আইনি জটিলতা না হলে চলতি সপ্তাহেই ইশরাকের শপথ
Published: 25th, May 2025 GMT
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) নবনির্বাচিত মেয়র প্রকৌশলী ইশরাক হোসেনের শপথগ্রহণ নিয়ে চলমান জটিলতা নিরসনের পথে।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামীকাল সোমবার (২৬ মে) অথবা চলতি সপ্তাহেই শপথ অনুষ্ঠিত হতে পারে।
এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মো. রেজাউল মাকছুদ জাহেদী বলেন, “আমরা আদালতের রায় হাতে পেয়েছি। সেই আলোকে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। যেহেতু ২৬ মে এর মধ্যে শপথগ্রহণের সময়সীমা রয়েছে, বিষয়টি সে বিবেচনায়ই গুরুত্ব পাচ্ছে।”
তিনি বলেন, “তারিখ এখনো চূড়ান্ত হয়নি, শিগগিরই শপথ অনুষ্ঠান সম্পন্ন হবে।”
নির্বাচন কমিশনের গেজেট স্থগিত চেয়ে করা রিট খারিজ হয়ে যাওয়ায় মন্ত্রণালয়ের ধারণা, আইনি জট অনেকটাই কেটে গেছে।
জানা গেছে, চেম্বার আদালতে গেজেট স্থগিত চেয়ে নতুন আরেকটি আবেদন দাখিলের প্রস্তুতি চলছে, যার শুনানি হতে পারে সোমবার। এই প্রেক্ষাপটে ডিএসসিসিতে কার্যত অচলাবস্থা বিরাজ করছে। গত ১৪ মে থেকে নগর ভবনের মূল ফটকে তালা ঝুলিয়ে রেখেছেন আন্দোলনরত শ্রমিক-কর্মচারীরা। তাদের একটাই দাবি, ইশরাক হোসেনকে মেয়রের দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতে হবে।
তারা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, মেয়র ছাড়া তারা কোনো দাপ্তরিক কাজ করবেন না। ফলে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন, ট্রেড লাইসেন্স ইস্যু, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, জলাবদ্ধতা নিরসনসহ গুরুত্বপূর্ণ নাগরিক সেবা সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে আছে। ঈদুল আজহার আগে কোরবানির হাট ও পশু বর্জ্য ব্যবস্থাপনার প্রস্তুতিও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
নগর ভবনের নিচতলার একটি কক্ষে সীমিত পরিসরে কিছু জরুরি ফাইল স্বাক্ষরের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন কিছু কর্মকর্তা। তবে সাধারণ নাগরিকরা সেবা না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন।
পুরান ঢাকার বাসিন্দা কলিমুল্লাহ বলেন, “গত সপ্তাহে কয়েকবার এসেছি, প্রতিবারই তালা ঝুলতে দেখেছি। পরিবারের জরুরি কাজ আটকে আছে।”
নাগরিক দুর্ভোগের বিষয়টি বিবেচনায় রেখে আন্দোলনকারীদের দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানিয়েছেন ইশরাক হোসেন।
তিনি বলেন, “সামনে কোরবানির ঈদ। নগরবাসীর যেন কোনো কষ্ট না হয়, সেই বিবেচনায় সবাই যার যার দায়িত্ব পালন করুন। আমরা সরকারকে ৪৮ ঘণ্টার সময় বেঁধে দিয়েছিলাম। শুক্রবার ছুটি থাকায় কিছুটা সময় পেরিয়ে গেছে। আশা করি, এর মধ্যেই সমাধান আসবে।”
ডিএসসিসি শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের এক নেতা জানান, আন্দোলন চলবে, যতক্ষণ না ইশরাক হোসেনকে মেয়রের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তবে ঈদ সামনে রেখে দ্রুত সমাধানের আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, শনিবার (২৪ মে) সরকার ও মন্ত্রণালয়ের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের মধ্যে এ বিষয়ে একাধিক দফা আলোচনা হয়েছে। শপথ অনুষ্ঠান নিয়েও আলোচনা হয়েছে। তবে প্রধান উপদেষ্টা ড.
