স্ক্যাবিস এক ধরণের শুষ্ক চুলকানি। এর জন্য এক ধরনের পোকা দায়ী। চিকিৎসকেরা বলছেন, এটি একটি ছোঁয়াচে রোগ। যা একজনের থেকে অন্য অনেকের শরীরে ছড়াতে পারে। ওষুধ ব্যবহার ও সেবনের পরেও স্ক্যাবিস দূর হচ্ছে না বলে অনেকেই আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন। কিন্তু কেন স্ক্যাবিস সারছে না, জানেন? চিকিৎসকেরা বলছেন, শুধুমাত্র একটি ভুলের কারণে ওষুধ ব্যবহার ও সেবন করার পরেও স্ক্যাবিস দূর করা সম্ভব হচ্ছে না। কি সেই কারণ এবং এই রোগের লক্ষণ কি কি—চলুন জানা যাক।
চর্ম ও যৌন রোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা.
পরিবারের একজন যদি আক্রান্ত হন তাহলে পরিবারের অন্য সদস্যরা এই রোগে আক্রান্ত হতে পারেন বলে জানান এই চিকিৎসক।
আরো পড়ুন:
‘ব্যায়াম করে ওজন কমাতে চাইলে ব্রেন চাপ অনুভব করে’
পিত্তথলিতে বালু হলে কী করবেন
ডা. আনজিরুন নাহার আসমা বলেন, ‘‘ এই রোগের জন্য দায়ী ‘সারকপটিস স্কেবিয়া’ পোকা। এই ছোট পোকা খালি চোখে দেখা যায় না। এটি যদি কারও পরিবারের একজনের শরীরে আসে তারপর আস্তে আস্তে ওই পরিবারের অন্য সদস্যদেরও আক্রান্ত করতে পারে। অনেকেই দেখা যায় যে, একটি ছাত্রাবাসে থাকেন, কিংবা বোডিং স্কুলে থাকেন তাদের ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, একই সাথে যারা এক রুমে থাকছেন তারা একই সঙ্গে এই রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। ’’
দীর্ঘদিন এই রোগের চিকিৎসা গ্রহণ করার পরেও এই রোগ ভালো নাও হতে পারে। এমনটাই জানিয়েছেন ডা. আনজিরুন নাহার আসমা। তিনি বলেন, ‘‘আক্রান্তদের আমরা সাধারণত ব্যবহার করার জন্য ওষুধ দিয়ে থাকি। এছাড়া খাবার ওষুধও দেই। যখন আমরা এই রোগের ওষুধ প্রয়োগ করতে বলি, তখন আমরা রোগীকে বলে দেই তার সংস্পর্শে যারা আছেন এবং তার পরিবারের সবাইকে একইভাবে, একই নিয়মে এই ওষুধ পরিমাণমতো ব্যবহার করতে হবে। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায়, পরিবারের যে কয়জনের শরীরে চুলকানি শুধু সেই কয়জনই এই ওষুধ ব্যবহার করছেন, বাকিরা করছেন না। সবাই একসঙ্গে চিকিৎসকের নির্দেশনা অনুযায়ী ওষুধ ব্যবহার না করাই স্ক্যাবিস ভালো না হওয়ার একমাত্র কারণ। আক্রান্ত ব্যক্তির পরিবারের প্রত্যেক ব্যক্তিকে ওষুধ ব্যবহার করতে হবে। যদি একজনও ওষুধ ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকেন তাহলে দেখা যাবে ওই ব্যক্তির মাধ্যমে অন্যরা আবার আক্রান্ত হচ্ছেন।’’
উল্লেখ্য, যদি স্ক্যাবিস বার বার হয়, তাহলে বুঝতে হবে এই ছোট পোকাটি বা জীবাণুটি আপনার বাসা থেকে দূর হচ্ছে না। কিংবা আপনি যাদের সাথে চলাফেরা করছেন হয়তো তাদের কারও শরীরে এই রোগের জীবাণু রয়েছে। স্ক্র্যাবিস দূর করতে হলে, একই পরিবারের প্রত্যেকে একসঙ্গে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ ব্যবহার করতে হবে।
ঢাকা/লিপি
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর চ ক ৎসক র এই র গ র পর ব র র র করত
এছাড়াও পড়ুন:
সংবেদনশীল না হলে কেউ ভালো শিল্পী হতে পারে না: জুয়েল আইচ
ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে প্রায়ই তরুণদের দেখা যায় সঠিক দিকনির্দেশনার অভাবে ভুগতে। ফলে অনেক সময় যথেষ্ট মেধা, আগ্রহ ও দক্ষতা থাকা সত্ত্বেও তাঁরা ক্যারিয়ারে ভালো করতে পারেন না। তরুণদের সঠিক দিকনির্দেশনা ও অনুপ্রেরণা জোগাতে প্রথম আলো ডটকম ও প্রাইম ব্যাংকের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত পডকাস্ট শো ‘লিগ্যাসি উইথ এমআরএইচ’। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক মোহাম্মদ রিদওয়ানুল হকের সঞ্চালনায় একাদশতম পর্বে অতিথি হিসেবে অংশ নেন বিশ্বখ্যাত জাদুশিল্পী জুয়েল আইচ। আলোচনার বিষয় ছিল ‘শিল্প, মুক্তিযুদ্ধ এবং মানবতার সংমিশ্রণে গঠিত এক অনন্য লিগ্যাসি’।
‘মানুষ তার আশার সমান সুন্দর, বিশ্বাসের সমান বড় এবং কাজের সমান সফল। কাজই মুক্তি। তবে আশাও বড় রাখতে হবে। আশা না থাকলে কাজ হবে না।’ ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে তরুণদের উদ্দেশে কথাগুলো বলেন জুয়েল আইচ। পডকাস্ট শোর এ পর্ব প্রচারিত হয় গতকাল শনিবার প্রথম আলোর ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলোতে।
পডকাস্টের শুরুতেই সঞ্চালক জানতে চান, মুক্তিযুদ্ধের শরণার্থীশিবিরে প্রথম যেদিন জাদু দেখালেন, সেই অনুভূতি কেমন ছিল?
