বিদেশি শিক্ষার্থীরা ভর্তি হতে পারবে হার্ভার্ডে: মার্কিন আদালত
Published: 24th, May 2025 GMT
যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদেশি শিক্ষার্থীরা ভর্তি হতে পারবেন। সম্প্রতি বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভর্তি বন্ধে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সিদ্ধান্ত স্থগিত করেছেন আদালত। ফলে বিশ্বের প্রভাবশালী উচ্চশিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটিতে ভর্তির ক্ষেত্রে নতুন করে সুসংবাদ পেলেন বিদেশি শিক্ষার্থীরা।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, হার্ভার্ড প্রশাসন ট্রাম্পের সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে আদালতের দ্বারস্থ হন। এর পরপরই আদালত ট্রাম্পের সিদ্ধান্ত সাময়িক স্থগিত করে দেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্থানীয় সময় গতকাল শুক্রবার এক মার্কিন আদালত ট্রাম্প প্রশাসনের একটি নীতি সাময়িকভাবে স্থগিত করেছেন। এই নীতি অনুযায়ী, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভর্তি করাতে পারত না। হার্ভার্ডের অভিযোগ, এই নীতি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বৃহত্তর চক্রান্তের অংশ। কারণ, হার্ভার্ড তাদের ‘শিক্ষাগত স্বাধীনতা’ বিসর্জন দিতে রাজি হয়নি।
মার্কিন আদালতের এই আদেশের ফলে হাজার হাজার আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী সাময়িক স্বস্তি পেয়েছেন। এই আদেশ বলবৎ থাকলে তাদের অন্য প্রতিষ্ঠানে চলে যেতে হতো। হার্ভার্ড কর্তৃপক্ষ ট্রাম্পের ওই নীতিকে মার্কিন সংবিধান ও অন্যান্য ফেডারেল আইনের ‘প্রকাশ্য লঙ্ঘন’ বলে অভিহিত করে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আরও জানায়, এর ফলে বিশ্ববিদ্যালয় এবং ৭ হাজারের বেশি ভিসাধারীর ওপর ‘তাৎক্ষণিক ও ধ্বংসাত্মক প্রভাব’ পড়বে।
শুক্রবার বোস্টন ফেডারেল আদালতে দায়ের করা মামলায় ৩৯৮ বছরের পুরোনো হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় বলেছে, ‘আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী ছাড়া হার্ভার্ড, হার্ভার্ড নয়। বর্তমান শিক্ষাবর্ষে হার্ভার্ডে প্রায় ৬ হাজার ৮০০ আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী আছে, যা মোট শিক্ষার্থীর ২৭ শতাংশ।’
এই পদক্ষেপ হোয়াইট হাউস ও হার্ভার্ডের মধ্যে দীর্ঘদিনের চলমান বিতর্কের সর্বশেষ সংযোজন। ট্রাম্প প্রশাসন বিশ্ববিদ্যালয়, আইন সংস্থা, সংবাদমাধ্যম, আদালত ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানকে নিজেদের রাজনৈতিক এজেন্ডার সঙ্গে মেলাতে চাইছে। রিপাবলিকানরা দীর্ঘদিন ধরেই অভিজাত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিরুদ্ধে বামপন্থী পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ করে আসছে।
এর আগে ট্রাম্প প্রশাসনের আদেশের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে হার্ভার্ড কর্তৃপক্ষ। মামলার একদিন আগেই যুক্তরাষ্ট্রের ‘হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগ’ (ডিএইচএস) জানায়, তারা হার্ভার্ডের শিক্ষার্থী ভিসা কর্মসূচির অ্যাকসেস বাতিল করছে। এই কর্মসূচির আওতায়ই বিদেশি শিক্ষার্থীরা যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনা করতে পারেন।
ট্রাম্প প্রশাসনের অভিযোগ, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় ইহুদিবিরোধিতার বিরুদ্ধে যথেষ্ট পদক্ষেপ নেয়নি এবং নিয়োগ ও ভর্তি প্রক্রিয়ায় সংস্কার আনেনি। তবে এসব অভিযোগ জোরালোভাবে অস্বীকার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
হার্ভার্ড মামলায় বলেছে, ‘কলমের এক খোঁচায় সরকার আমাদের ছাত্রসংখ্যার এক-চতুর্থাংশকে মুছে ফেলতে চেয়েছে। অথচ এই শিক্ষার্থীরাই বিশ্ববিদ্যালয়ের লক্ষ্য ও কর্মকাণ্ডে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে।’
