‘এক দমের নাই ভরসা, করো তুমি কার আশা...’
Published: 11th, January 2025 GMT
মকদ্দস আলম উদাসীর মেহমানখানা কাম বেডরুম। আধো আলো, আধো অন্ধকার। সেখানে বসেই তিনি আমাদের কাছে ফেলে আসা জীবনের ঠিকুজি বাতলান। মারা যাওয়ার বছরখানেক আগে, সম্ভবত সেদিন ছুটির দিন ছিল। আমরা সিএনজি অটোরিকশায় চেপে সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরের কেশবপুরে তাঁর ডেরায় গিয়েছিলাম।
উদাসী ছিলেন বৈষ্ণবসাধক রাধারমণের পড়শি। তাঁর ডেরার খানিক দূরেই রাধারমণের সমাধিমন্দির। শাহ আবদুল করিম আর দুর্বিন শাহর পরবর্তী সময়ে সুনামগঞ্জে যে কয়েকজন সাধক-মহাজন আলো ছড়িয়েছেন, উদাসী তাঁদেরই একজন। জন্মেছিলেন ১৯৪৮ সালের ১ ফেব্রুয়ারি। মারা যান ২০২২ সালের ১৪ জুলাই।
সেই ছুটির দিনে উদাসীর দীর্ঘ সাক্ষাৎকার নিই। টানা চার ঘণ্টা! সেদিনের আলাপে বাউল, ফকির, সহজিয়া দর্শন এবং ধর্ম, সমাজ, রাষ্ট্র ও চেনাজানা সাধক কবিদের নিয়ে খোলামেলা কথা বলেছেন। কীভাবে তিনি মাদ্রাসা থেকে পালিয়ে গানের জগতে ঝুঁকে পড়লেন আর শ্মশান-কবরে রাত কাটাতে থাকলেন দিনের পর দিন, সে গল্পও শোনালেন। পাঁচ সন্তানের মৃত্যু আর ট্রাকের নিচে পিষ্ট হয়ে মর্মান্তিকভাবে স্ত্রীর মৃত্যুযন্ত্রণা তাঁকে ক্রমাগত বিচ্ছেদি করে তুলেছে বলেও জানালেন।
কতশত গল্পকুশল বিনিময় আর অল্পবিস্তর বাতচিতের পর মকদ্দস আলম উদাসী ঘরে থাকা একটা লক্কড়ঝক্কড় বুকশেলফের কাচের দরজা খুলে কিছু পুরোনো বই আর ডায়েরি বের করেন। এর মধ্যে কয়েকটা পাণ্ডুলিপিও আছে। একটাতে লেখা তিনটি বাক্য: ‘উদাসী রচনা। প্রাচীন পাণ্ডুলিপি। ৩ খণ্ড একত্রে।’
বই, পাণ্ডুলিপি, ডায়েরি—সব এনে রাখেন চৌকিতে পেতে রাখা নতুন বিছানার চাদরের ওপর। তিনি নিজেও একসময় বিছানায় পদ্মাসন গেড়ে বসেন। কিছু বই তখন ঊরুতেও রাখলেন।
তিনি বলেন, ‘আমার কোনো ধন (অর্জন) নেই! তুচ্ছ, একেবারেই তুচ্ছ এক মানুষ আমি!’
প্রশ্ন করি উদাসীকে, ‘আপনার নামের শেষে উদাসী শব্দটা কবে থেকে লাগল?’
প্রশ্ন শুনে একটু হাসেন উদাসী। বলেন, ‘ইতা আমি ভালা পাই না। ওই যে মাইনষে শাহ লাগায়। শাহ অমুক আলী, শাহ তমুক আলী। আমি তো আমি-অই। আমি বাদশা না, আমি ফকির। তো, আমার ইতা লাগাইবার দরকার কিতা? আমি তো ওই মকদ্দস-অই। আমার ছোটবেলার নাম মকদ্দস আলী।’
উদাসী বলে চলেন, ‘মাদ্রাসাত যখন লেখাপড়া করি, এক নামে এক ক্লাসে পড়ি গেল দুইজন। উস্তাদে (শিক্ষক) কইলা, তোমার নামের পিছে লাগাও আলম। ওই মকদ্দস আলম। তান আছলা আমার আরবি শিক্ষক। ওউ তান নাম পাল্টাইল্লা। এরপর গানটান যখন শিখলাম, তখন কেউ ডাকে মকদ্দস ভাই, কেউ পাগল, কেউবা ভগল, আর কেউ কয় উদাসী। যার মনে যা আছে, তাই কয়। কউক (বলুক) না। যার যেটা ভালা লাগে, ডাকুক। তখন তো গান গাইতাম, বয়স কম, অঙ্গভঙ্গিমা আছিন ভালা। তখন মাইনষে কইত, থুরা (ছোট) বাইচ্ছাই গান গাইয়া তো উদাস করিলাইছে। পরে মাইনষের মুখ থাকি শুইনা দুর্বিন শাহও আমারে কইন উদাসী। অউ পড়ি গেল নাম উদাসী।’
‘কত সালের ঘটনা এটা?’
