চট্টগ্রামে বাড়তি দামে এলপি গ্যাস বিক্রি, ছয় পরিবেশকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিল বিপিসি
Published: 24th, May 2025 GMT
বাড়তি দামে সরকারি তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম (এলপি) গ্যাস বিক্রি করা ও চালান রসিদ না রাখার অভিযোগে দুই পরিবেশক প্রতিষ্ঠানকে ছয় হাজার টাকা জরিমানা করেছেন বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) ভ্রাম্যমাণ আদালত। পাশাপাশি এলপি গ্যাস বিক্রির লাইসেন্সবিষয়ক তথ্য সংগ্রহ করতে না পারায় আরও ৪ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
আজ শনিবার নগরের ডবলমুরিং, হালিশহর ও পাহাড়তলী থানাধীন বিভিন্ন এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়। জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগে সংযুক্ত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সিমন সরকার অভিযান পরিচালনা করেন। এতে সুমন এন্টারপ্রাইজ ও মনজুর আলম ট্রেডার্স নামের দুই প্রতিষ্ঠানকে ছয় হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। অন্য চার প্রতিষ্ঠান মেসার্স আলী অ্যান্ড সন্স, মেসার্স খাজা ট্রেডার্স, মেসার্স ছালেখা করপোরেশন ও লাকী এন্টারপ্রাইজের লাইসেন্সের কাগজপত্র যাচাই করে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।
জানতে চাইলে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সিমন সরকার প্রথম আলোকে বলেন, দুই প্রতিষ্ঠান বিক্রয়ের চালান ও রসিদ দেখাতে পারেনি। বাড়তি দরে গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি করছিল। তাই জরিমানা ও সতর্ক করা হয়েছে। অন্য চার প্রতিষ্ঠানে গিয়ে লাইসেন্সের কাগজপত্র পাওয়া যায়নি। কোনোটিতে আবার মালিককে খুঁজে পাওয়া যায়নি। এ কারণে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলোকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
দেশে সরকারি-বেসরকারি—দুভাবে এলপি গ্যাস বিক্রি হয়। সরকারি এলপি গ্যাস পরিবেশকদের কাছে বিক্রি করে বিপিসির চার অঙ্গপ্রতিষ্ঠান। এই চার অঙ্গপ্রতিষ্ঠান হলো পদ্মা অয়েল কোম্পানি লিমিটেড, মেঘনা পেট্রোলিয়াম লিমিটেড, যমুনা অয়েল কোম্পানি লিমিটেড ও স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানি লিমিটেড (এসএওসিএল)। চার কোম্পানিতে এলপি গ্যাস পরিবেশকের সংখ্যা ৩ হাজার ১০১। এলপি গ্যাস বিক্রি করতে পরিবেশকদের বিস্ফোরক পরিদপ্তর থেকে লাইসেন্স নিতে হয়। গত পাঁচ বছরে সরকারি এলপি গ্যাস বিক্রি হয়েছে ৫২ হাজার ২৩০ টন বা ৫ কোটি ২২ লাখ ৩০ হাজার কেজি।
সাড়ে ১২ কেজি ওজনের গ্যাস সরকারি চার প্রতিষ্ঠান থেকে কিনতে পরিবেশকদের কোম্পানি পর্যায়ে বর্তমানে খরচ হয় ৭৮৪ টাকা। আরও কিছু খরচ যুক্ত হয়ে ভোক্তাদের কাছে বিক্রি করার কথা ৮২৫ টাকায়। কিন্তু এ দামে ভোক্তারা গ্যাস পান না। তাঁদের কিনতে হয় ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৩৫০ টাকায়। এ নিয়ে ১৩ মে প্রথম আলোয় ‘সরকারি এলপিজিরও বাড়তি দাম’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
আরও পড়ুনসরকারি এলপিজিরও বাড়তি দাম১৩ মে ২০২৫.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ইবিতে স্নাতক পাসের ১ বছর পরও মিলছে না নম্বরপত্র
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) ২০১৮-১৯ বর্ষের অধিকাংশ বিভাগের শিক্ষার্থীরা বছরখানেক আগেই স্নাতক সম্পন্ন করেছেন। কিন্তু নম্বরপত্র না পেয়ে উচ্চশিক্ষার আবেদনসহ গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন তারা।
