ড্রোন দিদিদের নিয়ে কী লিখলেন বিল গেটস
Published: 24th, May 2025 GMT
গত বছর আমার জন্মদিনে একটি ড্রোন উপহার পেয়ে আমি খুবই উৎসাহিত হই। আকাশে উড়িয়ে আমার বাড়ির পেছনের বাগানটা কেমন দেখায়, তা দেখার জন্য যেন তর সইছিল না। যাঁরা ড্রোন ব্যবহার করেন, তাঁরা একটা বিষয় জানেন। খুব দ্রুতই আমি সেই কঠিন সত্যি জানলাম, ড্রোন ওড়ানো আসলে সহজ কোনো কাজ নয়। এর জন্য প্রচুর অনুশীলন ও দক্ষতার প্রয়োজন হয়।
সেই ড্রোন হয়তো আবার বের করার সময় এসেছে। গত মাসে ভারতে বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে একটি প্রশিক্ষণ নেওয়ার সৌভাগ্য হয়েছিল আমার। দিল্লি সফরের সময়, আমি সঙ্গীতা দেবী, সুমিত্রা দেবী ও কাজল কুমারী নামের তিনজন ড্রোন দিদির সঙ্গে দেখা করি। যাঁরা ভারতের বিহারের কৃষি উৎপাদনশীলতাকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছেন।
আমি যে নারীদের সঙ্গে দেখা করেছি, তাঁরা ভারত সরকারের নমো ‘ড্রোন দিদি’ কর্মসূচিতে যুক্ত। দিদি হিন্দি শব্দ, যার অর্থ বোন। গ্রামীণ নারীদের আয় বৃদ্ধি ও ভারতের কৃষি উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির জন্য ২০২৩ সালে এই কর্মসূচি চালু করা হয়েছিল। যদিও কার্যক্রমটি এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে, আমি এরই মধ্যে যার ফলে বেশ মুগ্ধ।
বর্তমানে ড্রোন দিদিরা প্রধানত ফসলে সার দেওয়ার জন্য ড্রোন ওড়ানোর দক্ষতা ব্যবহার করছেন। হাতে সার দেওয়ার চেয়ে ড্রোনের মাধ্যমে সার প্রয়োগের অনেক সুবিধা রয়েছে। যেহেতু আপনি গাছ থেকে আরও দূরে স্প্রে করতে পারেন, তাই তরল সার আরও বেশি ছড়িয়ে পড়ে। এর মাধ্যমে সার আরও সূক্ষ্ম কণায় পরিণত হওয়ায় বৃহত্তর এলাকাজুড়ে ছড়ানো যায়। ড্রোনের মাধ্যমে সার ছড়ানোর কাজ কৃষক ও পরিবেশ—উভয়ের জন্যই উপকারী। এই পদ্ধতিতে উল্লেখযোগ্যভাবে কম সার লাগে। আর কম পানির প্রয়োজন হয়। দ্রুত কাজ করা যায়। একজন ড্রোন দিদি একই সময়ে পাঁচজন অর্ধ-একর জমিতে যা করেন, ততক্ষণে পাঁচ একর জমিতে কাজ করতে পারছেন।
সামনের বছরে এই কাজ কতটা প্রসারিত হবে, তা দেখার জন্য আমি অপেক্ষা করছি। ভারত সরকার ড্রোনে উন্নত সেন্সর ও ইমেজিং প্রযুক্তি যুক্ত করার পরিকল্পনা নিয়েছে। এতে ড্রোন দিদিরা কৃষকদের ফসলের গুণমান ও পরিমাণ উন্নত করার জন্য তাৎক্ষণিক তথ্য ব্যবহারের সুযোগ দেবে। এতে আরও কাজ করার সুযোগ বাড়বে। তাঁরা রোগ ও কীটপতঙ্গ শনাক্ত করতে, মাটির আর্দ্রতার স্তর মূল্যায়ন করতে, ফসলের বৃদ্ধি পর্যবেক্ষণ করাসহ অনেক কিছু করতে সক্ষমতা লাভ করবেন।
ড্রোন দিদি কার্যক্রম পুরো ভারতে নারীদের ক্ষমতায়নে কাজ করবে, তা জানতে আমি উৎসাহী। একেকজন দিদি একটি স্বনির্ভর গোষ্ঠীর কার্যক্রমে যুক্ত। আগামী বছরের শেষ নাগাদ সারা ভারতে এমন কার্যক্রমের মাধ্যমে ১৫ হাজার নারীকে ড্রোন সরবরাহ করা হবে।
