Samakal:
2025-06-19@17:12:19 GMT

কাজে ফেরার সেতুবন্ধ

Published: 3rd, May 2025 GMT

কাজে ফেরার সেতুবন্ধ

এলিজাবেথ মারান্ডী। সাঁওতাল জনগোষ্ঠীর মানুষ। অস্ট্রেলিয়া সরকারের আমন্ত্রণে গভর্ন্যান্স ও পাবলিক পলিসি নিয়ে মাস্টার্স করেছেন। ১০ বছর চাকরি করার পর তাঁর মনে হয়েছে নিজের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য নিয়ে কাজ করা দরকার। যেসব কৃষ্টি-কালচার হারিয়ে যাচ্ছে, সেগুলো নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরবেন। ভালো বেতনের চাকরি ছেড়ে দেন ২০২১ সালে।
হারিয়ে যাওয়া পোশাক, গহনা এবং সাঁওতালদের নানা থালাবাসনের নকশা খুঁজে বের করেন। কারিগর দিয়ে পুরোনো নকশায় সেগুলো তৈরি করান। সাঁওতাল জনগোষ্ঠী নিয়ে করা কাজ গুছিয়ে আনার পর তিনি আবার উন্নয়ন প্রতিষ্ঠানে কাজ করবেন বলে সিদ্ধান্ত নেন। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে স্বেচ্ছায় চাকরি ছাড়ার অভিজ্ঞতা ভালো হয় না। এলিজাবেথ নানা সমস্যায় পড়েন। এমন সময় তাঁর চোখ আটকায় পেশাজীবন থেকে ছিটকে পড়া নারীদের কাজে ফেরাতে ব্র্যাকের উদ্যোগে। ‘ব্রিজ রিটার্নশিপ’ প্রোগ্রামে এক বছর কর্মজীবন থেকে বিরতিতে থাকা নারীরা আবেদন করতে পারেন। এলিজাবেথ আবেদন করেন। তিনি এখন ব্র্যাকের মাইক্রোফাইন্যান্স প্রোগ্রামে কাজ করছেন। ব্রিজ রিটার্নশিপ প্রোগ্রামে কেউ ছয় মাস কাজ করার পর ব্র্যাকে অথবা অন্য কোথাও চাকরির সুযোগ হয়।
এলিজাবেথ বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট খুব রূঢ়। যে কাজ আমি আমার জাতিকে নিয়ে করেছি, সেটি বাংলাদেশ সরকারের করার কথা ছিল। অথচ বিপত্তিতে পড়েছি আমি। যখন চাকরিজীবনে ফিরে এসেছি, পরিবারও আমার সংস্কৃতিকে নিয়ে কাজ করার বিষয়টি ভালোভাবে নেয়নি। সবাই বলেছে মাথা খারাপ হয়ে গেছে। যখন কাউকে কাছে পাইনি, তখন ব্র্যাক পাশে দাঁড়িয়েছে বন্ধুর মতো।’
ব্র্যাক জেন্ডার জাস্টিস ও ডাইভারসিটি প্রোগ্রাম হেড মাসুমা বিল্লাহ বলেন, ‘‘আমাদের মানবসম্পদ বিভাগের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, ২৮-৩৫ বছরের মধ্যে কর্মজীবী নারীর সংখ্যা কমে যাচ্ছে। সমাজের নানা অসংগতির কারণে শ্রমশক্তির বাইরে থেকে যাচ্ছেন তারা। শহরে অনেক নারী সামাজিক ও পারিবারিক কারণে শ্রম থেকে ঝরে পড়ছেন। সংসারের দায়িত্ব, সন্তান প্রতিপালন, কেয়ারগিভারের সংকট, গৃহ সহায়তাকারীর সংকট, ডে-কেয়ার হোমের অভাব, সংসারের বয়স্ক মানুষের দেখাশোনা করার দায়িত্ব, সর্বোপরি স্বামীর অনিচ্ছার কারণে অনেক নারী চাকরি ছাড়তে বাধ্য হন। এসব সমস্যা ছাড়াও নারী মনে করেন কিছু সময়ের জন্য চাকরি ছাড়বেন, পরে আবার ফিরে আসবেন। কিন্তু এই প্রতিযোগিতামূলক বাজারে একবার চাকরি ছেড়ে দিলে আবার প্রবেশ করাটা কঠিন হয়ে যায়। তাই এমন নারীদের কর্মজীবনে ফেরাতে, কাজের সঙ্গে ফের সংযোগ স্থাপন করতে ‘ব্রিজ রিটার্নশিপ’ নামে উদ্যোগ নিয়েছে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাক।’’
ব্রিজ রিটার্নশিপ একটি ছয় মাসের কার্যক্রম; যেখানে নির্বাচিত নারী প্রার্থীরা নির্ধারিত হারে বেতন পাবেন। শিক্ষা ও পেশাগত যোগ্যতা অনুযায়ী নির্ধারিত ক্ষেত্রে কাজের মাধ্যমে দক্ষতা উন্নয়নের সুযোগ পাবেন। ব্র্যাকের বিভিন্ন শাখায় এখন ব্রিজ রিটার্নশিপের আন্ডারে ১৫ জন নারী কাজ করছেন। 
মৌ’রা (ছদ্মনাম) দুই বোন। তাঁর মা কর্মজীবী নারী, হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তিনি নিজের কোনো কাজই করতে পারেন না। মৌ অনুধাবন করেন, মা একসময় আমাদের লালনপালন করার জন্য চাকরি ছেড়েছিলেন। এখন মাকে সময় দেওয়ার পালা আমার। তা ছাড়া কেয়ারগিভারও পাওয়া যাচ্ছিল না। তাই স্বেচ্ছায় চাকরি ছেড়ে দিয়ে এক বছর মায়ের সেবা করেন। পরে কেয়ারগিভার  পাওয়া গেলে তিনি চাকরি খোঁজা শুরু করেন। নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভালো রেজাল্ট, নাভানার মতো বড় প্রতিষ্ঠানে কাজ করার অভিজ্ঞতা– কোনোটাই কাজে আসেনি। ব্র্যাকের ব্রিজ রিটার্নশিপ প্রোগ্রাম বদলে দেয় তাঁর বাস্তবতা। 
মাসুমা বিল্লাহ বলেন, ব্রিজ রিটার্নশিপ প্রজেক্টে যেসব নারী নিয়ে কাজ করছি, তাদের সবার মূল সমস্যা আত্মবিশ্বাস কমে যাওয়া। কর্মজীবী নারী যখন কর্মহীন হয়ে যান, তখন তাঁর আত্মবিশ্বাসের একটা বিরাট অংশের অধঃপতন হয়। তারপর তিনি অর্থনৈতিক স্বাধীনতা হারিয়ে ফেলেন। টাকার জন্য তাঁকে অন্যের কাছে হাত পাততে হয়। এতে প্রতিমুহূর্তে তিনি অপমানিত হন। এক সময় হীনম্মন্যতায় ভোগেন। নারী বোঝেন না, জীবনে চাকরি একটা সময় সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়; কিন্তু চাকরি ছেড়ে দিলে হাজারটা সমস্যা তাদের সামনে এসে দাঁড়ায়। যেগুলো মোকাবিলা করার শক্তি একসময় তারা হারিয়ে ফেলেন। v

