সড়কে দুই শতাধিক মরা গাছে, চলাচলে ঝুঁকি
Published: 3rd, July 2025 GMT
ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের ধামরাই অংশে সড়কের দুই পাশে দুই শতাধিক গাছ মারা গেছে। এসব গাছের অংশই ঝড়-বৃষ্টিতে ভেঙে পড়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ গাছগুলো না সরালে বড় দুর্ঘটনা ঘটার শঙ্কা প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
জানা গেছে, ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক দিয়ে প্রতিদিন দেশের পশ্চিমাঞ্চলের কয়েক হাজার যানবাহন চলাচল করে। মানিকগঞ্জ-পাটুরিয়া এলাকার মানুষের একমাত্র চলাচলের সড়ক এটি। একটি পোশাক কারখানার শ্রমিক রুবেল হোসেনের ভাষ্য, ‘আমরা নিয়মিত এ মহাসড়কের মরা গাছের নিচ দিয়ে কারখানায় যাতায়াত করি। যে কোনো সময় এগুলোর অংশ ভেঙে মাথায় পড়তে পারে। ঝড় বা বৃষ্টি হলে বেশি ভয় লাগে। দ্রুত এসব যেন কেটে ফেলা হয়।’
সরেজমিন দেখা যায়, মহাসড়কের ধামরাইয়ের সুতিপাড়া ইউনিয়নের শুধু বালিথা এলাকাতেই বড় আকৃতির শতাধিক মরা গাছ দাঁড়িয়ে আছে। এই এলাকায় রয়েছে তিনটি পোশাক কারখানাসহ পাঁচটি শিল্প কারখানা। শ্রমিকরা এ মরা গাছের নিচ দিয়ে চলাচল করছেন। এসব গাছের নিচে শ্রমিকদের বহনকারী যানবাহন পার্কিং করে রাখা হয়। আবর্জনা ফেলার পাশাপাশি পরিবেশ দূষণের কারণে এসব মারা গেছে বলে মনে করছে বন বিভাগ।
কিছুদিন আগে ঝড়ের সময় মহাসড়কের পাশের একটি মরা গাছের ডাল প্রাইভেটকারের ওপর এসে পড়ে বলে জানান ধামরাইয়ের বালিথা-বাথুলি এলাকার বাসিন্দা সাংবাদিক মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, তাঁর গাড়ির কিছুটা ক্ষতি হলেও বড় ধরনের দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পান।
নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের ধামরাই উপজেলা শাখার সভাপতি নাহিদ মিয়া বলেন, খাতরা থেকে বারবাড়িয়া পর্যন্ত ছোট-বড় তিন শতাধিক গাছ মারা গেছে। খাতরা এলাকার শতাধিক মরা গাছ কিছুদিন আগে সড়ক ও জনপথ বিভাগ কেটে নিয়েছে। বালিথা এলাকার মরা গাছগুলো এখনও কাটা হয়নি। অনেক গাছে ঘুণপোকা আক্রমণ করেছে। যে কোনো সময় এগুলো ভেঙে পড়তে পারে যানবাহন ও পথচারীর ওপর।
মহাসড়কের পাশের গাছগুলো মারা যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে ধামরাই উপজেলা বন কর্মকর্তা মো.
