২৩ বছরে গুয়ানতানামো বে: নির্যাতনের প্রতীক বন্দিশালাটির ভবিষ্যৎ কী
Published: 11th, January 2025 GMT
কিউবায় যুক্তরাষ্ট্র পরিচালিত গুয়ানতানামো বে বন্দীশালাটির বয়স আজ ১১ জানুয়ারি ২৩ বছর পূর্ণ হলো। তবে এখানকার সাবেক বন্দী মানসুর আদায়ফি মনে করেন, এ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আসলে ২৩ বছরের ‘অবিচার, আইনহীনতা, ক্ষমতার অপব্যবহার, নির্যাতন ও অনির্দিষ্টকালের জন্য আটক রাখার’ সংস্কৃতিরই নামান্তর।
গুয়ানতানামো বে কারাগারটি গিতমো নামেও পরিচিত। যুক্তরাষ্ট্রের এ সামরিক কারাগারে একসময় প্রায় ৮০০ মুসলিম পুরুষকে বন্দী রাখা হয়েছিল। এখন মাত্র ১৫ জন বন্দী আছেন। বন্দীদের সংখ্যা কমে যাওয়ায় কারাগারটি বন্ধে সোচ্চার থাকা মানুষেরা আশার আলো দেখতে পাচ্ছেন। তাঁদের আশা, এটি বন্ধ হবে, সেই সঙ্গে ইতিহাসের এক অন্ধকার অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটবে।
সাবেক বন্দী আদায়ফি এখন পরামর্শক গ্রুপ কেজ ইন্টারন্যাশনালের গুয়ানতানামো প্রকল্পে সমন্বয়ক হিসেবে কাজ করছেন। তাঁর মতে, গিতমো কারাগারটি বন্ধ হলে, তার মানে হবে বন্দীদের প্রতি ন্যায়বিচার করা।
আল জাজিরাকে আদায়ফি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রকে অবশ্যই ভুল স্বীকার করতে হবে। ভুক্তভোগী, বেঁচে যাওয়া মানুষদের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চাইতে হবে।’ যুক্তরাষ্ট্রকে ক্ষতিপূরণ দিতে ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে বলেও মনে করেন তিনি।
২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে টুইন টাওয়ারসহ কয়েকটি স্থাপনায় হামলার জবাবে তথাকথিত সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধ শুরু করেছিল ওয়াশিংটন। এ যুদ্ধে বন্দী হওয়া ব্যক্তিদের রাখতে ২০০২ সালে গুয়ানতানামো বে কারাগার চালু করা হয়। আল কায়েদা ও অন্যান্য সশস্ত্র গোষ্ঠীর সঙ্গে যোগসূত্র থাকার সন্দেহে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে অনেককে বন্দী করা হয়েছিল। গুয়ানতানামো বে কারাগারে পাঠানোর আগে অনেককে গোপন বন্দীশালায় রেখে ভয়াবহ নির্যাতন করা হতো।
গুয়ানতানামোর বন্দীদের আইনি লড়াই চালানোর মতো অধিকার খুবই কম। এমনকি সামরিক কমিশন নামে গুয়ানতানামোর বিকল্প বিচারব্যবস্থার আওতায় কেউ মুক্তি পেলেও, তাঁদের বছরের পর বছর বন্দী রাখা হতো। তাঁরা তাঁদের আটকে রাখাকে চ্যালেঞ্জ করার সুযোগ পাননি।
৯/১১ হামলাপরবর্তী সময়ে যুক্তরাষ্ট্র সন্ত্রাসীদের ধরার নামে মুসলিমদের ওপর যে ভয়াবহ নিপীড়ন চালিয়েছে, এ কারাগার তারই প্রতীক।
সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের বিদায়ী প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন গুয়ানতানামো কারাগার থেকে বন্দীদের বের করার তৎপরতা জোরদার করেছে। আগামী ২০ জানুয়ারি প্রেসিডেন্ট হিসেবে বাইডেনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে।
গত সোমবার যুক্তরাষ্ট্র সরকার ইয়েমেনের ১১ বন্দীকে মুক্তি দিয়ে তাঁদের ওমানে পুনর্বাসন করেছে। গত মাসে দুজন বন্দীকে তিউনিসিয়া ও কেনিয়ায় স্থানান্তর করা হয়েছে।
