হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির (হাবিপ্রবিসাস) অফিসে ছাত্রদলের হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি (চবিসাস)।

মঙ্গলবার (১ জুলাই) রাত ৮টায় চবিসাসের দপ্তর ও প্রচার সম্পাদক সোহেল রানা স্বাক্ষরিত এক যৌথ বিবৃতিতে এ দাবি করেন চবিসাস সভাপতি জানে আলম ও সাধারণ সম্পাদক মাহফুজ শুভ্র।

চবিসাস নেতৃবৃন্দ বলেন, হাবিপ্রবিসাসের অফিসে ছাত্রদলের হামলা ও ভাংচুরের মতো ন্যাক্কারজনক ঘটনা নব্য ফ্যাসিবাদের প্রতিধ্বনি। এটি নিছক কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, বরং উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ক্যাম্পাসে ভয়ভীতির পরিবেশ সৃষ্টির মাধ্যমে সাংবাদিকদের কণ্ঠরোধের চেষ্টা, যা বিশ্ববিদ্যালয়ে মুক্তচিন্তা ও সত্যনিষ্ঠ সাংবাদিকতার জন্য হুমকিস্বরূপ।

আরো পড়ুন:

সাতক্ষীরায় সাংবাদিকদের ওপর হামলা, আহত ৩০

ইতিবাচক লেখনিতে ঘুরে দাঁড়াবে পুঁজিবাজার: ডিবিএ সভাপতি

বিবৃতিতে তারা বলেন, গণমাধ্যম ও প্রতক্ষ্যদর্শী সূত্রে আমরা জানতে পেরেছি, গত রবিবার (২৯ জুন) হাবিপ্রবি শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক পলাশ বার্নার্ড দাস, সদস্য নাজমুল ইসলাম ইমন ও তাদের অনুসারী শামীম আশরাফী বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান হলে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের ২৩তম ব্যাচের শিক্ষার্থী রোকনকে অবৈধভাবে হলে ওঠানোর চেষ্টা করেন। এ ঘটনার ভিডিও পরবর্তীতে সাংবাদিক সমিতি প্রকাশ করলে সোমবার (৩০ জুন) সন্ধ্যায় শামীম আশরাফী বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত সাংবাদিকদের ওপর হামলার উদ্দেশে ৮-১২ জন সন্ত্রাসীকে নিয়ে সাংবাদিক সমিতির অফিস ভাঙচুর ও অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন।

চবিসাস নেতৃবৃন্দ মনে করেন, এ ধরনের হামলা গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় সরাসরি হস্তক্ষেপ। গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশে এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনা নব্য ফ্যাসিবাদের প্রতিধ্বনি, যা সবার জন্য অশনিসংকেত। এ হামলার পিছনে ছাত্রদল নেতাদের সরাসরি ইন্ধন দৃশ্যমান। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এ ধরনের সহিংসতা কেবল নিরাপত্তাকেই নয়, স্বাধীন সাংবাদিকতাকেও চরম হুমকির মুখে ফেলে।

এ ঘটনায় জড়িতদের শনাক্ত করে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের প্রতি আহ্বান জানায় চবিসাস। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকেও এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছে চবিসাস।

ঢাকা/মিজান/মেহেদী

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ছ ত রদল র হ ব প রব

এছাড়াও পড়ুন:

জাবিতে নারী শিক্ষার্থী হেনস্তা ও নিরাপত্তা কর্মকর্তা আহত নিয়ে যা জানা গেল

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) অধ্যয়নরত এক নারী শিক্ষার্থীকে ক্রমাগত হেনস্তার অভিযোগে রবিবার (২৯ জুন) দুপুরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) এক শিক্ষার্থীকে আটক করেন ভুক্তভোগীর সহপাঠীরা।

পরে সন্ধ্যায় অভিযুক্ত ওই যুবককে নিরাপত্তা অফিস থেকে বের করতে গেলে মারতে উদ্যত হন ভুক্তভোগীর কয়েকজন সহপাঠী। এ সময় অভিযুক্ত যুবককে বাঁচাতে গেলে আহত হন বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা কর্মকর্তা জেফরুল হাসান চৌধুরী।  

