স্বামী–সন্তান রেখে শুধু প্রেমের টানেই কি দেশ ছেড়েছিলেন সোনালী দাশগুপ্ত
Published: 12th, February 2025 GMT
নয়াবাস্তববাদী সিনেমার কল্যাণে দুনিয়াজুড়ে তখন পরিচিত এক নাম রবার্তো রসেলিনি। একই সঙ্গে তিনি হলিউড অভিনেত্রী ইনগ্রিড বার্গম্যানের স্বামী, যাঁর অভিনয় আর রূপে মুগ্ধ সারা বিশ্ব। সেই রবার্তোই ভারতে একটা ছবির কাজ করতে এসে এক বাঙালি গৃহবধূর প্রেমে পড়লেন! ২৭ বছর বয়সী এই তরুণীর নাম সোনালী দাশগুপ্ত, স্বামী চিত্রপরিচালক হরিসাধন দাশগুপ্ত। তাঁদের দুই শিশুসন্তান—রাজা ও অর্জুন। সেই সময়ে কলকাতা থেকে রোম, হলিউড থেকে বলিউড—সর্বত্র দারুণ আলোড়ন তুলেছিল এই সাহসী প্রেম। ১৯৫৭ সালে বিশ্ব মিডিয়ায় প্রায় নিয়মিত ছাপা হতো এই ‘নিষিদ্ধ’ প্রেমাখ্যান। যে ঘটনায় জড়িয়ে পড়েছিলেন স্বাধীন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু ও তাঁর কন্যা ইন্দিরা গান্ধী পর্যন্ত।
রবার্তোর ভারতযোগজওহরলাল নেহরুর নেতৃত্বে ভারত তখন ব্রিটিশ বিদায়ের এক দশক পালনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। তারই অংশ হিসেবে ভারত নিয়ে ছবি বানাতে ১৯৫৬ সালের শেষ দিকে ভারতে আসেন রবার্তো রসেলিনি। রবার্তোর নয়াবাস্তববাদী (নিওরিয়েলিজম) সিনেমা তখন সারা বিশ্বে হইচই ফেলে দিয়েছে। বিশেষ করে যুদ্ধ নিয়ে তাঁর ট্রিলজি ‘রোম, ওপেন সিটি,’ ‘পায়সান’ ও ‘জার্মানি, ইয়ার জিরো’র কল্যাণে তাঁকে বিশ্বের শ্রেষ্ঠ পরিচালকদের একজন বলা হচ্ছে। আর রসেলিনি ভারতে আসার কয়েক বছর আগেই ১৯৫২ সালে ভারতে প্রথম আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবও হয়ে গেছে। এই প্রথম ভারতীয় সিনেমাপ্রেমীরা এক নতুন ধারার সিনেমা দেখলেন। যেখানে রবার্তো রসেলিনির ট্রিলজি ছাড়াও ডি সিকার ‘বাইসাইকেল থিভস’–এর মতো সিনেমা দেখার সুযোগ পান ভারতীয় সিনেমাপ্রেমীরা।
ভারতের বেনারসে জন্ম নেওয়া বাঙালি কন্যা সোনালী রসেলিনির জীবনটা ছিল রোমাঞ্চে ভরা.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা কমাতে গুরুত্ব আরোপ
কাশ্মীরের পেহেলগামে হামলার পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা কার্যত সামরিক সংঘাতে রূপ নেওয়ার আশঙ্কা ক্রমেই বাড়ছে। এ পরস্থিতিতে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ ও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করকে ফোন করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও। বুধবার দুজনকে করা এ ফোন কলে তিনি ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সৃষ্টি হওয়া উত্তেজনা কমানোর ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। এছাড়া দুই
ফোনালাপের বিষয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর থেকে দেওয়া পৃথক বিবৃতিতে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে ফোনে কথা বলার সময় মার্কো রুবিও বলেন, তিনি পেহেলগাম হামলায় নিহতদের জন্য দুঃখ প্রকাশ করছেন এবং যুক্তরাষ্ট্র সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের সঙ্গে কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
তবে তিনি আরও বলেন, ভারত যেন পাকিস্তানকে অভিযুক্ত করার আগে সতর্ক থাকে, কারণ এখনও পর্যন্ত ভারত এই হামলায় পাকিস্তানের সম্পৃক্ততার কোনও প্রমাণ প্রকাশ করেনি।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস এক বিবৃতিতে বলেছেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী পেহেলগামে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলায় প্রাণহানির জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন এবং সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের সঙ্গে সহযোগিতার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন। তিনি দক্ষিণ এশিয়ায় উত্তেজনা কমাতে এবং শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় রাখতে ভারতকে পাকিস্তানের সঙ্গে কাজ করার জন্য বলেছেন।
পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস বলেন, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফের সঙ্গে ফোনালাপে রুবিও- ২২ এপ্রিল ভারত-শাসিত কাশ্মীরের পর্যটন কেন্দ্র পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার নিন্দা করার প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছেন।
তিনি এক বিবৃতিতে বলেছেন, রুবিও এই অযৌক্তিক হামলার তদন্তে পাকিস্তানি কর্মকর্তাদের সহযোগিতার আহ্বান জানিয়েছেন।
জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ বলেন, ভারতের উস্কানিমূলক আচরণ শুধু উত্তেজনাই বাড়াচ্ছে এবং পাকিস্তানের সন্ত্রাসবিরোধী প্রচেষ্টাকে বিভ্রান্ত করছে। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানান, যেন তারা ভারতের ওপর দায়িত্বশীল আচরণ ও ভাষার ব্যবহার নিশ্চিত করতে চাপ প্রয়োগ করে।
এর আগে গত ২২ এপ্রিল মঙ্গলবার বিকেলে কাশ্মীরের পেহেলগাম জেলার বৈসরণ তৃণভূমিতে বন্দুকধারীদের হামলায় অন্তত ২৬ জন নিহত হন, যাদের প্রায় সবাই পর্যটক। হামলার দায় স্বীকার করে রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট নামে একটি সংগঠন। এটিকে পাকিস্তানভিত্তিক লস্কর-ই-তৈয়্যেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বলে মনে করা হয়।
এ ঘটনায় আরও বেশ কয়েকজনকে আহত হন। যাদের গুলি করে হত্যা করা হয়েছে, তারা সবাই পুরুষ। বস্তুত, ২২ এপ্রিলের হামলা ছিল ২০১৯ সালের পুলোয়ামা হামলার পর জম্মু ও কাশ্মীরে সবচেয়ে বড় প্রাণঘাতী হামলা। বর্তমানে এ ঘটনায় দুই দেশের মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে।
পেহেলগামের ভয়াবহ ওই হামলার জেরে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক তলানিতে ঠেকেছে। দুই দেশের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তি স্থগিত করেছে ভারত। জবাবে সিমলা চুক্তি স্থগিত ও ভারতীয় বিমানের জন্য নিজেদের আকাশসীমা বন্ধের ঘোষণা দেয় পাকিস্তান।
তাছাড়া, হামলার পরে দুই দেশই ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে প্রতিবেশী দেশের নাগরিকদের ভিসা বাতিল করে ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দেয়। সূত্র-এএফপি