপে বাধ্য করেছে, যা আমি এড়িয়ে যাচ্ছিলাম।’

মোরান তাঁর বন্ধুবান্ধব এবং পরিবারের সদস্যদের কাছেও মনের কথা খুলে বলেছিলেন। এরপরও তিনি মনে করেন, চ্যাটজিপিটিই তাঁকে উপলব্ধি করতে সাহায্য করেছিল যে, তাঁর সম্পর্কের মধ্যেই লুকিয়ে আছে তাঁর দুশ্চিন্তার মূল কারণ। চ্যাটবটটির সঙ্গে এক সপ্তাহ কথা বলার পর, তিনি সম্পর্কটি ভেঙে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।

চ্যাটজিপিটির নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ওপেনএআইয়ের সাম্প্রতিক এক গবেষণা অনুযায়ী, চ্যাটজিপিটিতে দেওয়া বার্তার প্রায় অর্ধেকই ‘জিজ্ঞাসা’ বিভাগে পড়ে। ওপেনএআই এটিকে ‘সিদ্ধান্ত নিতে তথ্য খোঁজা বা যাচাই’ বিভাগে রেখেছে।

বিচ্ছেদ, চাকরি পরিবর্তন বা অন্য দেশে চলে যাওয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ জীবনঘনিষ্ঠ সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে বেশিরভাগ মানুষই সাধারণত বন্ধুবান্ধব, পরিবার বা থেরাপিস্টের পরামর্শ নিতে অভ্যস্ত। তবে এখন কিছু মানুষ নিজের অনুভূতির বিষয়ে তাৎক্ষণিক নির্মোহ মূল্যায়ন পেতে এআইয়ের দিকে ঝুঁকছেন।

মোরানের মতো কেউ কেউ কঠিন সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় আত্মবিশ্বাস জোগানোর কৃতিত্ব এআইকে দিচ্ছেন। তবে বিশেষজ্ঞরা সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দিয়ে বলছেন, এআইয়ের তোষামুদে স্বভাব কখনো কখনো ভুল সিদ্ধান্ত নেওয়ার দিকে ঠেলে দিতে পারে।

নিখুঁত নয়

জুলি নাইসকে চ্যাটজিপিটির কাছে মনের কথা খুলে বলতে বাধ্য করেছিল মূলত অবসাদ। যুক্তরাষ্ট্রের সান ফ্রান্সিসকোর প্রযুক্তি শিল্পে তিন বছর কাজ করার পর তিনি দুশ্চিন্তা, বিষণ্নতা এবং ক্রমাগত ক্লান্তিতে ভুগতে শুরু করেন।

গত বছরের শেষের দিকের সেই সময়টি সম্পর্কে জুলি বলেন, ‘অবশেষে আমি এমন একটা পর্যায়ে গিয়ে ঠেকেছি, যেখানে মনে হচ্ছিল— আমাকে কিছু একটা করতেই হবে, পরিবর্তন আনতেই হবে। আমি তখন একটা মানব-খোলস মাত্র ছিলাম (নিষ্প্রাণ)।’

জুলি সিদ্ধান্ত নিলেন— স্থান পরিবর্তন করবেন, বিশেষত ফ্রান্সে চলে যাবেন। আর এ বিষয়ে পরামর্শের জন্য তিনি দ্বারস্থ হন চ্যাটজিপিটির। তিনি তাঁর চাওয়াগুলো (একটি শান্ত শহর, যেখানে ভালো সংখ্যক প্রবাসীর বসবাস থাকবে) এবং তাঁর অপছন্দগুলো (প্যারিসের মতো ব্যস্ত শহর নয়) বিশদভাবে উল্লেখ করলেন। চ্যাটবটটি তাঁকে ফ্রান্সের দক্ষিণের একটি ছোট্ট শহর ইউজেস সুপারিশ করল। সেখানকার বাসিন্দা ৮ হাজার ৩০০ জনের মতো।

