ছোট–বড় ১৮টি ভবন। তিন বছর আগে তৈরি এসব ভবনের কোনোটি ১০ তলা, কোনোটি ৬ তলা। তবে একটিরও ব্যবহার নেই। ভবনগুলোর বাইরের চত্বরে ঝোপঝাড় গজিয়েছে। চারপাশে ছড়িয়ে–ছিটিয়ে রয়েছে আবর্জনা। ভবনের ভেতরে মাকড়সা বাসা বেঁধেছে, জমেছে ধুলোবালি। অব্যবহৃত পড়ে থাকায় নষ্ট হচ্ছে প্রশিক্ষণের যন্ত্রপাতি।

এ চিত্র জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলার পল্লী উন্নয়ন একাডেমির (আরডিএ)। ২০২২ সালে নির্মাণের পর থেকে এটি খালি পড়ে আছে। এটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ১৩১ কোটি টাকার বেশি। লক্ষ্য ছিল বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের হতদরিদ্র মানুষকে প্রশিক্ষিত করে জনশক্তিতে রূপান্তর করা।

একই লক্ষ্যে গোপালগঞ্জ ও রংপুরে দুটি পল্লী উন্নয়ন একাডেমি প্রতিষ্ঠা করা হয়। সীমিত পরিসরে গোপালগঞ্জে চললেও রংপুরে একাডেমি অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে আছে। গোপালগঞ্জ ও রংপুরে একাডেমি নির্মাণে খরচ হয়েছে যথাক্রমে প্রায় ৩৪৫ কোটি টাকা ও ১৩৪ কোটি টাকার বেশি।

গোপালগঞ্জ, জামালপুর ও রংপুরে নতুন তিনটি আরডিএ প্রতিষ্ঠার বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের গঠিত কমিটির প্রতিবেদনের তথ্য ও সরেজমিন ঘুরে এই চিত্র পাওয়া গেছে।

৬১০ কোটি টাকা ব্যয়ে এই তিন একাডেমি নির্মাণ করা হয় বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে। ওই সরকারের আমলে আরেকটি একাডেমির নির্মাণকাজ শুরু হয় যশোরে। এটির ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ২০০ কোটি টাকা। অবশ্য এটির কাজ চলবে কি না, তা নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের মধ্যে আলোচনা চলছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

প্রশিক্ষণ ও গবেষণার জন্য ১৯৫৯ সালে আখতার হামিদ খানের হাত ধরে কুমিল্লায় প্রথম পল্লী উন্নয়ন একাডেমি প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৯০ সালে বগুড়ায় দ্বিতীয় পল্লী উন্নয়ন একাডেমি প্রতিষ্ঠিত হয়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গ্রামীণ মানুষের দারিদ্র্য বিমোচনের কথা বলে বিগত সরকারের আমলে দেশের বিভিন্ন স্থানে অপরিকল্পিতভাবে একের পর এক একাডেমি করা হয়েছে। দেশে এত একাডেমির প্রয়োজন নেই। যেগুলো আছে, সেগুলোকে কাজে লাগানো উচিত।

পল্লী উন্নয়ন একাডেমি রংপুর.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: গ প লগঞ জ ন এক ড ম সরক র র

এছাড়াও পড়ুন:

মেঘনা-ধনাগোদা বেড়িবাঁধ সড়ক যেন মরণফাঁদ

চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের আওতায় নির্মিত ৬৪ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ সড়কটি এখন মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে। সড়কের বিভিন্ন স্থানে সৃষ্টি হয়েছে ছোট-বড় অনেক গর্ত। এসব গর্তের পাশ দিয়ে প্রতিদিনই ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছেন পথচারী ও যানবাহন। এলাকাবাসীর অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে সংস্কারের দাবি জানানো হলেও সড়ক ও জনপদ বিভাগ (সওজ) কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নিচ্ছে না। যে কোনো মুহূর্তে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন তারা।

