ঈদযাত্রায় ডাকাতি-ছিনতাই এবং নারী যাত্রীদের হেনস্তাসহ নানা অপরাধ ঠেকাতে দূরপাল্লার বাসে সিসি ক্যামেরা স্থাপনের জরুরি নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি। সিসি ক্যামেরা ছাড়া যাতে কোনো দূরপাল্লার বাস চলাচল না করে, সেটি নিশ্চিত করতে চায় মালিক সমিতি।

গতকাল শনিবার এ বিষয়ে বিভিন্ন কোম্পানি এবং জেলা পর্যায়ের মালিক সমিতির শাখা কমিটিগুলোকে চিঠি পাঠায় কেন্দ্রীয় মালিক সমিতি। এর আগে ডাকাতি বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে গত ৮ এপ্রিল মালিক সমিতিকে চিঠি দেয় বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব মো.

সাইফুল আলমের সই করা এ–সংক্রান্ত চিঠিতে বলা হয়েছে, বেশ কিছুদিন যাবৎ দূরপাল্লার বাসে যাতায়াতের ক্ষেত্রে যাত্রীরা প্রায়ই ডাকাতি-ছিনতাই এবং নারী যাত্রীরা বিভিন্নভাবে লাঞ্ছনা/হেনস্তার শিকার হচ্ছেন। এ ছাড়া বেশি গতিতে বাস চালানোর কারণে সড়ক দুর্ঘটনাও ঘটছে। এ বিষয়গুলো পর্যবেক্ষণ, তদন্ত এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়ে বন্ধ করা দরকার। এ জন্য প্রতিটি বাসে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা অত্যাবশ্যক হয়ে পড়েছে। এ ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকে বিষয়টি বাধ্যতামূলক করে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

এমতাবস্থায় দূরপাল্লার পথে চলাচলকারী প্রতিটি কোম্পানি ও সমিতির বাসে আগামী ১ জুনের মধ্যে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করতে হবে। এই নির্দেশনা কেউ যথাযথভাবে পালন না করলে সংশ্লিষ্ট বাসের মালিকের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ও আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সিসি ক্যামেরা এবং বাসের গতি নিয়ন্ত্রণের জন্য যন্ত্র (স্পিড গভর্নর) ছাড়া বাস চলাচলের জন্য প্রয়োজনীয় সিরিয়াল না দেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছে কেন্দ্রীয় মালিক সমিতি।

এর আগে ২০ মে অন্য এক চিঠিতে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি জানায়, সম্প্রতি দূরপাল্লা রুটে দুর্ঘটনার হার অনেকাংশে বেড়ে গেছে। এমতাবস্থায় দুর্ঘটনা প্রতিরোধের লক্ষ্যে চালক, সুপারভাইজার ও সহকারীদের বিশেষ সতর্কতার সঙ্গে ট্রাফিক আইন মেনে বাস চালাতে হবে। অতিরিক্ত গতিতে বাস চালানো যাবে না। বেপরোয়াভাবে পাল্লা দিয়ে বাস চালানো বন্ধ করতে হবে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের পরামর্শ ও আলোচনা সভা করার জন্য কোম্পানি ও স্থানীয় মালিক সমিতিগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হয়।

এ বিষয়ে মালিক সমিতির মহাসচিব সাইফুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, সিসি ক্যামেরা লাগানোর বিষয়টি তাঁরা গুরুত্ব দিচ্ছেন এবং সঠিকভাবে লাগানোর বিষয়ে তদারক করা হচ্ছে। তিনি বলেন, যেকোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে বাস ছাড়ার সময় যাত্রীদের অনুমতি নিয়ে একটা ছবি তোলা এবং তা কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানোর বিষয়েও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এতে যাত্রীবেশে কোনো ডাকাত বা দুষ্কৃতকারী উঠলে তাদের আইনের আওতায় আনা সহজ হবে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ক পর বহন র ঘটন

এছাড়াও পড়ুন:

আরপিওর বিধানের বৈধতার রায় রিভিউর জন্য হলফনামার অনুমতি

জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থীর ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকার ১ শতাংশ ভোটারের সমর্থনসংবলিত স্বাক্ষরযুক্ত তালিকা মনোনয়নের সঙ্গে যুক্ত করাসংক্রান্ত গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের বিধানের বৈধতা দিয়ে ১৪ বছর আগে রায় দিয়েছিলেন আপিল বিভাগ। এই রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে আবেদনের জন্য হলফনামার অনুমতি চেয়ে আবেদন করেছেন দুজন আইনজীবীসহ সাত ব্যক্তি। শুনানি নিয়ে আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি ফারাহ মাহবুব আজ সোমবার হলফনামা করার অনুমতি দিয়েছেন।

