Prothomalo:
2025-01-15@16:49:17 GMT

অদ্ভুত আত্মার বন্ধন 

Published: 11th, January 2025 GMT

রাজশাহী শহরে শীত বেশ জেঁকে বসেছে। ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাস। সকাল তখন ৬টা ৫০। রওনা হলাম ট্রেনের উদ্দেশে। বিনোদপুরের নতুন লাইটগুলো যেন ঠায় দাঁড়িয়ে আছে একেকটি অতিমানবী হয়ে। কুয়াশার সাদা পর্দা ভেদ করে রিকশা এগিয়ে চলছে।

তালাইমারী ও ভদ্রা পার হয়ে রেলস্টেশনে গিয়ে রিকশা থামল। দেখা মিলল নতুন পরিবেশের। স্টেশনের বিপরীতে পাশাপাশি দুটি রেস্তোরাঁ। সেখানে সকালের নাশতা বিক্রির জন্য দুজন কর্মী হাঁকডাক ছাড়ছেন। এমনভাবে তাঁরা যাত্রীদের ডাকছেন, যেন এখনই মারামারি শুরু হবে! অবশ্য রেস্তোরাঁ দুটিতে নিত্যদিন এমন কাণ্ড চলে।

প্ল্যাটফর্মে ঢুকে আমার প্রিয় কিশোর আলো কিনলাম।

ট্রেন প্ল্যাটফর্ম ছাড়ল। পাশের সিটে সমবয়সী একটি মেয়ে বসে ছিল জানালার দিকে মুখ করে। আমি আপনমনে বসে ‘কিআ’ পড়ছি আর সকালের চায়ে চুমুক দিচ্ছি। এতক্ষণ সকালের আদুরে রোদ উপভোগ করলেও এখন আর ভালো লাগছে না। আব্দুলপুর এসে ট্রেন থামল।

মেয়েটিকে বললাম, ‘এক্সকিউজ মি। জানালায় একটু পর্দাটা দিয়ে রাখবেন? চোখে রোদ লাগছে।’

মেয়েটি আমার দিকে ঘুরে প্রায় দুই সেকেন্ড থ মেরে তাকিয়ে থাকল! ভাবখানা এমন, আমি যেন তার সঙ্গে বড় কোনো অন্যায় করেছি। আচমকা সে আমাকে ধরে বলে উঠল, বিভা! আমি থতমত খেয়ে বললাম, ‘জি। আমি তো আপনাকে চিনছি না (যেহেতু বোরকা ও মাস্ক পরা ছিল)।’ সে রেগে বলল, ‘থাক চিনতে হবে না।’ তখন খানিকটা কণ্ঠ বুঝতে পেরে বললাম, আঁখি। সে বলে উঠল, ‘তুই পাশে বসে আছিস অথচ চিনতে পারিসনি!’

দুজনের হাত–পা কাঁপা শুরু হয়ে গেছে। আজ তিন বছর পর হঠাৎ দেখা।

দুজনের চোখ টলমল। জড়িয়ে ধরলাম দুজন দুজনকে।

সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় সরকারি আকবর আলী কলেজে দীর্ঘ একটা সময় একই বেঞ্চে দুজন দিনের পর দিন ক্লাস করেছি। কত ক্লাস বাদ দিয়ে দল বেঁধে ফুচকা খেতে গিয়েছি। কলেজজীবনের সেই সোনালি দিনগুলো ভুলবার নয়। মনে পড়ে গেল সেবারের কফি অ্যাডভেঞ্চারের কথা।