বিশ্ববিদ্যালয় আদালতের কাছে আবেদন করেছে, যাতে হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের বৃহস্পতিবারের সিদ্ধান্ত স্থগিত করা হয়। এই সিদ্ধান্তেই হার্ভার্ডের স্টুডেন্ট অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ ভিজিটর প্রোগ্রাম সার্টিফিকেশন বাতিল করা হয়েছে।
হার্ভার্ডের প্রেসিডেন্ট অ্যালান গারবার এক চিঠিতে বলেছেন, ‘আমরা এই বেআইনি ও অযৌক্তিক পদক্ষেপের তীব্র নিন্দা জানাই। সরকার একের পর এক পদক্ষেপ নিয়ে হার্ভার্ডকে শাস্তি দেওয়ার চেষ্টা করছে। কারণ, আমরা আমাদের একাডেমিক স্বাধীনতা বিসর্জন দিতে রাজি হইনি।’
ট্রাম্প প্রশাসন শুধু হার্ভার্ড নয়, অন্য শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকেও নিশানায় রেখেছে। তারা দাবি করেছে, এসব প্রতিষ্ঠানকে ফিলিস্তিনপন্থী কর্মীদের দমন ও রক্ষণশীল মতামতের প্রতি বৈষম্য দূর করতে হবে। এ ছাড়া দেশজুড়ে ডজনখানেক বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। নিউইয়র্কের কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটির মতো প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে তারা কিছু ছাড়ও আদায় করে নিয়েছে।
চলতি বছরের এপ্রিল মাসে হোয়াইট হাউস হার্ভার্ডের জন্য বরাদ্দ ২ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলারের ফেডারেল অর্থায়ন স্থগিত করে এবং প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বিশ্ববিদ্যালয়টির করছাড় সুবিধা বাতিলেরও হুমকি দেন। এই অর্থায়ন স্থগিতের পরিপ্রেক্ষিতে হার্ভার্ড আগেও একটি মামলা করেছিল, যেখানে তারা ট্রাম্প প্রশাসনের ওই পদক্ষেপ বন্ধের দাবি জানায়।
উল্লেখ্য, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় ম্যাসাচুসেটস অঙ্গরাজ্যের কেমব্রিজে অবস্থিত এবং এটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রাচীন ও খ্যাতনামা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে শীর্ষস্থানীয়।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র পদক ষ প কর ত প
এছাড়াও পড়ুন:
বিলীন আরও ২০০ মিটার বাঁধ, হুমকির মুখে তিন গ্রাম
পদ্মা সেতু প্রকল্প রক্ষা বাঁধ ধসের এক দিন পর শরীয়তপুরের জাজিরায় মঙ্গলবার ভাঙন আরও ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। পদ্মার প্রবল স্রোতে সেতুর কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড-সংলগ্ন রক্ষা বাঁধের আরও ২০০ মিটার অংশ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
স্থানীয়দের ভাষ্য, সোমবার বিকেলে শুরু হওয়া ভাঙনের স্রোত এতটাই তীব্র ছিল যে, মাত্র কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে বিলীন হয়ে গেছে অন্তত ৯টি বসতবাড়ি ও ১০টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। হুমকির মুখে রয়েছে মাঝিরঘাট বাজারসহ আশপাশের তিনটি গ্রাম। আতঙ্কে ঘরবাড়ি সরিয়ে নিয়েছে অন্তত ২৫টি পরিবার। কেউ খোলা আকাশের নিচে, কেউ আবার আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিচ্ছেন। অনেকেই তাদের শেষ সম্বল হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন।
ভাঙনের ভয়াবহতা বিবেচনায় নিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড মঙ্গলবার সকাল থেকেই জরুরি ভিত্তিতে জিও ব্যাগ ফেলার (ডাম্পিং) কাজ শুরু করে। তবে প্রবল স্রোত ও বৈরী আবহাওয়ার কারণে এই কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
এর আগে গত নভেম্বর ও চলতি বছরের জুনে ২ দফায় প্রায় ৩০০ মিটার বাঁধ ভেঙে যায়। স্থানীয়দের অভিযোগ, পানি উন্নয়ন বোর্ডের অবহেলা এবং দ্রুত পদক্ষেপ না নেওয়ায় ভাঙনের এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
পাউবো, জাজিরা উপজেলা পরিষদ এবং স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত নভেম্বরে পদ্মা সেতু রক্ষা বাঁধের প্রায় ১০০ মিটার অংশ নদীতে বিলীন হয়। প্রায় চার মাস পর চলতি বছরের ২৫ এপ্রিল থেকে ২ কোটি ৮৭ লাখ টাকা ব্যয়ে জিও ব্যাগ ও সিসি ব্লক ফেলে কাজ শুরু করে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
