এনআরবিসি ব্যাংকে ২৩২ কোটি টাকা জালিয়াতিতে সম্পৃক্ততার অভিযোগে চাকরি হারিয়েছেন। অর্থ আত্মসাৎ ও মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা চলছে দুদকে। এসব তথ্য গোপন করে দুই বছর ধরে বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রধান শাখার দায়িত্ব পালন করে আসছেন মো. দেলোয়ার হোসেন। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাম্প্রতিক পরিদর্শনে এ ঘটনা ধরা পড়ায় তাঁর নিয়োগ অবৈধ উল্লেখ করে তা বাতিলের নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। অন্যদিকে ব্যাংকটির বর্তমান পর্ষদ তাঁকে কেন চাকরিচ্যুত করা হবে না– জানতে চেয়ে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

মো.

দেলোয়ার হোসেন বর্তমানে সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট (ডিএমডির আগের পদ) হিসেবে বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের প্রধান শাখার ব্যবস্থাপক হিসেবে কর্মরত। এর আগে তিনি এনআরবিসি ব্যাংকের এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট ও উত্তরা শাখার ব্যবস্থাপক ছিলেন। শাখা ব্যবস্থাপক থাকা অবস্থায় অন্তত ২৩২ কোটি টাকার জালিয়াতিতে তাঁর সম্পৃক্ততা পায় এনআরবিসি ব্যাংক। এনআরবিসি ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষায় বিভিন্ন অনিয়মে সম্পৃক্ততার অভিযোগে ২০২২ সালে তাঁকে চাকরি থেকে অপসারণ বা বরখাস্তের সুপারিশ করা হয়। তাঁর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ারও সুপারিশ করে নিরীক্ষা দল। এসব উদ্যোগের মধ্যে তিনি ২০২২ সালের ৫ ডিসেম্বর পদত্যাগ করেন। এর ১২ দিন পর ১৮ ডিসেম্বর ব্যাংক তাঁকে জানিয়ে দেয়, শাখার বিভিন্ন জালিয়াতিতে সম্পৃক্ততা পাওয়ায় তাঁর পদত্যাগপত্র গ্রহণ করা সম্ভব নয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শনে উঠে এসেছে, কোনো ছাড়পত্র না নিয়ে ২০২৩ সালের ২৭ মার্চ ৩০০ টাকার স্ট্যাম্পে অঙ্গীকারনামার ভিত্তিতে কমার্স ব্যাংকে দেলোয়ার হোসেন যোগ দেন। সেখানে উল্লেখ করেন, তাঁর বিরুদ্ধে এনআরবিসি ব্যাংকে কোনো প্রশাসনিক বা শৃঙ্খলামূলক ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন নেই। বাংলাদেশের কোনো আদালতে কোনো মামলা বিচারাধীন নেই। যোগদানের ছয় মাসের মধ্যে এনআরবিসি ব্যাংক থেকে অব্যাহতিপত্র এনে জমা দেবেন। তবে তিনি তা জমা দেননি। 