‘ধরুকউক্কা, আমার বয়স তখন বাইশ-তেইশ।’
‘আপনে তো তখন মাদ্রাসাত যান না?’
‘না, না। ই-সময় তো পড়া ছাড়ি দিছি। গানের জগতে ঢুকি গেছি।’
আপনার দুর্বিন শাহর সঙ্গে দেখা কবে?
‘তান সাথে আমার আষট্টিত (১৯৬৮ সাল) দেখা।’
জিজ্ঞাসা করি, ‘তিনি (দুর্বিন শাহ) তো মারা গেলেন ১৯৭৭ সালে। তার মানে ৯ বছর ওনার সঙ্গ করেছেন?’
উত্তরে মকদ্দস আলম উদাসী বলেন, ‘অয়, অয়। ৯ বছর সঙ্গ করছি। ই-সময় আমি, সাবুল মিয়া, আছর আলী, এরার সাথে গান গাই। আমার কোনো উস্তাদ নাই। প্রায় পাঁচ-ছয় বছর অইছে তখন আমি গানের রাস্তাত। গান গাই, তো মাইনষে কয়, উস্তাদ কে? উস্তাদ নাই, তে পুঙ্গানি? এই রকম মাইনষে খোঁচা দিত। তো, তখন আমার দুর্বিন শাহর লগে দেখা অয়। সম্ভবত, তান তখন লন্ডন থাকি গানটান গাইয়া আইছইন। এই সময় তানের একটা বই বার (প্রকাশ) অইছে, প্রেমসাগর পল্লিগীতি চতুর্থ খণ্ড।’
উদাসী একনাগাড়ে বলে চলেন, ‘তো অউ বইয়ের (দুর্বিন শাহর বই) গান আমি গাইতাম। আর আমার টুকটাক গান গাইতাম। আমি যে গান লিখি, ধরা দিতাম না। আমি গানে কইতাম, পাগলে কয়। তো, দুর্বিন শাহ একদিন কইলা, এই পাগলের নাম কিতা? আবদুল নামে এক পাগল আছিন, তাইন কইলা, এই তো সে-ই (উদাসী) লেখে। অনেক পরে আমারে তান (দুর্বিন শাহ) কইলা, লেখালেখি যখন করো, ইতা রাইখো। কামও লাগবে নে একদিন।’
প্রশ্ন রাখি উদাসীর কাছে, ‘লেখালেখি কবে থেকে শুরু করেছেন?’
লেখালেখি তো করি মাদ্রাসার পড়া ছাড়ার পর থাকি-অউ। ছোটবেলা থাকি-অউ। আমি তো ছোটবেলা থাকি নাগরী জানি। ছোটবেলায় বাবা আমারে সিলেটি নাগরী (বাংলা বর্ণমালার বিকল্প লিপি) শিখাইছলা। আমার মায় নাগরী জানতা। নাগরীতে লিখা কিতাবগুলা যখন আমি পড়তাম, শিতালং শাহ, ভবানন্দ, শাহনূর—এঁরার অনেক নাগরী কিতাব আছিন (ছিল)। তাঁরার লেখা কিতাব পড়তাম। তো, আমার মায় ইতা অনেক সময় আত (হাত) থাকি নিতা গা, ভবানন্দর বই। কইতা, ‘ইতা হরিবংশ, যে পড়ে, সে হয় নির্বংশ।’ কইতা, ইতা পড়িছ না তুই। তো, আমি লুকাইয়া লুকাইয়া পড়তাম। পড়তাম আর মাঝেমধ্যে ইতা বাংলা করতাম। বাংলা কইরা আমি ইতা আমার মতো কইরা জোড়া দিয়া গাওয়ার চেষ্টা করতাম। অউ, নাগরী লেখতে লেখতে আমার নিজের লেখা আইলো। ছোটবেলায় লেখতাম ইতা টুকটাক। ওই গাঙে দিয়া লঞ্চ যাইত, লঞ্চ নিয়া লেখতাম। কচুপাতা নিয়া লেখতাম। ঢংঢাং করতাম আরকি!