এদিকে অবস্থার অবনতি ঠেকাতে সোমবারই পরিদর্শনে আসেন পানি উন্নয়ন বোর্ড ফরিদপুর অঞ্চলের প্রধান অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী শাজাহান সিরাজ। তিনি বলেন, ভাঙন রোধে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। জিও ব্যাগ ফেলা ও ব্লক বসানোর কাজ দ্রুত শুরু হবে।
আমরা দেখেছি, ভাঙনের অবস্থা অত্যন্ত ভয়াবহ। অতি দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
স্থানীয় বাসিন্দা গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘প্রতি বছরই আমরা নদী ভাঙনের মুখে পড়ি। কিন্তু এবার পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ। চোখের সামনে মাত্র এক
ঘণ্টায় ১০টি ঘর নদীতে চলে গেল। আতঙ্কে দিন কাটছে আমাদের। সরকারের কোনো প্রতিনিধি নজর রাখে না। বর্ষার শুরুতে কিছু জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছিল, কিন্তু সেগুলো কোনো কাজেই আসেনি। শুধু আশ্বাস আর আশ্বাস—বাস্তব ব্যবস্থা নেই। আমরা চাই দ্রুত স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করা হোক, না হলে পুরো এলাকা নদীতে বিলীন হয়ে যাবে।’
ব্যবসা প্রতিষ্ঠান হারানো সুজন ফকির বলেন, ‘বাড়িতে দুপুরে খাবার খেতে গিয়েছিলাম। হঠাৎ চিৎকার শুনি—পদ্মা সব ভেঙে নিয়ে যাচ্ছে। এসে দেখি
নদীর ভেতরে আমার দোকানটি পড়ে আছে। সর্বস্বান্ত হয়ে গেলাম। সর্বনাশা নদী প্রতিষ্ঠান সরিয়ে নেওয়ার
সময়ও দিল না। এখন পরিবার নিয়ে কীভাবে চলব, বুঝতে পারছি না।’
বাড়ি হারানো খলিল মাদবর বলেন, ‘হঠাৎ করে পানিতে কিছু একটা ভেঙে পড়া শব্দ পাই। গিয়ে দেখি কয়েকটি দোকান ভেঙে নদীতে চলে গেছে।
এরপর ঘরের আসবাবপত্র সরিয়ে ফেলি। আধা ঘণ্টার মধ্যেই পদ্মা আমার বাড়ি কেড়ে নিল। নিঃস্ব হয়ে গেলাম। মাথা গোঁজার ঠাঁই রইলো না। গত বছর বাঁধ ভাঙার পর যদি দ্রুত মেরামত করা হতো, তাহলে হয়তো আজকের এই দুর্দিন দেখতে হতো না।’
স্থানীয় প্রশাসন ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়িয়েছে। ইতোমধ্যে শুকনো খাবার ও নগদ অর্থ বিতরণ শুরু হয়েছে। তবে ক্ষতিগ্রস্তরা বলছেন, সাময়িক সহায়তার পাশাপাশি জরুরি ভিত্তিতে স্থায়ী বাঁধ পুনর্নির্মাণ ও পূর্ণাঙ্গ পুনর্বাসন নিশ্চিত করতে হবে।
পদ্মা সেতু প্রকল্প এলাকায় ভাঙনের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে শরীয়তপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী তারেক হাসান বলেন, প্রায় ১২-১৩ বছর আগে সেতু বিভাগ পদ্মা সেতু প্রকল্প এলাকা রক্ষার জন্য এই বাঁধ নির্মাণ করেছিল। বর্তমানে জাজিরার নাওডোবা জিরো পয়েন্ট এলাকায় প্রায় ১০০ মিটার অংশ ভেঙে পড়েছে। আমরা পাউবো এবং বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ (বিবিএ) যৌথভাবে সমীক্ষা চালিয়েছি। তাতে দেখা গেছে, প্রায় ১ কিলোমিটার এলাকায় নদীর গভীরতা বেড়েছে এবং তলদেশ থেকে মাটি সরে যাচ্ছে। ফলে পুরো বাঁধ এখন ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।
তিনি আরও জানান, সোম ও মঙ্গলবার দুই দিনে উজান ও ভাটি মিলিয়ে আনুমানিক ২০০ মিটার বাঁধ ভেঙে গেছে। ভাঙন ঠেকাতে
জিও ব্যাগ ডাম্পিং করা হচ্ছে। বাঁধ মজবুতকরণের জন্য একটি ডিপিপি (ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট প্রপোজাল) মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। তবে আগামী বর্ষার আগে পুরোপুরি বাঁধ মেরামত সম্ভব নয়।
গত বছরের নভেম্বরে জাজিরা উপজেলার পূর্ব নাওডোবা এলাকায় পদ্মা সেতু প্রকল্পের তীর রক্ষা বাঁধে প্রায় ১০০ মিটার ভাঙন দেখা দেয়। পদ্মা সেতুর ১ হাজার ৭০০ মিটার পূর্বদিকে মঙ্গল মাঝির ঘাট এলাকায় সেই ভাঙন শুরু হয়।
পাউবো সূত্র জানায়, ২০১৫ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে পদ্মার ভাঙনে শরীয়তপুরের নড়িয়া ও জাজিরা উপজেলার প্রায় ৩০টি গ্রাম নদীতে বিলীন হয়। গৃহহীন হয়ে পড়ে প্রায় ২০ হাজার পরিবার। শুধু ২০১৮ সালেই ৫ হাজার ৫০০ পরিবার ঘরবাড়ি হারায়, হারিয়ে যায় নড়িয়ার পাঁচটি বাজার। হাসপাতাল ভবনও রেহাই পায়নি।