এপ্রিলে এলো ২৭৫ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স
Published: 4th, May 2025 GMT
চলতি বছরের এপ্রিল মাসে ২৭৫ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে। আগের বছরের একই মাসের তুলনায় যা প্রায় ৭১ কোটি ডলার বা ৩৪ দশমিক ৬৪ শতাংশ বেশি। সব মিলিয়ে চলতি অর্থবছরের ১০ মাসে রেমিট্যান্স বেড়েছে ২৮ দশমিক ৩০ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
গত এপ্রিল মাসের এ রেমিট্যান্স একক মাস হিসেবে এ যাবৎকালের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। এখনও পর্যন্ত কোনো এক মাসে সর্বোচ্চ ৩২৯ কোটি ডলারের বেশি রেমিট্যান্স এসেছে গত মার্চ মাসে। আর তৃতীয় সর্বোচ্চ ২৬৪ কোটি ডলার এসেছে গত ডিসেম্বর মাসে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের এপ্রিল পর্যন্ত ১০ মাসে প্রবাসীরা মোট ২ হাজার ৪৫৪ কোটি ডলার দেশে পাঠিয়েছেন। আগের অর্থবছরের একই সময়ে এসেছিল এক হাজার ৯১২ কোটি ডলার। এই হিসেবে দশ মাসে বেশি এসেছে ৫৪২ কোটি ডলার, যা ২৮ দশমিক ৩৪ শতাংশ বেশি। গত অর্থবছরের পুরো সময়ে যেখানে রেমিট্যান্স এসেছিল ২ হাজার ৩৯১ কোটি ডলার। এর মানে আগের অর্থবছরের পুরো সময়ের তুলনায়ও ১০ মাসেই বেশি রেমিট্যান্স এসেছে।
রেমিট্যান্সে উচ্চ প্রবৃদ্ধির পাশাপাশি রপ্তানি আয়েও ১১ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি রয়েছে। টানা ২০ মাস পর বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়ে আবার ২২ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। গত ৩০ এপ্রিল রিজার্ভ উঠেছে ২২ দশমিক শূন্য ৪ বিলিয়ন ডলারে। সর্বশেষ ২০২৩ সালের আগস্টে রিজার্ভ ছিল ২৩ দশমিক ২৫ বিলিয়ন ডলার। পরের মাসে কমে ২১ দশমিক শূন্য ৫ বিলিয়ন ডলারে নেমেছিল। এর পর আর ২২ বিলিয়ন ডলারের ঘর অতিক্রম করেনি। দেশের ইতিহাসে রিজার্ভ সর্বোচ্চ ৪৮ দশমিক শূন্য ৬ বিলিয়ন ডলারে উঠেছিল ২০২২ সালের আগস্টে। সেখান থেকে প্রতি মাসে কমতে কমতে সরকার পতনের আগে গত জুলাই শেষে ২০ দশমিক ৩৯ বিলিয়ন ডলারে নেমেছিল।
ব্যাংকাররা জানান, রেমিট্যান্স ও রপ্তানিতে ভালো প্রবৃদ্ধির কারণে এখন ডলার নিয়ে হাহাকার নেই। বিগত সরকারের সময়ে সর্বোচ্চ ১২৭ টাকায় উঠে যাওয়া ডলার অনেকদিন ধরে ১২২ টাকায় স্থিতিশীল রয়েছে। যে কারণে আমদানি, ভ্রমণসহ বিভিন্ন বিষয়ে বিধিনিষেধ তুলে নিয়েছে সরকার। গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আমদানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৫ দশমিক ৩৩ শতাংশ। আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় বিদেশি বিনিয়োগ কমেছে। সরকার পরিবর্তনের পর থেকে আইএমএফের ঋণের কোনো কিস্তি আসেনি। এরপরও রিজার্ভ বাড়ছে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: র ম ট য ন স এস ছ প রব দ ধ দশম ক সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
আগামী তিন অর্থবছরের জিডিপির আকার প্রক্ষেপণ করেছে সরকার
অর্থমন্ত্রণালয় দেশের আগামী তিন আর্থিক বছরের জন্য জিডিপি’র হিসাব প্রক্ষেপণ করেছে। আগামী ১ জুলাই থেকে শুরু হওয়া ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) আকার প্রক্ষেপণ করা হয়েছে ৬২ লাখ ৪৪ হাজার ৫৭৮ কোটি টাকা। এর পরের অর্থাৎ ২০২৬-২০২৭ অর্থ বছরের জিডিপি’র আকার হবে চলতি হিসেবে ৬৯ লাখ ১৭ হাজার ১৯০ কোটি টাকা। এবং পরবর্তী অর্থবছর অর্থাৎ ২০২৭-২০২৮ অর্থবছরে জিডিপি’র প্রক্ষেপণ করা হয়েছে ৭৬ লাখ ৭৬ হাজার ১২০ কোটি টাকা।
সম্প্রতি কো-অর্ডিনেশন কমিটির সভায় জিডিপি’র এই প্রাক্কলন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের কাছে উপস্থাপন করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