লন্ডনভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের যুক্তরাষ্ট্র শাখার ‘সিকিউরিটি উইথ হিউম্যান রাইটস’ কর্মসূচির নিরাপত্তা পরিচালক ড্যাফনি ইভিয়েটার বলেছেন, গুয়ানতানামো বে বন্ধ করে দেওয়া সম্ভব। তাঁর মতে, এখনো যে বন্দীরা রয়ে গেছেন তাঁদের অন্য দেশে কিংবা যুক্তরাষ্ট্রে স্থানান্তর করে মার্কিন বিচার ব্যবস্থার আওতায় আনা যেতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে গিতমোর বন্দীদের স্থানান্তরের ওপর ২০১৫ সালে একটি নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে কংগ্রেস। তবে ইভিয়েটারের বিশ্বাস, নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে আইনপ্রণেতাদের সঙ্গে কাজ করতে পারে হোয়াইট হাউস, বিশেষ করে হাতে গোনা যে কয়েকজন বন্দী ওই কারাগারে আছেন, তাঁদের সঙ্গে কাজ করতে পারে।
গুয়ানতানামো সম্পর্কে ইভিয়েটার বলেন, ‘এটা আইনহীনতা ও ইসলামোফোবিয়ার (ইসলামবিদ্বেষ) একটা প্রতীক।’ তিনি আরও বলেন, ‘এটা সম্পূর্ণ মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা। যুক্তরাষ্ট্র যেকোনো ধরনের অভিযোগ ও বিচার ছাড়াই এত মানুষকে অধিকারবঞ্চিত করে এত দীর্ঘ সময় যে আটকে রেখেছে, তা ভয়াবহ। বাস্তবতা হলো, ২৩ বছর পর এখনো যে এটা চলছে, এটা পাগলামো।’
২০০৮ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচার চলাকালে তৎকালীন ডেমোক্রেটিক প্রার্থী বারাক ওবামা কারাগারটি বন্ধ করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তবে ওবামা প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর তাঁর পরিকল্পনার ঘোর বিরোধিতা করেন রিপাবলিকানরা। ওবামা দুই মেয়াদে প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি তাঁর দ্বিতীয় মেয়াদের শেষ দিকে কারাগারটি বন্ধ করতে না পারা নিয়ে অনুশোচনা করেছিলেন।
মার্কিন প্রতিরক্ষা সদর দপ্তর পেন্টাগন বলেছে, গিতমো বন্দিশালায় আটক ১৫ জনের মধ্যে তিনজন ছাড়া পাওয়ার যোগ্য। আরও তিনজনকে গুয়ানতানামোর পিরিওডিক রিভিউ বোর্ডের সামনে হাজির করা হতে পারে। ওই বন্দীদের স্থানান্তর করাটা নিরাপদ কি না, তা রিভিউ বোর্ড পর্যালোচনা করবে।
গুয়ানতানামো বে কারাগারের একটি ওয়াচ টাওয়ার.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
নারায়ণগঞ্জে কোন গডফাদার তৈরি হতে দেওয়া হবে না : মামুন মাহমুদ
বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য অধ্যাপক মামুন মাহমুদ বলেছেন, নারায়ণগঞ্জকে নতুন রূপে সাজাতে হবে। সাত ও পাঁচ হত্যা কারে ঘটনা ঘটিয়ে যে নারায়ণগঞ্জকে কলঙ্কিত ও অভিশপ্ত করা হয়েছে। সে নারায়ণগঞ্জকে কলঙ্কমুক্ত করে কোন গডফাদার তৈরি হতে দেওয়া হবে না। সে সুযোগ আর হবে না।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ঘোষিত রাষ্ট্রকাটামো মেরামতের ৩১ দফার জনসম্পৃক্ততা সৃষ্টিতে বুধবার(১৫ ডিসেম্বর) বিকেল সাড়ে ৪ টায় নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ৮ নং ওয়ার্ড বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের উদ্যোগে সিদ্ধিরগঞ্জের গোদনাইলে আয়জিত আলোচনা সভা ও শীতবস্ত্র বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