একফাঁকে এক নারী একটি থালায় তেলে ভাজা বেশ কিছু পুলি পিঠা আর কয়েকটি বাটিতে নুডলস দিয়ে গেলেন। একটু পর কয়েকটি চায়ের কাপে করে সেই নারীই নিয়ে এলেন মিরিন্ডা বা ফানটা–জাতীয় পানীয়। পিঠা আর ঠান্ডা পানীয় খেতে খেতে বারকয়েক কাশলেন উদাসী, কফও ঝাড়লেন। কফ-কাশের ছাঁট আমার ডান হাতে শীতল পরশ বুলিয়ে দেয়। বাঁ হাতের তর্জনী দিয়ে তা মুছে উদাসী ভাইয়ের কথায় মনোযোগ দিই। তিনি বলে চলেন জীব, পরম আর মনের মানুষ নিয়ে নিগূঢ়তত্ত্ব-কথা।
সময় যায়, কথা চলে। একসময়ে জানা হয়ে যায় উদাসীর দুর্বিন শাহকে মুর্শিদ ধরা আর তাঁর কাছে দোতরাবাদন শেখার গল্প। এ সময়ই উদাসী জানান তাঁর দুই থেকে আড়াই হাজার গান লেখার প্রসঙ্গও। স্মৃতিচারণা করেন নেত্রকোনা-সিলেটের ঐতিহ্যবাহী মালজোড়া গানের আসর ও প্রখ্যাত শিল্পীদের নিয়েও।
এক দমের নাই ভরসাসাক্ষাৎকার পর্ব শেষে বাইরে বেরোই। তাঁর ডেরা লাগোয়া যে পাকা রাস্তা আছে, সেখানে আমরা নিঃশব্দে কিছুক্ষণ হাঁটতে থাকি। রাস্তার দুই পাশে বাঁশঝাড়, কলা-নারকেল-সুপারিগাছ। সামান্য দূরে, রাস্তার ঠিক মাথার কোনায় একটা পাকা কবর। এমন পরিবেশে উদাসীকে গান গাইতে অনুরোধ করি। তিনি গাইলেন তাঁরই লেখা গান, ‘এক দমের নাই ভরসা, করো তুমি কার আশা।’
উদাসী গাইছেন আর বারবার হাঁপিয়ে উঠছিলেন, দু-একবার কাশলেনও। তীব্র শ্বাসকষ্ট চেপে তিনি অবলীলায় পুরো গান গাওয়া শেষ করলেন। কবরের সামনে নিজের গানের বই হাতে দাঁড়িয়ে তা দেখতে দেখতে গান গাইতে থাকা উদাসী হাতের ইশারায় কবর দেখিয়ে গাইছিলেন—‘আসা-যাওয়া একা, কবরে একা থাকা/ তাই ভাবিয়া সোনার অঙ্গ নাশ।/ আমার সংসারের অংশ নিতে আপন বংশ/ ভাই বন্ধু করিয়াছে আশ॥’
সেদিন খালি গলায় গেয়েছিলেন মকদ্দস আলম উদাসী। মাথা দুলিয়ে হাত নাড়িয়ে সাদা পাঞ্জাবি-লুঙ্গি পরা সফেদ চুল-দাড়িওয়ালা উদাসীর কণ্ঠে একদলা বিরহ ভর করেছিল। তাঁর পাঞ্জাবির বুকপকেটে ছিল কলম আর চোখমুখে ছিল একরাশ ক্লান্তি। এ ক্লান্তি যে দ্রুতই চিরবিশ্রামে রূপ নেবে, ঘুণাক্ষরেও ভাবিনি। সেদিন গানযাপন আর আড্ডা শেষে উদাসীর ডেরা থেকে আসার পর সিলেটে শেষবারের মতো তাঁর সঙ্গে দেখা হয়েছিল বইয়ের দোকান বাতিঘরে, পরে আমার অফিসে। এ ঘটনার কিছু পরে উদাসীর মুঠোফোন থেকে কোনো এক নারী কান্নারত কণ্ঠে সংবাদ দিয়েছিলেন, উদাসী দেহ রেখেছেন। সে সংবাদ পাওয়ার পর থেকে মকদ্দস আলম উদাসীর প্রসঙ্গ এলেই শুরুতে এ গান স্মৃতিতে প্রথম উঁকি দেয়। এ গান তরঙ্গ হয়ে ঢেউ তোলে বুকে। অগণিত না-বলা বাস্তবতা আর খেদ গানের শরীরে লেপটে আছে।
