লর্ডসে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল পরিচালনা করবেন যারা
Published: 25th, May 2025 GMT
ক্রিকেটের রাজকীয় ফরম্যাট টেস্ট, আর তারই সবচেয়ে মর্যাদার লড়াই টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ। তৃতীয় আসরের এই ফাইনালে মুখোমুখি হচ্ছে ক্রিকেট পরাশক্তি অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকা। আগামী ১১ জুন ঐতিহাসিক লর্ডসে বসবে সেই মহারণ। তবে আলো শুধু মাঠের ২২ গজেই নয়, চুপিসারে দায়িত্বে থাকা ম্যাচ অফিসিয়ালরাও থাকবেন নজরে তাদের নির্ভুলতা আর সিদ্ধান্তেই নির্ধারিত হবে শত কোটি ভক্তের আবেগ।
এই হাই-ভোল্টেজ ফাইনাল ম্যাচ পরিচালনার জন্য নিয়োগ পেয়েছেন বিশ্বের অভিজ্ঞতম ম্যাচ অফিসিয়ালরা। অন-ফিল্ড আম্পায়ারের দায়িত্বে থাকছেন নিউজিল্যান্ডের ক্রিস গাফানি ও ইংল্যান্ডের রিচার্ড ইলিংওর্থ। এই নিয়ে টানা তিনবার টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনালে দায়িত্ব নিয়ে রেকর্ড গড়ছেন ইলিংওর্থ। ২০২১ ও ২০২৩ আসরের পর এবারও তিনি থাকছেন মাঝখানে।
ইলিংওর্থ শুধু ধারাবাহিক নন, পুরস্কৃতও। ২০২৪ সালে চতুর্থবারের মতো আইসিসির বর্ষসেরা আম্পায়ারের পুরস্কার (ডেভিড শেফার্ড ট্রফি) জিতেছেন এই ইংলিশ। তার সঙ্গী গাফানি অবশ্য প্রথমবার নন, ২০২৩ সালের ফাইনাল (ভারত-অস্ট্রেলিয়ার) ম্যাচে দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
আরো পড়ুন:
বাংলাদেশের বিপক্ষে টেস্টকে বিদায় বলবেন ম্যাথিউজ
খালেদের তোপের পরও সুবিধাজনক অবস্থানে নিউ জিল্যান্ড
টিভি আম্পায়ারের ভূমিকায় থাকছেন রিচার্ড কেটলবরো, যিনি এর আগেও বহু আইসিসি টুর্নামেন্টের ফাইনাল ম্যাচে অভিজ্ঞতার ছাপ রেখেছেন। চতুর্থ আম্পায়ার হিসেবে থাকছেন ভারতের নিতিন মেনন, যার জন্য এটি প্রথম টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনাল হলেও, তার অভিজ্ঞতা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ব্যাপক।
সবকিছুর উর্ধ্বে যিনি থাকবেন, সেই ম্যাচ রেফারি হচ্ছেন ভারতেরই সাবেক গতি তারকা জাভাগাল শ্রীনাথ। ফাইনালের জন্য যোগ্য নিয়ন্ত্রক হিসেবে বরাবরের মতোই আস্থা রাখা হয়েছে তার ওপর।
বিশ্বকাপের মতো মহারণে যেমন খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্স থাকে বড় প্রশ্নে, তেমনি ম্যাচ অফিসিয়ালদের প্রতিটি সিদ্ধান্ত, প্রতিটি পর্যবেক্ষণ হয়ে ওঠে নির্ধারক। এই অফিসিয়ালরাই নিশ্চিত করবেন ফাইনালটি কেবল রোমাঞ্চ নয়, হোক নিখুঁত ও নিরপেক্ষ ক্রিকেটীয় লড়াই।
এবারই প্রথমবার টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে নামছে দক্ষিণ আফ্রিকা, অন্যদিকে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া মর্যাদা ধরে রাখতে প্রস্তুত। উত্তেজনার এই লড়াইয়ে মাঠে যাঁরা আলো ছড়াবেন, তাঁদের ছায়ায় থেকে নিয়ন্ত্রণ করবেন এই অভিজ্ঞ, নির্ভরযোগ্য অফিসিয়ালরা।
