Prothomalo:
2025-11-28@14:13:00 GMT

অদ্ভুত আত্মার বন্ধন 

Published: 11th, January 2025 GMT

রাজশাহী শহরে শীত বেশ জেঁকে বসেছে। ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাস। সকাল তখন ৬টা ৫০। রওনা হলাম ট্রেনের উদ্দেশে। বিনোদপুরের নতুন লাইটগুলো যেন ঠায় দাঁড়িয়ে আছে একেকটি অতিমানবী হয়ে। কুয়াশার সাদা পর্দা ভেদ করে রিকশা এগিয়ে চলছে।

তালাইমারী ও ভদ্রা পার হয়ে রেলস্টেশনে গিয়ে রিকশা থামল। দেখা মিলল নতুন পরিবেশের। স্টেশনের বিপরীতে পাশাপাশি দুটি রেস্তোরাঁ। সেখানে সকালের নাশতা বিক্রির জন্য দুজন কর্মী হাঁকডাক ছাড়ছেন। এমনভাবে তাঁরা যাত্রীদের ডাকছেন, যেন এখনই মারামারি শুরু হবে! অবশ্য রেস্তোরাঁ দুটিতে নিত্যদিন এমন কাণ্ড চলে।

প্ল্যাটফর্মে ঢুকে আমার প্রিয় কিশোর আলো কিনলাম।

ট্রেন প্ল্যাটফর্ম ছাড়ল। পাশের সিটে সমবয়সী একটি মেয়ে বসে ছিল জানালার দিকে মুখ করে। আমি আপনমনে বসে ‘কিআ’ পড়ছি আর সকালের চায়ে চুমুক দিচ্ছি। এতক্ষণ সকালের আদুরে রোদ উপভোগ করলেও এখন আর ভালো লাগছে না। আব্দুলপুর এসে ট্রেন থামল।

মেয়েটিকে বললাম, ‘এক্সকিউজ মি। জানালায় একটু পর্দাটা দিয়ে রাখবেন? চোখে রোদ লাগছে।’

মেয়েটি আমার দিকে ঘুরে প্রায় দুই সেকেন্ড থ মেরে তাকিয়ে থাকল! ভাবখানা এমন, আমি যেন তার সঙ্গে বড় কোনো অন্যায় করেছি। আচমকা সে আমাকে ধরে বলে উঠল, বিভা! আমি থতমত খেয়ে বললাম, ‘জি। আমি তো আপনাকে চিনছি না (যেহেতু বোরকা ও মাস্ক পরা ছিল)।’ সে রেগে বলল, ‘থাক চিনতে হবে না।’ তখন খানিকটা কণ্ঠ বুঝতে পেরে বললাম, আঁখি। সে বলে উঠল, ‘তুই পাশে বসে আছিস অথচ চিনতে পারিসনি!’

দুজনের হাত–পা কাঁপা শুরু হয়ে গেছে। আজ তিন বছর পর হঠাৎ দেখা।

দুজনের চোখ টলমল। জড়িয়ে ধরলাম দুজন দুজনকে।

সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় সরকারি আকবর আলী কলেজে দীর্ঘ একটা সময় একই বেঞ্চে দুজন দিনের পর দিন ক্লাস করেছি। কত ক্লাস বাদ দিয়ে দল বেঁধে ফুচকা খেতে গিয়েছি। কলেজজীবনের সেই সোনালি দিনগুলো ভুলবার নয়। মনে পড়ে গেল সেবারের কফি অ্যাডভেঞ্চারের কথা।

আঁখি পশুপাখি ভীষণ পছন্দ করত। সেবার কলেজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে একটি বাচ্চা কুকুরকে ড্রেনে পড়ে থাকতে দেখে দুজন মিলে উদ্ধার করলাম। ড্রেন থেকে তোলার সঙ্গে সঙ্গে বুঝলাম, বাচ্চা কুকুরটি পায়ে আঘাত পেয়েছে। তাই দেরি না করে আঁখি আর আমি ছুটলাম পশু ডাক্তারের কাছে। হাসপাতালে নিতে নিতে আঁখি বলছিল, বাচ্চা কুকুরটার গায়ের রং কফির মতো, তাই এর নাম দিলাম ‘কফি’। এদিকে বেলা গড়িয়ে সন্ধ্যা ঘনিয়ে এল। ডাক্তার বললেন, ‘অপারেশন লাগবে, ওকে অচেতন করলে জ্ঞান না–ও ফিরতে পারে, সিদ্ধান্ত আপনাদের।’ আঁখি দুই হাত চেপে ধরে বলল, ‘বিভা, যেভাবেই হোক কফিকে বাঁচাতেই হবে।’

আমি অতটা পশুপাখিপ্রেমী না হলেও ওর আবেগ দেখে ডাক্তারকে বললাম, ‘ঠিক আছে। আপনি সার্জারি করুন।’ ডাক্তার দরজা বন্ধ করে দিলেন। আমরা ছোট্ট দুজন মানুষ আরেকটি ছোট্ট প্রাণের দায়িত্ব হাতে করে দাঁড়িয়ে আছি।

অতঃপর ডাক্তার দরজা খুলে বললেন, কফি সুস্থ আছে। আঁখি আমাকে ধন্যবাদ জানিয়ে কফিকে নিয়ে বাড়ি ফিরে গেল।