আমি থাকি যুক্তরাষ্ট্রে। এখানে স্বনির্ভর গোষ্ঠী সাধারণত মানসিক স্বাস্থ্য–সংক্রান্ত কাজ করে। ভারতে এমন কার্যক্রমের মাধ্যমে পারস্পরিক সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। প্রতিটি দল ছোট। বেশির ভাগ দল প্রায় ১২ জন নারী নিয়ে গঠিত। যদিও কিছু দলে ২৫ জন পর্যন্ত সদস্য থাকেন। সামাজিক ও আর্থিকভাবে একে অপরকে সমর্থন করার জন্য নারীদের একত্র করে। নারীরা তাঁদের সঞ্চয় একত্র করেন, কম সুদের হারে ক্ষুদ্রঋণ পান। নিজেরা স্বাস্থ্য ও শিক্ষার মতো ক্ষেত্রে বিভিন্ন সমস্যা সমাধান করেন।
আমি যে দিদিদের সঙ্গে দেখা করেছি, তাঁরা জীবিকা নামের দলের সদস্য দীর্ঘদিনের জন্য। বিহারের এই সংস্থা গ্রামীণ এলাকার মানুষকে দারিদ্র্য থেকে মুক্তি দিতে কাজ করছে। দিল্লিতে দেখা করার সময় কাজল দিদি আমাকে তিন বছর আগে তাঁর দোকান খোলার গল্প বলেন। তিনি বীজ ও সার বিক্রি করেন। তিনি একজন উদ্যোক্তা হতে চেয়েছিলেন। যখন তাঁকে ড্রোন দিদি হওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়, তখন তিনি জানতেন ড্রোন তাঁর ব্যবসার জন্য দারুণ কাজ করবে।
একেকজন দিদি হায়দরাবাদ বা নয়ডায় প্রশিক্ষণ প্রোগ্রামে অংশ নেন। তাঁদের ড্রোন চালানো ও কার্যকরভাবে সার প্রয়োগ করা শেখানো হয়। আমি শুনে অবাক হয়েছিলাম যে উড়তে শেখা সার প্রয়োগ করার চেয়ে সহজ। কম সময় লাগে! অন্য নারীদের ড্রোন টেকনিশিয়ান হিসেবে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। কোনো সমস্যা দেখা দিলে তাঁরা নিজেরাই যেন যন্ত্র মেরামত করতে পারেন।
দুই বছরের কম সময়ে ড্রোন দিদি কর্মসূচিটি এরই মধ্যে নারী পাইলটদের জীবন পরিবর্তন করছে। কাজল দিদি তাঁর অতিরিক্ত আয় ব্যবহার করে দোকানের পণ্য প্রসারিত করছে। স্টক সংরক্ষণের জন্য একটি গুদাম তৈরি করছে। তিনি তাঁর সন্তানদের আরও ভালো স্কুলে পাঠানোর পরিকল্পনা করছেন। সঙ্গীতা দিদি ড্রোন দিদি হওয়ার আগে তাঁর পরিবারের জন্য একটি সাইকেল কেনার সামর্থ্য ছিল না। এখন তিনি একটি অটোরিকশার গর্বিত মালিক।
সুমিত্রা দিদি আশা করেন, যখন মানুষ তাঁর মতো কাউকে বিশাল ড্রোন ওড়াতে দেখবেন, তখন নারীরা কী করতে পারেন বা সক্ষম, সে সম্পর্কে সমাজের ধারণার পরিবর্তন হবে। তাঁর এলাকার অনেক নারীর মতো, সুমিত্রার খুব অল্প বয়সে বিয়ে হয়েছিল। সন্তানদের সঙ্গে তাঁর বাড়িতে থাকার কথা ছিল। আজ তাঁর সন্তানেরা তাঁকে পাইলট মাম্মি বলে ডাকে। একদিন তাঁকে বিমান ওড়ানোর স্বপ্ন দেখে সন্তানেরা।
আশাকরি পরেরবার যখন আপনি কোনো বিয়ে বা পার্কে আপনার মাথার ওপর ড্রোনের গুঞ্জন শুনতে পাবেন, তখন দিদিদের কথা ভাববেন। এটি একটি অসাধারণ বিষয়। প্রযুক্তির একটি অংশ কীভাবে একটি সম্প্রদায়ের সম্ভাবনার রূপ পরিবর্তন করছে, তা দারুণ একটা বিষয়। কাজল দিদি আমাকে বলেছিলেন, লোকেরা মাঝেমধ্যে তাঁর দিকে তাকিয়ে বলেন, ‘খুব উঁচুতে উড়ছ! এরপর কী করবে?’
