বোতলজাত সয়াবিনের দাম একলাফে লিটারে ১৮ টাকা বাড়াতে চান ব্যবসায়ীরা; আর খোলা সয়াবিনের দাম বাড়াতে চান লিটারে ১৩ টাকা। ভোজ্যতেলের কর–সুবিধার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পরদিন আগামী ১ এপ্রিল থেকে এই দর কার্যকরের ঘোষণা দিয়েছেন ভোজ্যতেলের ব্যবসায়ীরা।

ভোজ্যতেল পরিশোধনের কারখানাগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন গতকাল বৃহস্পতিবার তাদের এই সিদ্ধান্তের কথা সরকারকে জানিয়েছে। দাম বাড়ানোর এই সিদ্ধান্তের কথা এদিন সংগঠনটি বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনকে লিখিতভাবে জানিয়েছে।

রোজার আগে দাম সহনীয় রাখতে সরকার ভোজ্যতেলের শুল্ক–করে যে রেয়াতি সুবিধা দিয়েছিল, তার মেয়াদ ৩১ মার্চ শেষ হচ্ছে। সেই হিসাবে শুল্ক–কর অব্যাহতির সুবিধা আর চার দিন পাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। সরকার এখনো এই অব্যাহতির সুবিধা বাড়াবে কি না, সেই ঘোষণা দেয়নি। তার আগেই দাম বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন ভোজ্যতেল পরিশোধন কারখানার মালিকেরা। ভোজ্যতেল ব্যবসায়ীরা বলছেন, এ সময়ে ভ্যাট অব্যাহতির মেয়াদ বাড়ানো হলে দাম আগের মতোই থাকবে। আর যদি শুল্ক–করের রেয়াতি এই সুবিধা উঠে যায়, তাতে আমদানির খরচ বাড়বে, তখন দাম বাড়ানো ছাড়া আর উপায় থাকবে না।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, শুল্ক–কর অব্যাহতির মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় মূল্য সমন্বয়ের কথা বলা হয়েছে সংগঠনটির চিঠিতে। চিঠিতে বলা হয়, আগামী ১ এপ্রিল থেকে ১৫ শতাংশ ভ্যাট দিয়ে সয়াবিন ও পাম তেল বাজারজাত করতে হবে। এ অবস্থায় মূল্য সমন্বয় করে পাম ও সয়াবিনের দাম উল্লেখ করা হয় চিঠিতে।

বোতলজাত সয়াবিনের দাম সর্বশেষ গত ৯ ডিসেম্বর বাড়ানো হয়েছিল। তখন লিটারপ্রতি দাম নির্ধারণ করা হয় ১৭৫ টাকা। আগামী ১ এপ্রিল থেকে প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিনের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১৯৩ টাকা। সেই হিসাবে লিটারে দাম বাড়ছে ১৮ টাকা। পাঁচ লিটারের বোতলজাত সয়াবিনের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৯৩৫ টাকা।

একইভাবে খোলা সয়াবিন ও খোলা পাম তেলের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে লিটারপ্রতি ১৭০ টাকা। এখন সরকার–নির্ধারিত দাম লিটারপ্রতি ১৫৭ টাকা। এ হিসাবে খোলা সয়াবিন ও পাম তেলের দাম বাড়ছে লিটারপ্রতি ১৩ টাকা।

রোজার আগে দাম সহনীয় রাখতে গত বছরের নভেম্বর–ডিসেম্বরে কয়েক দফায় ভোজ্যতেল আমদানি, উৎপাদন ও ব্যবসায়ী পর্যায়ে মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট ছাড় দেয় সরকার। এসব সুবিধার মেয়াদ বাড়িয়ে ৩১ মার্চ পর্যন্ত উন্নীত করা হয়েছিল। অবশ্য ভোজ্যতেলের দাম সহনীয় রাখতে আমদানি পর্যায়ের অব্যাহত শুল্ক-কর রেয়াত ৩০ জুন পর্যন্ত বাড়ানোর সুপারিশ করেছিল বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যানের কাছে এ–সংক্রান্ত চিঠি দেওয়া হয় সংস্থাটির পক্ষ থেকে। তবে এখন পর্যন্ত শুল্ক–করের সুবিধা অব্যাহত রাখার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি এনবিআর। এ অবস্থায় ঈদের ছুটির আগে দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্তের কথা সরকারকে জানিয়ে দিয়েছে ভোজ্যতেল ব্যবসায়ীদের সংগঠন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে টি কে গ্রুপের পরিচালক শফিউল আতহার প্রথম আলোকে বলেন, ১ এপ্রিল থেকে সয়াবিন ও পাম তেল বাজারজাত করার পর থেকে আগের মতোই মূল্য সংযোজন কর দিতে হবে। মূল্য সংযোজন কর বাবদ এই খরচ সমন্বয় করে ভোজ্যেতেলের নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ভ জ যত ল র ব যবস য় র শ ল ক কর সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ানোর তাগিদ

টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ আশানুরূপ নয় বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি সমিতি (বিএসআরইএ)। অন্তর্বর্তী সরকার গত বছর ৩৭টি সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প বাতিল করেছে। বাতিল করা এসব প্রকল্পে ৩০ কোটি মার্কিন ডলারের বিনিয়োগ ছিল। তবে প্রকল্পগুলো বাতিল হওয়ায় এই খাতে বিনিয়োগ নিয়ে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থার ঘাটতি দেখা দিয়েছে।

ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) আজ শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথাগুলো জানান বিএসআরইএর নেতারা। সংবাদ সম্মেলনে মূল প্রবন্ধে এই খাতের উন্নয়নে ১১টি প্রস্তাব তুলে ধরেন সংগঠনটির সভাপতি মোস্তফা আল মাহমুদ।

এ সময় মোস্তফা আল মাহমুদ বলেন, ‘সরকার ৫৫টি নতুন সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য দরপত্র আহ্বান করেছে। তবে এসব প্রকল্পে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ আশানুরূপ নয়। কিছু প্রকল্পে মাত্র একজন দরদাতা অংশ নিয়েছেন। আবার কিছু প্রকল্পে কেউ আগ্রহ দেখায়নি। প্রাকৃতিক গ্যাস উত্তোলন প্রতিবছর গড়ে ২০০ এমএমসিএফ (মিলিয়ন মেট্রিক কিউবিক ফিট) কমে যাচ্ছে। ফলে আমরা জ্বালানিতে আমদানিনির্ভর হয়ে পড়ছি। এই অবস্থায় নবায়নযোগ্য জ্বালানি সম্প্রসারণে আরও বেশি মনোযোগ দেওয়া দরকার।’

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, সোলার প্যানেল ও সংশ্লিষ্ট যন্ত্রাংশ আমদানির ক্ষেত্রে কাস্টমসের পক্ষ থেকে ওজনভিত্তিক মূল্যায়নের মাধ্যমে শুল্কারোপ করা হয়। এ ছাড়া মূল্যভেদে সাড়ে ৭ শতাংশ ভ্যাট দিতে হয়। ফলে একই পণ্যে বারবার কর বসছে। এতে প্রকৃত মূল্যের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি শুল্ক-কর দিতে হচ্ছে আমদানিকারকদের।

বিএসআরইএর সভাপতি বলেন, উচ্চ আদালত থেকে ইতিমধ্যে দেশের সব ভবনের ছাদে সৌরবিদ্যুৎ স্থাপনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে আদালতের এই আদেশ বাস্তবায়নে সুনির্দিষ্ট কোনো পথনকশা বা রোডম্যাপ নেই। এই অবস্থায় আদালতের আদেশ বাস্তবায়নে বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ে একটি আলাদা সেল গঠন করা দরকার।

সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান বলেন, বর্তমানে সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনের খরচ ইউনিটপ্রতি ৩ থেকে ৫ টাকা। বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ তার চেয়ে অনেক বেশি। তাই নবায়নযোগ্য জ্বালানিকে এগিয়ে নিতে একটি স্বতন্ত্র ‘রিনিউয়েবল এনার্জি ডিভিশন’ গঠন করা প্রয়োজন। এতে এই খাতে জবাবদিহি বাড়বে ও প্রযুক্তিগত অগ্রগতিও দ্রুত হবে।

সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন সমিতির জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি জাহিদ আলো, অর্থবিষয়ক পরিচালক নিতাই পদ সাহা। উপস্থিত ছিলেন সংগঠনটির যুগ্ম সম্পাদক মাহফুজ উর রহমানসহ শীর্ষস্থানীয় নেতারা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সময় দিতে না পারলে পদ আটকে রেখে লাভ কী, প্রশ্ন অমিত হাসানের
  • নড়াইলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক নেতাকে বহিষ্কার, দুজনকে পুনর্বহাল
  • হামাস গাজার ৮০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে: শীর্ষ কর্মকর্তা
  • নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ানোর তাগিদ