Prothomalo:
2025-06-18@21:33:33 GMT

অদ্ভুত আত্মার বন্ধন 

Published: 11th, January 2025 GMT

রাজশাহী শহরে শীত বেশ জেঁকে বসেছে। ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাস। সকাল তখন ৬টা ৫০। রওনা হলাম ট্রেনের উদ্দেশে। বিনোদপুরের নতুন লাইটগুলো যেন ঠায় দাঁড়িয়ে আছে একেকটি অতিমানবী হয়ে। কুয়াশার সাদা পর্দা ভেদ করে রিকশা এগিয়ে চলছে।

তালাইমারী ও ভদ্রা পার হয়ে রেলস্টেশনে গিয়ে রিকশা থামল। দেখা মিলল নতুন পরিবেশের। স্টেশনের বিপরীতে পাশাপাশি দুটি রেস্তোরাঁ। সেখানে সকালের নাশতা বিক্রির জন্য দুজন কর্মী হাঁকডাক ছাড়ছেন। এমনভাবে তাঁরা যাত্রীদের ডাকছেন, যেন এখনই মারামারি শুরু হবে! অবশ্য রেস্তোরাঁ দুটিতে নিত্যদিন এমন কাণ্ড চলে।

প্ল্যাটফর্মে ঢুকে আমার প্রিয় কিশোর আলো কিনলাম।

ট্রেন প্ল্যাটফর্ম ছাড়ল। পাশের সিটে সমবয়সী একটি মেয়ে বসে ছিল জানালার দিকে মুখ করে। আমি আপনমনে বসে ‘কিআ’ পড়ছি আর সকালের চায়ে চুমুক দিচ্ছি। এতক্ষণ সকালের আদুরে রোদ উপভোগ করলেও এখন আর ভালো লাগছে না। আব্দুলপুর এসে ট্রেন থামল।

মেয়েটিকে বললাম, ‘এক্সকিউজ মি। জানালায় একটু পর্দাটা দিয়ে রাখবেন? চোখে রোদ লাগছে।’

মেয়েটি আমার দিকে ঘুরে প্রায় দুই সেকেন্ড থ মেরে তাকিয়ে থাকল! ভাবখানা এমন, আমি যেন তার সঙ্গে বড় কোনো অন্যায় করেছি। আচমকা সে আমাকে ধরে বলে উঠল, বিভা! আমি থতমত খেয়ে বললাম, ‘জি। আমি তো আপনাকে চিনছি না (যেহেতু বোরকা ও মাস্ক পরা ছিল)।’ সে রেগে বলল, ‘থাক চিনতে হবে না।’ তখন খানিকটা কণ্ঠ বুঝতে পেরে বললাম, আঁখি। সে বলে উঠল, ‘তুই পাশে বসে আছিস অথচ চিনতে পারিসনি!’

দুজনের হাত–পা কাঁপা শুরু হয়ে গেছে। আজ তিন বছর পর হঠাৎ দেখা।

দুজনের চোখ টলমল। জড়িয়ে ধরলাম দুজন দুজনকে।

সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় সরকারি আকবর আলী কলেজে দীর্ঘ একটা সময় একই বেঞ্চে দুজন দিনের পর দিন ক্লাস করেছি। কত ক্লাস বাদ দিয়ে দল বেঁধে ফুচকা খেতে গিয়েছি। কলেজজীবনের সেই সোনালি দিনগুলো ভুলবার নয়। মনে পড়ে গেল সেবারের কফি অ্যাডভেঞ্চারের কথা।

আঁখি পশুপাখি ভীষণ পছন্দ করত। সেবার কলেজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে একটি বাচ্চা কুকুরকে ড্রেনে পড়ে থাকতে দেখে দুজন মিলে উদ্ধার করলাম। ড্রেন থেকে তোলার সঙ্গে সঙ্গে বুঝলাম, বাচ্চা কুকুরটি পায়ে আঘাত পেয়েছে। তাই দেরি না করে আঁখি আর আমি ছুটলাম পশু ডাক্তারের কাছে। হাসপাতালে নিতে নিতে আঁখি বলছিল, বাচ্চা কুকুরটার গায়ের রং কফির মতো, তাই এর নাম দিলাম ‘কফি’। এদিকে বেলা গড়িয়ে সন্ধ্যা ঘনিয়ে এল। ডাক্তার বললেন, ‘অপারেশন লাগবে, ওকে অচেতন করলে জ্ঞান না–ও ফিরতে পারে, সিদ্ধান্ত আপনাদের।’ আঁখি দুই হাত চেপে ধরে বলল, ‘বিভা, যেভাবেই হোক কফিকে বাঁচাতেই হবে।’

আমি অতটা পশুপাখিপ্রেমী না হলেও ওর আবেগ দেখে ডাক্তারকে বললাম, ‘ঠিক আছে। আপনি সার্জারি করুন।’ ডাক্তার দরজা বন্ধ করে দিলেন। আমরা ছোট্ট দুজন মানুষ আরেকটি ছোট্ট প্রাণের দায়িত্ব হাতে করে দাঁড়িয়ে আছি।