সফটওয়্যার সিস্টেমে সমস্যা থাকার কারণে নম্বরপত্র উত্তোলনে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। তবে কবে নাগাদ সমাধান হবে সে বিষয়েও নিশ্চিত বলতে পারেননি তারা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পূর্বে ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীদের সনদ ও নম্বরপত্র প্রদান করা হত। ২০২৪ সালের এপ্রিল মাসে অনলাইনের মাধ্যমে এসব ডকুমেন্টস প্রদানে প্রিন্ট সেবা মাধ্যম চালু হয়। স্নাতক ২০১৮-১৯ বর্ষ থেকে পরবর্তী বর্ষের শিক্ষার্থীরা এই সেবা পাবেন বলে জানানো হয়। তবে বাস্তবে কেবল সনদ ও ট্রান্সক্রিপ্ট প্রদান করা হলেও নম্বরপত্র পাচ্ছেন না শিক্ষার্থীরা।
আরো পড়ুন:
কুবি উপাচার্যের মেয়ের পোষ্য কোটায় ভর্তি নিয়ে বিতর্ক
গাজায় মানবিক সহায়তা পাঠালেন জবি শিক্ষার্থীরা
বিশ্ববিদ্যালয়ের হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শিক্ষার্থী সোহেল রানা বলেন, “২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে স্নাতক শেষ করি। তবে ১ বছর পরও নম্বরপত্র হাতে পাইনি। চলতি বছরের ফ্রেব্রুয়ারিতে মাস্টার্স শেষ করে ক্যাম্পাস ছেড়েছি। অন্য সব কাগজপত্র তুলতে পারলেও গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্টস নম্বরপত্র না নিয়েই ক্যাম্পাস ছাড়তে হয়েছে। কবে নাগাদ প্রদান করা হবে সেটাও আমাদের নিশ্চিত করা হয়নি।”
অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী ফুয়াদ হাসান বলেন, “আমাদের শিক্ষাবর্ষের অনেকেই ইতোমধ্যে অনার্স-মাস্টার্স সম্পন্ন করে বিশ্ববিদ্যালয় ত্যাগ করেছেন। তবে দুঃখজনকভাবে বলতে হয়, এখনো অনেকেই নম্বরপত্র পাননি। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এ ক্ষেত্রে চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে।”
তিনি বলেন, “সফটওয়্যার সিস্টেমের অজুহাতে কাগজপত্র উত্তোলনে বারবার ভুল ও বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে। নিয়মমাফিক প্রয়োজনীয় নথি জমা দেওয়ার পরও নম্বরপত্র দেওয়া হচ্ছে না। দ্রুত এসব সমস্যার সমাধান করা জরুরি।”
বৈষম্যবিরোধী ইবির সমন্বয়ক এসএম সুইট বলেন, “কাগজপত্র উত্তোলনের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা আগের মতোই হয়রানির শিকার হচ্ছেন। নতুন বাংলাদেশে এমন আচরণ লজ্জাজনক। শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি নিরসনে এবং দ্রুত নম্বরপত্র প্রাপ্তিতে প্রশাসন কার্যকর পদক্ষেপ নেবে বলে আশা রাখছি।”
পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তর পরিচালক ওয়ালিউর রহমান বলেন, “সফটওয়্যারের সিস্টেমের মেয়াদ শেষ হওয়ায় এমন সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্টদের জানানো হয়েছে মূলত পূর্বের কোম্পানির সঙ্গে কাজের চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। নতুনভাবে কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করতে হবে। তারপর তারা কাজ শুরু করবে। কিন্তু এখনো চুক্তিপত্র হয়নি কিংবা কোম্পানিও ঠিক হয়নি বলে জানি। কবে নাগাদ সমাধান হতে পারে বিষয়টি নিশ্চিত করে বলতে পারছি না।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি সেলের পরিচালক ড. শাহজাহান আলী বলেন, “বিষয়টি অবগত আছি। শুধু নম্বরপত্র নিয়েই সমস্যা হচ্ছে, বাকিগুলো ঠিকমতো আসছে। যে কোম্পানি সফটওয়্যার তৈরি করেছে, তারা সমাধান না করলে এটা আমাদের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। তবে বিভিন্নভাবে বিষয়টির সমাধানের চেষ্টা চলছে।”
তিনি বলেন, “নতুনভাবে কোম্পানির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হতে হবে। নতুন করে সফটওয়্যার ডেভেলপ ও ডিজাইন করতে হবে। এটা সময় সাপেক্ষ এবং এর সঙ্গে আর্থিক বিষয়াদিও জড়িত। বিষয়টির সমাধানে অফিসিয়ালি কাজ চলছে। আশা করছি, দ্রুতই সমাধান আসবে।”
ঢাকা/মেহেদী