রাজশাহীর চারঘাটের বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমি সারদাতে প্রশিক্ষণরত ক্যাডেট উপপরিদর্শকদের (এসআই) সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

বুধবার (১৫ জানুয়ারি) সকাল ১০টায় অনুষ্ঠিত এই কুচকাওয়াজে ৪০তম ক্যাডেট সাব-ইন্সপেক্টর ব্যাচের ৪৮০ জনকে পাসিং আউট দেওয়া হয়।

এর আগে অনিবার্য কারণে দুই দফায় তাদের সমাপনী কুচকাওয়াজ স্থগিত করা হয়েছিল। একই ব্যাচের ৩১২ জনকে বিভিন্ন অভিযোগে প্রথমে শোকজ ও পরে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। 

সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে অভিবাদন গ্রহণ করেন পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম। এ ছাড়া তিনি কুচকাওয়াজ পরিদর্শন ও বিভিন্ন বিষয়ে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনকারীদের মধ্যে পদক বিতরণ করেন। সহকারী পুলিশ সুপার মোঃ রেজাউল করিম প্যারেড কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। 

প্রশিক্ষণার্থীদের মধ্যে বেস্ট একাডেমিক হিসেবে ক্যাডেট (এসআই) মো.

বদিউজ্জামান, বেস্ট ইন ফিল্ড এক্টিভিটিজ শিক্ষানবিশ ক্যাডেট (এসআই) মো. নজরুল ইসলাম, বেস্ট শ্যুটার ও বেস্ট সুইমার হিসেবে শিক্ষানবিশ ক্যাডেট (এসআই) নয়ন কুমার ঢালী এবং সব বিষয়ে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করায় শিক্ষানবিশ ক্যাডেট (এসআই) মো. আরিফুল ইসলামকে বেস্ট ক্যাডেট পদক প্রদান করা হয়।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে পুলিশ মহাপরিদর্শক শিক্ষানবিশ ক্যাডেটদের উদ্দেশ্যে বলেন, পরিবর্তিত সমাজের সারধী হিসেবে বদলে যাওয়া বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় জনসেবায় আপনারা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবেন। পুলিশের উপপরিদর্শক খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা পদ, কারণ ৯০ ভাগ ফৌজদারি অপরাধের তদন্ত আপনারা করে থাকেন। অপরাধ দমন, জনগণের সম্পত্তির নিরাপত্তা প্রদান ও শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখা পুলিশের প্রধান দায়িত্ব। পুলিশকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করে একটি দল নিরপেক্ষ সংস্থায় উন্নয়ন করতে কাজ করে যাচ্ছে পুলিশ সংস্কার কমিশন। পুলিশের মনোবল পুনরুদ্ধার করে আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে আমরা বদ্ধপরিকর। 

পুলিশ একাডেমি সূত্রে জানা যায়, ২০২৩ সালের ৫ নভেম্বর একাডেমিতে ৮২৩ জন ক্যাডেট এসআইয়ের এক বছর মেয়াদি মৌলিক প্রশিক্ষণ শুরু হয়। প্রশিক্ষণ শুরুর পরই নানা অভিযোগে ডিসচার্জ হন ২২ জন। গেল বছরের ৪ নভেম্বর ৮০১ জনের প্রশিক্ষণ শেষ হওয়ার কথা ছিল। দুই দফা প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজের সময় নির্ধারণ হলে অনিবার্য কারণে তা স্থগিত হয়। এর মধ্যে নাস্তা না খেয়ে হইচই, ক্লাসে অমনোযোগী এবং বিশৃঙ্খলার অভিযোগে গত ২১ অক্টোবর ২৫২ জন, ৪ নভেম্বর ৫৮ জন, ১৮ নভেম্বর ৩ জন এবং সর্বশেষ ১ জানুয়ারি ৮ জনকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।

এদিকে অব্যাহতি পাওয়া ৩২১ শিক্ষানবিশ উপপরিদর্শক (এসআই) চাকরি পুনর্বহালের দাবিতে গত দাবিতে ৫ ও ৬ জানুয়ারি সচিবালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। এরপর একই দাবিতে তারা গত সোমবার বিকাল থেকে সচিবালয়ের সামনে আমরণ অনশন বসেন। মঙ্গলবার দিবাগত রাত পৌনে ১টার দিকে সচিবালয়ের সামনে থেকে তাদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। পানি ছিটিয়ে ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন অনশনরত শিক্ষানবিশ এসআইরা।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব ল দ শ প ল শ এক ড ম এক ড ম

এছাড়াও পড়ুন:

আসামির বাসা থেকে ব্যাংক চেক আনা হলেও নেই জব্দ তালিকায়, এডির অফিস সিলগালা

গাজীপুরে টঙ্গীতে অভিযানে গিয়ে আসামির বাসা থেকে ব্যাংক চেক বই নেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের (ডিএনসি) ঢাকা বিভাগীয় গোয়েন্দা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক (এডি) মারফিয়া আফরোজ ও তাঁর দল। তবে সেই চেক বই জব্দ তালিকায় দেখানো হয়নি। এ নিয়ে মারফিয়া আফরোজ ও তাঁর আভিযানিক দলের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে ডিএনসি। এরই অংশ হিসেবে মঙ্গলবার ঢাকার গেণ্ডারিয়ায় তাঁর কার্যালয়টি সিলগালা করা হয়। এ ছাড়া পরদিন মারফিয়াসহ চারজনকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে (স্ট্যান্ড রিলিজ) দেওয়া হয়েছে। অন্য তিনজন হলেন– এসআই জান্নাতুল ফেরদাউস, এএসআই আতাউল হক ও সিপাহী সোহেল রানা। তাদের প্রধান কার্যালয়ে সংযুক্ত করা হয়েছে। 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ২২ জুন মারফিয়া আফরোজের নেতৃত্বে একটি দল টঙ্গীতে মাদকবিরোধী অভিযানে যায়। টঙ্গী সরকারি কলেজ এলাকা থেকে রমিজ উদ্দিন নামে এক ব্যক্তিকে ইয়াবাসহ আটক করেন তারা। পরে দুপুরে তাঁকে নিয়ে দক্ষিণ খাঁপাড়ায় ৭৩/৪ নম্বর বাড়ির তিনতলায় রমিজ উদ্দিনের ভাড়া বাসায় যায় আভিযানিক দলটি। যদিও এ ঘটনায় পরদিন টঙ্গী পশ্চিম থানায় করা মামলায় রমিজকে বাসা থেকে গ্রেপ্তারের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
 
এজাহারে বলা হয়, বাসায় রমিজ উদ্দিনের লুঙ্গির কোচরে থেকে পাঁচ হাজার পিস এবং ওয়ার্ডরোবের ড্রয়ার থেকে ১০ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়েছে। এই মামলার বাদী সহকারী পরিচালক মারফিয়া আফরোজ। অভিযানে তিনিসহ মোট ৯ জন অংশ নেন। অপর আটজন হলেন– বিভাগীয় পরিদর্শক শাহরিয়ার শারমিন, এসআই আবদুল আল মামুন ও জান্নাতুল ফেরদাউস, এএসআই আতাউল, সিপাহি সোহেল, আব্দুর রহমান, সাইমুম হাসান খান ও লুৎফর রহমান।
 
সূত্র জানিয়েছে, আসামি রমিজের বাসা থেকে তাঁর সই করা ব্যাংক হিসাবের চেক আনার অভিযোগ ওঠে সহকারী পরিচালক মারফিয়া আফরোজের বিরুদ্ধে। সেটি কত টাকার চেক– নিশ্চিত হওয়া যায়নি। ডিএনসির প্রধান কার্যালয়ে অভিযোগ আসার পর পরিচালক (অপারেশনস্) বশির আহমেদ, অতিরিক্ত পরিচালক (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ বদরুদ্দীন তদন্ত শুরু করেন। তারা গত মঙ্গলবার গেণ্ডারিয়া গোয়েন্দা কার্যালয়ে যান। তদন্তের স্বার্থে মারফিয়া আফরোজের অফিস কক্ষ সিলগালা করে দেন তারা। 

বুধবার তারা আবারও তদন্তের জন্য গেণ্ডারিয়া যান। মারফিয়া আফরোজকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন তারা। এর পর দুপুরে চারতলায় গিয়ে অচেতন হয়ে পড়ে যান তিনি। তাঁকে দয়াগঞ্জে আজগর আলী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আভিযানিক দলে থাকা আরও কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তদন্তের প্রয়োজনে সহকারী পরিচালকের কক্ষের সিলগালা ভেঙে পরিচালক ও অতিরিক্ত পরিচালক ভেতরে তল্লাশি করেন। পরে বিকেলে আবারও অফিস কক্ষটি সিলগালা করে দেওয়া হয়। অফিস কক্ষ থেকে বেশ কিছু আলামত জব্দ করা হয়েছে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়েছিল গোয়েন্দা বিভাগের এসআই জান্নাতুল ফেরদৌসকে। কিন্তু অভিযোগের পর তাঁকে প্রধান কার্যালয়ে সংযুক্ত করায় পরে ঢাকা দক্ষিণের পরিদর্শক লোকমান হোসেনকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়। 