নয়ারহাট সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী দেবাশীষ সাহা বলেন, ‘ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের গাছগুলো কাটা বা লাগানোর দায়িত্ব আমাদের না। এগুলো আমাদের আরেকটা বিভাগের কাজ। তার পরও মরা গাছ কাটার জন্য তাদের কাছে চিঠি দিয়েছি।’
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
যে জমিতে ঠাঁই মিলেছে সেখানেই লুটপাট
সরকারি ফেরি চালক হিসেবে সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের জমির ওপর করা একটি ঘরে থাকার সুযোগ মেলে আবুল বাশারের। তাতে করে মাসে সামান্য যে টাকা বেতন পেতেন, তার ওপরে বাড়ি ভাড়ার বোঝা চাপেনি। অথচ আশ্রয় পাওয়া সেই আঙিনার গাছ, বালু, পাথর সবই সাবাড় করে দিয়েছেন তিনি।
নোয়াখালী জেলার চাটখিল উপজেলার বানশা গ্রামের বাসিন্দা আবুল বাশার। তিনি ছাতক সওজের একজন স্থায়ী ফেরিচালক ছিলেন। সেই সুবাদে ছাতক পৌর এলাকার দক্ষিণ বাগবাড়িতে সুরমা নদীর তীরবর্তী সওজের একটি সরকারি পাকা ঘরে বসবাস করতেন বাশার। বছর ৩-৪ আগে অবসরে যান তিনি। তবে এখনও সে ঘরেই আছেন।
স্থানীয়রা জানান, সওজের মালিকানাধীন এই জমিতে বিভিন্ন ধরনের গাছ ছিল। এছাড়া মাটি, বালু ও পাথর রাখা ছিল নানা স্থানে। সেই সঙ্গে বেশকিছু যন্ত্রাংশও দেখেছেন তারা। একটু একটু করে তার সবই সাবাড় করেছেন আবুল বাশার ও তাঁর ছেলে সাজ্জাদ মাহমুদ মনির।
অভিযোগ রয়েছে, সরকারি এই জমি নিজেদের করে নিয়েছেন তারা। বাশারের ছেলে মনির সেখানে বসে চালাচ্ছেন মাদক বিক্রির কারবার। এদিকে নিজেদের জমির দখল নিশ্চিত করতে সম্প্রতি সওজের একাধিক অভিযান পরিচালিত হলেও বাশার ও মনিরের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি তারা। সরকারি জমিতে থেকে, সেই জমিতে থাকা সরকারি সম্পদ বিক্রি করে অর্থ আত্মসাতের মতো অপরাধ সওজ কর্তৃপক্ষ গুরুত্বের সঙ্গে আমলে না নেওয়ায় বিস্মিত স্থানীয়রা। এ ব্যাপারে আপত্তি বা অভিযোগ তুললে, প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা না নিয়ে সতর্ক করেই দায়িত্ব সারছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
সূত্রের তথ্য মতে, বছর কয়েক আগে চাকরির মেয়াদ শেষ হলেও সওজের এক অসাধু কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে ওই বাসায় আছেন আবুল বাশার।
এই অঞ্চলে এর আগে সওজের ভূমি থেকে পাথর, মাটি ও গাছ লুটের অভিযোগে ২০২৪ সালে এক ট্রাকচালকসহ দু’জনকে আটক করেছিল সেনাবাহিনী। সে কাজের মূল হোতা হিসেবে সে সময় সামনে আসে আবুল বাশারের ছেলে মনিরের নাম। এ ঘটনায় থানায় সে সময় মামলা হয়।
এর আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ্যে তাঁর মাদক সেবনের ভিডিও ক্লিপ প্রকাশ হয়। জানা গেছে, বর্তমানে মনির তাঁর লোকজন নিয়ে নদী ও সড়ক পথ এবং বালুমহালে চাঁদা আদায় করেন। বিগত সরকারের সময় নিজেকে যুবলীগ কর্মী হিসেবে পরিচয় দিয়ে মাদক চক্র গড়ে তোলেন মনির। এ নিয়ে কথা বলতে চাইলে পাওয়া যায়নি মনিরকে। অভিযুক্ত সাজ্জাদ মাহমুদ মনিরের নানা অপকর্মের বিষয়ে জানতে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাঁকে পাওয়া যায়নি। এদিকে এসব অভিযোগের কথা অস্বীকার করেছেন তাঁর বাবা আবুল বাশার।
ছাতক সড়ক ও জনপথের (সওজ) উপবিভাগীয় কার্যালয়ের প্রকৌশলী শাহাদাত হোসেন বলেন, সওজ কর্তৃপক্ষ লাফার্জ ফেরিঘাটসংলগ্ন অবৈধ ঘরগুলো উচ্ছেদ করেছে। চাকরি শেষ হওয়ার পরও সরকারি বাসায় কীভাবে বসবাস করছেন বাশার, এমন প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে গিয়ে তিনি বলেন, তাঁর ছেলে মনিরের অপকর্মের জন্য অফিসে ডেকে এনে কঠোরভাবে সতর্ক করা হয়েছে। এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা কেন নেওয়া হয়নি, এমন প্রশ্নের কোনো সদুত্তর দেননি এই কর্মকর্তা।