জানা গেছে, অভিযুক্ত যুবক রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ২০১৮-১৯ সেশনের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থীৃ সোহেল রানা। ভুক্তভোগী নারীর একই এলাকার বাসিন্দা ছিলেন তিনি। তবে তার বাসা সাতক্ষীরা জেলার আশাশুনি থানায়। বর্তমানে চাকরি খুজতে ঢাকার লালবাগে অবস্থান করছেন। তার পিতার নাম মো. হানিফ মোড়ল।

আরো পড়ুন:

বেরোবিতে নোটিশ ছাড়াই ভর্তি ফি দ্বিগুণ, ভোগান্তিতে শিক্ষার্থীরা

যবিপ্রবিতে মলিকিউলার লাইফ সায়েন্সে উদ্ভাবন নিয়ে সম্মেলন

হেনস্তার বিষয়ে অর্থনীতি বিভাগের ৫২তম আবর্তনের ওই ছাত্রী প্রক্টর বরাবর লিখিত অভিযোগপত্র দিয়েছেন। অভিযোগপত্রে বলেন, “রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৮-১৯ সেশনের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ছাত্র সোহেল রানা আমাকে দীর্ঘ ১০ বছর ধরে নানাভাবে হেনস্তা করে আসছে। তার সঙ্গে আমি যোগাযোগ না রাখতে চাইলেও নানাভাবে আমাকে ব্লাকমেইল করে যোগাযোগ রাখতে বাধ্য করেছে। ইতোপূর্বে তিনি গুণ্ডা ভাড়া করে আমার বাবাকে মারধর পর্যন্ত করেছে। গত কয়েকমাস যাবত তার হেনস্তার মাত্রা আমার সহ্যসীমা অতিক্রম করেছে।”

তিনি বলেন, “আজ (রবিবার) তিনি আমার ক্যাম্পাসে এসে আমাকে জোরপূর্বক একা দেখা করতে বাধ্য করেছে এবং সঙ্গে কাউকে নিয়ে গেলে মারধরের হুমকি দিয়েছে। দেখা না করলে ‘দেখে নিব’ বলেও হুমকি দিয়েছে। পরবর্তীতে চাপে পড়ে আমি একা দেখা করি এবং কথোপকথন চলাকালে দূর থেকে আমাদের দেখে আমার বন্ধুরা। তখন তিনি তাদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন এবং ‘ক্যাম্পাসের বাইরে গেলে দেখে নেব’ বলে হুমকি দেন।”

জানা গেছে, ২০১৫ সাল থেকে সোহেল রানা ওই ছাত্রীকে জোরপূর্বক প্রেমের প্রস্তাব দেওয়াসহ হেনস্তা করে আসছিলেন। সে সময় একাধিকবার পারিবারিকভাবে মিমাংসা করা হয়। পরবর্তীতে ২০২১ সালেও একই ঘটনা ঘটলে তখনো পারিবারিকভাবে মিমাংসা করা হয়। সর্বশেষ ৩ মাস আগে হুমকি দিয়ে নারী শিক্ষার্থীকে মেসেজ করেন সোহেল। কথা না বললে পরবর্তীতে দেখে নেওয়ার হুমকি দেন। এরপর থেকে ওই নারী শিক্ষার্থীর সঙ্গে মাঝে মাঝে কথা হত বলে জানা যায়।

গতকাল রবিবার মেসেজে কথা বলে ভয়ভীতি দেখিয়ে জাবিতে দেখা করতে আসেন তিনি। এসময় ওই ছাত্রীর বন্ধুরা তাকে আটক করে প্রক্টর অফিসে নিয়ে যান।

জোর করে দেখা করার বিষয়ে সোহেল রানা বলেন, “আমি দেখা করার জন্য জোর করেছি বিষয়টি সত্য। আমি তিন মাস যাবৎ কথা বলি ওর সাথে। তবে কোন ধরনের সম্পর্ক নাই তার সাথে।”

এরপর প্রক্টর অফিসে ওই নারী শিক্ষার্থীকে জিজ্ঞাসা করা হয়, তিনি এ বিষয়ে জিডি অথবা মামলা করবেন কি না। তিনি সিদ্ধান্ত নিতে না পারলে তার অভিভাবককে আসতে বলা হয়। তার পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত হলে তারাও কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকেন। 