মারফিয়া আফরোজ চেক বইয়ের কথা স্বীকার করে বৃহস্পতিবার রাতে সমকালকে বলেন, ‘টঙ্গীতে রমিজের বাসায় অভিযানের সময় কিছু ডকুমেন্ট পাওয়া যায়। সেগুলো এনে আমার কাছে রাখি। জব্দ তালিকায় দেখানো হয়নি। কাজের চাপে ডকুমেন্টগুলো আর দেখাও হয়নি। বৃহস্পতিবার সিপাহি সোহেল রানা ডকুমেন্ট খুলে দেখেন, তার মধ্যে একটি চেক বই। ২-৩টা চেকের পাতায় সই করা। তখন আমি সোহেলকে চেক বইটি মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই জান্নাতুল ফেরদৌসকে দিয়ে দিতে বলি। কিন্তু সে আমার ড্রয়ারে রেখে দেয়। পাঁচ দিন ছুটি নিয়ে আমি শুক্রবার সুনামগঞ্জে যাই। মঙ্গলবার জানতে পারি, আমার অফিস সিলগালা করেছেন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। পরে সোহেল রানা ফোন দিয়ে বলে, ম্যাডাম, ভুল করে ফেলেছি। চেক বইটা তো আপনার ড্রয়ারে রয়েছে। তখন আমি চিন্তিত হয়ে পড়ি।’

তিনি আরও বলেন, ‘ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা আমাকে আসতে বলেন। বুধবার দুপুর ১২টায় আমি অফিসে আসি। আমাকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হয়।’

মারফিয়া আফরোজ আরও বলেন, ‘আমি জেনে-বুঝে চেক নিয়ে আসিনি। ডকুমেন্টসের মধ্যে সিডিআর (মোবাইল কললিস্ট) পাওয়া যায়। চেক বই দিয়ে কোনো অর্থ লেনদেন করা হয়নি।’

ডিএনসির জনসংযোগ কর্মকর্তা মোস্তাক আহমেদ বলেন, ‘ব্যক্তির অপরাধের দায়ভার প্রতিষ্ঠান নেবে না। কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে দোষী ব্যক্তিকে শাস্তি দেওয়া হয়। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এডি মারফিয়া আফরোজের কার্যালয়ে পরিদর্শনে গিয়ে পরিস্থিতি সন্তোষজনক মনে না করায় সিলগালা করে দেন।’

কার্যালয় সিলগালা এবং মারফিয়া আফরোজ ও তাঁর টিমের তিনজনকে স্ট্যান্ড রিলিজের কারণ জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে বলেন, ‘এটা প্রশাসনিক কার্যক্রম।’

মাদকবিরোধী অভিযান নিয়ে ডিএনসির কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আসামি বা তার স্বজনের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ নতুন নয়। প্রায়ই এমন অভিযোগ ওঠে কোনো কোনো কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। গত ১৮ জুন টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর পৌরসভার সাবেক সংরক্ষিত কাউন্সিলর ছালেহা বেগমের বাড়িতে অভিযানে গিয়ে বাসা থেকে সাড়ে আট লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ ওঠে ডিএনসির টাঙ্গাইল জেলা কর্যালয়ের কর্মকর্তা-সিপাহিদের বিরুদ্ধে। এ অভিযোগে তিন কর্মকর্তাকে সোমবার সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। একই অভিযোগে বুধবার এএসআই শামীম আল আজাদকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

ঢাকা বিভাগীয় গোয়েন্দা কার্যালয়ের উপপরিচালক মোহাম্মদ খোরশিদ আলমকে কয়েকবার ফোন করা হয় তাঁর অধীন এডির কার্যালয় সিলগালা ও টঙ্গীর অভিযান সম্পর্কে মন্তব্য নেওয়ার জন্য। তবে তিনি ফোন ধরেননি। পরে হোয়াটসঅ্যাপে এ ব্যাপারে বার্তা পাঠানো হলেও কোনো জবাব দেননি তিনি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সিদ্ধিরগঞ্জে ট্রাকের ধাক্কায় মোটরসাইকেল আরোহী নিহত, চালক ও হেলপার আটক
  • সিদ্ধিরগঞ্জে ট্রাকের ধাক্কায় মোটরসাইকেল আরোহী নিহত, চালক ও হেলপার
  • আসামির বাসা থেকে আনা চেক বই তোলা হয়নি জব্দ তালিকায়
  • আসামির বাসা থেকে ব্যাংক চেক আনা হলেও নেই জব্দ তালিকায়, এডির অফিস সিলগালা
  • আসামির বাসা থেকে ব্যাংক চেক আনা হলেও নেই জব্দ তালিকায়, এডির অফিস ‘সিলগালা’
  • বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার বাসা থেকে ব্যাংক কর্মীর অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার
  • ‘মাদক বিক্রেতা’র বাসা থেকে আনা ব্যাংক চেক নেই জব্দ তালিকায়, সহকারী পরিচালকের অফিস ‘সিলগালা’
  • বনানীতে ট্রেনে কাটা পড়ে নারীর মৃত্যু