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাম্প্রতিক পরিদর্শনে বলা হয়, এনআরবিসি ব্যাংকের ২৩১ কোটি ৭৭ লাখ টাকার ঋণ অনিয়মে দেলোয়ার হোসেনের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। তিনি এনআরবিসি ব্যাংকের উত্তরা শাখার ব্যবস্থাপক থাকা অবস্থায় বিতরণ করা ঋণে গুরুতর অনিয়ম এবং আমদানি-রপ্তানিতে নন-ফান্ডেড ঋণে গ্রাহককে অবৈধ সুবিধা দিয়েছেন। ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী অনিয়ম, দুর্নীতি, জালজালিয়াতির কারণে এক ব্যাংকের চাকরি থেকে বরখাস্ত হলে আরেক ব্যাংকের চাকরিতে নিয়োগের অযোগ্য হবেন।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, এনআরবিসি ব্যাংকের উত্তরা শাখার ওপর ২০১৭ থেকে ২০২২ সাল ভিত্তিক কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিদর্শনে দেলোয়ারের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম পাওয়া যায়। ওই শাখার গ্রাহক মেসার্স বেক নিট ২০১৯ সালের এপ্রিলে ৮ হাজার ৪১৯ ডলারের পণ্য জাহাজীকরণ করে। চার মাস পার হলেও রপ্তানির অর্থ দেশে আনেনি গ্রাহক। এ বিষয়ে ১৪ দিনের মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে রিপোর্ট করার কথা থাকলেও তা করেনি ব্যাংক। বরং মেয়াদোত্তীর্ণ রপ্তানি বিলের তথ্য গোপন করে গ্রাহককে ৫৭টি কেসের বিপরীতে ৪ কোটি ৮৬ লাখ ৫৬ হাজার টাকার নগদ সহায়তা দেওয়া হয়। একইভাবে মেয়াদোত্তীর্ণ বিলের তথ্য গোপন করে আরও দুটি গার্মেন্টকে প্রায় ২ কোটি টাকার নগদ সহায়তা দেয় এই শাখা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে দুদক দেলোয়ারসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে ২০২৩ সালের ১১ জুলাই মামলা করে। মামলায় ৭৪ কোটি ৬০ লাখ টাকা আত্মসাৎ এবং যুক্তরাজ্যে ৭ লাখ ৩ হাজার ৯৫ ডলার মূল্যের সোয়েটার রপ্তানির মূল্য না এনে মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগ আনা হয়। মামলাটি এখনও চলমান। 

এসব বিষয়ে অভিযুক্ত কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেন সমকালকে জানান, বিভিন্ন সময় পরিচালকদের সুপারিশে অনেক পোশাক কারখানায় ঋণ দিয়েছেন। এনআরবিসির উত্তরা শাখায় হয়তো অনিয়ম হয়েছে। তবে তাঁর নাম জড়ানো হয়েছে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে। দুদকের বিষয়টি পুনর্তদন্ত চলছে। সংস্থাটির মামলায় অনেকের সঙ্গে তাঁর নাম এসেছে। ২৩২ কোটি টাকার জালিয়াতির সঙ্গে সম্পৃক্ততার বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, এসব মিথ্যা। 

এ বিষয়ে বক্তব্যের জন্য বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের চেয়ারম্যান মো. আতাউর রহমান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি। ব্যাংকটির অন্য এক কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, গত ২২ মে দেলোয়ার হোসেনকে প্রধান কার্যালয়ের মানবসম্পদ বিভাগে সংযুক্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া কেন তাঁকে চাকরিচ্যুত করা হবে না– কারণ দর্শনোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ওই সময়ের পর্ষদ এরকম অভিযুক্ত ব্যক্তিকে কোন প্রেক্ষাপটে নিয়োগ দিয়েছিল, তাঁর জানা নেই। 

কমার্স ব্যাংকে জালিয়াতি
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শনে উঠে এসেছে, ২০২৩ সাল থেকে গত বছরের জুন পর্যন্ত দেলোয়ারের আবেদনে কমার্স ব্যাংক থেকে ১১ কোটি ৯৪ লাখ টাকা উত্তোলন দেখানো হয়। সাসপেন্স হিসাবের স্থিতি থেকে উত্তোলন-পরবর্তী বিভিন্ন খরচ খাত ডেবিট করে সমন্বয় দেখানো হয়। ভাউচার নিরীক্ষা না করে এবং আর্থিক ক্ষমতা অমান্য করে এ খরচ করা হয়েছে। ব্যাংকিং নিয়ম-নীতির যা সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
উদাহরণ হিসেবে খরচের কয়েকটি নমুনা খাত উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন– ইন্টারেস্ট অব এজেন্ট কমিশন হিসেবে ৩২ লাখ ৫০ হাজার এবং অন্যান্য খাতে ১২ লাখ টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। সাসপেন্স খাত থেকে নেওয়া ৭৮ লাখ ৫০ হাজার টাকার কোনো ভাউচারই দেওয়া হয়নি। ২০২৩ সালের ১৪ অক্টোবর সান্ড্রি খাত থেকে ২ কোটি ৪০ লাখ টাকা এবং ৭ নভেম্বর ১৮ লাখ ১১ হাজার টাকা উত্তোলন করেন তিনি। একদিন পর ব্যাংকটির খাতুনগঞ্জ শাখার মাধ্যমে যা সমন্বয় করা হয়। এসব লেনদেনের বিপরীতে যৌক্তিক কোনো জবাব দিতে পারেনি শাখা। এসব লেনদেন সন্দেহজনক এবং মানি লন্ডারিং হয়েছে বলে প্রতীয়মান হয়।