এ অবস্থায় অভিযোগপত্র গ্রহণ এবং প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে অভিযুক্ত সোহেলকে ছেড়ে দেওয়ার নির্দেষ দেওয়া হয়। তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা কর্মকর্তা তাকে বের করে নিয়ে আসতে গেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের ৫২তম ব্যাচের কিছু শিক্ষার্থী উত্তেজিত হয়ে অভিযুক্ত সোহেলকে মারধরের চেষ্টা করেন।

তখন মারধরের হাত থেকে বাঁচাতে নিরাপত্তা কর্মকর্তা জেফরুল হাসান বাঁধা দেয়ার চেষ্টা করেন। এসময় আকস্মিকভাবে আঘাত লেগে তার মাথা ফেটে গিয়ে রক্ত বেরিয়ে আসে। পরে তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজে পাঠানো হয়। 

এ ঘটনায় আহত নিরাপত্তা কর্মকর্তা জেফরুল হাসান চৌধুরী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বরাবর একটি লিখিত অভিযোগপত্র জমা দেন। 

জেফরুল হাসান চৌধুরী আক্ষেপ প্রকাশ করে বলেন, “প্রায় ২৫ বছর ধরে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত আছি। কিন্তু কখনো কোনো শিক্ষার্থীর দ্বারা আঘাতপ্রাপ্ত হইনি। আমি ক্যাম্পাসের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় সবসময়ই সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি।”

তিনি বলেন, “শামীম মোল্লা নিহতের মত ঘটনা আর যাতে না ঘটে, সে বিষয়ে আমি সর্বোচ্চ সচেতন। সেজন্য ওই ছেলেকে আমাদের কয়েকজন শিক্ষার্থী মারধর করতে গেলে আমি তা থামানোর সর্বোচ্চ চেষ্টা করি। এ সময় এক শিক্ষার্থীর হাতে থাকা শক্ত কিছু একটা আমার মাথায় লাগে। এতে মাথা ফেটে রক্ত বের হওয়া শুরু হলে আমাকে মেডিকেলে নিয়ে যাওয়া হয়।”

ইচ্ছাকৃতভাবে টার্গেট করে তাকে আঘাত করা হয়েছে কি না জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, “না, ইচ্ছাকৃত ভাবে আমাকে আঘাত করা হয়নি। তবে একটা সমস্যা সমাধান হয়েছে যখন, তারপরেও কেনো তাকে মারধর করতে যেতে হবে?”

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক একেএম রাশেদুল আলম বলেন, “আমাদের নিরাপত্তা কর্মকর্তা আহত হওয়ার ঘটনায় অভিযোগপত্রের ভিত্তিতে আমরা প্রাথমিক তদন্ত করে তার রিপোর্ট প্রস্তুত করে উপাচার্য স্যারের কাছে প্রেরণ করেছি। এ ব্যপারে তিনি ছাত্র-শৃঙ্খলা বিধি মোতাবেক চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন।”

ঢাকা/আহসান/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জাবির গণিত বিভাগের ভবন নির্মাণ কাজ দ্রুত শুরুর দাবি শিক্ষার্থীদের
  • ইবিতে ফের ছাত্রী হেনস্তাসহ নানা অভিযোগ এক শিক্ষকের বিরূদ্ধে
  • বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক: সেই সব না-বলা কথা
  • জুলাই গণ-অভ্যুত্থানকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে পারছি আমরা?
  • ডেঙ্গু থেকে সেরে উঠলে কী খাবেন
  • শিয়া-সুন্নি বিভেদ থেকে বেরিয়ে আসার আহ্বান জবি উপাচার্যের
  • জাবিতে নারী শিক্ষার্থী হেনস্তা ও নিরাপত্তা কর্মকর্তা আহত নিয়ে যা জানা গেল
  • ‘আমি দুটি শিশুসন্তান নিয়ে বাঁচতে চাই’
  • আমি দুটি শিশুসন্তান নিয়ে বাঁচতে চাই