জালিয়াতির তথ্য গোপন করে আরেক ব্যাংকে চাকরি
Published: 26th, May 2025 GMT
এনআরবিসি ব্যাংকে ২৩২ কোটি টাকা জালিয়াতিতে সম্পৃক্ততার অভিযোগে চাকরি হারিয়েছেন। অর্থ আত্মসাৎ ও মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা চলছে দুদকে। এসব তথ্য গোপন করে দুই বছর ধরে বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রধান শাখার দায়িত্ব পালন করে আসছেন মো. দেলোয়ার হোসেন। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাম্প্রতিক পরিদর্শনে এ ঘটনা ধরা পড়ায় তাঁর নিয়োগ অবৈধ উল্লেখ করে তা বাতিলের নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। অন্যদিকে ব্যাংকটির বর্তমান পর্ষদ তাঁকে কেন চাকরিচ্যুত করা হবে না– জানতে চেয়ে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
মো.
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শনে উঠে এসেছে, কোনো ছাড়পত্র না নিয়ে ২০২৩ সালের ২৭ মার্চ ৩০০ টাকার স্ট্যাম্পে অঙ্গীকারনামার ভিত্তিতে কমার্স ব্যাংকে দেলোয়ার হোসেন যোগ দেন। সেখানে উল্লেখ করেন, তাঁর বিরুদ্ধে এনআরবিসি ব্যাংকে কোনো প্রশাসনিক বা শৃঙ্খলামূলক ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন নেই। বাংলাদেশের কোনো আদালতে কোনো মামলা বিচারাধীন নেই। যোগদানের ছয় মাসের মধ্যে এনআরবিসি ব্যাংক থেকে অব্যাহতিপত্র এনে জমা দেবেন। তবে তিনি তা জমা দেননি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাম্প্রতিক পরিদর্শনে বলা হয়, এনআরবিসি ব্যাংকের ২৩১ কোটি ৭৭ লাখ টাকার ঋণ অনিয়মে দেলোয়ার হোসেনের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। তিনি এনআরবিসি ব্যাংকের উত্তরা শাখার ব্যবস্থাপক থাকা অবস্থায় বিতরণ করা ঋণে গুরুতর অনিয়ম এবং আমদানি-রপ্তানিতে নন-ফান্ডেড ঋণে গ্রাহককে অবৈধ সুবিধা দিয়েছেন। ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী অনিয়ম, দুর্নীতি, জালজালিয়াতির কারণে এক ব্যাংকের চাকরি থেকে বরখাস্ত হলে আরেক ব্যাংকের চাকরিতে নিয়োগের অযোগ্য হবেন।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, এনআরবিসি ব্যাংকের উত্তরা শাখার ওপর ২০১৭ থেকে ২০২২ সাল ভিত্তিক কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিদর্শনে দেলোয়ারের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম পাওয়া যায়। ওই শাখার গ্রাহক মেসার্স বেক নিট ২০১৯ সালের এপ্রিলে ৮ হাজার ৪১৯ ডলারের পণ্য জাহাজীকরণ করে। চার মাস পার হলেও রপ্তানির অর্থ দেশে আনেনি গ্রাহক। এ বিষয়ে ১৪ দিনের মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে রিপোর্ট করার কথা থাকলেও তা করেনি ব্যাংক। বরং মেয়াদোত্তীর্ণ রপ্তানি বিলের তথ্য গোপন করে গ্রাহককে ৫৭টি কেসের বিপরীতে ৪ কোটি ৮৬ লাখ ৫৬ হাজার টাকার নগদ সহায়তা দেওয়া হয়। একইভাবে মেয়াদোত্তীর্ণ বিলের তথ্য গোপন করে আরও দুটি গার্মেন্টকে প্রায় ২ কোটি টাকার নগদ সহায়তা দেয় এই শাখা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে দুদক দেলোয়ারসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে ২০২৩ সালের ১১ জুলাই মামলা করে। মামলায় ৭৪ কোটি ৬০ লাখ টাকা আত্মসাৎ এবং যুক্তরাজ্যে ৭ লাখ ৩ হাজার ৯৫ ডলার মূল্যের সোয়েটার রপ্তানির মূল্য না এনে মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগ আনা হয়। মামলাটি এখনও চলমান।
