যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ৩৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক নিয়ে দ্বিতীয় দফার আলোচনার জন্য বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায় যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধির দপ্তর (ইউএসটিআর)। বাংলাদেশ সময় গতকাল বুধবার রাত ৯টায় ওয়াশিংটনে এ আলোচনা শুরু হয়েছে। চলবে ১১ জুলাই পর্যন্ত। আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত বাড়তি শুল্ক কমানোর পাশাপাশি সার্বিকভাবে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বাড়ানোর ওপর জোর দিচ্ছে ঢাকা। আলোচনায় দরকষাকষির মাধ্যমে ভালো কিছু আশা করা হচ্ছে। 

গত মঙ্গলবার প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড.

মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে পাঠানো মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের চিঠিতে বাংলাদেশের পণ্যে ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের কথা জানানো হয়। আগামী ১ আগস্ট থেকে নতুন এই শুল্ক আরোপ হওয়ার কথা। এটি কার্যকর হলে দেশটিতে বাংলাদেশি পণ্য রপ্তানিতে শুল্ক দাঁড়াবে ৫১ শতাংশ। 
এর আগে গত ২ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে প্রবেশে ৬০ দেশের পণ্যে সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশসহ বিভিন্ন হারে শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। তখন বাংলাদেশের পণ্যে ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপের কথা বলা হয়, যা কার্যকর হওয়ার কথা ছিল ৯ এপ্রিল। তবে সে সময় তিন মাসের জন্য দেশভিত্তিক বাড়তি শুল্ক আরোপ স্থগিত করা হয়। এ শুল্ক বিরতির সময়সীমা শেষ হওয়ার আগে বাংলাদেশসহ ১৪ দেশের ওপর নতুন করে শুল্কহার নির্ধারণ করেছেন ট্রাম্প। এতে যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রপ্তানিতে নতুন করে অস্বস্তি তৈরি হয়েছে। 

একই দিন বাংলাদেশের সঙ্গে পাল্টা শুল্ক চুক্তি করতে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ট্যারিফ শিডিউল ডকুমেন্ট পাঠানো হয়েছে। এর ওপর আলোচনার আমন্ত্রণ জানায় ইউএসটিআর। এরই অংশ হিসেবে ৯ থেকে ১১ জুলাই পর্যন্ত আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে। বাংলাদেশের পক্ষে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীনের নেতৃত্বে আলোচনায় অংশ নিচ্ছেন বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান, অতিরিক্ত সচিব ড. নাজনীন কাউসার চৌধুরীসহ ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতবাসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। প্রধান উপদেষ্টার জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান ঢাকা থেকে সভায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হবেন। 

গতকাল বৈঠক শুরুর আগে মোবাইল ফোনে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন সমকালকে বলেন, সচেতনভাবেই সার্বিক ইস্যুটি পর্যালোচনায় রয়েছে। শুধু শুল্ক ইস্যু নয়, দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের বিষয়টিকে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। এসব ক্ষেত্রে দেশের জন্য যেটা সবচেয়ে ভালো, সে বিষয়গুলো নিয়েই বৈঠকে আলোচনা হবে। সার্বিকভাবে দেশের স্বার্থ রক্ষায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। আলোচনার মাধ্যমে ভালোকিছু পাওয়া যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বাণিজ্য ঘাটতি উল্লেখ করে যুক্তরাষ্ট্র পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছে। তাই পাল্টা শুল্ক কমানোর লক্ষ্যে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বিদ্যমান বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর পরিকল্পনা করছে সরকার। এরই অংশ হিসেবে সরকারি খাতে খাদ্যশস্য বিশেষ করে গম কেনায় যুক্তরাষ্ট্রকে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। সেই সঙ্গে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে উড়োজাহাজ এবং সামরিক সরঞ্জাম কেনার ক্ষেত্রেও যুক্তরাষ্ট্রকে গুরুত্ব দেওয়ার বিষয়টি আলোচনায় তুলে ধরা হবে। 

এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র থেকে পণ্য আমদানিতে শুল্ক, ভ্যাট, সম্পূরক শুল্ক, নিয়ন্ত্রক শুল্ক কমানোর প্রস্তাব করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। যুক্তরাষ্ট্রের এ প্রস্তাবের বিষয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও অন্যান্য অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হবে। শুল্ক কমানোর পাশাপাশি বাণিজ্য-সংক্রান্ত অশুল্ক বাধা কাটিয়ে ওঠারও প্রতিশ্রুতি দেওয়া হবে। এ ছাড়া দেশটি থেকে তুলা আমদানিকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। আমেরিকান তুলা আমদানি বাড়াতে দেশে কিছু অবকাঠামোও তৈরি করা হবে। বেসরকারি পর্যায়েও যাতে করে বাণিজ্য বাড়ানো সম্ভব হয় সে বিষয়েও সরকার নীতি সহায়তা দেবে। 

লবিস্ট নিয়োগে আগ্রহী নয় সরকার 

শুল্ক নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দরকষাকষিতে সরকারের উদ্যোগ যথেষ্ট ছিল না বলে মনে করেন রপ্তানিকারক উদ্যোক্তারা। প্রথম দফা ৩৭ শতাংশ শুল্ক ঘোষণার পর গত প্রায় তিন মাসে বলার মতো কোনো অগ্রগতি দেখাতে পারেনি সরকার। কয়েকজন রপ্তানিকারক সমকালকে বলেন, কী আলোচনা হচ্ছে, কারা আলোচনা করছে, সে বিষয়ে স্পষ্ট কিছু জানানো হয়নি সরকারের তরফ থেকে। শুল্ক কমাতে ওয়াশিংটনকে রাজি করাতে লবিস্ট নিয়োগের বিষয়টি সামনে আনে তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিজিএমইএ। 

তবে গতকাল সন্ধ্যায় সরকারের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে এখনও কোনো লবিস্ট নিয়োগ দেওয়া হয়নি। এ ক্ষেত্রে লবিস্ট মোটেও জরুরি না। বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে আলোচনা করছে। 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র র শ ল ক কম ন র শ ল ক আর প কম ন র প উপদ ষ ট সরক র র র ওপর হওয় র

এছাড়াও পড়ুন:

রাজকীয় ভোজে ট্রাম্প–মেলানিয়াকে কী কী খাওয়ালেন রাজা চার্লস

জমকালো সাজে সেজেছে যুক্তরাজ্যের উইন্ডসর ক্যাসলের সেন্ট জর্জেস হল। উপলক্ষটাও অনন্য, রাজকীয়। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সস্ত্রীক যুক্তরাজ্য সফর উপলক্ষে এখানে রাজকীয় নৈশ্যভোজ আয়োজন করেন রাজা তৃতীয় চার্লস ও রানি ক্যামিলা।

বুধবার রাতের রাজকীয় এ আয়োজনে কূটনীতি, খাবার, ঐতিহ্য, সংগীত আর আভিজাত্য একসুতোয় বাঁধা পড়েছিল। ট্রাম্প–মেলানিয়াসহ রাজার অতিথি হয়েছিলেন বিশ্বের ১৬০ জন গণমান্য ব্যক্তি।

ডোনাল্ড ট্রাম্পের সম্মানে রাজা তৃতীয় চার্লসের আয়োজন করা রাজকীয় ভোজের টেবিল। যুক্তরাজ্যের উইন্ডসর ক্যাসলের সেন্ট জর্জেস হল, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