ঢাকার সাভারে বাসের ধাক্কায় অ্যাম্বুলেন্সে অগ্নিকাণ্ডে চারজন নিহতের ঘটনায় উভয় পরিবহনের চালকদের গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাঁদের আজ শনিবার দুপুরে আদালতে পাঠানো হয়েছে।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন টাঙ্গাইলের গোপালপুর থানার সুতী লাংগল জোরা গ্রামের আয়নাল হকের ছেলে জাহিদ হাসান (২১)। তিনি অ্যাম্বুলেন্সচালক। অপরজন দিনাজপুরের বীরগঞ্জ থানার চাওলিয়া গ্রামের মৃত গোলাম সরোয়ারের ছেলে জহিরুল ইসলাম (৪৮)। তিনি শ্যামলী পরিবহনের চালক।

সাভার হাইওয়ে থানা–পুলিশ জানায়, গত বুধবার রাতে গোপালপুর থেকে রাজধানীর একটি হাসপাতালে অসুস্থ ছেলে ফুয়াদ সিদ্দিকীকে চিকিৎসা করানোর জন্য অ্যাম্বুলেন্সে আসছিলেন ফারুক হোসেন সিদ্দিকী ও মহসিনা বেগম দম্পতি। ওই দিন রাত দুইটার দিকে তাঁদের বহনকারী অ্যাম্বুলেন্সটি সাভার উপজেলায় পুলিশ টাউন এলাকায় পৌঁছালে সড়ক বিভাজকের সঙ্গে অ্যাম্বুলেন্সটির ধাক্কা লাগে। পরে পেছন থেকে ঝুমুর ও শ্যামলী পরিবহনের দুটি বাস সেটিকে ধাক্কা দেয়। এতে আগুন ধরে যায় অ্যাম্বুলেন্সটিতে। এ ছাড়া বাস দুটিতেও আগুন ধরে যায়। এ সময় সেখান দিয়ে যাওয়া খড় বহনকারী একটি ট্রাকেও আগুন ধরে যায়। বাস দুটি থেকে যাত্রীরা দ্রুত নেমে যান। এ সময় অন্তত সাতজন আহত হন। অ্যাম্বুলেন্সে দগ্ধ হয়ে ফারুক, মহসিনা বেগম, ফুয়াদ সিদ্দিকীসহ মহসিনার বড় বোন মাহফুজা বেগম ওরফে সীমা আগুনে দগ্ধ হয়ে মারা যান।

পুলিশ জানায়, এ ঘটনায় সাভার হাইওয়ে থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো.

রঞ্জু বাদী হয়ে সাভার মডেল থানায় দুর্ঘটনাসংক্রান্ত একটি মামলা করেন। গতকাল শুক্রবার দিবাগত রাতে হাইওয়ে থানা–পুলিশ গাজীপুরের কোনাবাড়ী এলাকা থেকে অ্যাম্বুলেন্সের চালক জাহিদ ও রাজধানীর গাবতলী বাস টার্মিনাল থেকে শ্যামলী পরিবহনের বাসচালক জহিরুলকে গ্রেপ্তার করে।

সাভার হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সওগাতুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল শুক্রবার দিবাগত রাতে অভিযান চালিয়ে জাহিদ ও জহিরুলকে গ্রেপ্তার করা হয়। আজ শনিবার বেলা একটার দিকে তাঁদের আদালতে পাঠানো হয়। ঝুমুর পরিবহনের চালককে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

কমেছে মাছ মুরগি ও সবজির দাম

সরবরাহ ভালো থাকায় কমেছে মাছ মুরগি ও সবজির দাম। বিক্রেতারা বলছে গত সপ্তাহে তুলনায় এ সপ্তাহে প্রায় সবজি ও চাষের মাছের দাম কমেছে গড়ে বিশ থেকে ত্রিশ টাকা পর্যন্ত। 

শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) রাজধানীর কারওয়ান রায়েরবাজারসহ গুরুত্বপূর্ণ বাজারগুলোতে ঘুরে বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এ সপ্তাহে সবজি বাজারে সরবরাহ ভালো থাকা দাম কমেছে। গত সপ্তাহে যে বেগুন বিক্রি হয়েছে ৮০ টাকা থেকে ১০০ টাকায়, সেই বেগুন এ সপ্তাহে বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়। গত সপ্তাহে সিম বিক্রি হয়েছে ৯০ থেকে ১০০ টাকায় এ সপ্তাহে বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়। গত সপ্তাহে মূলা বিক্রি হয়েছে ৬০ টাকায় এ সপ্তাহে বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকায়।