কিছুদিন পর কফি পুরোপুরি সুস্থ হলো। একদিন আঁখির বাসা থেকে চলে গেল।

সেসব কথা মনে করে আঁখি কিছুটা দুঃখ প্রকাশ করল। বলল, এখনো তার কফির কথা মনে পড়ে।

আসলে কলেজজীবন শেষে আমরা দুজন ভিন্ন দুই প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হই। সেই থেকে আলাদা হয়ে যাওয়া।

এরপর নানা গল্পে ট্রেন আমাদের নির্দিষ্ট গন্তব্যে এসে থামল। চেনা প্ল্যাটফর্ম থেকে আলাদা হয়ে যাচ্ছি দুজন। 

হঠাৎ পেছন থেকে আওয়াজ এল, ঘেউ! পেছনে তাকিয়ে দেখলাম, মায়াভরা চোখে তাকিয়ে আছে একটি বাদামি রঙের কুকুর। হঠাৎ থমকে গেলাম! কফি! ভ্রম কাটল।

সামনে চললাম। স্মৃতি হিসেবে জমে রইল এই ট্রেনযাত্রা আর এক অদ্ভুত আত্মার বন্ধন!

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

স্মার্টফোন থেকে আর্থিক লেনদেনের তথ্য চুরি করছে স্টারনাস ম্যালওয়্যার

স্মার্টফোনে ব্যক্তিগত তথ্যের পাশাপাশি বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পাসওয়ার্ড সংরক্ষণ করেন অনেকে। কেউ আবার নিয়মিত অর্থও লেনদেন করেন। আর তাই ব্যবহারকারীদের আর্থিক লেনদেনের তথ্য চুরি করতে হোয়াটসঅ্যাপ, টেলিগ্রাম বা সিগন্যালের মতো নিরাপদ অ্যাপের মাধ্যমে ফোনে ‘স্টারনাস’ ম্যালওয়্যার প্রবেশ করাচ্ছে একদল সাইবার অপরাধী। ক্ষতিকর এপিকে ফাইলের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া স্টারনাস ম্যালওয়্যার আর্থিক প্রতিষ্ঠানের তথ্য চুরির পাশাপাশি মেসেজিং অ্যাপে পাঠানো বার্তাও পড়তে পারে।

স্টারনাস ম্যালওয়্যারটি শনাক্ত করেছেন এমটিআই সিকিউরিটির একদল গবেষক। তাঁদের মতে, অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমে চলা স্মার্টফোনে অন্যদের পাঠানো বার্তা পর্দায় প্রদর্শিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সেটি পড়ে নেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে স্টারনাস ম্যালওয়্যারের। ফলে হোয়াটসঅ্যাপ, টেলিগ্রাম বা সিগন্যালের মতো নিরাপদ অ্যাপগুলোতে অন্যদের পাঠানো বার্তাও ম্যালওয়্যারটি পড়তে পারে। এ ছাড়া বিভিন্ন ব্যাংকের অ্যাপে প্রবেশ করার সময় স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভুয়া লগইন পেজ প্রদর্শন করে থাকে ম্যালওয়্যারটি। ভুয়া পেজটিতে লগইন তথ্য লিখলেই তা সরাসরি সাইবার অপরাধীদের কাছে চলে যায়। শুধু তা–ই নয়, অ্যান্ড্রয়েড সিস্টেম হালনাগাদের প্রলোভনে পুরো স্মার্টফোনের নিয়ন্ত্রণ নিতে পারে স্টারনাস ম্যালওয়্যার।

আরও পড়ুনস্মার্টফোনে ম্যালওয়্যার থাকার ৬ লক্ষণ১১ নভেম্বর ২০২৪

স্টারনাস ম্যালওয়্যারের বিষয়ে সাইবার নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠান থ্রেট ফ্যাব্রিক জানিয়েছে, ম্যালওয়্যারটির ভবিষ্যতে বড় পরিসরে ছড়িয়ে পড়তে পারে। ধারণা করা হচ্ছে, মেসেজিং অ্যাপে পাঠানো ক্ষতিকর অ্যাটাচমেন্ট থেকে ম্যালওয়্যারটি স্মার্টফোনে ছড়িয়ে পড়ছে। ফোনে প্রবেশের পর ম্যালওয়্যারটি গুগল ক্রোমসহ জনপ্রিয় বিভিন্ন অ্যাপের আদলে ভুয়া আইকন তৈরি করে লুকিয়ে থাকে।

গুগল জানিয়েছে, গুগল প্লে স্টোরে এখন পর্যন্ত স্টারনাস ম্যালওয়্যারযুক্ত কোনো অ্যাপ পাওয়া যায়নি। প্রতিষ্ঠানটির দাবি, প্লে প্রোটেক্ট সুবিধা ডিফল্টভাবে সক্রিয় থাকায় কোনো অ্যাপে ম্যালওয়্যার থাকলে তা দ্রুত শনাক্ত করে ব্যবহারকারীদের সতর্কবার্তা পাঠানো হয়। প্রয়োজনে অ্যাপের ইনস্টলেশনও বন্ধ করে দেওয়া হয়।

সূত্র: অ্যান্ড্রয়েড পুলিশ

আরও পড়ুনজনপ্রিয় অ্যাপের ছদ্মবেশে ছড়াচ্ছে কনফেটি ম্যালওয়্যার১৭ জুলাই ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