এসব বিষয়ে অভিযুক্ত কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেন সমকালকে জানান, বিভিন্ন সময় পরিচালকদের সুপারিশে অনেক পোশাক কারখানায় ঋণ দিয়েছেন। এনআরবিসির উত্তরা শাখায় হয়তো অনিয়ম হয়েছে। তবে তাঁর নাম জড়ানো হয়েছে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে। দুদকের বিষয়টি পুনর্তদন্ত চলছে। সংস্থাটির মামলায় অনেকের সঙ্গে তাঁর নাম এসেছে। ২৩২ কোটি টাকার জালিয়াতির সঙ্গে সম্পৃক্ততার বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, এসব মিথ্যা।
এ বিষয়ে বক্তব্যের জন্য বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের চেয়ারম্যান মো. আতাউর রহমান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি। ব্যাংকটির অন্য এক কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, গত ২২ মে দেলোয়ার হোসেনকে প্রধান কার্যালয়ের মানবসম্পদ বিভাগে সংযুক্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া কেন তাঁকে চাকরিচ্যুত করা হবে না– কারণ দর্শনোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ওই সময়ের পর্ষদ এরকম অভিযুক্ত ব্যক্তিকে কোন প্রেক্ষাপটে নিয়োগ দিয়েছিল, তাঁর জানা নেই।
কমার্স ব্যাংকে জালিয়াতি
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শনে উঠে এসেছে, ২০২৩ সাল থেকে গত বছরের জুন পর্যন্ত দেলোয়ারের আবেদনে কমার্স ব্যাংক থেকে ১১ কোটি ৯৪ লাখ টাকা উত্তোলন দেখানো হয়। সাসপেন্স হিসাবের স্থিতি থেকে উত্তোলন-পরবর্তী বিভিন্ন খরচ খাত ডেবিট করে সমন্বয় দেখানো হয়। ভাউচার নিরীক্ষা না করে এবং আর্থিক ক্ষমতা অমান্য করে এ খরচ করা হয়েছে। ব্যাংকিং নিয়ম-নীতির যা সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
উদাহরণ হিসেবে খরচের কয়েকটি নমুনা খাত উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন– ইন্টারেস্ট অব এজেন্ট কমিশন হিসেবে ৩২ লাখ ৫০ হাজার এবং অন্যান্য খাতে ১২ লাখ টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। সাসপেন্স খাত থেকে নেওয়া ৭৮ লাখ ৫০ হাজার টাকার কোনো ভাউচারই দেওয়া হয়নি। ২০২৩ সালের ১৪ অক্টোবর সান্ড্রি খাত থেকে ২ কোটি ৪০ লাখ টাকা এবং ৭ নভেম্বর ১৮ লাখ ১১ হাজার টাকা উত্তোলন করেন তিনি। একদিন পর ব্যাংকটির খাতুনগঞ্জ শাখার মাধ্যমে যা সমন্বয় করা হয়। এসব লেনদেনের বিপরীতে যৌক্তিক কোনো জবাব দিতে পারেনি শাখা। এসব লেনদেন সন্দেহজনক এবং মানি লন্ডারিং হয়েছে বলে প্রতীয়মান হয়।
এ বিষয়ে দেলোয়ার হোসেন সমকালকে বলেন, ‘আমাদের মতো দুর্বল ব্যাংকে এমনিতে কেউ আমানত রাখে না। কিছু খরচ করতে হয়। এমডি, ডিএমডি ও প্রধান কার্যালয়ের অনুমোদন নিয়ে বিভিন্ন খাতে এসব খরচ দেখানো হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এসে আটকে দেওয়ায় ৭৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা আর সমন্বয় করা হয়নি। ব্যক্তিগতভাবে তিনি ১ টাকারও সুবিধাভোগী নন।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: কম র স ব য ব যবস থ প ২০২৩ স ল এনআরব স
এছাড়াও পড়ুন:
পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে প্রকাশ্যে গুলি, ঢাকাইয়া আকবরসহ আহত ২
চট্টগ্রামে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে শত শত মানুষের উপস্থিতিতে প্রকাশ্যে গুলিতে দুইজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। শুক্রবার রাত আটটার দিকে এই ঘটনা ঘটে। আহতদের একজনের নাম আলী আকবর। তিনি অপরাধ জগতে 'ঢাকাইয়া আকবর' হিসেবে পরিচিত। অন্যজনের নাম জানা যায়নি।
পুলিশের ধারণা, প্রতিপক্ষের লোকজন 'ঢাকাইয়া আকবরকে' লক্ষ্য করে গুলি করেছে। এই ঘটনায় সমুদ্র সৈকতে ঘুরতে যাওয়া লোকজনের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। গুলিবিদ্ধ ঢাকাই আকবরকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
আকবর নগরের বায়েজিদ বোস্তামী থানার চালিতাতলী পূর্ব মসজিদ জব্বার সওদাগর বাড়ির মোহাম্মদ মঞ্জুরের ছেলে।
স্থানীয়রা জানান, কারাগারে বন্দি সন্ত্রাসী 'ছোট সাজ্জাদ' ও বিদেশে পলাতক সন্ত্রাসী সাজ্জাদ আলী খানের সঙ্গে ঢাকাইয়া আকবরের বিরোধ রয়েছে বলে জানা গেছে।
পুলিশ সূত্র জানায়, শুক্রবার সন্ধ্যায় ঢাকাইয়া আকবর পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে ঘুরতে যান। তার সঙ্গে এক নারীসহ পাঁচজন ছিলেন। তারা সমুদ্র সৈকতের পুলিশ বক্সের কাছাকাছি ২৮ নম্বর ও ২৯ নম্বর দোকানের মাঝামাঝি বসেন। ২৮ নম্বর দোকানে তারা খাবার অর্ডার দিয়েছিলেন। খাবারের জন্য তারা অপেক্ষা করছিলেন। এসময় অতর্কিত এসে তাকে লক্ষ্য করে গুলি করা হয়। এসময় ঢাকাইয়া আকবরসহ দুইজন গুলিবিদ্ধ হন। পরে স্থানীয় লোকজন ও পুলিশ তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়।
পতেঙ্গা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ফরিদুল আলম সমকালকে বলেন,‘সমুদ্র সৈকতে এক যুবক গুলিবিদ্ধ হয়েছেন খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসি। ঘটনাস্থল থেকে ঢাকাইয়া আকবরকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। কারা, কী কারণে গুলি করেছে তা জানা যায়নি। তার সঙ্গে থাকা লোকজনকেও পাইনি। আমরা খোঁজ খবর নিচ্ছি।’
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির এএসআই মো. আলাউদ্দিন বলেন, ‘আহত দুইজনকে হাসপাতালের ক্যাজুয়ালিটি ওয়ার্ডে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।’
পুলিশ জানায়, ঢাকাইয়া আকবর বিদেশে পালিয়ে থাকা দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী সাজ্জাদ আলী খানের অনুসারী ছিলেন। তার নামে নগরের বিভিন্ন এলাকায় চাঁদাবাজি করতেন তিনি। কেউ চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে গুলি কিংবা পেট্রোলবোমা ছুড়ে মারতেন। কয়েকবছর আগে সাজ্জাদের সঙ্গে তার দূরুত্ব তৈরি হয়। ২০২৩ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি সাজ্জাদের ভাই ওসমান আলীর কাছ থেকে চাঁদা দাবি করেন। চাঁদা না দেওয়া তার বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও আগুন ধরিয়ে দেন। সম্প্রতি সাজ্জাদ আলীর অনুসারী ছোট সাজ্জাদের সঙ্গে বিরোধে জড়ান ঢাকাইয়া আকবর। ২০২৩ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর লক্ষীপুর থেকে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। গত ৫ আগস্টের পর জামিনে বের হন তিনি।