অস্ট্রেলিয়ার ২০২৫ সালের জাতীয় নির্বাচনে দেশটির বর্তমান ক্ষমতাসীন দল লেবার পার্টি একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে টানা দ্বিতীয় মেয়াদে জয়লাভ করেছে। চূড়ান্ত ফলাফলের আগে প্রায় ৩৪ শতাংশ ভোট গণনার ফলাফলেই লেবার ৭৭টি আসনে জয়লাভ করেছে, যেখানে বিরোধী দল লিবারেল-ন্যাশনাল কোয়ালিশন পেয়েছে ৩৩টি আসন। এর মধ্য দিয়ে আবারও দ্বিতীয় মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী হতে যাচ্ছেন অ্যান্থনি অ্যালবানিজ।

অন্যদিকে এই নির্বাচনের সবচেয়ে হতাশাব্যঞ্জক ঘটনা ছিল বিরোধীদলীয় নেতা প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী পিটার ডাটনের নিজ আসন ডিকসন থেকে পরাজয়। ব্রিসবেনের এই আসনে লেবার প্রার্থী আলী ফ্রান্স প্রায় ৬০ শতাংশ ভোট পেয়ে ডাটনকে পরাজয়ের পথে, যেখানে ডাটন ২২ বছর ধরে নির্বাচিত হয়ে আসছিলেন। এবারের নির্বাচনী প্রচারণার কেন্দ্রে ছিল দেশটিতে ক্রমবর্ধমান জীবনযাত্রার ব্যয় ও গৃহনির্মাণ সংকট।

সিডনি, মেলবোর্ন, ব্রিজবেনসহ প্রধান শহরগুলোতে প্রবাসী বাংলাদেশিরাও এই নির্বাচনে লেবারের জয়ে আনন্দ প্রকাশ করেছেন। এবারের নির্বাচনে লিবারেল পার্টি থেকে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত একজন প্রার্থীও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন সিডনির ওয়াটসন আসন থেকে। তবে ক্ষমতাসীন দলের বাংলাদেশিদের কাছে পরিচিত নেতা টনি বার্ক প্রায় ৭০ শতাংশ ভোটে এগিয়ে আছেন আসনটিতে। সিডনির ল্যাকেম্বা, ক্যাম্পবেলটাউন, ব্ল্যাকটাউন, ইস্টলেকেরসহ আরও কিছু এলাকায় বাংলাদেশি বাসিন্দারা এবারের নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বীময় ছিল বলে মনে করেন।

সিডনির ইস্টলেকের বাংলাদেশি বাসিন্দা হায়দার খান বলেন, ‘লেবারের এই জয় আমাদেরসহ নতুন প্রজন্মের যে বাংলাদেশিরা আসছেন, তাঁদের জন্যও জীবনযাত্রার ব্যয় ব্যবস্থাপনা, আবাসনসংকট সমাধান, অভিবাসননীতি সহজীকরণ এবং বহুসংস্কৃতিবাদকে আরও শক্তিশালী করবে।’

অস্ট্রেলিয়ায় আজ শনিবার জাতীয় নির্বাচনে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এবারের নির্বাচনে ভোটারের সংখ্যা ১ কোটি ৮০ লাখ। ৮৩টি দেশে অস্ট্রেলিয়ার কয়েক হাজার নাগরিক ভোট দিয়েছেন।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

২১ আগস্ট গ্রেনেড মামলা: খালাসের রায়ের বিরুদ্ধে আবেদন শুনানি ৬ মে

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় সব আসামিকে খালাসের হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের অনুমতি চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের (লিভ টু আপিল) শুনানি আগামী মঙ্গলবার (৬ মে)।

রোববার আপিল বিভাগের বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন তিন বিচারপতির আপিল বিভাগ বেঞ্চ এই দিন ধার্য করে আদেশ দেয়।

গত ১ ডিসেম্বর এই মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত সব আসামিকে খালাস দিয়ে রায় ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। সে রায়ে উচ্চ আদালত বলেন, যে চার্জশিটের ভিত্তিতে বিচারিক আদালত বিচার করেছিলেন তা আইনগতভাবে গ্রহণযোগ্য ছিল না। তাই বিচারিক আদালতের রায় বাতিল করা হলো।

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট রাজধানীর গুলিস্তান এলাকায় আওয়ামী লীগের সমাবেশে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলায় ২৪ জন নিহত ও কয়েকশো মানুষ আহত হন। ওই গ্রেনেড হামলার ঘটনায় মতিঝিল থানায় হত্যা ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে দুটি মামলা হয়। ২০০৮ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় সিআইডি এই মামলার তদন্ত শেষে অভিযোগপত্র দিলে শুরু হয় বিচার।

তবে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর এই মামলায় অধিকতর তদন্তে আসামির তালিকায় যুক্ত করা হয় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ৩০ জনকে।