এ বিষয়ে দেলোয়ার হোসেন সমকালকে বলেন, ‘আমাদের মতো দুর্বল ব্যাংকে এমনিতে কেউ আমানত রাখে না। কিছু খরচ করতে হয়। এমডি, ডিএমডি ও প্রধান কার্যালয়ের অনুমোদন নিয়ে বিভিন্ন খাতে এসব খরচ দেখানো হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এসে আটকে দেওয়ায় ৭৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা আর সমন্বয় করা হয়নি। ব্যক্তিগতভাবে তিনি ১ টাকারও সুবিধাভোগী নন।

 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: কম র স ব য ব যবস থ প ২০২৩ স ল এনআরব স

এছাড়াও পড়ুন:

গবাদিপশু থেকে মানুষের শরীরে ‘তড়কা’ রোগ, প্রতিরোধে যা করবেন

অ্যানথ্রাক্স রোগটি‘তড়কা’ নামেই বহুল পরিচিত। গ্রীক শব্দ ‘অ্যানথ্রাকিস’ বা কয়লা থেকে উদ্ভূত এই নামটি হয়তো অনেকেই জানেন না। তবে এর ভয়াবহতা সম্পর্কে বাংলাদেশের মানুষ ঠিকই অবগত।

অ্যানথ্রাক্স নামের ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগটি শুধু বন্য বা গৃহপালিত পশুকে নয়, বরং মানুষের জীবনকেও ঝুঁকিতে ফেলে দিচ্ছে বারবার।

আরো পড়ুন:

১৬ দিন ধরে অচলাবস্থায় উদ্বেগ প্রকাশ বাকৃবি ছাত্রশিবিরের

দ্রুত অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম চালুর দাবি বাকৃবি শিক্ষার্থীদের

সম্প্রতি প্রকাশিত এক গবেষণা বলছে, দেশের অ্যানথ্রাক্স পরিস্থিতি এখনো উদ্বেগজনক। সাধারণত গরু, ছাগল, মহিষ ও ভেড়াকে আক্রান্ত করে এই ব্যাকটেরিয়া। ২০০৯ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত এই রোগে মারা গেছে অন্তত ১ হাজার গবাদিপশু। আর আক্রান্ত হয়েছে হাজার হাজার মানুষ।

সম্প্রতি রংপুরের পীরগাছায় অ্যানথ্রাক্সে আক্রান্তের রিপোর্ট করেছেন অন্তত অর্ধশতাধিক মানুষ। এরইমধ্যে এ রোগের উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন দুইজন, যা নিশ্চিত করেছেন রংপুর জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা।

গবেষণায় দেখা গেছে, ২০০৯ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত ১ হাজার ৫০০টিরও বেশি মানব অ্যানথ্রাক্স কেস রেকর্ড করা হয়েছে, যার সবগুলোই ছিল ত্বকের অ্যানথ্রাক্স। তবে ১৯৮০ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে ৬ হাজার ৩৫৪টি পশুর অ্যানথ্রাক্স কেস রেকর্ড করা হয়েছে, যার মধ্যে ৯৯৮টি পশুর মৃত্যু হয়েছে। সে হিসাবে মোট মৃত্যুর হার দাঁড়িয়েছে ১৫.৭ শতাংশে।

