এলিজাবেথ মারান্ডী। সাঁওতাল জনগোষ্ঠীর মানুষ। অস্ট্রেলিয়া সরকারের আমন্ত্রণে গভর্ন্যান্স ও পাবলিক পলিসি নিয়ে মাস্টার্স করেছেন। ১০ বছর চাকরি করার পর তাঁর মনে হয়েছে নিজের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য নিয়ে কাজ করা দরকার। যেসব কৃষ্টি-কালচার হারিয়ে যাচ্ছে, সেগুলো নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরবেন। ভালো বেতনের চাকরি ছেড়ে দেন ২০২১ সালে।
হারিয়ে যাওয়া পোশাক, গহনা এবং সাঁওতালদের নানা থালাবাসনের নকশা খুঁজে বের করেন। কারিগর দিয়ে পুরোনো নকশায় সেগুলো তৈরি করান। সাঁওতাল জনগোষ্ঠী নিয়ে করা কাজ গুছিয়ে আনার পর তিনি আবার উন্নয়ন প্রতিষ্ঠানে কাজ করবেন বলে সিদ্ধান্ত নেন। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে স্বেচ্ছায় চাকরি ছাড়ার অভিজ্ঞতা ভালো হয় না। এলিজাবেথ নানা সমস্যায় পড়েন। এমন সময় তাঁর চোখ আটকায় পেশাজীবন থেকে ছিটকে পড়া নারীদের কাজে ফেরাতে ব্র্যাকের উদ্যোগে। ‘ব্রিজ রিটার্নশিপ’ প্রোগ্রামে এক বছর কর্মজীবন থেকে বিরতিতে থাকা নারীরা আবেদন করতে পারেন। এলিজাবেথ আবেদন করেন। তিনি এখন ব্র্যাকের মাইক্রোফাইন্যান্স প্রোগ্রামে কাজ করছেন। ব্রিজ রিটার্নশিপ প্রোগ্রামে কেউ ছয় মাস কাজ করার পর ব্র্যাকে অথবা অন্য কোথাও চাকরির সুযোগ হয়।
এলিজাবেথ বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট খুব রূঢ়। যে কাজ আমি আমার জাতিকে নিয়ে করেছি, সেটি বাংলাদেশ সরকারের করার কথা ছিল। অথচ বিপত্তিতে পড়েছি আমি। যখন চাকরিজীবনে ফিরে এসেছি, পরিবারও আমার সংস্কৃতিকে নিয়ে কাজ করার বিষয়টি ভালোভাবে নেয়নি। সবাই বলেছে মাথা খারাপ হয়ে গেছে। যখন কাউকে কাছে পাইনি, তখন ব্র্যাক পাশে দাঁড়িয়েছে বন্ধুর মতো।’
ব্র্যাক জেন্ডার জাস্টিস ও ডাইভারসিটি প্রোগ্রাম হেড মাসুমা বিল্লাহ বলেন, ‘‘আমাদের মানবসম্পদ বিভাগের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, ২৮-৩৫ বছরের মধ্যে কর্মজীবী নারীর সংখ্যা কমে যাচ্ছে। সমাজের নানা অসংগতির কারণে শ্রমশক্তির বাইরে থেকে যাচ্ছেন তারা। শহরে অনেক নারী সামাজিক ও পারিবারিক কারণে শ্রম থেকে ঝরে পড়ছেন। সংসারের দায়িত্ব, সন্তান প্রতিপালন, কেয়ারগিভারের সংকট, গৃহ সহায়তাকারীর সংকট, ডে-কেয়ার হোমের অভাব, সংসারের বয়স্ক মানুষের দেখাশোনা করার দায়িত্ব, সর্বোপরি স্বামীর অনিচ্ছার কারণে অনেক নারী চাকরি ছাড়তে বাধ্য হন। এসব সমস্যা ছাড়াও নারী মনে করেন কিছু সময়ের জন্য চাকরি ছাড়বেন, পরে আবার ফিরে আসবেন। কিন্তু এই প্রতিযোগিতামূলক বাজারে একবার চাকরি ছেড়ে দিলে আবার প্রবেশ করাটা কঠিন হয়ে যায়। তাই এমন নারীদের কর্মজীবনে ফেরাতে, কাজের সঙ্গে ফের সংযোগ স্থাপন করতে ‘ব্রিজ রিটার্নশিপ’ নামে উদ্যোগ নিয়েছে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাক।’’
ব্রিজ রিটার্নশিপ একটি ছয় মাসের কার্যক্রম; যেখানে নির্বাচিত নারী প্রার্থীরা নির্ধারিত হারে বেতন পাবেন। শিক্ষা ও পেশাগত যোগ্যতা অনুযায়ী নির্ধারিত ক্ষেত্রে কাজের মাধ্যমে দক্ষতা উন্নয়নের সুযোগ পাবেন। ব্র্যাকের বিভিন্ন শাখায় এখন ব্রিজ রিটার্নশিপের আন্ডারে ১৫ জন নারী কাজ করছেন।