ডিএসসিসির জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. রাসেল রহমান বলেন, “গত কয়েক দিনের মতো গতকালও নগর ভবন তালাবদ্ধ রয়েছে। এতে আমাদের নিয়মিত কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।”
স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিবের দপ্তরের এক কর্মকর্তা বলেন, “সরকার ইতোমধ্যে ডিএসসিসির বর্তমান প্রশাসক শাহজাহান মিয়াকে ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। ইশরাক হোসেন শপথ নেওয়ার পর তিনিই প্রশাসকের কাছ থেকে দায়িত্ব বুঝে নেবেন।”
এখন সবার নজর সোমবারের দিকে। আদালত যদি নতুন কোনো নির্দেশনা না দেয় এবং রাজনৈতিক সমঝোতায় নতুন করে কোনো জট না বাঁধে, তবে খুব দ্রুত নির্বাচিত মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পাবেন প্রকৌশলী ইশরাক হোসেন।
ঢাকা/মেহেদী
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ইশর ক হ স ন কর মকর ত ড এসস স স মব র সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
নির্বাচন ডিসেম্বর না জুনে, এই বিতর্কের সমঝোতাভিত্তিক সমাধান চায় এবি পার্টি
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আগামী ডিসেম্বরে অনুষ্ঠানে কোনো সমস্যা আছে কি না, অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে এর ব্যাখ্যা চেয়েছেন আমার বাংলাদেশ পার্টির (এবি পার্টি) চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু।
একই সঙ্গে মজিবুর রহমান মঞ্জু নির্বাচন ডিসেম্বরে না হয়ে জুনে হলে কোনো অসুবিধা আছে কি না, তার ব্যাখ্যা চেয়েছেন বিএনপির কাছে। নির্বাচন ডিসেম্বরে না জুনে, এই বিতর্কের সমঝোতাভিত্তিক সমাধানও চেয়েছেন তিনি।
আজ রোববার বিকেলে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। সন্ধ্যায় সেখান থেকে বেরিয়ে যমুনার সামনে বৈঠকের খুঁটিনাটি সাংবাদিকদের জানান মজিবুর রহমান মঞ্জু।
মজিবুর রহমান বলেন, বিএনপিসহ রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সরকারের ব্যাপক সন্দেহ, সংশয় ও ভুল–বোঝাবুঝি তৈরি হয়েছে। নবগঠিত দল এনসিপির সঙ্গেও কোনো কোনো ক্ষেত্রে সরকারের সমন্বয়হীনতা দেখা গেছে। এমনকি গণ-অভ্যুত্থানের নেতৃত্বদানকারী ছাত্রসমাজের মধ্যে বিভাজন দেখা দিলেও সরকার সে বিষয়ে নির্বিকার থেকেছে। এটা ক্রমেই সরকারের সমর্থনের ভিত্তিকে দুর্বল করে তুলেছে।
মজিবুর রহমান বলেন, ‘নির্বাচন ডিসেম্বরে করতে কী সমস্যা? অনিবার্য কারণে জুন পর্যন্ত সময় লাগলেই বা অসুবিধা কী? অন্তর্বর্তী সরকার ও বিএনপির কাছে জনগণ এর ব্যাখ্যা জানতে চায়। আশা করি উভয় পক্ষ এ ব্যাপারে সুস্পষ্ট বক্তব্য তুলে ধরবে।’
প্রধান উপদেষ্টা দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ালে দেশ এক অনিশ্চিত পরিস্থিতির সম্মুখীন হবে মন্তব্য করে মজিবুর রহমান বলেন, এমন পরিস্থিতিতে বিবদমান পক্ষগুলোর মধ্যে সঠিক উপলব্ধি, ছাড় দেওয়ার মনোভাব প্রদর্শন, ইগো পরিত্যাগ ও সমঝোতামূলক পদক্ষেপই উত্তম সমাধান। সরকারের পক্ষ থেকে যেসব ঘাটতি পরিলক্ষিত হয়েছে সেগুলো সংশোধনেও উদ্যোগ নেওয়া দরকার বলে মনে করেন তিনি।
এবি পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, সার্বিক পরিস্থিতি মূল্যায়ন করে উপদেষ্টা পরিষদ পুনর্গঠন, সংশোধন, পরিমার্জনসহ জাতীয় ঐক্য ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা এবং সরকারের নিয়ন্ত্রণ ও কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠায় প্রয়োজনে কঠোর কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত।
এ ছাড়া সরকারকে সবার ঐকমত্যে গণ-অভ্যুত্থানের একটি ঘোষণাপত্র ও জাতীয় সনদ তৈরি এবং নির্বাচন, সংস্কার ও ফ্যাসিবাদী-খুনিদের বিচারের একটি রোডম্যাপ (পথনকশা) ঘোষণার দাবি পুনর্ব্যক্ত করেন মজিবুর রহমান।
আজ দুই দফায় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক করেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা। প্রথম দফায় বিকেলে এবি পার্টি ছাড়াও বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি), নাগরিক ঐক্য, গণসংহতি আন্দোলন, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, জাতীয় গণফ্রন্ট, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন, ভাসানী জনশক্তি পার্টি এবং জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডির নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন অধ্যাপক ইউনূস।
এরপর দ্বিতীয় দফায় হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, খেলাফত মজলিস, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ, গণ অধিকার পরিষদ, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি এবং ইসলামী ঐক্য জোটের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধান উপদেষ্টা।
নানা ক্ষোভ ও হতাশা থেকে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস পদত্যাগ করার কথা ভাবছেন, এমন খবরে গত বৃহস্পতিবার রাত থেকেই সব মহলে আলোড়নের সৃষ্টি হয়। এ পরিপ্রেক্ষিতে রাজনৈতিক দলগুলোর আগ্রহে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক শুরু হয়।