জুলি চলতি বছরের এপ্রিলে সেখানে চলে যান। তিনি বলেন, সিদ্ধান্ত গ্রহণের এই প্রক্রিয়াটি চ্যাটজিপিটির হাতে তুলে দেওয়ায় পুরো ব্যাপারটি নিয়ে তাঁর অতিরিক্ত চাপ অনেক কমে গিয়েছিল। যদিও তিনি এখন বলছেন, সিদ্ধান্তটি নিখুঁত ছিল না। ইউজেসে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য থেকে আসা প্রবাসীদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ আছে ঠিকই। তবে চ্যাটজিপিটি যে তথ্যটি দিতে ব্যর্থ হয়েছিল, সেটি হলো এই প্রবাসীদের বেশিরভাগই অবসরপ্রাপ্ত। আর জুলির বয়স ৪৪ বছর।

তরুণদের মধ্যে জিজ্ঞাসার প্রবণতা বেশি

চ্যাটজিপিটির নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ওপেনএআইয়ের সাম্প্রতিক এক গবেষণা অনুযায়ী, চ্যাটজিপিটিতে দেওয়া বার্তার প্রায় অর্ধেকই ‘জিজ্ঞাসা’ বিভাগে পড়ে। ওপেনএআই এটিকে ‘সিদ্ধান্ত নিতে তথ্য খোঁজা বা যাচাই’ বিভাগে রেখেছে। ওপেনএআইয়ের প্রধান নির্বাহী স্যাম অল্টম্যান উল্লেখ করেছেন, এই প্রবণতাটি তরুণ ব্যবহারকারীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দেখা যায়।

গত মে মাসে ক্যালিফোর্নিয়াভিত্তিক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান সিকোইয়া ক্যাপিটালের ‘এআই অ্যাসেন্ট’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় বয়সে ২০ থেকে ৩০ বছরের কোঠায় থাকা ব্যবহারকারীদের বিষয়ে অল্টম্যান বলেন, ‘তাঁরা চ্যাটজিপিটির কাছে জিজ্ঞাসা না করে আসলেই জীবনঘনিষ্ঠ সিদ্ধান্তগুলো নেন না।’ তিনি আরও যোগ করেন, ‘তাঁদের জীবনে আসা প্রতিটি ব্যক্তি এবং তাঁদের আলাপের সম্পূর্ণ প্রেক্ষাপট এআইয়ের কাছে আছে।’ (এ বিষয়ে মন্তব্যের জন্য ওপেনএআইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তারা সাড়া দেয়নি)।

আমাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা এআইয়ের হাতে ছেড়ে দিলে, সমস্যা সমাধানের আমাদের নিজস্ব দক্ষতা কমে যাওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়অধ্যাপক লিওনার্ড বুসিও, ফস্টার স্কুল অব বিজনেস, ইউনিভার্সিটি অব ওয়াশিংটন

তবে এভাবে তরুণেরাই শুধু এআইয়ের শরণাপন্ন হচ্ছেন, ব্যাপারটা তা নয়। যুক্তরাষ্ট্রের মিসৌরি অঙ্গরাজ্যের কানসাস সিটির বাসিন্দা মাইক ব্রাউন। ২০২৩ সালে ৫২ বছর বয়সে এসে নিজের ৩৬ বছরের বিবাহিত জীবন নিয়ে কী করা উচিত, সেই পরামর্শের জন্য একটি চ্যাটবটের দ্বারস্থ হয়েছিলেন তিনি। তাঁর বন্ধু, যাজক এবং বিবাহ পরামর্শক সবাই তাঁকে বিচ্ছেদের পরামর্শ দিয়েছিলেন। তবে তিনি বলেন, ওই বছরই চালু হওয়া একটি ইন্টারেকটিভ চ্যাটবট ‘পাই.এআই’-এর সঙ্গে ৩০ মিনিটের কথোপকথনের পরই তিনি তাঁর সিদ্ধান্তের বিষয়ে নিশ্চিত হন।

ব্রাউন বলেন, ‘আমার এই ভাবনাগুলো যাচাই করে নেওয়া দরকার ছিল এবং এই পথে এগোনোই যে সঠিক, সেটির জন্য নিশ্চয়তা পাওয়াটা দরকার ছিল।’ তিনি বলেন, এই পরিস্থিতিতে একটি ‘বিশ্বাসযোগ্য’ দৃষ্টিভঙ্গি পেতে তিনি চ্যাটবটটির ওপর আস্থা রেখেছিলেন।

