হারিয়ে ফেলা মাকে ফিরে পাওয়ার গল্প
Published: 20th, April 2025 GMT
নতুন বছরের প্রথম দিন ১ জানুয়ারি। ছেলে আজাদুল ইসলামের ঢাকার আগারগাঁওয়ের বাসার সামনে বসে রোদ পোহাচ্ছিলেন রাজিয়া বেগম। এরপর আপনমনে কোনো দিকে হাঁটা দিয়েছিলেন। সেই থেকে নেই তো নেই। মায়ের খোঁজে এলাকায় মাইকিং করেছেন ছেলে। থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন। মা হারিয়ে গেছেন, তা নিয়ে পোস্টার ছাপিয়েছেন। পথে–ঘাটে শুধু দেখতেন মায়ের মতো কাউকে দেখা যায় কি না। একসময় মনে হতে থাকে, মা হয়তো আর বেঁচে নেই। অথবা কোনো ট্রেনে চড়ে দূরে কোথাও চলে গেলেন কি না। অবশেষে সেই মানসিক ভারসাম্যহীন মাকে ১৩ এপ্রিল খুঁজে পেয়েছেন আজাদুল।
আজ রোববার মুঠোফোনে আজাদুল ইসলামের সঙ্গে কথা হয়। তিনি মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার অনেক বড় ভাগ্য যে মাকে খুঁজে পেলাম। ভেবেছিলাম মা মরে গেল কি না। থানায় মায়ের ছবি দিয়ে বলে রেখেছিলাম, বেওয়ারিশ লাশ পেলে যেন জানায়।’
৬৫ বছর বয়সী রাজিয়া আর ৪৬ বছর বয়সী ছেলে আজাদুলকে একত্র করেছেন বেসরকারি উদ্যোগ ভালো কাজের হোটেলের রাশমনা আপনঘর বৃদ্ধাশ্রমে কর্মরত ব্যক্তিরা। মেরুল বাড্ডায় এই বৃদ্ধাশ্রমে আশ্রয় পেয়েছিলেন রাজিয়া। সেখানেই মা ও ছেলের পুনরায় দেখা হয়।
রাজিয়ার অনেক স্মৃতি মুছে গেলেও ছেলেকে চিনতে পারেন। ছেলে মাকে পেয়ে যখন আবেগে কান্না করছিলেন, তখন পাশে বসে মা ঠিকই ছেলের চোখের পানি মুছিয়ে দিচ্ছিলেন।
তবে আজ যখন মুঠোফোনে রাজিয়া বেগমের সঙ্গে কথা বলতে চাইলাম, তখন ফোন নিয়ে একটানা কথা বলে গেলেন। বেশির ভাগ কথারই সেভাবে কোনো অর্থ বোঝা গেল না। শুধু ছেলের জন্য স্পষ্টভাবে দোয়া চাইলেন। হয়তো অবচেতন মনে তিনি যে মা, তা মনে হয়েছিল।
আজাদুল জানালেন, সাড়ে চার বছর ধরে রাজিয়া বেগম মানসিক সমস্যায় ভুগছেন। পাবনা মানসিক হাসপাতালসহ ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা করানো হয়েছে এবং হচ্ছে। চিকিৎসকেরা বলে দিয়েছেন, তাঁর মায়ের মানসিক যে সমস্যা (সমস্যার নাম বলতে পারেননি, ডিমেনশিয়া শব্দটি চিকিৎসকদের মুখে শুনেছেন) তাঁর তেমন উন্নতি হবে না। তবে ওষুধসহ অন্যান্য সেবাযত্নে কিছুটা ভালো থাকবেন। জানুয়ারি মাসে চিকিৎসার জন্যই মাকে ঢাকায় আনা হয়েছিল। তবে তার আগেই তিনি বাসা থেকে বের হয়ে গিয়েছিলেন।
তিন মাস পর মা রাজিয়া বেগমকে খুঁজে পান ছেলে আজাদুল ইসলাম.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আজ দ ল
এছাড়াও পড়ুন:
পাবনায় শিক্ষকের চড়ে নাক ফাটল শিশুশিক্ষার্থীর, হাসপাতালে ভর্তি
পাবনার চাটমোহরে শিক্ষকের চড়ে সোয়াদ হোসেন (৮) নামের দ্বিতীয় শ্রেণির এক শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। আঘাতে তার নাক ফেটে যায় ও রক্তক্ষরণ হলে তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। গতকাল বুধবার সকালে উপজেলার ছাইকোলা ইউনিয়নের কানাইয়ের চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ঘটনাটি ঘটে।
অভিযুক্ত হাফিজুর রহমান ওই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক। ঘটনার পর তিনি দ্রুত বিদ্যালয় থেকে চলে যান। আহত সোয়াদ কানাইয়ের চর গ্রামের মুকুল হোসেনের ছেলে।
বিদ্যালয় ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গতকাল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ক্লাস চলাকালে শিক্ষক হাফিজুর রহমানের অনুমতি নিয়ে বাইরে যায় সোয়াদ। ফিরতে দেরি হওয়ায় শ্রেণিকক্ষে ঢোকার সময় ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে চড় মারেন হাফিজুর রহমান। এ ঘটনায় সোয়াদের নাকে আঘাত লাগে ও রক্তক্ষরণ শুরু হয়। পরিবারের সদস্যরা তাকে স্থানীয় চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান। সেখানে রক্তক্ষরণ বন্ধ না হওয়ায় পরে তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।
শিশুটির বাবা মুকুল হোসেন বলেন, ‘শিক্ষক লেখাপড়ার জন্য শাসন করতেই পারেন। কিন্তু এমনভাবে মারধর করে রক্তাক্ত করা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। আমি এর সঠিক বিচার চাই।’
বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক জাকির হোসেন বলেন, ‘ঘটনার সময় আমি অফিসে ছিলাম না। পরে খবর পেয়ে ক্লাসে গিয়ে দেখি সোয়াদ বাড়ি চলে গেছে। পরে আমি তার বাড়িতে গিয়ে খোঁজখবর নিয়েছি। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।’
যোগাযোগ করা হলে অভিযুক্ত শিক্ষক হাফিজুর রহমান বলেন, ‘শিশুটি ক্লাস চলাকালে বারবার বাইরে যাচ্ছিল। কয়েকবার ডাকার পরও সে বাইরে যাওয়া অব্যাহত রাখে। ক্লাসে ঢোকার সময় আমি চড় মারতে গেলে সেটা নাকে লাগে। এটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। আমি দুঃখ প্রকাশ করছি।’
এ বিষয়ে চাটমোহর উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন বলেন, বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক। খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।