ঢাকা/আমিনুল
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ট স ট চ য ম প য়নশ প র ফ ইন ল আম প য় র
এছাড়াও পড়ুন:
যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যঘাটতি আরও বেড়েছে
যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশে আমদানি হয় কম। তবে দেশটিতে বাংলাদেশের পণ্যের রপ্তানি বেশি। ফলে বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্যে পিছিয়ে বা ঘাটতিতে আছে যুক্তরাষ্ট্র। সদ্য শেষ হওয়া ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এই ঘাটতি আরও বেড়েছে।
এই বাণিজ্যঘাটতি বিবেচনায় এনে বাংলাদেশের পণ্যের ওপর গত ২ এপ্রিল ৩৭ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছিল দেশটি। তবে আলোচনার সুযোগ রেখে তিন মাস শুল্ক কার্যকর পিছিয়ে দেয় ট্রাম্প প্রশাসন। সে জন্য গত তিন মাসে আমদানি বাড়িয়ে ঘাটতি কমানোর নানা উদ্যোগ নেওয়ার কথা বলেছিল সরকার। তবে অর্থবছর শেষে সরকারের এসব উদ্যোগ বাণিজ্যঘাটতি কমায়নি, উল্টো দেশটি থেকে আমদানি কমে ঘাটতি আরও বেড়েছে।
শুল্কছাড়ের চেয়ে নীতিসহায়তা দেওয়া হলে বরং যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি বাড়ত। যেমন নীতিসহায়তা না পাওয়ায় যুক্তরাষ্ট্র থেকে সয়াবিন বীজ আমদানি কমে গেছে।আমিরুল হক ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ডেল্টা এগ্রো ফুড ইন্ডাস্ট্রিজজাতীয় রাজস্ব বোর্ড বা এনবিআরের হিসাবে, সদ্য বিদায়ী ২০২৪-২৫ অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি হয়েছে প্রায় ২৫০ কোটি ডলারের পণ্য। দেশটিতে বাংলাদেশের রপ্তানি ছিল প্রায় ৮৭৬ কোটি ডলারের পণ্য। অর্থাৎ দুই দেশের বাণিজ্যে বাংলাদেশের হাতে বাড়তি রয়েছে ৬২৬ কোটি ডলার, যা যুক্তরাষ্ট্রের ঘাটতি। এর আগে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি হয়েছিল প্রায় ৭৬৭ কোটি ডলার। দেশটি থেকে আমদানি হয়েছিল প্রায় ২৬২ কোটি ডলার। তাতে ওই অর্থবছরে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ঘাটতি ছিল ৫০৫ কোটি ডলার।
দুই অর্থবছরের তুলনা করে দেখা যায়, যুক্তরাষ্ট্রে এ সময়ে বাংলাদেশের রপ্তানি বেড়েছে প্রায় ১৪ শতাংশ। তার বিপরীতে দেশটি থেকে আমদানি কমেছে প্রায় ৫ শতাংশ। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যে বাংলাদেশের এগিয়ে থাকার বিষয়টি বাংলাদেশের জন্য ইতিবাচক হলেও ট্রাম্পের সূত্র উল্টো বিপাকে ফেলেছে বাংলাদেশের রপ্তানিকারকদের। কারণ, নতুন শুল্ক কার্যকর হলে এই বাজারে রপ্তানি কমে যাবে।
ঘাটতি কমাতে সরকারের যা পদক্ষেপ
গত ২ এপ্রিল বাংলাদেশসহ বিশ্বের নানা দেশে পাল্টা শুল্ক আরোপ করার পর বাংলাদেশ সরকার যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা শুরু করে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস চিঠি দেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে। সেখানে নানা উদ্যোগ নেওয়ার কথা বলা হয়।