আঁখি পশুপাখি ভীষণ পছন্দ করত। সেবার কলেজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে একটি বাচ্চা কুকুরকে ড্রেনে পড়ে থাকতে দেখে দুজন মিলে উদ্ধার করলাম। ড্রেন থেকে তোলার সঙ্গে সঙ্গে বুঝলাম, বাচ্চা কুকুরটি পায়ে আঘাত পেয়েছে। তাই দেরি না করে আঁখি আর আমি ছুটলাম পশু ডাক্তারের কাছে। হাসপাতালে নিতে নিতে আঁখি বলছিল, বাচ্চা কুকুরটার গায়ের রং কফির মতো, তাই এর নাম দিলাম ‘কফি’। এদিকে বেলা গড়িয়ে সন্ধ্যা ঘনিয়ে এল। ডাক্তার বললেন, ‘অপারেশন লাগবে, ওকে অচেতন করলে জ্ঞান না–ও ফিরতে পারে, সিদ্ধান্ত আপনাদের।’ আঁখি দুই হাত চেপে ধরে বলল, ‘বিভা, যেভাবেই হোক কফিকে বাঁচাতেই হবে।’

আমি অতটা পশুপাখিপ্রেমী না হলেও ওর আবেগ দেখে ডাক্তারকে বললাম, ‘ঠিক আছে। আপনি সার্জারি করুন।’ ডাক্তার দরজা বন্ধ করে দিলেন। আমরা ছোট্ট দুজন মানুষ আরেকটি ছোট্ট প্রাণের দায়িত্ব হাতে করে দাঁড়িয়ে আছি।

অতঃপর ডাক্তার দরজা খুলে বললেন, কফি সুস্থ আছে। আঁখি আমাকে ধন্যবাদ জানিয়ে কফিকে নিয়ে বাড়ি ফিরে গেল।

কিছুদিন পর কফি পুরোপুরি সুস্থ হলো। একদিন আঁখির বাসা থেকে চলে গেল।

সেসব কথা মনে করে আঁখি কিছুটা দুঃখ প্রকাশ করল। বলল, এখনো তার কফির কথা মনে পড়ে।

আসলে কলেজজীবন শেষে আমরা দুজন ভিন্ন দুই প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হই। সেই থেকে আলাদা হয়ে যাওয়া।

এরপর নানা গল্পে ট্রেন আমাদের নির্দিষ্ট গন্তব্যে এসে থামল। চেনা প্ল্যাটফর্ম থেকে আলাদা হয়ে যাচ্ছি দুজন। 

হঠাৎ পেছন থেকে আওয়াজ এল, ঘেউ! পেছনে তাকিয়ে দেখলাম, মায়াভরা চোখে তাকিয়ে আছে একটি বাদামি রঙের কুকুর। হঠাৎ থমকে গেলাম! কফি! ভ্রম কাটল।

সামনে চললাম। স্মৃতি হিসেবে জমে রইল এই ট্রেনযাত্রা আর এক অদ্ভুত আত্মার বন্ধন!

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ইলেক্টোরাল কলেজের সুপারিশ

শুধু সংসদ সদস্য নয়, ‘রাষ্ট্রপতি নির্বাচক মণ্ডলী’ এর (ইলেক্টোরাল কলেজ) সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে চার বছরের জন্য নির্বাচিত হবেন রাষ্ট্রপতি। এ সুপারিশ করেছে সংবিধান সংস্কার কমিশন। 

কমিশন প্রস্তাব করেছে, আইনসভার উভয় কক্ষের সদস্য প্রতি একটি করে ভোট; জেলা সমন্বয় কাউন্সিল সামষ্টিকভাবে একটি করে ভোট এবং  প্রতিটি সিটি কর্পোরেশন সমন্বয় কাউন্সিল সামষ্টিকভাবে একটি করে ভোট দেবে। 

আইনসভার মেয়াদ পূরণের আগে যদি প্রধানমন্ত্রী স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেন বা আস্থা ভোটে হেরে যান কিংবা অন্য কারণে রাষ্ট্রপতিকে আইনসভা ভেঙে দেয়ার পরামর্শ দেন, সে ক্ষেত্রে যদি রাষ্ট্রপতির কাছে স্পষ্ট হয়, নিম্নকক্ষের অন্য কোনো সদস্যের সরকার গঠনে প্রয়োজনীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা নেই, রাষ্ট্রপতি আইনসভার উভয়কক্ষ ভেঙে দেবেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