মামুন মাহমুদ বলেন, ৭১ সালের স্বাধীনতার সূর্য যারা কব্জা করে রেখেছিল, সেই স্বাধীনতার সূর্য নতুন করে ৫ আগস্ট উদিত হয়েছে।
অনেক নির্ঘুম রাত কাটিয়ে জেল জুলুম মামলা হামলা সহ্য করে বহু আত্মত্যাগ ও রক্তের বিনিময়ে ১৫ বছর অপেক্ষার পর আকাশের সেই মুক্ত সুর্য আমাদেরকে আলো দিচ্ছে। খেলা হবে খেলা হবে বলে যারা ভয় দেখাত তারা না খেলেই পালিয়ে গেছে।
তিনি বলেন, সরকার নারায়ণগঞ্জ থেকে সবচেয়ে বেশি রাজস্ব পায়। অথচ সে হারে উন্নয়ন হয়নি। স্বাধীনতার পর থেকে নারায়ণগঞ্জে যত এমপি মন্ত্রী হয়েছে সবাই ব্যর্থ হয়েছেন। জনগণকে স্বস্থি দেওয়াই
একজন জনপ্রতিনিধির মূল দায়ীত্ব। অথচ জনপ্রতিনিধিদের ভয়েই জনগণ ভয় আতঙ্কে দিন কাঠাতে হয়েছে। তাই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সেই ব্যর্থতা ও ভয়কে দূর করতে হবে। এমন ব্যক্তিকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত করতে হবে, যিনি সৎ নিষ্ঠাবান ও জনগণের বন্ধু হয়ে সুখে-দু:খে পাশে থেকে আধুনিক নারায়ণগঞ্জ গড়ে তুলবে।
চাঁদাবাজি, ভূমিদস্যুতা ও মানুষের উপর জুলুম অত্যাচার করবে না। মানুষ আতঙ্কে থাকবে এমন জনপ্রতিনিধি আমরা আর দেখতে চাইনা।
নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সাবেক সদস্য মো. শামসুদ্দিন শেখের সভাপতিত্বে ও ৮ নং ওয়ার্ড বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মো. মাসুম প্রধানের সঞ্চালনায় এ সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন, নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সাবেক দপ্তর সম্পাদক নজরুল ইসলাম বাবুল, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির সাবেক যুগ্ন আহ্বায়ক রিয়াজুল ইসলাম রিয়াজ, অকিল উদ্দিন ভূঁইয়া, মাসুদুর রহমান, নারায়ণগঞ্জ জেলা মহিলা দলের সাবেক সভাপতি মোসলেহা কামাল, নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের যুগ্নআহ্বায়ক আক্তারুজ্জামান মৃধা, নারায়ণগঞ্জ মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি সিফাতুর রহমান রাজু, যুগ্নসম্পাদক মেহেদী হাসান ফারহান, নারায়নঞ্জ জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সিনিয়র সহসভাপতি মোল্লা মোহাম্মদ শাখাওয়াত হোসেন, ১০ নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি লেয়াকত হোসেন লেকু, ১ নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি গাজী মনির, ৩ নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি আফজাল হোসেন, সম্পাদক কাজী মারুফ, ৯ নং ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল দেওয়ান, ৮ নং ওয়ার্ড বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি আওলাদ হোসেন প্রধান, সহসভাপতি আফাজ উদ্দিন, রুবেল মাদবর, সহ-সধারণ সম্পাদক কামাল ভূঁইয়া, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা তাঁতী দলের আহ্বায়ক তাজুল ইসলাম, ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পূজা পরিষদের দুলাল চন্দ্র, যুবদল নেতা দুলাল প্রধান, সোহেল রহমান, কাজী নূর আলম, ফারহান আহমেদ রুবেল, মাঈনুল হাসান, ফজলুল হক কণ্ট্রাকটর ও নোমান প্রমুখ।