ন্যূনতম ঐকমত্যে পৌঁছে জাতীয় নির্বাচনের দাবি ১২ দলীয় জোটের
Published: 4th, May 2025 GMT
ন্যূনতম ঐকমত্যে পৌঁছে জাতীয় সংসদ নির্বাচন চায় ১২ দলীয় জোট। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের হাতে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা প্রদান করতে চান তাঁরা।
আজ রোববার জাতীয় সংসদের এলডি হলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে অংশ নিয়ে এ কথা বলেন ১২ দলীয় জোটের প্রধান সমন্বয়ক ও জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার। এই বৈঠকে তাঁর নেতৃত্বে জোটের ১১ নেতা অংশ নেন।
মোস্তফা জামাল হায়দার বলেন, ‘আজকে আমাদের গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষা জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা প্রদান করা। সেটা বিলম্বিত না হোক।’ তিনি আরও বলেন, যত দ্রুত সম্ভব ন্যূনতম একটা ঐকমত্যের জায়গায় এক হওয়া সম্ভব বলে মনে করেন মোস্তফা জামাল হায়দার। বাকি যদি কিছু অসমাপ্ত থাকে, অনৈক্য থাকে, পরবর্তীতে সেগুলো সংশোধন করা যাবে বলেন তিনি।
বৈঠকে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে মতপার্থক্য এবং দ্বিধাদ্বন্দ্ব থাকা স্বাভাবিক বলে মন্তব্য করেন মোস্তফা জামাল হায়দার। তিনি বলেন, ‘এখানেই গণতন্ত্রের সৌন্দর্য, এইখানেই গণতন্ত্রের উৎকর্ষতা।’
যুগ যুগ ধরে সঞ্চিত রাষ্ট্র কাঠামোর অব্যবস্থা, অসঙ্গতির কারণে সৃষ্ট বিভিন্ন সমস্যা দূর করতে কমিশন চেষ্টা করছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি ।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ঐকমত য
এছাড়াও পড়ুন:
সংসদ নির্বাচনের পর স্থানীয় নির্বাচন চায় এনপিপি
বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কারের গুরুত্বপূর্ণ ১৬৬ প্রস্তাবের মধ্যে ১১২টিতে একমত হয়েছে জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট (এনপিপি)। শনিবার জাতীয় সংসদ ভবনের এলডি হলে ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে জোটের বৈঠক শেষে এ কথা জানানো হয়। জোটের সমন্বয়ক ও এনপিপির চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ সাংবাদিকদের বলেন, আমরা ২৮টি প্রস্তাবে আংশিক একমত হয়েছি। দুয়েকটি বিষয়ে আমরা পরে আলোচনা করে নেব। আমরা সুস্পষ্টভাবে বলেছি, আগে জাতীয় নির্বাচন হতে হবে। জাতীয় নির্বাচন হওয়ার পর পার্লামেন্ট স্থানীয় নির্বাচন করবে।
তিনি বলেন, তারা (ঐকমত্য কমিশন) আমাদের বলেছে, একসঙ্গে জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচন সম্ভব কিনা। আমরা বলেছি, নির্বাচন কমিশনই বলেছে একসঙ্গে জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচন হওয়া সম্ভব নয়। অন্য একটি বিষয়ে একমত হয়েছি তা হলো, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মেয়াদ তিন থেকে চার মাস করলে ভালো হয়। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের কথা বলা হয়েছিল। আমরা বলেছি, সংসদ সদস্যের মাধ্যমে হতে হবে। এর বাইরে স্থানীয় সরকার নির্বাচন সংযুক্ত করা যাবে না।
তিনি আরও বলেন, সংসদে আসন সংখ্যা ৩০০ থাকতে হয়। নারীদের আসন ৫০ থেকে ১০০ হবে, এতে আপত্তি নেই। বিচার বিভাগের বিষয়ে আমরা প্রাধান্য দিয়েছি। আমরা বলেছি, জ্যেষ্ঠতা অনুসারে প্রধান বিচারপতি নির্বাচিত হবেন। হাইকোর্ট থেকে অ্যাফিলিয়েট ডিভিশনে এসব বিচার হবে। যেসব বিচারপতি দুর্নীতিপরায়ণ, তাদের সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের মাধ্যমে বাদ দিতে হবে। পরপর দু’বার প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন। এর পর একবার বিরতি দিয়ে আবারও প্রধানমন্ত্রী হতে হবে।
বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ফরিদুজ্জামান ফরহাদ বলেন, অনির্বাচিত সরকার বেশি দিন থাকলে দেশে নানা সমস্যা তৈরি হয়। কারণ, নির্বাচিত সরকার যেভাবে সুষ্ঠুভাবে দেশ চালাতে পারে, অনির্বাচিত সরকারের পক্ষে তা সম্ভব নয়। এই যে রোহিঙ্গা ইস্যুতে আমরা অনেক অসুবিধায় আছি। কে বা কারা মানবিক করিডোরের প্রস্তাব দিয়েছে, আর আমাদের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তাতে সম্মতি দিয়েছেন। এটা তো দেশের সঙ্গে নির্বাচিত একটা সরকার থেকে করতে হবে। আমরা যারা পলিটিক্যাল পার্টি আছি, তাদের সঙ্গে আলোচনা না করেই এটা করল। এই মানবিক করিডোর যে সামরিক করিডোর হবে না, কে বলতে পারে। এটা যে আরেকটি গাজা হবে না, সেটা কে বলতে পারে? এ জন্য আমরা বলছি, এই অন্তর্বর্তী সরকারের কাজ কী? তাদের প্রথম কাজ, জাতীয় নির্বাচন দেওয়া। ড. ইউনূস অত্যন্ত ভালো লোক। আমরা অনেক পছন্দ করি। আমরা সাপোর্ট করি। কিন্তু এভাবে চলতে থাকলে কতদিন সাপোর্ট দেওয়া যাবে, সেটা বিবেচনার বিষয়।
এদিকে ছয় মাসের মধ্যে জাতীয় সনদ তৈরি করতে চায় বলে জানিয়েছে ঐকমত্য কমিশন। এ ব্যাপারে গতকাল জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, সবার সঙ্গে আলোচনা করে জাতীয় সনদ তৈরি করতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনকে ১৫ জুলাই পর্যন্ত সময় নির্ধারিত করে দেওয়া হয়েছে। সেই চেষ্টায় আমরা আপনাদের (জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট) সহযোগিতা পেয়েছি, রাজনৈতিক দলগুলোর থেকে সহযোগিতা পাচ্ছি।
আলোচনায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ড. বদিউল আলম মজুমদার, সফর রাজ হোসেন, বিচারপতি এমদাদুল হক, ড. ইফতেখারুজ্জামান ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার।
এদিকে, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে জাতীয় সংসদ ভবনের এলডি হলে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদের (মার্ক্সবাদী) আলোচনা হয়েছে। দলটির সমন্বয়ক মাসুদ রানার নেতৃত্বে ১৩ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দলের হয়ে আলোচনায় উপস্থিত ছিলেন জয়দীপ ভট্টাচার্য, শফি উদ্দিন কবির আবিদ প্রমুখ ।
এ সময় অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে যে ঐকমত্য তৈরি হয়েছিল, তা ধরে রাখতে হবে। সেই ঐক্যের মাধ্যমে জাতীয় সনদ তৈরি হবে, যা আগামীর বাংলাদেশের পথরেখা নির্দেশ করবে।