উত্তরে জুয়েল আইচ বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ যখন শুরু হলো, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা সব বাদ দিয়ে যুদ্ধে যোগ দিই। আমরাই খুব সম্ভবত প্রথম পাকিস্তানি বাহিনীকে প্রতিহত করি। আমি শৈশব থেকেই জাদু দেখাই। তবে মুক্তিযুদ্ধের শরণার্থীশিবিরে জাদু দেখানোর সেই অনুভূতিটি ছিল একেবারেই ম্যাজিক্যাল।’
প্রসঙ্গক্রমে সঞ্চালক জানতে চান, শিল্পকে সাহস করে অস্ত্রতে পরিণত করার এই আত্মবিশ্বাস কোথা থেকে এল?
জুয়েল আইচ বলেন, ‘এটা আত্মবিশ্বাস নয়। আমি অসম্মান সহ্য করতে পারি না। আমার জ্ঞান হওয়ার পর থেকেই দেখছিলাম, তারা (পাকিস্তান) আমাদের বিভিন্নভাবে অসম্মান করে আসছে। কখনো গানে, কখনো ছবি এঁকে কিংবা কবিতার ভাষায় আমরা সব সময় এর প্রতিবাদ করে এসেছি। এভাবে করেই শেষ পর্যন্ত আমরা মুক্তিযুদ্ধে নেমে গেলাম।’
জুয়েল আইচকে কেউ বলেন ম্যাজিশিয়ান, আবার কেউ বলেন মিউজিশিয়ান। তবে জুয়েল আইচ একজন দার্শনিকও বটে। জাদুর মোহনীয়তা আর বাস্তবতার যে রূঢ় চিত্র—এই দুটো আপনার জীবনে কেমন প্রভাব ফেলেছে?
সঞ্চালকের এমন প্রশ্নের উত্তরে জুয়েল আইচ বলেন, ‘বাস্তবতাকে আমরা বলে থাকি “কঠিন” আর স্বপ্ন তো আমরা আকাশসমান ভাবতে পারি। একদম রংধনুর মতো সাত রং। এই দুটোকে যদি কেউ আয়ত্ত না করতে পারে, তবে তার জীবন কিন্তু সেখানেই শেষ। সে বেঁচে থাকবে কিন্তু মরার মতো।’ তিনি বলেন, ‘সে জন্য আত্মনিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা দরকার। যেমন আপনি কোনোভাবেই আমাকে দুঃখী বানাতে পারবেন না। আমি দুঃখ পাই না, তবে বারবার আমাকে খ্যাপাতে থাকলে আমি রুখে দাঁড়াই।’
জুয়েল আইচ কখনোই পরিপূর্ণ প্রস্তুতি ছাড়া স্টেজে ওঠেন না। সঞ্চালক জানতে চান, এর পেছনে কারণ কী?
জুয়েল আইচ বলেন, প্রস্তুতি ছাড়া কোনো কাজ সুন্দরমতো হয় না। প্রস্তুতি ছাড়া যদি কেউ কিছু করে, তবে সেগুলো অনেক নিম্নমানের হবে। তিনি বলেন, ‘আমি একটি বাঁশি দিয়ে সব রাগ বাজাতে পারি। এটা কি এক দিনেই সম্ভব!’