দীর্ঘ বিচারিক কার্যক্রম শেষে ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিন আলোচিত মামলার রায় দেন। রায়ের পর্যবেক্ষণে বিচারিক আদালত বলেন, ‘রাষ্ট্রযন্ত্রের সহায়তায়’ ওই হামলা ছিল একটি দলকে ‘নেতৃত্বশূন্য করার ঘৃণ্য অপচেষ্টা’। আলোচিত ওই রায়ে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর ও সাবেক শিক্ষা উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুসহ ১৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। বিচারিক আদালতে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত অপর আসামিরা হলেন: আব্দুস সালাম পিন্টুর ভাই মাওলানা তাজউদ্দিন, হুজির সাবেক আমির ও ইসলামিক ডেমোক্রেটিক পার্টির আহ্বায়ক মাওলানা শেখ আবদুস সালাম, কাশ্মীরি জঙ্গি আব্দুল মাজেদ ভাট, আবদুল মালেক ওরফে গোলাম মোস্তফা, মাওলানা শওকত ওসমান, মহিবুল্লাহ ওরফে মফিজুর রহমান, মাওলানা আবু সাঈদ ওরফে ডা. জাফর, আবুল কালাম আজাদ ওরফে বুলবুল, মো. জাহাঙ্গীর আলম, হাফেজ মাওলানা আবু তাহের, হোসাইন আহম্মেদ তামিম, মঈন উদ্দিন শেখ ওরফে মুফতি মঈন, মো. রফিকুল ইসলাম, মো. উজ্জল, এনএসআইয়ের সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবদুর রহিম, হানিফ পরিবহনের মালিক মোহাম্মদ হানিফ।

বিচারিক আদালতের রায়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ১৯ জনের যাবজ্জীবন ও ১১ জনের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড দেয়া হয়। সে রায়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত অপর আসামীরা হলেন, খালেদা জিয়ার সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ, হুজি সদস্য হাফেজ মাওলানা ইয়াহিয়া, শাহাদাৎ উল্লাহ ওরফে জুয়েল, মাওলানা আবদুর রউফ, মাওলানা সাব্বির আহমেদ, আরিফ হাসান ওরফে সুমন, আবু বকর ওরফে হাফেজ সেলিম মাওলাদার, মো. আরিফুল ইসলাম, মহিবুল মুত্তাকিন ওরফে মুত্তাকিন, আনিসুল মুরছালিন ওরফে মুরছালিন, মো. খলিল ওরফে খলিলুর রহমান, জাহাঙ্গীর আলম বদর, মো. ইকবাল ওরফে ইকবাল হোসেন, লিটন ওরফে মাওলানা লিটন, মুফতি শফিকুর রহমান, মুফতি আব্দুল হাই, রাতুল আহমেদ ওরফে রাতুল বাবু।

এছাড়া, বিচারিক আদালতের রায়ে পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজি) মো. আশরাফুল হুদা ও শহিদুল হক, বিএনপি চেয়ারপারসন ও তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ভাগ্নে লেফটেন্যান্ট কমান্ডার (অব.) সাইফুল ইসলাম ডিউক, লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) সাইফুল ইসলাম জোয়ার্দ্দার, ডিজিএফআইয়ের মেজর জেনারেল (অব.) এটিএম আমিন, ডিএমপির সাবেক উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) খান সাঈদ হাসান, আরেক সাবেক উপ-কমিশনার (পূর্ব) ওবায়দুর রহমান খান, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক খোদা বক্স চৌধুরী, সিআইডির সাবেক বিশেষ সুপার মো. রুহুল আমিন, সাবেক এএসপি আবদুর রশিদ, সাবেক এএসপি মুন্সি আতিকুর রহমানকে দুই বছর করে কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ছয় মাস করে সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এই মামলার আরেকটি ধারায় খোদা বক্স চৌধুরী, রুহুল আমিন, আবদুর রশিদ ও মুন্সি আতিকুর রহমানকে তিন বছর করে কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে ছয় মাস করে কারাদণ্ড দেয় আদালত।

বিচারিক আদালতে এই রায়ের দেড় মাসের মাথায় ২০১৮ সালের ২৭ নভেম্বর মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্তদের ডেথ রেফারেন্সসহ মামলার নথি হাইকোর্টে আসে। ২০২২ সালের ৫ ডিসেম্বর থেকে ডেথ রেফারেন্স এবং আসামিদের আপিল ও জেল আপিল শুনানি শুরু হয়। বিচারপতি সহিদুল করিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চে শুনানি চলছিল।

তবে ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের পর হাইকোর্ট বেঞ্চ পুনর্গঠন হলে বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত একটি হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চে ডেথ রেফারেন্স ও আপিল শুনানি হয়। শুনানি শেষে গত ১ ডিসেম্বর হাইকোর্ট এই মামলার সব আসামিকে খালাস দিয়ে রায় দেন। সে রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে ‘লিভ টু আপিল’ করে রাষ্ট্রপক্ষ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