রাজশাহী শহরে শীত বেশ জেঁকে বসেছে। ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাস। সকাল তখন ৬টা ৫০। রওনা হলাম ট্রেনের উদ্দেশে। বিনোদপুরের নতুন লাইটগুলো যেন ঠায় দাঁড়িয়ে আছে একেকটি অতিমানবী হয়ে। কুয়াশার সাদা পর্দা ভেদ করে রিকশা এগিয়ে চলছে।
তালাইমারী ও ভদ্রা পার হয়ে রেলস্টেশনে গিয়ে রিকশা থামল। দেখা মিলল নতুন পরিবেশের। স্টেশনের বিপরীতে পাশাপাশি দুটি রেস্তোরাঁ। সেখানে সকালের নাশতা বিক্রির জন্য দুজন কর্মী হাঁকডাক ছাড়ছেন। এমনভাবে তাঁরা যাত্রীদের ডাকছেন, যেন এখনই মারামারি শুরু হবে! অবশ্য রেস্তোরাঁ দুটিতে নিত্যদিন এমন কাণ্ড চলে।
প্ল্যাটফর্মে ঢুকে আমার প্রিয় কিশোর আলো কিনলাম।
ট্রেন প্ল্যাটফর্ম ছাড়ল। পাশের সিটে সমবয়সী একটি মেয়ে বসে ছিল জানালার দিকে মুখ করে। আমি আপনমনে বসে ‘কিআ’ পড়ছি আর সকালের চায়ে চুমুক দিচ্ছি। এতক্ষণ সকালের আদুরে রোদ উপভোগ করলেও এখন আর ভালো লাগছে না। আব্দুলপুর এসে ট্রেন থামল।
মেয়েটিকে বললাম, ‘এক্সকিউজ মি। জানালায় একটু পর্দাটা দিয়ে রাখবেন? চোখে রোদ লাগছে।’
মেয়েটি আমার দিকে ঘুরে প্রায় দুই সেকেন্ড থ মেরে তাকিয়ে থাকল! ভাবখানা এমন, আমি যেন তার সঙ্গে বড় কোনো অন্যায় করেছি। আচমকা সে আমাকে ধরে বলে উঠল, বিভা! আমি থতমত খেয়ে বললাম, ‘জি। আমি তো আপনাকে চিনছি না (যেহেতু বোরকা ও মাস্ক পরা ছিল)।’ সে রেগে বলল, ‘থাক চিনতে হবে না।’ তখন খানিকটা কণ্ঠ বুঝতে পেরে বললাম, আঁখি। সে বলে উঠল, ‘তুই পাশে বসে আছিস অথচ চিনতে পারিসনি!’
দুজনের হাত–পা কাঁপা শুরু হয়ে গেছে। আজ তিন বছর পর হঠাৎ দেখা।
দুজনের চোখ টলমল। জড়িয়ে ধরলাম দুজন দুজনকে।
সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় সরকারি আকবর আলী কলেজে দীর্ঘ একটা সময় একই বেঞ্চে দুজন দিনের পর দিন ক্লাস করেছি। কত ক্লাস বাদ দিয়ে দল বেঁধে ফুচকা খেতে গিয়েছি। কলেজজীবনের সেই সোনালি দিনগুলো ভুলবার নয়। মনে পড়ে গেল সেবারের কফি অ্যাডভেঞ্চারের কথা।
আঁখি পশুপাখি ভীষণ পছন্দ করত। সেবার কলেজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে একটি বাচ্চা কুকুরকে ড্রেনে পড়ে থাকতে দেখে দুজন মিলে উদ্ধার করলাম। ড্রেন থেকে তোলার সঙ্গে সঙ্গে বুঝলাম, বাচ্চা কুকুরটি পায়ে আঘাত পেয়েছে। তাই দেরি না করে আঁখি আর আমি ছুটলাম পশু ডাক্তারের কাছে। হাসপাতালে নিতে নিতে আঁখি বলছিল, বাচ্চা কুকুরটার গায়ের রং কফির মতো, তাই এর নাম দিলাম ‘কফি’। এদিকে বেলা গড়িয়ে সন্ধ্যা ঘনিয়ে এল। ডাক্তার বললেন, ‘অপারেশন লাগবে, ওকে অচেতন করলে জ্ঞান না–ও ফিরতে পারে, সিদ্ধান্ত আপনাদের।’ আঁখি দুই হাত চেপে ধরে বলল, ‘বিভা, যেভাবেই হোক কফিকে বাঁচাতেই হবে।’
আমি অতটা পশুপাখিপ্রেমী না হলেও ওর আবেগ দেখে ডাক্তারকে বললাম, ‘ঠিক আছে। আপনি সার্জারি করুন।’ ডাক্তার দরজা বন্ধ করে দিলেন। আমরা ছোট্ট দুজন মানুষ আরেকটি ছোট্ট প্রাণের দায়িত্ব হাতে করে দাঁড়িয়ে আছি।
অতঃপর ডাক্তার দরজা খুলে বললেন, কফি সুস্থ আছে। আঁখি আমাকে ধন্যবাদ জানিয়ে কফিকে নিয়ে বাড়ি ফিরে গেল।
কিছুদিন পর কফি পুরোপুরি সুস্থ হলো। একদিন আঁখির বাসা থেকে চলে গেল।
