অনেকেই পেটিএম বা গুগল পে-এর মাধ্যমে পরিষেবার দাম দিয়ে থাকেন। দ্রুত পেমেন্টের আশায় ক্রেতা-বিক্রেতা ই-পেমেন্টের ওপর নির্ভর করেন। দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা এমন সিস্টেমে এবার প্রতারণার উদ্দেশ্যে নিজেদের অভিনব কৌশল বুনেছে সাইবার অপরাধী চক্র। লিখেছেন সাব্বিন হাসান
সারাবিশ্বে কিউআর কোড নিয়ে প্রতারণা চক্র সরব। সময় এসেছে নতুন ফন্দির বিষয়ে সবার সজাগ হওয়ার। বিশেষ বিপদে আছেন ব্যবসায়ীরা। কিছুদিন আগে ভারতের দিল্লিতে ঘটে যাওয়া ঘটনা সাইবার বিশেষজ্ঞদের নতুন করে ভাবিয়ে তুলেছে। বিপুল পরিমাণ টাকা আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ছেন– এমন অভিযোগ বাড়ছে তো বাড়ছেই, যা এখন শঙ্কায় রূপ ধারণ করেছে।
যা কিছু দৃশ্যমান
সারাবিশ্বে কমবেশি সব দেশেই এমন প্রতারণার ঘটনা হরহামেশা ঘটছে। চক্রটি প্রথমে লক্ষ্য নির্ধারণ করে। সাইবার জগতে দক্ষদের চাকরিতে নিয়োজিত করে। তার পর চলে বিশেষ প্রশিক্ষণ। নিয়োগপ্রাপ্তদের বাইক কিনে দেওয়া হয়। ওই যুবকদের কাজ ছিল পেট্রোল পাম্প ঘুরে ঘুরে কিউআর কোডের মাধ্যমে যারা টাকা পেমেন্ট করছে, তাদের শনাক্ত করা। রাতের অন্ধকারে সুযোগ বুঝে সেসব কিউআর কোডের ওপর নিজেরাই কাগজ প্রতিস্থাপন করে। পরের দৃশ্যে একাধিক যুবক ভিড়ের সময়ে বাইক নিয়ে ওই সব পাম্পে গিয়ে হাজির। ফুলট্যাঙ্ক তেল নিয়ে টাকা পেমেন্ট করে ওই স্ক্রিনশট পাম্পের কর্মীদের দেখাচ্ছে।
স্ক্যানিং করার আগে.
চারপাশে যেখানে-সেখানে কিউআর দেখে অনেকেই খেয়াল না করে আকর্ষণীয় সুবিধা নিতে হুটহাট কোড স্ক্যান করে ফেলছি। বাড়ি বা জমির বিজ্ঞাপন হোক, নিছক রাস্তার ধারের চায়ের দোকান, নামি ব্র্যান্ডের জামাকাপড় হোক বা মোবাইল বা নতুন কিছু জানতে– সবকিছুই সাধারণ অভ্যাসে জায়গা করে নিয়েছে কিউআর পদ্ধতি। সারাবিশ্বে করোনার সময় থেকেই জীবনের প্রতি পদে ‘কিউআর’ কোডের বিস্তৃতি ও গ্রহণযোগ্যতা দারুণভাবে জনপ্রিয় হয়েছে।
যত্রতত্র কিউআর কোড স্ক্যান করতে গিয়ে অনেকে না বুঝেই পা ফেলছি কঠিন প্রতারণার ফাঁদে। কিউআর কোড কেমন, সেটি যাচাই-বাছাই না করেই স্ক্যান করে ফেলছি। হুট করে হয়তো নিজের অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা বেহাতের ঘটনাও সামনে আসছে। চারপাশে এমন ঘটনার সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে।
কী করা অনুচিত