উদাসী কবরের পাশে দাঁড়িয়ে গাইছিলেন:
‘এক দমের নাই ভরসা, করো তুমি কার আশা,
মিছামিছি দুই দিনের পরবাস।
না করলে সাধন মন, না হলো ভজন।
হইলে না বন্ধেরই দাস॥’
উদাসীর কণ্ঠে পরম বন্ধুর প্রতি আত্মনিবেদন ঝরে পড়ছিল। আর এ জগৎ-সংসার যে ‘দুই দিনের পরবাস’ তা-ও তাঁর কণ্ঠের আর্তিতেই অনুভব করা যায়। কিংবা তিনি যখন বলছিলেন, ‘আমার সংসারের অংশ নিতে আপন বংশ/ ভাই বন্ধু করিয়াছে আশ॥’ তখন বাস্তবতা এসে এক কঠিন সত্য উন্মোচন করে। এ দুটো পঙ্ক্তির কারণে কয়েকটি প্রশ্নও তাৎক্ষণিক সামনে এসে উঁকিঝুঁকি দেয়। তবে কি এ জন্যই উদাসী সব সময়ে বৈষয়িক ব্যাপার থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করেছেন? এ কারণেই কি স্থানীয় প্রশাসন উদাসীকে দুবার জায়গাসহ ঘর তৈরি করে দিতে চাইলেও তিনি তা নিতে অপারগতা প্রকাশ করেছিলেন? তাঁর স্বভাব-বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী এটা অনুমান করে নেওয়া যেতেই পারে সম্ভবত তিনি মনে করেছিলেন, তাঁর মৃত্যুর পর ছেলে, স্বজন কিংবা বংশীয়-আত্মীয়রা সহায়-সম্পত্তির ভাগ বসাতে দ্বন্দ্ব-বিবাদ করতে পারেন। ফলে সংসারে বিষয়সম্পত্তি বাড়াতে তাঁর কোনো আগ্রহই ছিল না!
একই গানে উদাসী যখন বলে যান, ‘আহা রে দুনিয়া, দুদিনের মায়া/ কার লাগি কাটলে রে মন ঘোড়ারই ঘাস।/ হাওয়ার পাখি, দিবে যে দিন ফাঁকি/ কবরে পড়ে রইবে লাশ॥’, তখন মৃত্যুচিন্তা এসে ঠাঁই নেয়। জনমভর জীবন যাপন করতে যে খাটাখাটুনি মৃত্যুর পর যে এর কোনো মূল্যই নেই, তা-ও এসব পঙ্ক্তির পলে পলে অনুভূত হয়।
গানের একেবারে শেষ পর্যায়ে এসে উদাসীর কণ্ঠে আবেগের ঘনত্ব অনেকটাই বেড়ে গিয়েছিল। তিনি গাইছিলেন, ‘পাড়ি দিতে সাগর, মনেতে বড় ডর,/ অন্ধকারে চেয়ে দেখি কেউ নাই আশপাশ।/ মকদ্দস উদাসী, হাওয়ার পাখিরে ভালোবাসি/ গেলে পাখি ছাড়িব নিশ্বাস॥’
গান শেষে উদাসী বারকয়েক কাশলেন। এরপর তিনি হেঁটে চলেন সামনের পাকা সড়ক ধরে। আমিও তাঁর সঙ্গী হই। তিনি অনবরত কেশেই চলেছেন। সম্ভবত গলায় কাশ আটকে আছে। গলা ঝেড়ে থুতু ফেলে সেই কাশ ফেলার বৃথা চেষ্টাও করলেন দু-একবার। হাঁটতে হাঁটতেই মকদ্দস আলম উদাসীকে আবার গান গাইতে বললাম। তিনি আমাকে অবাক করে দিয়ে আবারও একই গানের পুনরাবৃত্তি করলেন। এবার আর বই দেখে নয়। এবার স্মৃতি আওড়েই গাইতে শুরু করলেন তিনি, ‘এক দমের নাই ভরসা, করো তুমি কার আশা.