সরেজমিনে দেখা যায়, মেঘনা-ধনাগোদা বেড়িবাঁধের দুই পাশে জায়গায় জায়গায় বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। কোথাও সড়কের পিচ উঠে গেছে, কোথাও আবার গর্তের গভীরতা এত বেশি যে, ছোট যানবাহন উল্টে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে। 

আরো পড়ুন:

রাজশাহীতে দুর্ঘটনায় কলেজছাত্রের মৃত্যু, ট্রাকে আগুন

সিলেটে বাস-প্রাইভেটকার সংঘর্ষ, বাবা-মেয়ে নিহত

মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের বেড়িবাঁধটি পানি উন্নয়ন বোর্ডের হলেও, এর ওপরে নির্মিত পাকা সড়কটি সওজ বিভাগের আওতাধীন। এ সড়কটি ব্যবহার করে মতলব উত্তর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ছাড়াও ঢাকা, চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর ও নোয়াখালীর যানবাহন চলাচল করে।

স্থানীয় অটোরিকশা চালক রোবেল হোসেন বলেন, ‍“নির্মাণের দুই-তিন বছর যেতে না যেতেই সড়কের দুই পাশে অনেক গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এখন প্রতিদিন গাড়ি চালাতে হচ্ছে ঝুঁকি নিয়ে। একটু অসাবধান হলেই ঘটবে দুর্ঘটনা।”

মোটরসাইকেল চালক আনোয়ার হোসেন বলেন, “দিনে কোনোভাবে পার হওয়া যায়, কিন্তু রাতের পরিস্থিতি থাকে ভয়ঙ্কর। কারণ, অনেক সময় দূর থেকে গর্ত দেখা যায় না। এই সড়কে খুব ঝুঁকি নিয়ে গাড়ি চালাতে হয়।” 

পিকআপ ভ্যানের চালক আব্দুর রহমান বলেন, “কয়েক বছর না যেতেই রাস্তা গর্তে ভরে গেছে। রাতের বেলায় গর্তগুলো বোঝা যায় না, তাই সব সময় আতঙ্ক নিয়ে গাড়ি চালাতে হয়।”

কলাকান্দা ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মেহেদী হাসান বলেন, “বেড়িবাঁধ সড়কটি এলাকাবাসীর প্রাণের দাবি। এখন গর্তের কারণে দুর্ঘটনা বাড়ছে। সংশ্লিষ্ট বিভাগকে দ্রুত মেরামতের জন্য আমরা একাধিকবার জানিয়েছি।”

মতলব উত্তর প্রেস ক্লাবের সভাপতি বোরহান উদ্দিন ডালিম বলেন, “এই বেড়িবাঁধ শুধু মতলব নয়, পুরো অঞ্চলের মানুষের যোগাযোগের প্রধান সড়ক। তাই সওজ বিভাগের উদাসীনতা জনজীবনে ঝুঁকি তৈরি করছে। বর্ষার আগেই এই সড়কটির পূর্ণাঙ্গ সংস্কার জরুরি।”

চাঁদপুর সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, “অতিবৃষ্টির কারণে গর্ত তৈরি হয়েছে। আমরা সড়কটি মেরামতের ব্যবস্থা নিয়েছি।”

উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী আনোয়ার হোসেন জানান, মতলব ব্রিজ থেকে বেড়িবাঁধের পূর্ব অংশে সংস্কার কাজের জন্য টেন্ডার করা হয়েছে। পশ্চিম অংশ এখনও ঠিকাদারের দায়িত্বে আছে, তাদেরকেও মেরামতের জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী (চঃ দাঃ) সেলিম শাহেদ বলেন, “বেড়িবাঁধটি পানি উন্নয়ন বোর্ডের হলেও এর ওপরে থাকা পাকা সড়ক সওজ বিভাগের দায়িত্বে। বেড়িবাঁধের যদি কোথাও ক্ষতি হয়, আমরা তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেই; সড়ক সংস্কার কাজ সওজ বিভাগকেই করতে হয়।”

চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহমুদা কুলসুম মনি বলেন, “বেড়িবাঁধ সড়কের বিভিন্ন স্থানে গর্ত দেখা গেছে, যা দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হবে।”

ঢাকা/অমরেশ/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