বিশেষ কোনো প্রতিষ্ঠানের নাম করে যদি কোনো বিজ্ঞাপন দিয়ে আরও বিস্তারিত জানার জন্য কিউআর কোড স্ক্যান করার কথা বলা হয়, তাহলে ভালো করে তা যাচাই-বাছাই করে নিন, বিজ্ঞাপনটি আদৌ কতটা সঠিক। পুরোপুরি নিশ্চিত হতে সংশ্লিষ্ট সংস্থার ওয়েবসাইট বা গ্রাহক সেবার সুনির্দিষ্ট নম্বরে গিয়ে খোঁজ নিন বিজ্ঞাপনী ঘোষণা আসল কিনা। কিউআর কোড স্ক্যান করার সময় অবশ্যই দেখে নিন যেসব ইউআরএলে প্রবেশ করছেন, সেটি https:// দিয়ে শুরু হয়েছে কিনা। না হলে লিঙ্কটি সুরক্ষিত না হওয়ার আশঙ্কা বেশি।
যা বিবেচনা করবেন
অপরিচিত কারও সঙ্গে, যাকে সামনে দেখতে পাচ্ছেন না, এমন কারও সঙ্গে কিউআর কোড স্ক্যান করে টাকা বিনিময়ের প্রয়োজন হলে অন্যদিকে থাকা ব্যক্তিকে কিউআর কোড স্ক্যানের বদলে অনলাইন ব্যাংকিং বা নির্দিষ্ট ফোন নম্বরে বিকল্প মাধ্যমে অর্থ বিনিময়ের প্রস্তাব দেবেন। কিন্তু অন্যদিকে থাকা অপরিচিত ব্যক্তিটি যদি কিউআর
কোড স্ক্যান করার ব্যাপারে নাছোড়বান্দা হন, তাহলে সতর্ক হওয়া উচিত। ঘটনাচক্রে অনেক সময় নিজে কারও কাছ থেকে পাওনা টাকা চাইলে
তিনি কিউআর কোড পাঠিয়ে স্ক্যান করতে বলতে পারেন। এমন ক্ষেত্রেও সরাসরি অনলাইন ব্যাংকিং বা নিজের ফোন নম্বরে ডিজিটাল মাধ্যমে লেনদেন করা শ্রেয়।
কিউআর কোডে আগ্রহী কেন?
অনেক সময় দৃশ্যমান হয়, পাওনা টাকা হাতে পাওয়ার জন্য হয়তো কোনো কিউআর কোড স্ক্যান করলেন, তাতে টাকা তো পেলেনই না; বরং নিজের অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা উধাও হয়ে যাওয়ার মতো ঘটনা ঘটল। এমন ক্ষেত্রে যদি যৎসামান্য টাকাও খোয়া যায়, তাহলে দ্রুত নিজের ব্যাংকে বিষয়টি অবহিত করবেন। আবার অনেক সময় সরাসরি টাকা না হাতিয়ে কিউআর কোডের আড়ালে নিজের স্মার্টফোন বা গ্যাজেটে ম্যালওয়্যার প্রবেশের প্রচেষ্টা চলে। তাই যে কোনো জায়গায় যে কোনো কিউআর কোড স্ক্যান করা থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দিয়েছেন ডিজিটাল নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা। নিজের ডিভাইসের স্ক্যানার বা অপারেটিং সিস্টেম (ওএস) নিয়মিত আপডেট রাখবেন। কারণ, আপডেট না করলে সিকিউরিটি ফিচার সমসাময়িক বিষয় থেকে পিছিয়ে যায়। তখন সাইবার চক্রের আক্রমণের পথ সহজ হয়ে যায়।