আলোচনা অব্যাহত রাখার পাশাপাশি গত ২ জুন ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে ১১০টি পণ্যে শুল্ক প্রত্যাহার করা হয়, যা ওই দিনই কার্যকর হয়। সব দেশ থেকে আমদানিতে এই শুল্কহার প্রযোজ্য হলেও যুক্তরাষ্ট্র সুবিধা পাবে এমন বিষয় বিবেচনা রেখে এই পদক্ষেপ নেয় সরকার। বেসরকারিভাবে আমদানি বাড়াতে নানা পদক্ষেপ নেওয়ার পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র থেকে সরকারি কেনাকাটা বাড়ানোর কথাও বলা হয় সরকারের পক্ষ থেকে।
সরকারি পদক্ষেপের প্রভাব কী
সরকারের পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সুবিধার কথা মাথায় রেখে যেকোনো দেশ থেকে ১১০টি পণ্য আমদানিতে কাস্টমস শুল্কছাড় দেওয়া হয়। শুল্কছাড় দেওয়ার পর মাত্র এক মাস সময় পেরিয়েছে। ফলে এই এক মাসে খুব বেশি প্রভাব পড়ার কথা নয়। এরপরও যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি হওয়া প্রধান কয়েকটি পণ্যের আমদানির হিসাবে কিছু ধারণা পাওয়া যায়।
যেমন যুক্তরাষ্ট্র থেকে সবচেয়ে বেশি আমদানি হয় রড তৈরির কাঁচামাল পুরোনো লোহার টুকরা। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এই পণ্যটি আমদানি হয় প্রায় ৬৭ কোটি ডলারের। সদ্য শেষ হওয়া অর্থবছরে আমদানি হয় ৬৮ কোটি ৬৬ লাখ ডলার। একইভাবে সয়াবিন বীজ আমদানি হয় ৩৬ কোটি ৪৬ লাখ ডলার। গত অর্থবছরে তা কমে দাঁড়ায় ৩৫ কোটি ৩১ লাখ ডলারে। আবার ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তুলা আমদানি হয় ৩৬ কোটি ৮৯ লাখ ডলারের। গত অর্থবছরে তা কমে দাঁড়ায় ২৩ কোটি ৫১ লাখ ডলারে।
আমদানি বৃদ্ধি বা কমার বিষয়ে জানতে চাইলে ইস্পাত ও সয়াবিন বীজ খাতের দুজন উদ্যোক্তা প্রথম আলোকে বলেন, শুল্কহার সব দেশের জন্যই সমান। বাজেটে শুল্কছাড়ও সব দেশের জন্য একই। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দর-কষাকষির জন্য শুল্কছাড় দেওয়া হলেও তাতে আমদানিতে মোটাদাগে প্রভাব পড়বে না। যে দেশ থেকে কম খরচে ভালো মানের পণ্য আমদানি করা যায় সেখান থেকেই ব্যবসায়ীরা আমদানি করেন।
তবে সয়াবিন বীজ মাড়াই করে প্রাণিখাদ্য তৈরির প্রতিষ্ঠান ডেল্টা এগ্রো ফুড ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমিরুল হক প্রথম আলোকে বলেন, শুল্কছাড়ের চেয়ে নীতিসহায়তা দেওয়া হলে বরং যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি বাড়ত। যেমন সয়াবিন বীজ থেকে দেশে সয়াবিন তেল ও সয়া কেক উৎপাদন হচ্ছে। সয়াবিন বীজ থেকে প্রস্তুত পণ্য সয়া কেক আমদানিতে শুল্ক নেই। এখন সরকার যদি সয়া কেক আমদানিতে ন্যূনতম শুল্ক কর আরোপ করত তাহলে সয়াবিন বীজ আমদানিও বাড়ত। মানের কারণে যুক্তরাষ্ট্র থেকেই সয়াবিন বীজ আমদানি বেশি হতো। নীতিসহায়তা না পাওয়ায় যুক্তরাষ্ট্র থেকে এই পণ্যটির আমদানি কমে গেছে।