এছাড়াও এখন বাজারে প্রতি কেজি দেশি শশা ৮০টাকা, করলা ১০০ টাকা, গাজর (দেশি) ৮০ থেকে ১০০টাকা, চিচিঙ্গা ৭০ টাকা, বরবটি ৮০ টাকা, ঢেঁড়স ৭০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৩০ টাকা, কাঁচা পেঁপে ৩০ টাকা, পটল ৬০ টাকা, কচুরমুখী ৬০ টাকা, টমেটো ১০০ টাকা, কাঁচমরিচ ১০০ টাকা, ফুলকপি ও বাঁধাকপির পিস ৩৫ থেকে ৪০ টাকা এবং প্রতিটি পিস জালি কুমড়া ও লাউ ৫০ থেকে ৬০ টাকা, নতুন আলু ১০০ টাকা এবং জলপাই ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

কমেছে মাছ ও মুরগির দাম 
বাজারে চাষের মাছের সরবরাহ বাড়ার কারণে মাছের দাম কমেছে। বিক্রেতারা বলছে গত সপ্তাহের তুলনায় এ সপ্তাহে চাষের মাছে কেজি প্রতি গড়ে ৪০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত কমেছে। এ সপ্তাহে বাজারে মাঝারি আকারের চাষের রুই মাছ বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ৩০০টাকায়। চাষের পাঙাস আকার অনুযায়ী কেজি ১৬০ থেকে ১৭০ টাকা, তেলাপিয়া ১৮০ থেকে ২০০ টাকা, মাঝারি আকারের কৈ মাছ ২০০ থেকে ২২০, দেশি শিং ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা, বড় সাইজের পাবদা ৩৫০ থেকে ৩৭০ টাকা, চিংড়ি ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা, দেশি পাঁচমেশালি ছোট মাছ ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা ও ৪০০ গ্রাম ওজনের পদ্মার ইলিশ ১২০০টাকা এবং চট্টগ্রামের ইলিশ ৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

বাজারে গত সপ্তাহের তুলনায় এ সপ্তাহে কমেছে মুরগির দাম। গত সপ্তাহে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগির বিক্রি হচ্ছে ১৭০ থেকে ১৮০ টাকায়। এ সপ্তাহে বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ১৬০ টাকায়। সোনালি জাতের মুরগির বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকায়। গরুর মাংস ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা এবং খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ১১০০ টাকায়। গত সপ্তাহে প্রতি ডজন ফার্মের মুরগির ডিম বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকায় এ সপ্তাহে বিক্রি হচ্ছে ১১০ টাকায়।

এ সপ্তাহেও মুদি পণ্য উচ্চমূল্যে স্থিতিশীল রয়েছে। এ সপ্তাহে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১১০ টাকায়। আলু বিক্রি হচ্ছে ২৫ টাকায়। রসুন (দেশি)১০০ টাকা ও আদা ১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

এদিকে সরকারি অনুমোদন ছাড়াই ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ফলে অসন্তুষ্ট প্রকাশ করছে সাধারণ ক্রেতারা। ব্যবসায়ীরা এক লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ১৮৯ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৯৮ টাকা করেছেন। অর্থাৎ, প্রতি লিটারে দাম বাড়ানো হয়েছে ৯ টাকা। একইভাবে ৫ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ৯২২ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৯৬৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

এ বিষয়ে গত বুধবার সাংবাদিকদের বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, “ব্যবসায়ীরা যে প্রক্রিয়ায় ভোজ্যতেলের দাম বাড়িয়েছেন, এর আইনগত কোনো ভিত্তি নেই। তেলের দাম বাড়ানোর বিষয়ে সরকার কিছুই জানত না। কোম্পানিগুলো সামগ্রিকভাবে একত্র হয়ে এ কাজটি (ভোজ্য তেলের দাম বাড়ানো) করেছে। এই কাজটি কোনোভাবে গ্রহণযোগ্য নয়।”

কী বলছেন ক্রেতা-বিক্রেতারা
রাজধানীর রায়েরবাজারে কেনাকাটা করছিলেন শিক্ষার্থী হান্নান শাহ। তিনি রাইজিংবিডি ডটকমকে বলেন, “সবজির দাম কমছে ঠিক আছে। কিন্তু মুদিবাজারে ও সয়াবিন তেলের দাম যে হারে বাড়ছে তাতে আমাদের জন্য অনেক কষ্টকর। ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটরা মানুষকে জিম্মি করে রেখেছে। কারণ মানুষ কিনতে বাধ্য। তাদের প্রতি সরকারের কঠোর হস্তক্ষেপ করা উচিত।”

কারওয়ান বাজারের মাছ বিক্রেতা আলম বেপারী রাইজিংবিডি ডটকমকে বলেন, “গত সপ্তাহে তুলনায় এ সপ্তাহে মাছের দাম কমেছে। সামনে আরো কমতে পারে। কারণ এখন চাষের মাছের সরবরাহ বেড়েছে।”

ঢাকা/রায়হান/এস

সম্পর্কিত নিবন্ধ