নিজের ব্যবহৃত ডিভাইস বা গ্যাজেটে ব্যাংকিং বা অনলাইন ট্রানজেকশন অ্যাপ যুক্ত থাকলে সেগুলো টু-ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন পরিষেবার আওতায় নিয়ে আসবেন। ফলে কিউআর কোড স্ক্যান করতে গিয়ে বিশেষ কারণে ডিভাইস হ্যাক হলেও দ্রুত অ্যাকাউন্টের নিয়ন্ত্রণ নেওয়া সম্ভব হবে না।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
জুরাসিক ওয়ার্ল্ডের পুনর্জন্ম
১৯৯৩ সাল। সারা দুনিয়ার সিনেমাপ্রেমীরা স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে ছিল পর্দায়– লম্বা ঘাড়ওয়ালা ব্র্যাকিওসরাস যখন মাথা তোলে আকাশের দিকে, তখন মনে হয়েছিল যেন আদি পৃথিবীর এক টুকরো ইতিহাস ফিরে এসেছে। সেটিই ছিল ‘জুরাসিক পার্ক’।
স্টিভেন স্পিলবার্গের হাত ধরে ‘জুরাসিক পার্ক’ প্রথমবারের মতো পর্দায় যখন এলো তখন থেকেই এই ফ্র্যাঞ্চাইজির সিনেমাগুলো যেন পরিণত হয়েছে এক নিজস্ব ঘরানায়। কিছু বৈশিষ্ট্য যেন অমোঘভাবে জুড়ে গেছে প্রতিটি কিস্তিতে: একদল বিজ্ঞানী, কিছু অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমী চরিত্র, গোপনে বসে থাকা কোনো বিলিয়ন ডলারের করপোরেট ষড়যন্ত্র এবং সর্বোপরি ডাইনোসর। তবে যতবারই পর্দায় তারা এসেছে, ততবারই কিছু সময়ের জন্য হলেও দর্শকদের মনে জেগে উঠেছে এক নিঃশব্দ বিস্ময়, এক অপার মুগ্ধতা।
গত তিন দশকেরও বেশি সময় ডাইনোসরদের নিয়ে এসেছে আরও ছয়টি সিনেমা। সব সিনেমাই একদম একরকম নয়। কিছু সিনেমা ভয়ের চেয়ে বিস্ময়ের ওপর বেশি জোর দিয়েছে, কিছু আবার নিখাদ থ্রিলের দিকে ঝুঁকেছে। ২০২২ সালের ‘ডমিনিয়ন’ সিনেমায় যেমন একটি দৃশ্যে দেখা যায় বরফে ঢাকা পরিবেশে দুটি ব্র্যাকিওসরাস ধীরে হেঁটে যাচ্ছে, আর মানুষ দাঁড়িয়ে আছে নির্বাক হয়ে। এই দৃশ্যটি ছিল বিরল, কারণ এতে ভয় নয়; বরং ডাইনোসরের প্রতি শ্রদ্ধা আর অপার ভালোবাসাই ছিল মুখ্য।
এসব বলার কারণ একটাই– ‘জুরাসিক ওয়ার্ল্ড রিবার্থ’ সেই বিস্ময় ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেছে। এই সিনেমার গল্পে দেখা যাবে, ডাইনোসরের উপস্থিতি এত সাধারণ হয়ে গেছে যে মানুষ বিরক্ত। রাস্তা বন্ধ করে দেয় তারা, কাজকর্মে ব্যাঘাত ঘটায়। ‘জুরাসিক ওয়ার্ল্ড রিবার্থ’ নাম থেকেই বোঝা যাচ্ছে, স্টুডিও ফ্র্যাঞ্চাইজিটিকে নতুনভাবে শুরু করতে চাইছে। ‘ডমিনিয়ন’-এর পরে গল্প শুরু হয়েছে, আগের মানব চরিত্রদের কেউ নেই।