আরও পড়ুনচ্যাটবট কি মানুষের মতো বুদ্ধিমান হতে পারবে২৯ মে ২০২৪

কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা

ইউনিভার্সিটি অব ওয়াশিংটনের ফস্টার স্কুল অব বিজনেসের অধ্যাপক লিওনার্ড বুসিও কীভাবে মানুষ ও এআইয়ের মধ্যে সহযোগিতায় সিদ্ধান্ত গ্রহণের যথার্থতা বাড়ানো যায়, তা নিয়ে গবেষণা করছেন। তিনি বুঝতে পারছেন, কেন মানুষ এভাবে এআইয়ের দিকে ঝুঁকছে। এর প্রধান কারণগুলো হলো সার্বক্ষণিক এটি হাতের কাছে পাওয়া যায়, বেশিরভাগ মানুষের চেয়ে অনেক দ্রুত উত্তর দিতে পারে এবং এটিকে তুলনামূলক বেশি নিরপেক্ষ বলেও মনে করা হয়।

বুসিও বলেন, ‘এআই সাধারণত অনেকটাই কূটনৈতিক ভাষায় অভ্যস্ত, পক্ষান্তরে মানুষ বিশেষত ব্যক্তিগত পরামর্শের ক্ষেত্রে নিজের চিন্তাভাবনা দ্বারা প্রভাবিত হয়ে মতামত দিয়ে থাকে।’

তবে বুসিও সতর্ক করে বলেন, বেশিরভাগ এআই মডেলের ‘তোষামোদী’ প্রবণতা থাকায় তারা ব্যবহারকারীকে খুশি করার বিষয়ে যতটা আগ্রহী, ততটা সেরা পরামর্শ দেওয়ার ক্ষেত্রে আগ্রহী নয়। তিনি আরও বলেন, ‘তাদের (চ্যাটবট) এমনভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে, যাতে তারা ব্যবহারকারীকে খুশি করতে পারে। কারণ, ব্যবহারকারী খুশি হলে, তারা আবার ফিরে আসে।’

কেটি মোরানের ক্ষেত্রেও এমনটাই হয়েছিল। চ্যাটজিপিটি বন্ধুর মতো করে কথা বলায় তিনি অবাক হয়েছিলেন বলে জানান। চ্যাটবটটি তাঁকে এ রকম বলেছিল, ‘আপনি এমন কাউকে পাওয়ার যোগ্য, যে আপনাকে আশ্বস্ত করবে; এমন কাউকে নয়, যার নীরবতা আপনাকে দুশ্চিন্তার গোলকধাঁধায় ফেলে দেবে।’

আরও পড়ুনকিশোরকে আত্মহত্যায় উৎসাহ দিয়েছে চ্যাটবট, নির্মাতার বিরুদ্ধে মায়ের মামলা২৪ অক্টোবর ২০২৪

রয়টার্সের সঙ্গে কথা বলা ব্যক্তিদের কেউই এআইয়ের ওপর নির্ভর করার জন্য অনুতপ্ত নন বলে জানিয়েছেন। মাইক ব্রাউনের মতে, এআই ‘আবেগী, নিরপেক্ষ পর্যবেক্ষকের’ মতো কাজ করেছে। কেটি মোরানের কাছে এটি ছিল ‘সবচেয়ে কাছের বন্ধুর’ মতো। আর জুলি নাইস বলেন, এআই তাঁকে তিনি আসলে কী চান, তা উপলব্ধি করতে সাহায্য করেছে।

এরপরও, অধ্যাপক বুসিও একটি সতর্কবার্তা দিয়েছেন। তিনি সতর্ক করে বলেছেন, ‘আমাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা এআইয়ের হাতে ছেড়ে দিলে, সমস্যা সমাধানের আমাদের নিজস্ব দক্ষতা কমে যাওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়।’

এই অধ্যাপক বলেন, ‘আমি বলব, একটু পিছিয়ে আসুন এবং নিজেদেরই সিদ্ধান্ত নেওয়ার মধ্যে যে সৌন্দর্য আছে, তা নিয়ে ভাবুন। একই সঙ্গে এটাও নিশ্চিত করার জন্য যে, আমরা নিজেরাও চিন্তাভাবনার কাজটা করছি।’

আরও পড়ুনচ্যাটজিপিটিসহ অন্য এআই চ্যাটবটকে যে ৭ তথ্য দেওয়া যাবে না৩১ অক্টোবর ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