গবেষণার তথ্য মতে, বাংলাদেশে অ্যানথ্রাক্সের প্রথম প্রাদুর্ভাব দেখা যায় ১৯৮০ সালে। এরপর থেকে এটি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বারবার ফিরে এসেছে। বিশেষ করে পাবনা, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া ও মেহেরপুর জেলাকে ‘অ্যানথ্রাক্স বেল্ট’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, যেখানে এ রোগের প্রকোপ সবচেয়ে বেশি।

বিশেষজ্ঞরা ময়মনসিংহ, পাবনা ও কুষ্টিয়া জেলাকে যথাক্রমে উচ্চ, মাঝারি ও নিম্ন-ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চল হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। গ্রীষ্ম ও বর্ষা মৌসুমে, বিশেষত এপ্রিল থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত এই রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি দেখা যায়।

অ্যানথ্রাক্সের মূল কারণ হলো- ব্যাসিলাস অ্যানথ্রাসিস নামের একটি ব্যাকটেরিয়া, যা সাধারণত মৃত পশুর দেহে পাওয়া যায়। এটি এতই শক্তিশালী যে, জৈবিক অস্ত্র হিসেবেও এর ব্যবহারের খবর পাওয়া গেছে। এই ব্যাকটেরিয়া বাতাসে উড়ন্ত স্পোর তৈরি করতে পারে, যা শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে মানুষের শরীরে প্রবেশ করে। 

অ্যানথ্রাক্স নিয়ে কথা বলেছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) মাইক্রোবায়োলজি অ্যান্ড হাইজিন বিভাগের স্নাতক রিসার্চ অ্যাসিস্ট্যান্ট অর্ণব সাহা। 

তিনি বলেন, “মানুষ তিনভাবে এই রোগে আক্রান্ত হতে পারে— ত্বকের মাধ্যমে, শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে এবং খাদ্যগ্রহণের মাধ্যমে। এর মধ্যে ত্বকের অ্যানথ্রাক্স সবচেয়ে বেশি দেখা যায় এবং এর সুপ্তিকাল সাধারণত দুই থেকে ছয়দিন।”

অন্যদিকে, শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে সংক্রমিত অ্যানথ্রাক্সের সুপ্তিকাল গড়ে চারদিন, যা ১০-১১ দিন পর্যন্তও হতে পারে।

এক গবেষণায় দেখা গেছে, মোট আক্রান্তের ৯১.৩ শতাংশ মানুষই ত্বকের অ্যানথ্রাক্সে ভুগেছে, যেখানে গ্যাস্ট্রোইনটেস্টিনাল এবং উভয় ধরনের সংক্রমণ ছিল যথাক্রমে ৬.৫২ শতাংশ ও ২.৬৬ শতাংশ।

ত্বকীয় অ্যানথ্রাক্সের ক্ষেত্রে চামড়ায় প্রথমে একটি চুলকানিযুক্ত লাল ফোঁড়া দেখা যায়, যা পরবর্তীতে কালো কেন্দ্রযুক্ত ব্যথাহীন ঘা হিসেবে প্রকাশ পায়। উলের কারখানায় কাজ করা শ্রমিকদের মধ্যে এই রোগ বেশি দেখা যাওয়ায় এটি ‘উল-সর্টার্স ডিজিজ’ নামেও পরিচিত।

সবচেয়ে মারাত্মক ধরণ হচ্ছে শ্বাস-প্রশ্বাসের অ্যানথ্রাক্স। ব্যাকটেরিয়ার স্পোর শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে ফুসফুসে প্রবেশ করলে ঠান্ডা, জ্বর ও কাশির মতো উপসর্গ দেখা যায়, যা দ্রুত শ্বাসকষ্ট, শক এবং উচ্চ মৃত্যুহারের দিকে নিয়ে যায়।

