নতুন বছরের প্রথম দিন ১ জানুয়ারি। ছেলে আজাদুল ইসলামের ঢাকার আগারগাঁওয়ের বাসার সামনে বসে রোদ পোহাচ্ছিলেন রাজিয়া বেগম। এরপর আপনমনে কোনো দিকে হাঁটা দিয়েছিলেন। সেই থেকে নেই তো নেই। মায়ের খোঁজে এলাকায় মাইকিং করেছেন ছেলে। থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন। মা হারিয়ে গেছেন, তা নিয়ে পোস্টার ছাপিয়েছেন। পথে–ঘাটে শুধু দেখতেন মায়ের মতো কাউকে দেখা যায় কি না। একসময় মনে হতে থাকে, মা হয়তো আর বেঁচে নেই। অথবা কোনো ট্রেনে চড়ে দূরে কোথাও চলে গেলেন কি না। অবশেষে সেই মানসিক ভারসাম্যহীন মাকে ১৩ এপ্রিল খুঁজে পেয়েছেন আজাদুল।

আজ রোববার মুঠোফোনে আজাদুল ইসলামের সঙ্গে কথা হয়। তিনি মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার অনেক বড় ভাগ্য যে মাকে খুঁজে পেলাম। ভেবেছিলাম মা মরে গেল কি না। থানায় মায়ের ছবি দিয়ে বলে রেখেছিলাম, বেওয়ারিশ লাশ পেলে যেন জানায়।’

৬৫ বছর বয়সী রাজিয়া আর ৪৬ বছর বয়সী ছেলে আজাদুলকে একত্র করেছেন বেসরকারি উদ্যোগ ভালো কাজের হোটেলের রাশমনা আপনঘর বৃদ্ধাশ্রমে কর্মরত ব্যক্তিরা। মেরুল বাড্ডায় এই বৃদ্ধাশ্রমে আশ্রয় পেয়েছিলেন রাজিয়া। সেখানেই মা ও ছেলের পুনরায় দেখা হয়।

রাজিয়ার অনেক স্মৃতি মুছে গেলেও ছেলেকে চিনতে পারেন। ছেলে মাকে পেয়ে যখন আবেগে কান্না করছিলেন, তখন পাশে বসে মা ঠিকই ছেলের চোখের পানি মুছিয়ে দিচ্ছিলেন।

তবে আজ যখন মুঠোফোনে রাজিয়া বেগমের সঙ্গে কথা বলতে চাইলাম, তখন ফোন নিয়ে একটানা কথা বলে গেলেন। বেশির ভাগ কথারই সেভাবে কোনো অর্থ বোঝা গেল না। শুধু ছেলের জন্য স্পষ্টভাবে দোয়া চাইলেন। হয়তো অবচেতন মনে তিনি যে মা, তা মনে হয়েছিল।

আজাদুল জানালেন, সাড়ে চার বছর ধরে রাজিয়া বেগম মানসিক সমস্যায় ভুগছেন। পাবনা মানসিক হাসপাতালসহ ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা করানো হয়েছে এবং হচ্ছে। চিকিৎসকেরা বলে দিয়েছেন, তাঁর মায়ের মানসিক যে সমস্যা (সমস্যার নাম বলতে পারেননি, ডিমেনশিয়া শব্দটি চিকিৎসকদের মুখে শুনেছেন) তাঁর তেমন উন্নতি হবে না। তবে ওষুধসহ অন্যান্য সেবাযত্নে কিছুটা ভালো থাকবেন। জানুয়ারি মাসে চিকিৎসার জন্যই মাকে ঢাকায় আনা হয়েছিল। তবে তার আগেই তিনি বাসা থেকে বের হয়ে গিয়েছিলেন।

তিন মাস পর মা রাজিয়া বেগমকে খুঁজে পান ছেলে আজাদুল ইসলাম.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আজ দ ল

এছাড়াও পড়ুন:

মোটরসাইকেল থেকে ছিটকে ট্রাকের নিচে, মাথা বিচ্ছিন্ন নারীর

পঞ্চগড়ে ট্রাকের চাপায় পিষ্ট হয়ে রিনা আক্তার (৪৫) নামের এক নারী নিহত হয়েছেন। এ সময় আহত হয়েছেন তার স্বামী সাইফুল ইসলাম (৫৩)। 

মঙ্গলবার (৯ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ১১টার দিকে পঞ্চগড় পৌরসভার তেলিপাড়া এলাকায় বিজিবি ক্যাম্পের সামনে পঞ্চগড়-ঢাকা মহাসড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

নিহত রিনা পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলার মুন্সীপাড়ার বাসিন্দা। তিনি দেবীগঞ্জ পারফেক্ট একাডেমির প্রধান শিক্ষক ছিলেন। আহত সাইফুল ইসলাম শেখবাঁধা রেয়াজিয়া দাখিল মাদ্রাসার সুপারিনটেনডেন্ট।

পুলিশ ও স্থানীয়রা জানিয়েছেন, দাপ্তরিক কাজের জন্য মঙ্গলবার সকালে দেবীগঞ্জ থেকে মোটরসাইকেল যোগে পঞ্চগড় শহরের দিকে আসছিলেন এই দম্পতি। বিজিবি ক্যাম্পের সামনে পৌঁছালে একটি ট্রাককে পাশ কাটাতে গিয়ে সড়কের স্পিডব্রেকারে ধাক্কা লেগে মোটরসাইকেলের নিয়ন্ত্রণ হারান তারা। এ সময় ট্রাকের পেছনের চাকায় পিষ্ট হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান রিনা আক্তার। তার দেহ থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে। 

দুর্ঘটনার প্রতিবাদে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী অবৈধ স্পিডব্রেকার অপসারণের দাবিতে প্রায় এক ঘণ্টা সড়ক অবরোধ করে রাখেন। খবর পেয়ে পঞ্চগড় জেলা প্রশাসক কাজী মো. সায়েমুজ্জামান ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিলে বিক্ষুব্ধরা সড়ক থেকে সরে যান।

পঞ্চগড় সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আশরাফুল ইসলাম বলেছেন, দুর্ঘটনার পর ট্রাকটি জব্দ করা হয়েছে। সড়ক দুর্ঘটনা আইনে নিয়মিত মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।

ঢাকা/নাঈম/রফিক 

সম্পর্কিত নিবন্ধ