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: এল জ ব থ ক জ কর সমস য

এছাড়াও পড়ুন:

জুলাই গণ-অভ্যুত্থান স্মরণে নির্মাণ হবে গণমিনার

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে সংঘটিত গণপ্রতিরোধ ও আত্মত্যাগের স্মরণে সর্বস্তরের নাগরিক উদ্যোগে রাজধানীতে নির্মাণ করা হবে ‘গণমিনার’। এ উদ্যোগ বাস্তবায়নে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, গণমাধ্যমকর্মী, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বসহ বিভিন্ন পর্যায়ের বিশিষ্ট নাগরিকদের সমন্বয়ে ‘গণমিনার বাস্তবায়ন কমিটি’ গঠিত হয়েছে।

আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যানটিনে সংবাদ সম্মেলন করে কমিটি এসব তথ্য জানায়।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক মোহাম্মদ আজম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক খোরশেদ আলম, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সামিনা লুৎফা, চলচ্চিত্র নির্মাতা ও স্থপতি কামার আহমাদ সাইমনসহ বিশিষ্ট নাগরিকেরা।

সংবাদ সম্মেলনে তাঁরা জানান, গণমিনারের স্থান হিসেবে বীর উত্তম মেজর জেনারেল আজিজুর রহমান রোড ও বিজয় সরণির মধ্যবর্তী সবুজ চত্বরকে নির্বাচন করা হয়েছে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) এরই মধ্যে গণমিনার নির্মাণের জন্য জমি বরাদ্দ, অর্থ ও প্রকৌশল সহযোগিতার বিষয়ে সম্মত হয়েছে। জুলাই অভ্যুত্থানে জাতিসংঘ স্বীকৃত (গত ফেব্রুয়ারিতে জাতিসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং প্রতিবেদনে) ১ হাজার ৪০০ শহীদের নাম ও পরিচিতি গণমিনারে খোদাই করে সংরক্ষণ করা হবে।

গণমিনার বাস্তবায়ন কমিটির পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, কমিটিতে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে যুক্ত হচ্ছেন। অন্তর্ভুক্তিমূলক এ নাগরিক উদ্যোগটির লক্ষ্য, ২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থান এবং শহীদদের স্মৃতিকে স্মারকরূপে সংরক্ষণ করা; যাতে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে মানুষের আত্মত্যাগ ও প্রতিরোধের চেতনা সঞ্চারিত হয়।

বক্তারা বলেন, জুলাই ২০২৪ ছিল একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত, যেখানে আপামর জনগণ স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছেন। হাজার হাজার মানুষ নির্যাতিত হয়েছেন, আহত হয়েছেন, প্রাণ হারিয়েছেন। জুলাই গণপ্রতিরোধে জাতির প্রতিবাদী সত্তার স্ফুরণ ঘটে। সেই সত্যকে স্মরণে রাখতে গণমিনার বাস্তবায়ন কমিটি একটি স্থায়ী স্মারক নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে।

সংবাদ সম্মেলন থেকে আরও জানানো হয়, এই ভূখণ্ডে গত ২৫০ বছরের প্রতিরোধ ও লড়াইয়ের ইতিহাসের চিত্রও গণমিনারে তুলে ধরার পরিকল্পনা রয়েছে। এই গণমিনার হবে এমন এক স্মরণস্থল, যা রাজনৈতিক বিভাজন অতিক্রম করে সব মত ও পথের মানুষের সম্মিলিত গণ–উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হবে। গণমিনার বাস্তবায়নে গণমানুষের সম্পৃক্ততার লক্ষ্যে গণচাঁদা সংগ্রহেরও উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।

গণমিনার বাস্তবায়ন কমিটির সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশের প্রভাষক অলিউর সান, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সংগঠক অলিক মৃ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক আ-আল মামুন, কবি ও লেখক আলতাফ শাহনেওয়াজ, লেখক ও গবেষক ইলিরা দেওয়ানসহ আরও অনেকে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