এক বিসিএসের তিন গেজেট, এবারও বাদ ৬৫ জন
Published: 24th, May 2025 GMT
দীর্ঘ পাঁচ বছরের অপেক্ষা শেষে ৪৩তম বিসিএসে নিয়োগ পাওয়া বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের বিভিন্ন ক্যাডারের ১ হাজার ৮৯৬ জন প্রার্থী গত ১৫ জানুয়ারি চাকরিতে যোগ দেন। সে সময় গেজেট-বঞ্চিত ২২৭ জনের জন্য দিনটি ছিল বিষাদের। দেশের ইতিহাসে তৃতীয়বারের মতো এই বিসিএসের গেজেট প্রকাশ করা হয় গত মঙ্গলবার। তৃতীয় গেজেটে ২২৭ জনের মধ্যে ১৬২ জনের গেজেট হলেও আবার বাদ পড়েছেন ৬৫ জন।
বাদ পড়া ৬৫ জনের মধ্যে একজন ইকরামুল হক (ছদ্মনাম)। তিনি টানা ছয়টি বিসিএসের প্রিলিমিনারি পাস করেছেন। চারটি বিসিএসের ভাইভা দিয়েছেন। ওই প্রার্থী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার কোনো রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা নেই। আমি গেজেট থেকে বাদ পড়ায় শুধু আমি না, আমার আশপাশে সবাই অবাক হয়েছে। আমার বংশের মধ্যে কেউ রাজনীতিসংশ্লিষ্ট না থাকার পরও আজকে আমি গেজেট-বঞ্চিত। ভুল তদন্ত প্রতিবেদনের কারণে গেজেট থেকে বাদ পড়েছি।’
আরও পড়ুনরংপুর কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটে নিয়োগ, ৭৬ পদের আবেদন অনলাইনে১০ মে ২০২৫বাদ পড়া আরেকজন প্রার্থী প্রথম আলোর কাছে দাবি করেন, ‘আমি কখনো রাজনীতি করিনি। আমার কোনো পদপদবি নেই। আমি কখনো ছাত্রলীগ করিনি। আমি নিজেও জানি না, এবার কেন আমাকে গেজেট থেকে বাদ দেওয়া হলো।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে তৃতীয় গেজেটে বাদ পড়া আরেক প্রার্থী বলেন, ‘আমাদের কেন বাদ দেওয়া হলো, সে কারণ জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়নি। দুই সংস্থার প্রতিবেদন দুই রকম হয়েছে প্রায় সবার ক্ষেত্রে। আমার একটির প্রতিবেদন ক্লিয়ার, কিন্তু অন্যটির প্রতিবেদনে ভুল তথ্য দেওয়া হয়েছে। ভুল প্রতিবেদনের কারণে বাদ পড়েছি আমি। রাষ্ট্রের কাছে দাবি, আমার বিষয়ে সঠিক তদন্ত করে আমাকে নিয়োগ দেওয়া হোক।’
বাদ পড়া আরেক প্রার্থী বলেন, ‘আমার বাদ পড়ার কোনো কারণই খুঁজে পাইনি। আমি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছি, যেখানে কোনো রাজনীতি নেই। আমার পরিবারে কেউ রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত নয়। আমার নামে কোনো মামলা নেই। বর্তমানে আমি একটি সরকারি চাকরিতে কর্মরত। এর আগে আমি ৪১তম বিসিএসে তথ্য ক্যাডারে গেজেটেড ছিলাম। তুলনামূলক ভালো জবে থাকায় সে সময় তথ্য ক্যাডারে যোগ দেয়নি।’
আরও পড়ুনঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৬৩ পদে চলছে আবেদন, শেষ ২৫ মে২ ঘণ্টা আগেবাদ পড়া ৬৫ জনের বিষয়ে জানতে চাইলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, যাঁরা বাদ পড়েছেন, তাঁদের পুলিশি যাচাই প্রতিবেদন সন্তোষজনক না হওয়ায় গেজেটভুক্ত হননি।
দীর্ঘ পাঁচ বছরের নিয়োগপ্রক্রিয়া শেষে ৪৩তম বিসিএসের সুপারিশ পাওয়া প্রার্থীরা গেজেটভুক্ত হয়ে গত ১৫ জানুয়ারি চাকরিতে যোগ দেন। কিন্তু গেজেট থেকে বাদ পড়ায় ২২৭ প্রার্থী চাকরিতে যোগ দিতে পারেননি। এরপর গেজেটভুক্ত হওয়ার দাবিতে তাঁরা গত জানুয়ারি থেকে সংবাদ সম্মেলন ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে আসছিলেন। সর্বশেষ গত ২৯ এপ্রিল থেকে গেজেটে বাদ পড়া কয়েকজন প্রার্থীকে গেজেটভুক্ত করা ও ভেরিফিকেশন নীতি প্রণয়নের দাবিতে আমরণ অনশন শুরু করেন। তাঁদের মধ্য থেকে ১৬২ জনের প্রজ্ঞাপন জারি হয়েছে মঙ্গলবার।