আপনার পারফরম্যান্সের সময় আপনি মাঝেমধ্যে নিঃশব্দ হয়ে যান। যেখানে কোনো উদ্যম নেই। এই ‘সাইলেন্স’-এর কারণটা কী?
সঞ্চালক জানতে চাইলে জুয়েল আইচ বলেন, শব্দের চেয়ে নিঃশব্দের ভাষা বেশি গভীর। একটি পেইন্টিং, যেখানে কোনো শব্দ থাকে না কিন্তু কত কিছু বলে দেয়! দেখবেন কেউ অনেক খেপে গেলে নীরব হয়ে যায়। আসলে শব্দে যা বলা যায়, নিঃশব্দে তার চেয়ে বেশি প্রকাশ করা সম্ভব।
বর্তমানের এই ডিজিটাল যুগে সবকিছুই হাতের নাগালে, এমনকি জাদুও। জাদু ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলোতে আসার পর এর আবেদন কিছুটা কমে যাচ্ছে কি না? জানতে চাইলে জুয়েল আইচ বলেন, খালি চোখে দেখলে তা আসলেই কমে যাচ্ছে। কারণ, এখন ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলোতে যে জাদুগুলো দেখানো হচ্ছে, তা দেখে মানুষ বিস্মিত। তিনি বলেন, ‘তারা ভাবছে, আমরা আগে যেসব জাদু দেখেছি, এগুলো তো তার থেকেও বিস্ময়কর। কিন্তু তারা হয়তো বুঝতে পারছে না, এখন সবকিছুর সঙ্গে মিশে গেছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা।’
সঞ্চালক এরপর প্রশ্ন করেন, আপনি একসময় ‘পালস স্টপিং’ ধরনের ইলিউশন বন্ধ করেছিলেন। এর পেছনে উদ্দেশ্য কী ছিল?
জুয়েল আইচ বলেন, ‘এই পালস স্টপিংয়ের মাধ্যমে আমি পুরো দেশজুড়ে এক বিস্ময় সৃষ্টি করেছিলাম। দলে দলে মানুষ এটি দেখতে আসত। কিন্তু এসব দেখে মানুষ অনেক বেশি আতঙ্কিত হতো, অনেক মানুষ অজ্ঞান হয়ে পড়ত। একবার একজন অনেক বড় পালোয়ান এটি দেখতে এসে অজ্ঞান হয়ে পড়লেন। সেদিন শো শেষ করেই আমি আমার টিমকে বলি, এই ম্যাজিক আর হবে না। কারণ, এই ম্যাজিক এত এত মানুষকে ডেকে আনছে বটে কিন্তু এটি মাত্রা অতিক্রম করে ফেলছে। যা মোটেও ঠিক নয়।’
প্রসঙ্গক্রমে সঞ্চালক জানতে চান, তাহলে কি একজন শিল্পীকে সংবেদনশীলও হতে হয়?
‘অবশ্যই।’ জুয়েল আইচ বলেন, একজন শিল্পীকে অবশ্যই সংবেদনশীল হতে হবে। সংবেদনশীল না হলে তিনি ভালো শিল্পী হতে পারবেন না।
আপনি যেমন বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্রনেতাদের সামনে পারফর্ম করেছেন, তেমনি এমন শিশুদের জন্যও জাদু দেখিয়েছেন, যারা কখনো টিকিট কিনে শো দেখতে পারে না। আপনার চোখে আসল মর্যাদা কোথায়—বৃহৎ মঞ্চে, নাকি একটিমাত্র বিস্মিত মুখে?
সঞ্চালকের এমন প্রশ্নের জবাবে জুয়েল আইচ বলেন, ‘আসলে মঞ্চ ব্যাপার নয়। আমি আমার জাদুতে বিস্মিত এবং মুগ্ধ হয়ে থাকা দেখতে ভালোবাসি। শুধু বিস্ময় নয়, বিস্ময়ের সঙ্গে মুগ্ধতা আমার ভালো লাগে।’
আরও পড়ুননীতি আর মূল্যবোধ শক্ত থাকলে কেউ থামাতে পারবে না: রুবাবা দৌলা১২ অক্টোবর ২০২৫পডকাস্টের শেষ পর্যায়ে সঞ্চালক জানতে চান, আমরা আরেকজন জুয়েল আইচ কবে পাব?
মুচকি হেসে জুয়েল আইচ বলেন, ‘যখন সেই উদ্যম নিয়ে কেউ কাজ করবে, ঠিক তখন। সে হয়তো আমাকেও ছাড়িয়ে যাবে। শুধু ম্যাজিকে নয়, সব দিক দিয়েই।’
আরও পড়ুনবাবা প্রথমে আমাকে অফিস সহকারীর কাজ দিয়েছিলেন: হাতিলের চেয়ারম্যান সেলিম এইচ রহমান০৫ অক্টোবর ২০২৫