অতঃপর ডাক্তার দরজা খুলে বললেন, কফি সুস্থ আছে। আঁখি আমাকে ধন্যবাদ জানিয়ে কফিকে নিয়ে বাড়ি ফিরে গেল।

কিছুদিন পর কফি পুরোপুরি সুস্থ হলো। একদিন আঁখির বাসা থেকে চলে গেল।

সেসব কথা মনে করে আঁখি কিছুটা দুঃখ প্রকাশ করল। বলল, এখনো তার কফির কথা মনে পড়ে।

আসলে কলেজজীবন শেষে আমরা দুজন ভিন্ন দুই প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হই। সেই থেকে আলাদা হয়ে যাওয়া।

এরপর নানা গল্পে ট্রেন আমাদের নির্দিষ্ট গন্তব্যে এসে থামল। চেনা প্ল্যাটফর্ম থেকে আলাদা হয়ে যাচ্ছি দুজন। 

হঠাৎ পেছন থেকে আওয়াজ এল, ঘেউ! পেছনে তাকিয়ে দেখলাম, মায়াভরা চোখে তাকিয়ে আছে একটি বাদামি রঙের কুকুর। হঠাৎ থমকে গেলাম! কফি! ভ্রম কাটল।

সামনে চললাম। স্মৃতি হিসেবে জমে রইল এই ট্রেনযাত্রা আর এক অদ্ভুত আত্মার বন্ধন!

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

ইসরায়েলি সামরিক নীতির প্রতিফলন ইরানযুদ্ধ

ইসরায়েলের সবচেয়ে বড় শত্রু ইরান। প্রায় দুই দশক ধরে দেশটির সঙ্গে সর্বাত্মক যুদ্ধ এড়িয়ে চলেছে তেল আবিব। ইসরায়েলি চোখ রাঙানির মধ্যেই ফিলিস্তিনের গাজায় সশস্ত্র সংগঠন হামাস সরকার গঠন করে। দক্ষিণ লেবাননে ইরানসমর্থিত হিজবুল্লাহ শক্তিশালী হয়ে ওঠে।

দুই সংগঠনের সঙ্গে ইসরায়েলের অস্বস্তিকর সম্পর্ক চলতে থাকে। কিন্তু ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের নজিরবিহীন হামলার ঘটনার পর থেকে তারা কঠোর পদক্ষেপ নিতে শুরু করে। এর মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধের গতিপ্রকৃতি তাদের হাতে চলে আসে। একের পর এক হামলা করে হামাস ও হিজবুল্লাহকে দুর্বল করে ফেলা হয়। এর মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েলি সামরিক নীতি (মিলিটারি ডকট্রিন) প্রতিষ্ঠা পায়। তা হলো, যুদ্ধে ধ্বংসাত্মক পন্থা অবলম্বন করার নীতি। 

গত সোমবার বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ঘোষণা করেন, ‘আমরা মধ্যপ্রাচ্যের চেহারা বদলে দিচ্ছি। এর ফলে ইরানের ভেতরেই সুদূরপ্রসারী পরিবর্তন আসতে পারে।’ তবে আপাতত দ্বিতীয় দাবিটি অপ্রমাণিত। কারণ, ইসরায়েলের হামলায় ইরান দুর্বল হলেও পারমাণবিক কর্মসূচিতে দেশটি পরিবর্তন আনবে বলে মনে হয় না। তাছাড়া সরকার পরিবর্তনের পরিকল্পনাও পূরণ হওয়ার নয়। তবে ধ্বংসাত্মক পন্থায় নেতানিয়াহু হামাস ও হিজবুল্লাহর ক্ষমতা খর্ব করে দেখিয়েছেন। সিরিয়ায় ইরানসমর্থিত আসাদ সরকারের পতনেও একই কৌশল কাজে দিয়েছে। এই অবস্থায় মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েল আরও শক্তিশালী হয়েছে, যা এই অঞ্চলে ব্যাপক পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়। 

ইসরায়েলি সামরিক গোয়েন্দা বিভাগের সাবেক প্রধান মেজর জেনারেল আমোস ইয়াদলিন মনে করেন, ‘হামাসের ওই হামলার আগের ২০ বছর বাইরের হুমকিকে গুরুত্ব দিইনি আমরা। এতে আমাদের গোয়েন্দা সংস্থা সঠিক গোয়েন্দা তথ্য সরবরাহ করতে পারেনি। হামাসের ওই হামলা আমাদের মানসিকতাকে সম্পূর্ণ বদলে দিয়েছে। অতীতে যে ঝুঁকি আমরা নিতে ভয় করতাম, এখন তা অনায়াসে করছি। কারও আক্রমণের জন্য ইসরায়েল আর অপেক্ষা করবে না। 

ইসরায়েল পলিসি ফোরামের ফেলো নিমরোদ নোভিক বলেন, গাজার মতো ইরানেও খেলা দ্রুত শেষ করতে হবে। সময়ই বলে দেবে পরিস্থিতি কোন দিকে গড়াবে। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