গান শোনা হলে সিলেট থেকে নিয়ে আসা সিএনজি অটোরিকশাতে উঠে পড়ি। ততক্ষণে মাগরিবের নামাজ শেষ হয়েছে। সূর্যও হেলে পড়েছে। গ্রামের রাস্তা ধরে কয়েকজন মুসল্লি তসবিহ হাতে ধীরলয়ে হাঁটছেন। আগের রাতে ঘুম না হওয়ায় আমার চোখে ঝিমানি ভাব। আধো ঘুম, আধো ঝিমানি আসা চোখে ভাসছে সেই মেহমানখানা কাম বেডরুম, যেখানে বসা ধ্যানমগ্ন এক ঋষি বলে চলেছেন জীবন-জগৎ-সৃষ্টি-ধ্বংসের মর্মভেদ।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
লাইনচ্যুত বগি রেখে চলে গেল ট্রেন, ১১ ঘণ্টা পর উদ্ধার
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের ঢাকামুখী লেনে একটি লাইনচ্যুত বগিসহ মোট তিনটি বগি রেখে চলে গেছে একটি মালবাহী ট্রেন। এই দুর্ঘটনার ১১ ঘণ্টা পর বগি তিনটি উদ্ধার করা হয়। ঘটনাটি ঘটেছে সীতাকুণ্ড রেলস্টেশন থেকে এক কিলোমিটার উত্তরে শেখপাড়া এলাকায়। এতে ট্রেন চলাচলে বিঘ্ন না ঘটলেও গন্তব্যে পৌঁছাতে কিছুটা দেরি হতে পারে বলে জানায় রেলওয়ে সূত্র।
গতকাল শুক্রবার দিবাগত রাত তিনটার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। লাইনচ্যুত হওয়ার পর ট্রেনের ইঞ্জিন লাইনচ্যুত বগিটিকে অন্তত ১০০ মিটার পর্যন্ত টেনে নিয়ে যায়। ফলে বগিটি ছাড়াও রেলের স্লিপার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
রেলসূত্র জানিয়েছে, ঘটনার খবর পেয়ে আজ শনিবার সকালে উদ্ধারকাজ শুরু করে উদ্ধারকারীরা। এরপর ঘটনার ১১ ঘণ্টা পর বেলা দুইটার দিকে লাইনচ্যুত বগিটি উদ্ধার করা হয়। দুর্ঘটনার পর ঢাকা-চট্টগ্রাম রেললাইনে চলাচলকারী ট্রেনগুলো ডাউন লাইন (চট্টগ্রামমুখী লেন) দিয়ে চলাচল করেছে। এতে গন্তব্যে কিছুটা দেরিতে পৌঁছেছে ট্রেনগুলো। দুর্ঘটনাকবলিত তিনটি বগিতে গার্মেন্টস পণ্য ও জুতা রয়েছে।
রেল পুলিশের সীতাকুণ্ড ফাঁড়ির ইনচার্জ উপপরিদর্শক (এসআই) আশরাফ ছিদ্দিক প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল দিবাগত রাত তিনটার দিকে ঢাকামুখী একটি মালবাহী ট্রেন সীতাকুণ্ড রেলস্টেশন থেকে এক কিলোমিটার দূরে শেখপাড়া এলাকায় পৌঁছালে পেছন থেকে একটি বগি লাইনচ্যুত হয়। ফলে দুর্ঘটনাকবলিত বগিটির একপাশের চাকা রেললাইনের বাইরে অপর পাশের চাকা দুই রেললাইনের মাঝে ছিল। এতে সামনের দিকের আরও দুটি বগি আটকা পড়ে। দুর্ঘটনাকবলিত তিনটি বগি রেখে ট্রেনটি পরে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। খবর পেয়ে উদ্ধারকারী ট্রেন এসে লাইনচ্যুত বগিটি উদ্ধারের কাজ শুরু করে। আজ বেলা দুইটার দিকে লাইনচ্যুত বগিটি রেললাইনের ওপরে তুলতে সক্ষম হয়।
রেলওয়ে পূর্বঞ্চলের উপসহকারী প্রকৌশলী আতিকুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ট্রেনটির একটি বগি লাইনচ্যুত হওয়ার পর অন্তত ১০০ মিটার টেনে নিয়ে যায় ইঞ্জিন। ফলে রেলের চাকার সঙ্গে সিমেন্টের স্লিপার ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বগিটিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তিনি বলেন, রেলওয়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা এসে বগিটি উদ্ধার করে লাইনের ওপর তোলেন। যে সব স্লিপার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেগুলোকে তুলে তাৎক্ষণিক কাঠের স্লিপার দিয়ে রেললাইন সচল করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তাঁরা।
দুর্ঘটনায় কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে, তা যাচাই করা হচ্ছে বলে জানান রেলওয়ের প্রকৌশলী আতিকুর রহমান। তিনি বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত বগিটিকে ওয়ার্কশপে নেওয়া হবে। ঢাকামুখী রেললাইন ঠিক করার পর পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানো হবে। এরপর ওই পথ দিয়ে ট্রেন চালানো হবে। ততক্ষণ সময় পর্যন্ত চট্টগ্রামমুখী লাইন দিয়ে উভয় দিকে রেল চলাচল করবে। এতে যাত্রাপথে চলাচলকারী ট্রেনগুলোর কিছুটা সময় বিলম্ব হচ্ছে। তবে ট্রেন চলাচল বন্ধ নেই।