অর্ণব বলেন, “প্রাণীদের মধ্যে অ্যানথ্রাক্স হলে হঠাৎ মৃত্যু সবচেয়ে সাধারণ উপসর্গ। মৃত পশুর নাক, মুখ ও মলদ্বার থেকে কালচে, জমাট না বাঁধা রক্ত বের হয় এবং পেট ফুলে যায়।”

রোগটির প্রতিকার ও প্রতিরোধের বিষয়ে বাকৃবি মাইক্রোবায়োলজি অ্যান্ড হাইজিন বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. গোলজার হোসেন বলেন, “বাংলাদেশে অ্যানথ্রাক্সের সংক্রমণ ছড়ানোর অন্যতম কারণ হলো জনসচেতনতার অভাব। অসুস্থ পশু জবাই করে তার মাংস কম দামে বিক্রি করার একটি প্রবণতা আমাদের সমাজে দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যমান। অনেক বিক্রেতা ও সাধারণ মানুষ জানেনই না যে, এই মাংস থেকে মানুষের শরীরেও রোগটি ছড়িয়ে পড়তে পারে।”

“পাশাপাশি, মৃত পশুর দেহ সঠিক উপায়ে অপসারণ না করে খোলা মাঠে, নদী, খাল বা বন্যার পানিতে ফেলে দেওয়া হয়। এর ফলে এই জীবাণু পরিবেশ ও পশুপালনের জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে, যা নতুন করে সংক্রমণের ঝুঁকি তৈরি করে,” যুক্ত করেন ড. গোলজার।

তিনি বলেন, “অ্যানথ্রাক্সের বিস্তার রোধে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞগণ এই রোগের বিস্তার রোধে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোকপাত করেছেন। তার মধ্যে অন্যতম- জনসচেতনতা বৃদ্ধি। পশু থেকে মানুষের মধ্যে সংক্রমণ প্রতিরোধে জনশিক্ষা ও সচেতনতামূলক কার্যক্রম বাড়াতে হবে।”

তিনি আরো বলেন, “অ্যানথ্রাক্স প্রতিরোধের সবচেয়ে কার্যকর উপায় হলো গবাদি পশুর মধ্যে নিয়মিত এবং ব্যাপক হারে টিকাদান নিশ্চিত করা। সরকারের প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর কর্তৃক পরিচালিত টিকাদান কর্মসূচিকে আরো শক্তিশালী করতে হবে, বিশেষ করে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে। আমদানি করা ও জবাই করা পশুদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও কোয়ারেন্টাইন করা বাধ্যতামূলক করতে হবে।”

ড. গোলজার বলেন, “এছাড়া মৃত পশুর দেহ ও দূষিত পদার্থ সঠিকভাবে মাটির নিচে পুঁতে ফেলতে হবে এবং অনুমোদিত মাংস বিক্রেতাদের মাধ্যমে এবং পশু চিকিৎসকের পরীক্ষা করা মাংস বিক্রি নিশ্চিত করতে হবে। তাহলেই এ রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব।”

ঢাকা/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কালচে হয়ে যাচ্ছে মোগল আমলের লালকেল্লা
  • জিল হোসেন মারা গেছেন, আদালতে তাঁর লড়াই শেষ হবে কবে
  • গবাদিপশু থেকে মানুষের শরীরে ‘তড়কা’ রোগ, প্রতিরোধে যা করবেন
  • এনআরবিসি ব্যাংকের উদ্যোক্তার শেয়ার বিক্রি 
  • জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে আবেদন আজ বিকেলে, ক্লাস ১৩ নভেম্বর
  • কীভাবে নেট রান রেট হিসাব করা হয়, সুপার ফোর উঠতে বাংলাদেশের হিসাব কী
  • সোনালী ও রূপালী মুনাফায়, অগ্রণী ও জনতা লোকসানে