বর্তমান বিশ্বে সবচেয়ে জটিল সমস্যার একটি প্লাস্টিক বর্জ্য। বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। ব্যবহারের পর প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ প্লাস্টিকসামগ্রী মানুষ ফেলে দেয়। এসব বর্জ্যের বেশির ভাগ নদী, সমুদ্র বা জমিতে চলে যায়। এই প্লাস্টিক কখনোই হারায় না অর্থাৎ মাটির সঙ্গে মেশে না। এটি শত শত বছর পরিবেশে থেকে যায়, প্রকৃতির বিরূপ পরিবর্তন ঘটায় এবং পশুপাখির ক্ষতি করে। এই সমস্যা সমাধানের একটা উপায় রিসাইক্লিং বা প্লাস্টিককে পুনর্ব্যবহার উপযোগী করে তোলা। এর মাধ্যমে ব্যবহৃত প্লাস্টিক সংগ্রহের পর তা নতুন পণ্যে রূপান্তর হয়।
পরিবেশ সংরক্ষণের গুরুত্ব সম্পর্কে গভীরভাবে সচেতন গ্রামীণ ডানোন ফুডস লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটি নিজেদের কাছে প্রশ্ন রেখেছিল–  আমরা কি আমাদের শক্তি দইয়ের প্লাস্টিক কাপগুলো দিয়ে কিছু করতে পারি? এই প্রশ্নটি তাদের মধ্যে একটি উদ্ভাবনী আইডিয়ার জন্ম দেয়। যেমন– ব্যবহৃত শক্তি দইয়ের কাপ সংগ্রহ করে পুনর্ব্যবহার উপযোগী চামচ বানানো!
প্রাথমিকভাবে এটি একটি ছোট প্রয়াস। কিন্তু সবুজ ভবিষ্যতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। কাপগুলো বর্জ্য হিসেবে ফেলে না দিয়ে গ্রামীণ ডানোন তাদের নতুন রূপ দিচ্ছে। এই প্রক্রিয়াটি সহজ এবং কার্যকর। এর মাধ্যমে প্রথমে ব্যবহৃত কাপগুলো সংগ্রহ করা হয় এবং রিসাইক্লিং সেন্টারে পাঠানো হয়। সেখানে প্লাস্টিকগুলো পরিষ্কার করা হয় এবং গলিয়ে নতুন করে চামচ বানানো হয়। এই চামচগুলো পুনরায় ব্যবহার করা যায়, যা নতুন প্লাস্টিক উৎপাদনের প্রয়োজন কমিয়ে দেয়।
গ্রামীণ ডানোনের এই উদ্যোগ টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি)-১২ সমর্থন করে, যেটি পরিমিত ভোগ ও টেকসই উৎপাদনের কথা বলে, যা পরিবেশ সংরক্ষণে প্রতিষ্ঠানটির প্রতিশ্রুতি তুলে ধরে। ব্যবহৃত প্লাস্টিককে দরকারি পণ্যে রূপান্তর করার মাধ্যমে গ্রামীণ ডানোন এমন একটি ব্যবস্থা তৈরি করেছে, যা শুধু বর্জ্য এবং পরিবেশ দূষণই কমায় না, বরং অন্যান্য ব্যবসা ও ব্যক্তিদের পরিবেশবান্ধব সিদ্ধান্ত নিতে অনুপ্রেরণা জোগায়। গ্রামীণ ডানোন প্রমাণ করছে ব্যবসায় প্রবৃদ্ধি বাড়ানোর পাশাপাশি পরিবেশের যত্ন নেওয়া সম্ভব।
এমন প্রচেষ্টার মাধ্যমে গ্রামীণ ডানোন কেবল প্লাস্টিক বর্জ্য কমাচ্ছে না; অন্য কোম্পানিগুলোর জন্য একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করছে। প্রতিষ্ঠানটি প্রমাণ করছে, পরিবেশ রক্ষায় এমন উদ্যোগ ব্যবসার প্রবৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত করে না; বরং এটি মানুষকে আরও সচেতন করে কীভাবে রিসাইক্লিং আমাদের পৃথিবীকে পরিষ্কার ও নিরাপদ রাখতে সাহায্য করতে পারে। বাংলাদেশে প্লাস্টিকদূষণ একটি ক্রমবর্ধমান সমস্যা। দেশে প্রতিবছর আট লাখ টনের বেশি প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপাদিত হয়। এর সামান্যই পুনর্ব্যবহার উপযোগী করে তোলা হয়। এখনও অনেক মানুষ জানে না প্লাস্টিক বর্জ্য নিয়ে কী করতে হবে এবং সব বর্জ্য রিসাইক্লিংয়ের জন্য যথেষ্ট প্ল্যাটফর্মও নেই। সরকার এবং বিভিন্ন সংস্থা এ পরিস্থিতি উন্নত করার চেষ্টা করছে। কিন্তু যে কোনো পরিবর্তন আনতে সময় লাগে। 
এ কারণে গ্রামীণ ডানোনের এ উদ্যোগ গুরুত্বপূর্ণ। এটি প্রমাণ করে একটি প্রতিষ্ঠানও পার্থক্য গড়ে দিতে পারে। এভাবে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানও যদি তাদের অনুসরণ করে, তাহলে বাংলাদেশের টেকসই হয়ে ওঠার ক্ষেত্রে তা আরও সহায়ক হতে পারে। গ্রামীণ ডানোন প্লাস্টিক বর্জ্যকে শুধু একটি সমস্যা হিসেবে না দেখে সৃজনশীল সমাধানের সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করেছে, যা অন্য প্রতিষ্ঠানকেও বর্জ্য ও সবুজ উন্নয়ন সম্পর্কে ভাবতে উদ্বুদ্ধ করছে। একটি কাপ, একটি চামচ পুনর্ব্যবহার উপযোগী করে প্রতিষ্ঠানটি প্রমাণ করেছে ছোট ছোট প্রয়াসও বড় পরিবর্তন আনতে পারে। v
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: পর ব শ প ল স ট ক বর জ য ব যবহ ত পর ব শ ব যবস সমস য