কাজল দিদির উত্তর, ‘এটা তো সবে শুরু। অপেক্ষা করুন, আর দেখুন কী আসছে।’
সূত্র: গেটস নোটস
অনুবাদ: জাহিদ হোসাইন খান
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ক জল দ দ ব যবহ র ক জ কর র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
অমর একুশে বইমেলা ফেব্রুয়ারিকে স্পর্শ করুক
অমর একুশে বইমেলা বাংলাদেশের মানুষের প্রাণের মেলা। মূলত প্রকাশকদের উদ্যোগে মুক্তিযুদ্ধ উত্তর বাংলাদেশে এই বইমেলার সূত্রপাত। সম্প্রতি এই বইমেলা নানা কারণে-অকারণে ডিসেম্বরে করার কথা শোনা যাচ্ছে। এ প্রেক্ষিতে সুস্পষ্টভাবে বলতেই হচ্ছে -ডিসেম্বরে কিছুতেই মেলা করা যাবে না। কারণ সেসময় সারাদেশে শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষা চলবে।
বইমেলার প্রধান পাঠক আমাদের শিক্ষার্থী। তারা ডিসেম্বরে কিছুতেই মেলায় আসতে পারবে না। প্রধান পাঠকই যদি মেলায় আসতে না পারে তাহলে মেলা প্রাণহীন হয়ে পড়বে। বইমেলায় অংশগ্রহণকারি প্রকাশকরাও ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়বে। তাছাড়া একুশের চেতনাকে ধারণ করে যে অমর একুশে বইমেলা, সেটা ফেব্রুয়ারিকে স্পর্শ করুক। ভাষা শহীদদরর প্রতি বইমেলার মাধ্যমে আমাদের যে শ্রদ্ধাঞ্জলি, তা অক্ষুন্ন থাকুক।
আরো পড়ুন:
রাজশাহীতে বইপড়ায় কৃতিত্বের পুরস্কার পেল ২৩০৩ শিক্ষার্থী
‘গল্পকারের পছন্দের ৫০ গল্প’ গ্রন্থ প্রকাশিত
সর্বোপরি ৫ জানুয়ারি থেকে ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, এই সময়ে বইমেলা হতে কোন সমস্যা হওয়ার কথা নয়। অথবা তারিখ দুই একদিন এদিক-সেদিক করে নেয়া যেতে পারে। এ সময়ে রোজা নেই, নির্বাচনও নেই। নির্বাচনী ক্যাম্পেইন চলবে। এই মাঠে বইমেলা চলাকালীন সর্বদলীয় সিদ্ধান্তে কেউ সভা-সমাবেশ না করার সিদ্ধান্ত নিলে অনায়াসে এই সময়টাতে বইমেলা করা যেতে পারে। আমার বিশ্বাস- সব দলই অমর একুশে বইমেলার জন্য এই ছাড়টুকু দেবেন।
প্রায় পঞ্চাশ বছরের অধিক সময়ের প্রচেষ্টায় অমর একুশে বইমেলা মহিরুহ হয়ে আমাদের কাছে আবির্ভূত, হঠকারি কোন সিদ্ধান্তে তা যেনো ধ্বংস হওয়ার উপক্রম না হয়। জেনে শুনে বাঙালির এতো বড় একটি সাংস্কৃতিক উৎসবকে ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্থ না করে বরং তা যে কোন মূল্যে আমাদের রক্ষা করা উচিত।
জানুয়ারিতে বাণিজ্যমেলায়ও হয়ে থাকে। এতে অমর একুশে বইমেলার ওপর কোনো বিরূপ প্রভাব পড়বে বলে আমি তা মনে করি না। বইমেলার প্রধান পাঠক শিক্ষার্থী। তারা বইমেলায় আসার জন্য মুখিয়ে থাকে। বাণিজ্য মেলায় যাওয়ার লোকজন বেশির ভাগই আলাদা। তবে অনেকেই বইমেলা এবং বাণিজ্যমেলা দুটোতেই যান। এটা তারা ম্যানেজ করে নিতে পারবেন বলে আমার বিশ্বাস।
আমি বলেছি শুধুমাত্র মেলার মাঠ প্রাঙ্গনে সভা-সমাবেশ না করার মাধ্যমে যদি সর্বদলীয় একটা সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় তাহলে জানুয়ারি- ফেব্রুয়ারি মিলিয়ে বইমেলা করা সম্ভব।আমার মনে হয়, বইমেলা চলাকালীন এই মাঠ কোন দলকে সভা-সমাবেশের জন্য সরকার বরাদ্দ না দিলে, অথবা বইমেলা চলাকালীন দলগুলো নিজের থেকেই এই মাঠের বরাদ্দ না চাইলে সমস্যা আর থাকে না।
লেখক: প্রকাশক পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লিমিটেড
ঢাকা/লিপি