এদিকে চলতি ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে জিডিপির আকারও সংশোধন করেছে অর্থ বিভাগ। গত বছরের জুনে যখন বাজেট দেওয়া হয় তখন চলতি বছরের জিডিপির আকার প্রক্ষেপণ করা হয়েছিল ৫৫ লাখ ৯৭ হাজার ৪১৪ কোটি টাকা। এখন তা সংশোধন করে ৫৬ লাখ ৪৫ হাজার ২৩৮ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
অর্থ বিভাগের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, মধ্যমেয়াদি সামষ্টিক অর্থনৈতিক কাঠামোর আওতায় প্রস্তুতকৃত প্রক্ষেপণকে অধিকতর নির্ভরযোগ্য করার জন্য অর্থ বিভাগ নিজেদের মডেলের সঙ্গে বিশ্বব্যাংকের ম্যাক্রো ফিসক্যাল ফ্রেমওয়ার্ক মডেল (এমএফএমওডি) ব্যবহার করে জিডিপি’র পূর্বাভাস দেওয়ার কাজ শুরু করেছে।
বর্তমানে অর্থ বিভাগের ব্যবহৃত মধ্যমেয়াদি সামষ্টিক অর্থনৈতিক কাঠামো আইএমএফ’র মডেল অনুসরণ করে তৈরি করা হয়েছে। অন্যদিকে এমএফএমওডি পূর্বাভাস তৈরি করতে বেশ কিছু আচরণগত সমীকরণ ব্যবহার করে ফলাফল প্রস্তুত করা হয়। সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে সঠিকভাবে ভবিষ্যতের পূর্বাভাস দেওয়ার লক্ষ্যে অর্থ বিভাগ এখন থেকে এমএফএমওডি ব্যবহার শুরু করেছে।
গত বছরের ডিসেম্বর মাসে সরকার চলতি অর্থবছরের জন্য দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস ৬.৭৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫.২৫ শতাংশ নির্ধারণ করে। চলমান আর্থিক সংকট, ব্যবসায় স্থবিরতা এবং সাম্প্রতিক সরকার পরিবর্তনের পর রাজনৈতিক অস্থিরতা বিবেচনায় নিয়ে এই সংশোধন করা হয়। তবে অর্থ মন্ত্রণালয় কিছুদিন আগে চলতি অর্থবছরের জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য আরও খানিকটা সংশোধন করে তা ৫ দশমিক ২ শতাংশ নির্ধারণ করেছে।
তবে আন্তর্জাতিক ঋণদাতা সংস্থাগুলো বলছে, চলতি অর্থবছরে সরকার ঘোষিত জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করা সম্ভব হবে না। বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ ও এডিবি-এই তিন সংস্থাই বলছে, চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৪ শতাংশের ওপরে যাবে না।
চলতি অর্থ বছরে ( ২০২৪-২০২৫) জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৩ দশমিক ৮ শতাংশ হবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। চলতি অর্থবছরে জন্য আইএমএফ’র পূর্বাভাস হতাশাব্যঞ্জক হলেও আগামী অর্থবছরের জন্য অর্থনীতির ক্ষেত্রে তারা বেশে ভালো পূর্বাভাস দিয়েছে। আন্তর্জাতিক ঋণদাতা এই সংস্থাটি বলেছে, বাংলাদেশের আগামী অর্থবছরে (২০২৫-২০২৬) জিডিপি প্রবৃদ্ধি হবে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ এবং মূল্যস্ফীতি কমে হবে ৫ দশমিক ২ শতাংশ।
গত এপ্রিলের ২১ তারিখে ওয়াশিংটন থেকে প্রকাশিত আইএমএফ-এর ‘ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক আউটলুক’-এর সর্বশেষ সংস্করণে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়।
আইএমএফ-এর এই পূর্বাভাসের আগে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) তাদের সাম্প্রতিক ‘এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট আউটলুক (এডিও)’-এ জানিয়েছে, বাংলাদেশের অর্থনীতি চলতি অর্থবছরে মাত্র ৩.৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে পারে, যা ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরে বেড়ে ৫.১ শতাংশে পৌঁছাবে।
তবে সবচেয়ে খারাপ পূর্বাভাসটি দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। গত ২২ এপ্রিল সংস্থাটি জানায়, চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি হতে পারে বড়জোড় ৩ দশমিক ৩ শতাংশ। যদি তাই হয়, তবে এটি হবে বিগত ৩৬ বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম অথনৈতিক প্রবৃদ্ধি। এর আগে এই সংস্থাটিই গত জানুয়ারি মাসে বলেছিল, বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি হবে ৪ দশমিক ১ শতাংশ।
ঢাকা/টিপু