মৌ’রা (ছদ্মনাম) দুই বোন। তাঁর মা কর্মজীবী নারী, হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তিনি নিজের কোনো কাজই করতে পারেন না। মৌ অনুধাবন করেন, মা একসময় আমাদের লালনপালন করার জন্য চাকরি ছেড়েছিলেন। এখন মাকে সময় দেওয়ার পালা আমার। তা ছাড়া কেয়ারগিভারও পাওয়া যাচ্ছিল না। তাই স্বেচ্ছায় চাকরি ছেড়ে দিয়ে এক বছর মায়ের সেবা করেন। পরে কেয়ারগিভার পাওয়া গেলে তিনি চাকরি খোঁজা শুরু করেন। নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভালো রেজাল্ট, নাভানার মতো বড় প্রতিষ্ঠানে কাজ করার অভিজ্ঞতা– কোনোটাই কাজে আসেনি। ব্র্যাকের ব্রিজ রিটার্নশিপ প্রোগ্রাম বদলে দেয় তাঁর বাস্তবতা।
মাসুমা বিল্লাহ বলেন, ব্রিজ রিটার্নশিপ প্রজেক্টে যেসব নারী নিয়ে কাজ করছি, তাদের সবার মূল সমস্যা আত্মবিশ্বাস কমে যাওয়া। কর্মজীবী নারী যখন কর্মহীন হয়ে যান, তখন তাঁর আত্মবিশ্বাসের একটা বিরাট অংশের অধঃপতন হয়। তারপর তিনি অর্থনৈতিক স্বাধীনতা হারিয়ে ফেলেন। টাকার জন্য তাঁকে অন্যের কাছে হাত পাততে হয়। এতে প্রতিমুহূর্তে তিনি অপমানিত হন। এক সময় হীনম্মন্যতায় ভোগেন। নারী বোঝেন না, জীবনে চাকরি একটা সময় সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়; কিন্তু চাকরি ছেড়ে দিলে হাজারটা সমস্যা তাদের সামনে এসে দাঁড়ায়। যেগুলো মোকাবিলা করার শক্তি একসময় তারা হারিয়ে ফেলেন। v
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: এল জ ব থ ক জ কর সমস য
এছাড়াও পড়ুন:
ডি ব্রুইনা-সিটির পুনর্মিলনীতে হলান্ডের দ্রুততম ‘ফিফটি’
ম্যানচেস্টার সিটি ২-০ নাপোলি
ইতিহাদ ছেড়ে গিয়েছিলেন গত জুনে। তারপর এবারই তাঁর প্রথম ফেরা বড় সাধের এই স্টেডিয়ামে। ম্যানচেস্টার সিটির দর্শকেরা তাঁকে নায়কের মর্যাদায় বরণও করে নিলেও কোথায় যেন একটা অতৃপ্তি থেকে গেল। কেভিন ডি ব্রুইনা এখন হতে পারেন প্রতিপক্ষ, তবু ম্যাচের মাত্র ২৬ মিনিটে তাঁর বদলি হয়ে মাঠ ছাড়ার সময় সিটির দু-একজন সমর্থকদের মুখটা শুকনো দেখা গেল। ক্লাব কিংবদন্তিকে উঠে দাঁড়িয়ে তাঁরা সম্মান দেখিয়েছেন, তবে মাঠে আরও কিছুক্ষণ দেখতে চেয়েছিলেন নিশ্চয়ই!
কৌশলগত কারণে মাঠ ছাড়তে হয় ডি ব্রুইনাকে। নাপোলি কোচ আন্তোনিও কন্তে অবশ্য তাতে হার এড়াতে পারেননি। বিরতির পর আর্লিং হলান্ড ও জেরেমি ডকুর গোল হজম করতে হয়। সিটির ২-০ গোলের এ জয়ে দারুণ এক রেকর্ডও গড়েন হলান্ড।
৫৬ মিনিটে তাঁর গোলটির উৎস সিটি মিডফিল্ডার ফিল ফোডেন। লব করে দারুণভাবে বলটা তুলে সামনে বাড়িয়ে দেন, হেডে চ্যাম্পিয়নস লিগে নিজের ৫০তম গোল তুলে নেন হলান্ড। সেটা আবার এই প্রতিযোগিতার ইতিহাসে দ্রুততম। ৪৯ ম্যাচে ‘ফিফটি’ পাওয়া হলান্ড পেছনে ফেললেন রুদ ফন নিষ্টলরয়কে (৬২ ম্যাচ)।
ডকুর গোলটি দেখার মতো। ৬৫ মিনিটে বক্সের বাইরে থেকে বল পেয়ে ভেতরে ঢুকে গোল করার পথে নাপোলির তিন খেলোয়াড় মিলেও তাঁকে থামাতে পারেননি। সিটির এই দুই গোলে এগিয়ে যাওয়া আসলে একটি সুবিধার ফল। ২১ মিনিটে বক্সে হলান্ডকে ফাউল করে লাল কার্ড দেখেন নাপোলি অধিনায়ক ও রাইট ব্যাক জিওভান্নি ডি লরেঞ্জো। এরপর ১০ জনে পরিণত হওয়া ইতালিয়ান ক্লাবটির ওপর চেপে বসে সিটির আক্রমণভাগ।
গোল করলেন জেরেমি ডকু