আরও পড়ুনপ্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে রাজস্ব খাতে চাকরি, নেবে ২৫ জন১৪ মে ২০২৫৪৩তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়েছিল ২০২০ সালের ৩০ নভেম্বর। প্রিলিমিনারি, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা শেষে ২০২৩ সালের ২৬ ডিসেম্বর ২ হাজার ১৬৩ জনকে নিয়োগের সুপারিশ করেছিল সরকারি কর্ম কমিশন। ভেরিফিকেশন শেষে ৯৯ জনকে বাদ দিয়ে গত বছরের ১৫ অক্টোবর ২ হাজার ৬৪ জনকে চূড়ান্তভাবে নিয়োগ দিয়ে প্রথম গেজেট প্রকাশ করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
এরপর ৩০ ডিসেম্বর ওই প্রজ্ঞাপন বাতিল করে প্রথম সুপারিশকৃত ২ হাজার ১৬৩ প্রার্থীর মধ্য থেকে স্বাস্থ্য পরীক্ষায় অনুপস্থিত ৪০ জন এবং গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদন বিবেচনায় সাময়িকভাবে অনুপযুক্ত ২২৭ জনসহ মোট ২৬৭ জনকে বাদ দিয়ে ১ হাজার ৮৯৬ জনকে নিয়োগের দ্বিতীয় প্রজ্ঞাপন জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। সর্বশেষ গত মঙ্গলবার তৃতীয় প্রজ্ঞাপনে ১৬২ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়।
আরও পড়ুনজ্বালানি ও খনিজ সম্পদের অধীনে নিয়োগ, বেতন স্কেল ৮,৫০০ থেকে ৩৫,৫০০১৮ মে ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব স এস র চ কর ত প রক শ র জন ত প রথম
এছাড়াও পড়ুন:
সরকারি চাকরি অধ্যাদেশ প্রত্যাহারের দাবিতে সচিবালয়ে কর্মচারীদের বিক্ষোভ
‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’-এর খসড়া অনুমোদনের প্রতিবাদে সচিবালয়ের ভেতরে বিক্ষোভ মিছিল করেছে বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদ। ‘নিবর্তনমূলক ও কালাকানুন’ আখ্যায়িত করে এ অধ্যাদেশ প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।
আজ শনিবার এই প্রতিবাদ কর্মসূচি পালিত হয়। এর আগে গত বৃহস্পতিবার অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮ সংশোধন করে ‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’-এর খসড়া অনুমোদন দেওয়া হয়।
অভিযোগ উঠেছে, সাড়ে চার দশক আগের বিশেষ বিধানের কিছু ‘নিবর্তনমূলক ধারা’ সংযোজন করে অধ্যাদেশের খসড়াটি করা হয়েছে। এর মাধ্যমে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে সহজেই শাস্তি, এমনকি চাকরি থেকে বরখাস্ত করার সুযোগ তৈরি করা হয়েছে বলে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হচ্ছে। অধ্যাদেশের খসড়াটিকে সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক আখ্যায়িত করে তা পুনর্বিবেচনারও দাবি করছেন কর্মচারীরা।
এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদ আজ সচিবালয়ের ভেতরে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করে। এতে অনেক কর্মচারী অংশ নেন।
পরিষদের সভাপতি মো. বাদিউল কবীর প্রথম আলোকে বলেন, সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮-তে সব আচরণবিধি ও অন্যান্য বিধান বিবৃত আছে। এখন অধ্যাদেশের মাধ্যমে নিবর্তনমূলক ধারা সংযোজন করা হচ্ছে। এটি কালাকানুন। তাঁরা দ্রুত এটি প্রত্যাহার চান।
আরও পড়ুনসংশোধন করা হচ্ছে সরকারি চাকরি আইন, অধ্যাদেশের খসড়া অনুমোদন২২ মে ২০২৫