সেসব কথা মনে করে আঁখি কিছুটা দুঃখ প্রকাশ করল। বলল, এখনো তার কফির কথা মনে পড়ে।
আসলে কলেজজীবন শেষে আমরা দুজন ভিন্ন দুই প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হই। সেই থেকে আলাদা হয়ে যাওয়া।
এরপর নানা গল্পে ট্রেন আমাদের নির্দিষ্ট গন্তব্যে এসে থামল। চেনা প্ল্যাটফর্ম থেকে আলাদা হয়ে যাচ্ছি দুজন।
হঠাৎ পেছন থেকে আওয়াজ এল, ঘেউ! পেছনে তাকিয়ে দেখলাম, মায়াভরা চোখে তাকিয়ে আছে একটি বাদামি রঙের কুকুর। হঠাৎ থমকে গেলাম! কফি! ভ্রম কাটল।
সামনে চললাম। স্মৃতি হিসেবে জমে রইল এই ট্রেনযাত্রা আর এক অদ্ভুত আত্মার বন্ধন!
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
গোবিপ্রবি কর্মকর্তাদের নিয়ে ই-কমিউনিকেশন বিষয়ে প্রশিক্ষণ শুরু
গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (গোবিপ্রবি) কর্মকর্তাদের ‘ই-কমিউনিকেশন ও ডিজিটাল অফিস ম্যানেজমেন্ট’ বিষয়ে প্রশিক্ষণ কর্মশালা শুরু হয়েছে।
বুধবার (১৫ অক্টোবর) সকাল ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবনের ৪০৭ নম্বর কক্ষে এ প্রশিক্ষণের আয়োজন করে ইনস্টিটিউশনাল কোয়ালিটি অ্যাসুরেন্স সেল (আইকিউএসি)। দুই দিনব্যাপী এ কর্মশালা শেষ হবে বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টায়।
আরো পড়ুন:
গোবিপ্রবি প্রক্টরের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীর সনদ তুলতে বাঁধা দেওয়ার অভিযোগ
গোবিপ্রবি শিক্ষার্থীদের জন্য শেখ মুজিবকে জানা ‘বাধ্যতামূলক’
কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) সদস্য অধ্যাপক ড. মাছুমা হাবিব।
তিনি বলেন, “ই-কমিউনিকেশন ও ডিজিটাল অফিস ম্যানেজমেন্ট বিষয়ে এটি একটি সময়োপযোগী প্রশিক্ষণ। আমরা যদি কর্মকর্তাদের দক্ষ মানবসম্পদে পরিণত করতে পারি, তারাই স্মার্টলি বিশ্ববিদ্যালয়কে এগিয়ে নিতে পারবে। এতে করে অফিসের সময়ও বাঁচবে। তবে দুইদিনের প্রশিক্ষণে দক্ষ হওয়া সম্ভব নয়। যথাযথ প্রশিক্ষণ শেষে আমাদের অবশ্যই চর্চা অব্যাহত রাখতে হবে।”
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে উপাচার্য অধ্যাপক ড. হোসেন উদ্দিন শেখর বলেন, “আমাদের কাছে ডি-নথি নামে একটি নতুন বিষয় হিসেবে হাজির হয়েছে। আমরা ধীরে ধীরে উন্নতি করছি। আরো অনেক কিছুর সঙ্গে আমাদের মানিয়ে নিতে হবে।”
তিনি বলেন, “যদিও অনেক জায়গায় ডি-নথি থাকার পরো সাতদিনের কাজ ৭ মাসেও হয় না। তবে আমরা আশাবাদী, পুরোপুরি ডি-নথিতে গেলে সিস্টেমে কিছুটা হলেও পরিবর্তন আসবে। আর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়কে মডেলে পরিণত করতে প্রয়োজন দক্ষ জনবল। তারই সহায়ক এই প্রশিক্ষণ কর্মশালা।”
এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন, উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. সোহেল হাসান, ইউজিসির স্ট্যাটেজিক প্ল্যানিং অ্যান্ড কোয়ালিটি অ্যাসুরেন্স শাখার পরিচালক ড. দুর্গা রাণী সরকার। রিসোর্স পার্সন ছিলেন ইউজিসির স্ট্যাটেজিক প্ল্যানিং অ্যান্ড কোয়ালিটি অ্যাসুরেন্স শাখার উপ-পরিচালক মোহাম্মদ মনির উল্লাহ।
ঢাকা/রিশাদ/মেহেদী