আবেদনকারী সাত ব্যক্তি হলেন ব্যারিস্টার এম সারোয়ার হোসেন, মেজর (অব.) এস এম হারুনুর রশীদ, কাজী জাহেদুল ইসলাম, আইনজীবী এস এম আজমল হোসেন, মেজর (অব.) নিয়াজ আহমেদ জাবের, মেজর (অব.) মো. জিয়াউল আহসান ও সালাহ উদ্দিন।

আদালতে আবেদনকারীদের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ওমর ফারুক। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, এ মামলায় আবেদনকারীরা পক্ষ ছিলেন না। যে কারণে তৃতীয় পক্ষ হিসেবে আপিল বিভাগের রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে আবেদন দায়েরের জন্য হলফনামা করার অনুমতি চেয়ে আবেদন করেন তাঁরা। চেম্বার আদালত হলফনামা দায়ের করার অনুমতি দিয়েছেন। আনুষঙ্গিক প্রক্রিয়া শেষে শিগগিরই রিভিউ আবেদন করা হবে।

গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) ১২(৩ক)(ক) বিধান অনুযায়ী নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থীর ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকার ১ শতাংশ ভোটারের সমর্থনসংবলিত স্বাক্ষরযুক্ত তালিকা মনোনয়নপত্রের সঙ্গে যুক্ত করে দিতে হবে। তবে শর্ত থাকে যে কোনো স্বতন্ত্র প্রার্থী ইতিপূর্বে জাতীয় সংসদের কোনো নির্বাচনে সদস্য নির্বাচিত হয়ে থাকলে ওই তালিকা প্রদানের প্রয়োজন হবে না।

আইনজীবীর তথ্য অনুসারে, ঢাকার একটি আসন থেকে ২০০৭ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মাহবুব আহমেদ চৌধুরী নামে এক ব্যক্তি মনোনয়নপত্র নেন। পরে নির্বাচনের ওই তারিখ পিছিয়ে যায়। অন্যদিকে ২০০৮ সালে আরপিও দফা ১২(৩ক)–তে সংশোধনী আনা হয়। এই বিধান সংবিধানের কয়েকটি অনুচ্ছেদ ও আরপিওর ১২(১) ধারার পরিপন্থী উল্লেখ করে মাহবুব আহমেদ চৌধুরী ২০১০ সালে হাইকোর্ট রিট করেন। রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট রুল দেন। চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০১০ সালের ১৬ আগস্ট হাইকোর্ট রুল ডিসচার্জ (খারিজ) করে রায় দেন। দফা (৩ক) সংবিধান পরিপন্থী নয় বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়।

হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে ২০১০ সালে লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করেন রিট আবেদনকারী। শুনানি শেষে আপিল বিভাগ ২০১১ সালের ২৩ জানুয়ারি লিভ টু আপিল খারিজ করে রায় দেন। স্বতন্ত্র প্রার্থীর ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকার ১ শতাংশ ভোটারের সমর্থনসংবলিত স্বাক্ষরযুক্ত তালিকা মনোনয়নের সঙ্গে যুক্ত করাসংক্রান্ত আরপিওর ১২(৩ক)–তে বেআইনি কিছু পাননি বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়।

ওই রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে দুই আইনজীবীসহ সাত ব্যক্তি আবেদন করতে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন তাঁদের আইনজীবী ওমর ফারুক। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিতে ভোটারের গোপনীয়তা রক্ষা করতে হবে। ভোটার কোন প্রার্থীকে ভোট দেবেন বা দেবেন না, এটি একান্তই তাঁর চিন্তা ও মতপ্রকাশের অধিকার। সিক্রেট ব্যালটে হামলা হলে ভোট বাতিলও হয়। সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদে প্রার্থীর যোগ্যতা নির্ধারণ করা আছে। রাজনৈতিক দল হলে ১ শতাংশ ভোটারের সমর্থন লাগবে না, অথচ স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে গেলে লাগবে অর্থাৎ একই মনোনয়নপত্র ঘিরে দ্বৈত বিধান। ১ শতাংশ ভোটারের সমর্থন থাকার ওই বিধানের মাধ্যমে স্বতন্ত্র প্রার্থীকে নির্বাচন থেকে বিরত রাখার সুযোগ তৈরি হয়েছে, যা সংবিধান সমর্থন করে না এবং ভোটারের গোপনীয়তারও লঙ্ঘন—এসব যুক্তি তুলে ধরে আবেদনটি করা হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