এছাড়াও পড়ুন:

ফেনীতে ভারী বৃষ্টিতে বেড়িবাঁধ উপচে লোকালয়ে সিলোনিয়ার পানি, বিপৎসীমা ছুঁই ছুঁই মুহুরী

ফেনীতে টানা বর্ষণ ও ভারত থেকে আসা উজানের পানিতে মুহুরী নদীর পানি বিপৎসীমার কাছাকাছি অবস্থান করছে। লোকালয়ে প্রবেশ করছে সিলোনিয়া নদীর পানি। এর ফলে ফেনীর দুই উপজেলা পরশুরাম ও ফুলগাজীর নদীতীরবর্তী বেশ কিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে।

গত ২৪ ঘণ্টায় ফেনীতে সর্বোচ্চ ৮১ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করেছে জেলা আবহাওয়া অফিস। এর ফলে বেড়েছে জেলার সব নদ-নদী ও জলাশয়ের পানি। আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে মুহুরী নদীর পানি ১১ দশমিক ৯৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল বলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী (পুর) ওয়াসিম আকরাম জানিয়েছেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, টানা বর্ষণ ও ভারতীয় পাহাড়ি ঢলের কারণে মুহুরী নদীতে পানি হু হু করে বাড়ছে। এই নদীতে পানির বিপৎসীমা ১২ দশমিক ৫৫ সেন্টিমিটার। এর ফলে প্রায় বিপৎসীমা ছুঁই ছুঁই নদীর পানি। মুহুরী নদীতে হঠাৎ পানি বেড়ে যাওয়ায় ফুলগাজী উপজেলার লোকালয়ে পানি ঢুকতে শুরু করেছে।

ফুলগাজীর বাসিন্দা শাহাব উদ্দিন জানান, ফুলগাজী বাজারে সন্ধ্যায় পানি প্রবেশ করেছে। তবে দীর্ঘক্ষণ বৃষ্টি বন্ধ থাকায় পানি নেমে যেতে পারে। আবার ভারী বর্ষণ শুরু হলে পানি বেড়ে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হতে পারে।

এদিকে সিলোনিয়া নদীতে পানি বেড়ে যাওয়ায় পরশুরাম উপজেলার মির্জানগর ইউনিয়নের সুবার বাজারের দক্ষিণ ও উত্তর পাশ এবং মনিপুর গ্রামের একাংশ প্লাবিত হয়েছে। লোকালয়ে পানি প্রবেশ করায় স্থানীয় মানুষের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড ও উপজেলা প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০২৪ সালের আগস্ট মাসের বন্যায় সীমান্তবর্তী মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর বেড়িবাঁধের বিভিন্ন স্থানে ভাঙন সৃষ্টি হয়। ভয়াবহ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় কয়েক লাখ মানুষ। পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে, তিনটি নদীর বেড়িবাঁধের ৫২টি স্থানে ভাঙনের সৃষ্টি হলেও অধিকাংশ বাঁধ মেরামত করা হয়েছে। তবে বেড়িবাঁধের ১০-১২টি স্থান এখনো মেরামত করা হয়নি। এসব স্থান দিয়ে জনপদে পানি ঢুকতে শুরু করেছে।

পরশুরাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আরিফুর রহমান বলেন, গত বছরের বেড়িবাঁধের ভাঙন মেরামতের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার জানানো হয়েছিল। নদীতে পানি বাড়ায় নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।

বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড ফেনীর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আক্তার হোসেন মজুমদার জানান, নদীতে পানি বাড়লেও নিয়মিত মনিটর করা হচ্ছে। মুহুরী-কহুয়া-সিলোনিয়া নদীর বেড়িবাঁধের ঝুঁকিপূর্ণ অংশগুলো মেরামতের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা তৎপর রয়েছেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