এবারের গল্পে দেখা যাবে, মানুষ এখন ডাইনোসর ও তাদের থিম পার্ক নিয়ে আগ্রহ হারিয়েছে। পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে এখন পৃথিবী ডাইনোসরদের থাকার জন্য অনুপযুক্ত। ফলে বেশির ভাগ ডাইনোসরকে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে নির্জন এক দ্বীপে। ডাইনোসরদের সেই দ্বীপে রয়েছে অনেক মিউট্যান্ট। গল্পে দেখা যায় রুপার্ট ফ্রেন্ড অভিনীত ফার্মাসিউটিক্যাল ব্যবসায়ী মার্টিন ক্রেবসকে। যে মানুষের জীবনের জন্য বিপ্লব ঘটাতে পারে এমন এক ওষুধ আবিষ্কারের জন্য ডাইনোসরের ডিএনএ চায়। তবে তা হতে হবে অনেক বড়, ভয়ংকর, জীবিত ডাইনোসরের; যা এখন সেই দ্বীপের মধ্যে রয়েছে। এই কাজের জন্য সে ভাড়া করে জোরা বেনেটকে (স্কারলেট জোহানসন)। বিশাল অঙ্কের পারিশ্রমিকে রাজি হয় সে। জোরা সাহায্যের জন্য ডাকে পুরোনো বন্ধু ও বোট-মালিক ডানকান কিনকেইড (মাহারশালা আলি)। সেই বোটে করেই তারা পৌঁছে যায় সেই দ্বীপে, যেখানে তিনটি বিরল ডাইনো প্রজাতি শান্তিতে বসবাস করছে। তাদের সঙ্গে আরও যোগ দেন ডাইনোসরপ্রেমী প্যালিওন্টোলজিস্ট ড. হেনরি লুমিস (জোনাথন বেইলি)। এই অভিযানের গল্পের সঙ্গে যুক্ত হয় একটি পরিবার। তারা সমুদ্রে ঘুরছিল, হঠাৎ এক বিশাল সামুদ্রিক ডাইনোসরের আক্রমণে নৌকা উল্টে যায়।
এবারের সিনেমাটি পরিচালনা করেছেন গ্যারেথ এডওয়ার্ডস, যিনি ২০১৪ সালের ‘গডজিলা’ এবং ‘রগ ওয়ান: অ্যা স্টার ওয়ার্স স্টোরি’র জন্য খ্যাত। তাঁর ভাষায়, ‘এই সিনেমা শুধু ভয় আর ধ্বংসের নয়–এখানে সৌন্দর্যও আছে, অনেক গভীরতায়।’
তিনি বিশেষভাবে উল্লেখ করেন এক দৃশ্য– যেখানে ব্র্যাকিওসরাসের একটি পরিবার সূর্যের আলোয় ভেজা ঘাসের মধ্যে হেঁটে বেড়াচ্ছে। তাদের লেজ যেন বাতাসে দুলে ওঠা এক রাজকীয় রিবন। এমন দৃশ্যগুলো যেন আবার মনে করিয়ে দেয়, ডাইনোসরেরা কেবল ভয় নয়, তারা প্রকৃতির এক অনন্য অলৌকিকতা। এ ছাড়াও আছে কিছু বিপদের মুখে ফেলার দৃশ্য, যেটি কিছু দর্শকের জন্য অস্বস্তিকর হতে পারে। তবে এটিই তো জুরাসিক পার্কের ট্র্যাডিশন।
পরিশেষে বলা যায়, ‘জুরাসিক ওয়ার্ল্ড রিবার্থ’ শুধু আরেকটি অ্যাকশনপ্যাকড সিনেমা নয়। এটি এক রূপক গল্প; যেখানে মানুষের লোভ, বিজ্ঞানের সীমাহীন হস্তক্ষেপ এবং প্রকৃতির অবহেলিত শ্রদ্ধার একটি দুঃস্বপ্ন জাগানিয়া প্রতিচ্ছবি। এটি মনে করিয়ে দেয় মানুষ সবসময় কেন্দ্র নয়, প্রকৃতি তার চেয়েও বড়। আর ডাইনোসররা শুধু ভয় দেখানোর জন্য নয়, তারা এক বিস্ময়, এক শিক্ষা। v